কথা ছিল তুমি ফুল তুলে আনবে, তোমার ঐ লাউ-ডগা আঙ্গুলে
তুমি ফুল তুলে আনবে ৷ একটি বা দু’টি গোলাপ কিংবা গন্ধরাজ ৷
কথা ছিল তোমার সরু আর জীবন্ত আঙ্গুলগুলো, সস্নেহে বিলি কাটবে
মা বা অগ্রজার চুলে, কোন অলস দ্বিপ্রহরে বা শীতের শেষ সকালে ৷
কথা ছিল তুমি স্বপ্ন দেখবে, সত্যি স্বপ্ন, স্বপ্ন হলেও যা সত্যি -
এমন কিছু নয় সাদা-মাটা স্বপ্ন, বয়ঃসন্ধিতে যা সকলেই দেখে থাকে ৷
যে স্বপ্নের দাবীও যৎসামান্য, ধরার জন্য দু’টি শক্ত হাত,
শত বিঘা জমি নয়, শুধু পুরুষ-বুকের এক টুকরা জমিন ৷
ঝড়-ঝঞ্জায় বা আবেগে নিভৃতে কেবল নিজের মুখটুকু রাখার মত
একান্ত নিজস্ব, পুরুষ-বুকের এক টুকরা জমিন ৷
আরো কথা ছিল তুমি হবে ধরিত্রীর মতো, একই অঙ্গে তোমার
অনেক রূপ থাকবে - গ্রীস্ম, বসন্ত, শরৎ হেমন্ত সবই থাকবে ৷
ধরিত্রীর মতই তুমি হবে সকল উত্তাপ হরণকারিনী শীতল আশ্রয় -
তোমার একান্ত আপন সকলের নিভৃত আশ্রয় ও সীমিত প্রশ্রয় ৷
তবু, কথা ছিল তুমি হবে মখমলের পুটলিতে সযত্নে তুলে রাখা
আতরের মত - নিজের সুগন্ধ ছড়াবে কেবল একজনের জন্য
যে তোমাকে সযত্নে, কোমল মখমলে মুড়ে রাখবে - আর যখনি ইচছা
বা অবকাশ হবে, মোড়ক খুলে তোমায় দেখবে অমূল্য রত্ন ভেবে ৷
কিন্তু তা হলো না, তুমি ভুল স্বপ্ন দেখলে, একটুকরো ঘরের কোণ নয়,
তুমি ভুল স্বপ্ন দেখলে গোটা পৃথিবীর ৷ এমন তো কথা ছিল না!
পুরুষ-বুকের ছোট্ট এক টুকরা জমিন নয়, তুমি স্বপ্ন দেখলে
শত শত বিঘা জমির ৷ এমন তো কথা ছিল না!
মখমলে মুড়ে রাখা আতর হতে চাইলে না তুমি, বরং হতে চাইলে
দুর্গন্ধ ঢেকে রাখা স্প্রে ৷ এমনও তো কথা ছিল না!
তুমি আজ যোদ্ধা বা বৈমানিক - বাস চালক বা মাথায় সুড়কি বওয়া যোগালী,
তুমি ক্যাট-ওয়াকে হাঁটা নির্লজ্জ উর্বশী ৷ কিন্তু এমন তো কথা ছিল না!
তুমি পেশাজীবি মহিলা-নিবাসে নির্ঘুম রাত কাটানো মধ্য-যৌবনা সিঙ্গ্ল
অথবা হাল জমানার বদমায়েশদের গোপন অভিলাষের "আপু”৷
তুমি আরো অনেক কিছুই, শুধু স্বভাবতই যা হবার কথা ছিল তা ছাড়া ৷
গোটা পৃথিবীই আজ বুঝি তোমার, কেবল ঘরের ঐ ছোট্ট কোণটুকু ছাড়া ৷
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৪০