১ম পর্ব
2য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪থ পর্ব
অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই মালেশিয়ার বর্ডার এ চলে এলাম।এবার লাগেজ নিয়ে ইমিগ্রেশান এ দাড়াতে হলো।সব শেষ করে বের হয়ে দেখি আগের গাড়িটাই দাড়িয়ে আছে।এটা আশা করিনি।ভেবেছিলাম ঢাকা টু কলকাতা শ্যামলী পরিবহনের মতই হবে, বলে ডাইরেক্ট কলকাতা কিন্তু বেনাপোল পার হয়ে অন্য গাড়ী। যাই হোক উঠে পড়লাম।
২৯।০৯।১২ঃ
বাস চলছে হাওয়ার বেগে, ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। ভোর হতেই পৌছে গেলাম পাডু বাস ষ্টেষন।ভোর সাড়ে চারটা।এত তাড়াতাড়ি পৌছাবো ভাবিনি।আমি আর জলিল ভাই নেমে একটা টেক্সি নিলাম।এখন যাবো কেএল সিসি, টুইন টাউয়ারে উঠার টিকেট কাটতে হবে।সকাল সাতটা থেকে লাইন ধরতে হবে।টেক্সি ড্রাইভারকে গন্তব্য বলে দিলাম।পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কেএলসিসি থেকে টিকেট নিয়ে মসজিদ জামেক গিয়ে হোটেল খুজবো।মিনিট দশেক এর মধ্যে টুইনটাউয়ার পৌছে গেলাম। টেক্সী ড্রাইভার ২৫ রিংগিত ভাড়া চাইলো।আমার বিষয়টা খটকা লাগলো।আমি মিটার দেখতে চাইলাম। এবার শুরু হলো বাড়াবাড়ি।আসলে সে মিটারই চালু করে নাই। হট্টগোল দেখে কয়েকজন বাংগালী এগিয়ে এলো।আমরা ব্যাপারটা খুলে বললাম।ওরা মালেয় ভাষা জানে।ড্রাইভারকে বুজানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু সে নারাজ। অগ্যতা ২৫ রিংগিত দিতে হলো।পরে জানতে পারলাম নাইট চার্জ সহ ভাড়া ১০ রিংগিতের বেশি নয়। পুলিশে রিপোর্ট করে লাভ নাই।পুলিশও ঘুষখোর।এখানে সিস্টেম বাংলাদেশের মতই। মিটারটা নামে থাকে চলে দরদামে। যদি মিটারে যানতো দুনিয়া ঘুরে আনবে।
মালেশিয়া ঢুকেই প্রথম অভিজ্ঞতা ভালো হলনা।সিংগাপুরের মত একটা ডিসিপ্লিন দেশের পার্শবর্তী দেশ এরকম হবে ভাবাই আসেনি।যাই হোক কেএলসিসির ভেতরে ঢুকে সিকিউরিটি গার্ডের কাছে ইনফরমেশন চাইলাম।বললো লাইন এখনই ধরতে পারেন কিন্তু টিকেট দেবে সাড়ে আটটায়, দাম ৮০ রিংগিত। কিছুদিন আগেও এন্ট্রি ফ্রি ছিলো। সব মিলে ৩০ মিনিটের টু্র। আমরা ইনফরমেশন নিতে নিতে অনেকে লাইনে দাড়িয়ে গেছে।আমিও লাইনে জয়েন করলাম আর জলিলভাইকে লাগেজ নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে বললাম।
সামনে একটা স্ক্রিনে আজ কয়টায় কতজনকে টিকেট দেবে তার তালিকা দেয়া আছে।এর মানে অনেকে আগের দিন এসে আজকের জন্য টিকেট নিয়ে গেছে। আমি সাড়ে তিনটার টিকেট কাটলাম, হোটেলে একটু ঘুমিয়ে আসা যাবে ভেবে।কেএলসিসি থেকে বের হয়ে জলিলভাইকে নিয়ে মেট্রো সার্ভিসের দিকে গেলাম। মসজিদ জামেক (মসজিদ ইন্ডিয়া নামে পরিচিত) বাসে যাওয়া যায় কিন্তু বাস নাম্বার খুজার মত এনার্জি অবশিষ্ট নাই। এখানকার মেট্রো সার্ভিস ডে ট্রাভেল দেয়না সিংগাপুরের মত। প্রত্যেক জার্নি ই আলাদা টিকেট। সো মেশিন থেকে মসজিদ জামেক টিকেট কেটে উঠে পরলাম।মসজিদ জামেক জায়গাটা য় প্রচুর বাংগালী থাকে। হোটেল খুজতে তেমন কষ্ট হলোনা। ৬০ রিংগিত পার নাইট, মুটামুটি মানের। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে নিচ কাছেই একটা পাকিস্তানি দোকানে পরটা ভাজি আর কোল্ড টি খেলাম ৬ রিংগিত দিয়ে। খাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পরলাম হোটেলে এসে।
দুপুর ২টার দিকে ঘুম থেকে উঠে কেএলসিসি পৌছালাম।হাতে এখনও বেশ কিছু সময় আছে তাই দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়া যাক।কেএলসিসি শপিং সেন্টারে ঢুকে পড়লাম। এ মূহু্তে শপিংমল ঘুরে দেখার ইচ্ছা নাই তাই সাইন দেখে ফুডভেলীতে উঠে পড়লাম।এখানে সবধরনের খাবারের দোকান আছে।জলিল ভাই সোজা ম্যাকডোনাল্ডের দিকে গেলেন,বাকি খাবারে ইন্টারেষ্ট নাই। আমি চাইনিজ একটা মেনু নিলাম। খাওয়া শেষ হলে নিদিষ্ট স্থানে গিয়ে হাজিরা দিলাম টুইনটাউয়ারে উঠার জন্য। ওরা ৩০ জনকে দুটা গ্রুপে ভাগ করে ১৫ মিনিট ব্যবধানে উঠাবে। প্রতি ১৫জনের সাথে একজন করে গাইড আছে। উঠার আগে ৫ মিনিটের সিকিউরিটি প্রেজেনটাশান স্লাইড।কেমেরা ছাড়া বাকিসব জমা দিয়ে উঠতে হবে। দোয়াদুরুদ পড়ে লিফটে উঠে পড়লাম । লিফটের চারপাশ প্রজেক্টরের স্লাইড দেয়া। আমরা কত দ্রূত উঠছি তা গোপন করার ব্যবস্থা। লিফটের কাউন্টডাউনের সাথে ঘড়ি মিলিয়ে দেখলাম। ১ সেকেন্ডে ১তলা উঠছি। ৪৩ তলায় উঠে লিফট থামলো, কানে কেমন একটা অনুভব করলাম। গাইড সবাইকে নিয়ে গেলেন দুইটাউয়ারের সংযোগস্থলে। সে এক অপরূপ দৃশ্য। পুরা কুয়ালালামপুর আমার চোখের সামনে।এখানে ১৫ মিনিট থাকা যাবে দৃশ্য উপভোগ আর ছবি তোলার জন্য। প্রথমেই কিছু ছবি তুলে নিলাম। এবার দাড়িয়ে দাড়িয়ে দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম। হাতে পায়ে একটা কম্পন অনুভব করলাম।জলিল ভাইতো চিন্তিত হয়ে বসে পড়লেন, ভেবেছেন উনার প্রেশার বেড়েছে। আমি তাকে উচ্চতার ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম। এত উচ্চতায় বাতাসের বেগ অনেক বেশী থাকে তাই কম্পন হতেই পারে।১৫ মিনিট কখন শেষ হয়ে গেছে বুজলামনা গাইড সবাইকে নিয়ে লিফটে চড়লেন। এবার আরো উপরে উঠবো। লিফট ৮৬ তলায় এসে থামলো। এখান থেকে অনেক বড় এলাকা নজরে আসে।এ জায়গাটা ইনফরমেশন সেন্টারের মত। কখন কিভাবে এই টুইন টাউয়ার নিমান হয় তার ভিডিও আছে । ছবি তোলা শেষ করে বাইরের দৃশ্য অবলোকন করলাম।মিনিট ১৫ পর গাইড ডাক দিলেন এবার যেতে হবে।লিফট দিয়ে সোজা নিচে নেমে আসলাম। মাথা কেমন ভনভন করছে। মনে হলো সপ্ন ভেঙ্গে গেছে।
এবার কেএলসিসি শপিংমল ঘুরে দেখার পালা। প্রতিটি তলা অনেক বিশাল আর সবধরনের ব্রান্ড দেশীবিদেশী দোকান। জিনিস যেমন ব্রান্ডের দামও তেমন মাশাল্লা। আমি শুধু দেখেই গেলাম।সবচেয়ে মজা পেলাম ব্রান্ডের টিভি দোকানগুলোতে গিয়ে। এত সস্তায় এলইডি টিভি ভাবাই যায়না। কিন্তু ট্যাক্স এর বিশাল অংকের কথা চিন্তা করে টিভি কেনার কথা বাদ দিলাম।কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে কেএলসিসির পেছনে চলে এলাম।ইতিমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আলোক ঝলমল ফোয়ারার খেলা শুরু হলো। বসে বসে দেখলাম অনেক্ষণ। এরপর ডিনার করে হোটেলে চলে এলাম। কাল যাবো গেন্টিং হাইল্যান্ড।
---------------------------------------------------
অস্থির হইয়েননা, আরো আইতাছে