হরতালে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় ১৮ দলীয় জোটের ৪৫ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয়ে শুনানি ২১ মে। মহানগর হাকিম এরফান উল্লাহ আজ রোববার শুনানির এই তারিখ নির্ধারণ করেন।
ওই মামলায় বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাদেক হোসেন খোকাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গত বৃহস্পতিবার আদালতে জমা দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে ৩৭ জনকে পলাতক দেখিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বাকি আট আসামির মধ্যে সাতজন কারাগারে এবং একজন জামিনে মুক্ত আছেন।
ঘটনার ১১ দিনের মাথায় ডিবির পরিদর্শক নুরুল আমিন গতকাল দ্রুত বিচার আইনে অভিযোগপত্রটি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম বিকাশ কুমার সাহার আদালতে জমা দেন। বিচারক অভিযোগপত্রটি মহানগর হাকিম এরফান উল্লাহর আদালতে পাঠান। আজ এই মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল।
মামলার আসামি রিজভী আহমেদের জামিনের শুনানি মহানগর দায়রা জজ আদালতে ১৭ মে ধার্য রয়েছে। এ কারণে মামলার মূল নথি মহানগর দায়রা জজ আদালতে থাকায় আদালত এই তারিখ নির্ধারণ করেন।
বিএনপির গুম হওয়া নেতা ইলিয়াস আলীকে জীবিত ফেরত দেওয়ার দাবিতে গত ২৯ এপ্রিল হরতাল চলাকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অদূরে ফ্যালকন টাওয়ারের সামনে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের ৪৪ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করে।পরে অভিযোগপত্রে এজাহারের আসামি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আবদুল জব্বারের নাম বাদ দেওয়া হয়। আর এজাহারের বাইরে দুজনের নাম অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাঁরা হলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের মোহাম্মদপুর থানা শাখার সভাপতি মান্নান হোসেন ও ছাত্রদলের তিতুমীর কলেজ শাখার সভাপতি ইসমাইল হোসেন।
এই মামলায় মির্জা ফখরুলসহ ৪৫ জন নেতা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেছেন। একটি দ্বৈত বেঞ্চে বিভক্ত আদেশ হওয়ায় তা শুনানির জন্য হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে গেছে। বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হকের একক বেঞ্চে আজ বেলা আড়াইটায় এ বিষয়ে শুনানি হবে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, মামলার এজাহারে বর্ণিত আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হয়। বিএনপি ও সমমনা দলের ডাকা হরতালের সময় ও পূর্বাপর জ্বালাও, পোড়াও, ভাঙচুর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়। হরতাল সফল করার জন্য আসামিরা পারস্পরিক মুঠোফোনের মাধ্যমে যে কথাবার্তা বলেন, তা ধারণ করা সিডি সংগ্রহ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিদের মধ্যে বিএনপির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাংসদ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, সাংসদ মাহবুব উদ্দিন খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবীব-উন-নবী খান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মীর শরাফত আলী, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম, বিজেপির সভাপতি আন্দালিব রহমান, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম, জাগপার শফিউল আলম প্রধানসহ ১ থেকে ৩৬ নম্বর আসামিরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে মির্জা আব্বাস, আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতনসহ ১ থেকে ৮ নম্বর আসামি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনা, ইন্ধন ও পরিকল্পনায় জড়িত। তাঁরা সবাই ছয়-সাতটি মাইক্রোবাসে করে ঘটনাস্থলে এসে বাসটির গতি রোধ করেন। এরপর ১ ও ২ নম্বর আসামি সোহেল মিয়া ও জসিম উদ্দিন ফ্যালকন টাওয়ারের সামনে যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করেন এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেন।
উল্লিখিত ব্যক্তিরা ছাড়াও অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি আসামিরা হলেন: বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম, ঢাকা উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের (দক্ষিণ) সভাপতি ইয়াসিন আলী, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার, ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের দক্ষিণের আহ্বায়ক হাবিবুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবদুল মতিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হক নাসির, ঢাকা উত্তর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহমেদ, ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার মো. আনোয়ারুজ্জামান ও ইউনুস মৃধা, বিএনপির নেতা লুত্ফুর রহমান, নবী সোলায়মান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সভাপতি শেখ শওকত হোসেন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী।
অভিযোগপত্রভুক্ত ৪৫ জনের মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন রিজভী আহমেদ, কামরুজ্জামান রতন, মান্নান হোসেন শাহীন, ইসমাইল খান শাহীন, মানিক রতন, সোহেল ওরফে সোহান মিয়া ও জসিমউদ্দিন। আরেক আসামি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন জামিনে মুক্ত আছেন।