রমজান মাস শুরু হলেই ঢাকা শহরে বিভিন্ন রুটের লোকাল বাসগুলো অফিস সময় শুরু ও শেষ হলে সিটিং করে ফেলে। ফলে দুর্ভোগ পোহান হাজার হাজার রোজাদার ব্যক্তি। রোজাদার ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় ধরে বাসের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা দেখেও বাসের হেলপার-কন্ডাক্টরদের কিছু আসে-যায় না। তারা বাসের গেট লাগিয়ে বাসের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের ব্যঙ্গাত্মকভাবে দেখতে থাকে ও মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। তাদের এই অনিয়ম রাস্তায় থাকা পুলিশ সার্জেন্ট ও কনস্টেবলরা দেখলেও কিছুই বলেন না। অভিযোগ করেও পাওয়া যায় না কোনো প্রতিকার। তাহলে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন দেখভালের দায়িত্ব কাদের ?
লোকাল বাস সিটিং করার এই প্রতিযোগিতায় গাবতলী থেকে সায়দাবাদগামী ৮ নম্বর বাস ও মিরপুর-পল্লবী থেকে গুলিস্তান-মতিঝিলগামী রুটে চলাচলকারী লোকাল বাসগুলোর দৌরাত্ম্য সর্বাধিক। এরা অফিস সময় শুরু এবং অফিস সময় শেষে ইচ্ছেমতো সিটিং করে বীরের বেশে চলতে থাকে। সকালে অফিসে আসার সময় এবং বিকেলে ঘরে ফেরার সময় বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন দেখলে যে কারোরই মনে হতে পারে কোনো মিছিল কিংবা সমাবেশ ঘটেছে। মূলত মিরপুর-পল্লবী থেকে গুলিস্তান-মতিঝিলগামী রুটের বাসগুলোর ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, হেলপাররা যাত্রীদের জিম্মি করে যখন যেভাবে খুশি সেভাবে গাড়ি চালানোর ফলে যাত্রীদুর্ভোগ কিছুতেই কমছে না। লোকাল বাসগুলো অফিস সময় এবং অফিস শেষে সিটিং হিসেবে চালানো করা হয়। অন্যদিকে গাবতলী-সায়দাবাদগামী বাসগুলো বাসের গায়ে লোকাল-সিটিং লিখে ইচ্ছেমতো চলাচল করছে। লোকাল বাস ও সিটিং বাসের ভাড়া ভিন্ন ভিন্ন এবং সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণই বাসচালকদের খামখেয়ালিভাবে বাস চালনায় উত্সাহ যুগিয়েছে।
সরকারের প্রতি অনুরোধ— ঢাকা শহরে চলাচলকারী বাসগুলোর রুট পারমিট যেভাবে নেয়া সেভাবেই চালানোর ব্যবস্থা করুন। পবিত্র রমজান মাসে কোনোভাবেই যেন এর ব্যত্যয় না ঘটে। সেসঙ্গে রাস্তায় নিয়োজিত ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টদের এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশ ও তা বাস্তবায়নে বাধ্য করা হোক। এবং এই লোকাল-সিটিং বাস চালনা প্রতিরোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাও জরুরি ।
লোকাল বাস ইচ্ছেমতো সিটিং করা হলে তা প্রতিহত করতে কিছু সুপারিশ— ১. ড্রাইভারের লাইসেন্স বাতিল ; ২. হেলপার ও কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে শাস্তি অথবা জরিমানামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ; ৩. বাসের রুট পারমিট বাতিল ; ৪.অনিয়মের রিরুদ্ধে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে অভিযোগ সেল গঠন— শুধু তাই নয়, এ ব্যাপারে মিডিয়াতেও সতর্ক বাণী প্রচার করা ; ৫. প্রতিটি লোকাল বাসে ‘লোকাল’ এবং সিটিং বাসে ‘সিটিং’ কথাটি বড় অক্ষরে লিখে রাখা ; ৬. বাসভাড়া নির্ধারণে কিলোমিটার হিসেবে সিটিং ও লোকাল ভাড়া আলাদা-আলাদা না করে একই ভাড়া নির্ধারণ করা, এতে করে লোকাল বাস সিটিং করার প্রবণতা কমবে ; ৭. ডাইরেক্ট সিটিং তুলে দেয়া এবং শুরু থেকে শেষ গন্তব্যের মাঝে স্টপেজ রেখে ভাড়ার বার নির্ধারণ করা, যেমন গুলিস্তান-ফার্মগেইট-তালতলা-মিরপুর। এই পদ্ধতিতে স্বল্প দূরত্বের জন্যও পুরো দূরত্বের ভাড়া নেয়া বাতিল হবে। এতে সংশ্লিষ্ট পরিবহন ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও নৈরাজ্য কমবে। তবে যানবাহন নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছাই বড় প্রয়োজন।