দ্বিতীয়ত, আমার বিশ্বাস এটাও কারো বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয় যে, আসল কথা অশস্নীলতা নয়, আসল কথা হচ্ছে অাঁতে ঘা, যে সত্য তারা মনে-মগজে প্রতিপালন করে তাই-ই যদি কেউ স্পষ্ট করে বলে তাহলে তার বিরম্নদ্ধে লেগে গেলেই হলো। যেভাবে পারা যায়, তাকে নোংরায় ডুবিয়ে হোক, তরবারি/ছুরিতে রগ কেটে হোক কিংবা তাকে গুলি করে হত্যা করেই হোক। এটা ইমরম্নল কায়েসের যুগ থেকে এ পর্যনত্দ সব সময়ই সত্য।
কিন্তু আমার প্রশ্ন বস্নগ-কতর্ৃপৰের কাছে, তারা কেন এই কাজটি করলেন? আমি এ প্রশ্ন করবো না যে, 'ওদের' নোংরামি কেন মুছা হলো না, কারণ এক) ওরা ওদের মতো করে নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করেছে, যার স্বাধীনতা তাদের আছে, এই স্বাধীনতা রৰার্থে আমি যে কোনও কিছু করতে রাজি; দুই) ওরা এতে নিজেরাই পাঁকে পড়েছে, আমাকে টেনে নামাতে চেয়ে, সেই পাকে নিজেরাই পড়েছে বলে বিশ্বাস করি, তিন) এটাই 'ওদের' চরিত্র, তাই বলার বিশেষ কিছু নেইও।
কিন্তু স্বাধীন মত প্রকাশের কথা বলে কেন উপন্যাসের অধ্যায় দু'টি মুছে দেওয়া হলো সেটা জানার অধিকার নিশ্চয়ই আমার আছে। আমি কতর্ৃপৰের কাছে এর একটা সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাইবো। যদি তারা তা দেন তাহলে যে ব্যাখ্যাই তারা দেন না কেন তার পাল্টা আমার বক্তব্যও তাদেরকে শুনতে হবে। কিন্তু যদি কতর্ৃপৰ কোনও ব্যাখ্যা না দেন তাহলে হয়তো আমার তেমন কিছুই করার থাকবে না, সেৰেত্রে এই বস্নগ-এর দেউলিয়াত্ব ঘোষণা ছাড়া, কারণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার এই যুগে যারা একটি উপন্যাসের দু'টি অধ্যায়কেই এতো ভয় পায়, যাদের ধর্ম-বিশ্বাস এতোটাই ঠুনকো যে নেড়ে দিলেই ঝরে যায়, সেখানে তো বলার মতো কিছুই থাকে না।
প্রিয় বস্নগ-বন্ধুদের কাছে আমার একটি কৈফিয়ৎ দেওয়ার আছে, উপন্যাসের অধ্যায় দু'টিকে একেকজন একেকভাবে নিয়েছেন, সেটাই স্বাভাবিক। এটা যদিও ফিকসন, কিন্তু এর মধ্যে যে সত্য কতোখানি তার প্রমাণ এই মুছে ফেলা। কিন্তু এর চেয়েও বড় সত্য হচ্ছে, আমি এই উপন্যাসখানি লেখার আগে অনত্দত শ'খানেক মাদ্রাসা ছাত্র-শিৰক ও কতর্ৃপৰের সঙ্গে কথ বলেছি, এ সম্পর্কিত অনত্দত কয়েক শ' সংবাদ-কিপিং সংগ্রহ করেছি, কোরআন ও হাদীস থেকে যে সকল উদ্ধৃতি দিয়েছি তার কোনওটাই আমার সৃষ্টি নয়, বিভিন্ন বই থেকে নেওয়া। তাই একে কেউ যদি আমার ব্যক্তিগত মতামত বলে ভুল করেন সেটা ভুলই হবে, হঁ্যা বর্ণার দায়-দায়িত্ব আমারই কিন্তু সেটাও লেখক কিংবা বুদ্ধিমান পাঠক মাত্রেই জানেন, চরিত্র-চিত্রনে লেখক অসহায়, সেখানে তার নিজের মতবাদ জাহির করতে গেলে চরিত্র নির্মাণ হয় না, চরিত্র ভেঙে চুরমার হয়। আমি সাইফুরের ৰেত্রে যে কাজটি করতে পারিনি। দুঃখজনক সত্যি হচ্ছে, এই বালকের কষ্টটা আপনারা উপলব্ধি করলেন না, তাকে আপনারা নির্বাসন দণ্ডই দিলেন? হাহ্ এর নাম মুক্তবুদ্ধি?
বস্নগ কতর্ৃপৰের এই আচরণের যারা প্রতিবাদ করেছেন আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তবে কতর্ৃপৰ যদি আমাকে কোনও ব্যাখ্যা না দেন সেৰেত্রে এই বস্নগকে আর মুক্তবুদ্ধির চর্চাস্থল তো বলা যাবে না এবং সেৰেত্রে সিদ্ধানত্দও আপনাদের।
আমরা নিজেদের আধুনিক মনে করছি, লন্ডন-প্যারিস চরে বেড়াচ্ছি, অথচ আমাদের মানসিক গড়ন পড়ে আছে মধ্যযুগে, যে যুগে একটি বালক বলাৎকারের শিকার হলেও সে পায়না কোনও সহানুভ্থতি, তাকে সমাজের পেছনে লুকিয়ে ফেলার সেই ছলটি এখনও সমানভাবেই বর্তমান।
আমার আরও একটি প্রশ্ন, কতর্ৃপৰ আসলে কার সুরে বা নির্দেশে এই কাজটি করেছেন? কি সেই মহাশক্তি যার কাছে মুক্তবুদ্ধিকে এরকম বলি দেওয়া? জানতে ইচ্ছে করে। ভেবেছিলাম যেহেতু আমরা কম্পিউটার ব্যবহার করে ইন্টারনেট-এ ঢোকার মতো বুদ্ধি অর্জন করেছি সেহেতু পশ্চাৎপদতা আর পুরোনোকে আমরা বর্জন করারও ৰমতা লাভ করেছি। আমার ধারণা যে সর্বৈব ভুল, তা বস্নগ কতর্ৃপৰ প্রমাণ করেছেন। আমরা এখনও ভাবছি, উটে চড়ে চাঁদে পেঁৗছুতে, হতে পারে উটের পিঠে বসা লোকটির হাতে একটি কম্পিউটার এবং সেখানে তিনি এই বস্নগটিই সার্ফ করছেন_ কিন্তু এই ভাবনাটি ভাবতে সত্যিই আমার কষ্ট হচ্ছে।
তবে একথাও সত্যি যে, বস্নগ কতর্ৃপৰের এই কাজটি আমাকে আরও জেদি করে দিয়েছে, সত্যপ্রকাশে আরও সাহসী করে দিয়েছে, যা লিখতে চাইনি, তাও এখন লিখতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
ভালো থাকুন, হয়তো আবারও দেখা হবে, সে পর্যনত্দ; সত্যপ্রকাশে দ্বিধা-দ্বন্দ্বহীন হোন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০