(১)
শিশু সন্তানটিকে নিয়ে মায়ের আশাটা একটু বেশিই ছিল হয়তো। খুব সকালে আদর করে সাজিয়ে গুছিয়ে ভর্তিযুদ্ধে হাজির করেছিলেন অবুঝ শিশুটিকে। শহরের নামকরা স্কুল এটা। যে করেই হোক এই স্কুলেই ভর্তি হতে হবে তাকে। গত প্রায় একটি বছর ঘামঝরানো প্রচেষ্টায় শিশুটিকে গড়ে তুলেছেন তিনি। কোচিং করিয়েছেন, হাউজ টিউটর রেখেছেন আর নিজের নিবিড় তত্ত্বাবধান তো রয়েছেই।
শিশু সন্তানটি হয়তো ভর্তিযুদ্ধের এই গুরুত্ব ততটা বুঝতে পারে না যতটা বুঝেন তার মা। স্কুলে আসবার পথে তাই এই যুদ্ধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শিশুটির সামনে বর্ণনা করেন তিনি। স্কুল ফিল্ডে হাজির হয়ে হাজারো শিশুর উপস্থিতি আর তাদের মায়েদের উৎকণ্ঠাভরা মুখ দেখে শিশুটি তার মায়ের বক্তব্যের যথার্থতা খুঁজে পায়। এতদিন না বুঝে আসলেও এতক্ষণে তার ঠিকই বুঝে আসে যে, এ এক রণক্ষেত্র!
(২)
পরীক্ষার দু'দিন পর আজ ছিল রেজাল্ট দেবার তারিখ। যথাসময়ে মা তার শিশু সন্তানটিকে নিয়ে হাজির হন স্বপ্নের সেই স্কুলে যেখানে ভর্তি না হলে শিশুটির ভবিষ্যৎ হয়ে পড়বে অন্ধকার! যেতে যেতে তিনি ভাবেন, যদি তার সন্তানটি চান্স না পায়...!
নাহ! তিনি এটি ভাবতে পারেন না। চান্স পেতেই হবে তার সন্তানকে এবং এই স্কুলেই!
স্কুলের গেটে নেমেই নিজেকে সম্বরণ করতে পারেন না তিনি। অনেকটা দৌঁড় দিয়ে তাই চলে যান নোটিশ বোর্ডটির দিকে যেখানে তার আগেই আরো অনেক কৌতূহলী মায়েরা ভিড় জমিয়ে আছেন। ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যান তিনি। শিশুটিও মাকে অনুসরণ করে। দুরু দুরু বুকে প্রহর গুণে মায়ের মুখ থেকে ভালো কিছু শোনার প্রত্যাশায়। কয়েক মিনিট পেরিয়ে যায়। কিন্তু তার মা তার দিকে তাকায় না। কোলে নিয়ে চুমু দিয়ে আদর করে দেয় না। মা শুধু নিষ্পলক তাকিয়ে থাকেন সেই বোর্ডটির দিকে। বোর্ডটি বোধ হয় আজ তার সাথে বড্ড পরিহাস করে...! খানিক পরেই চোখটা ঝাপসা হয়ে ওঠে তার। ভিড়ের মধ্যেই হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন অন্য মায়েদের ওপর।
ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে শিশু সন্তানটি। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তার মায়ের সেন্সলেস চেহারার দিকে। কিছু ফোটে না তার মুখে।
মায়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণ না করতে পারার অমার্জনীয় অপরাধে অবুঝ শিশুটিও ধপাস করে বসে পড়ে মাটির ওপর!
(একটি বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪৪