ফের রাজনীতিতে নামার ব্যাপারে মুখে ‘না, না’ বললেও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে রাজনীতিই করছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক বিষয়ে সরাসরি বেশ কয়েকটি বক্তব্য দিয়ে আলোচনার খোরাক হয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের এই প্রতিষ্ঠাতা। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ নিয়েও সরকারের কড়া সমালোচনা করে কথা বলেছেন তিনি। এ ছাড়া বিরোধী দলসহ সরকারবিরোধী রাজনীতিকদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠকও করতে দেখা গেছে তাকে। আর তার বক্তব্যের বিপরীতে সরব হয়েছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রীও। তারা ড. ইউনূসকে তুলোধুনো করতে ছাড়ছেন না।
সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, ড. ইউনূস কৌশলী রাজনীতিবিদ। তবে তিনি রাজনীতিবিদদের পোশাক পরতে চান না। এতোদিন তিনি ‘ঘোমটা’ পরেছিলেন। এখন তার সেই ঘোমটা উন্মোচিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সরকার সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বারবার বলে এলেও বিরোধী দল এর বিরোধিতা করছে। আর গত বৃহস্পতিবার ড. ইউনূস বিরোধী দলের দাবির মতোই বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকারের বিকল্প নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনকে ঠিক একই কথা বলেন। অবশ্য ২০০৬ সালে বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার প্রশ্নে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ যখন বিরোধীতা করেছিল; তখন ড. ইউনূস বলেছিলেন সংবিধানের বাইরে কিছু করা যাবে না।
রাজধানীর মিরপুরে ইউনূস সেন্টারে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ড. ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, দেশে অশান্তি দূর করতে ও সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে আগামী সংসদ নির্বাচন হওয়ার সুযোগ নেই। যতো দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। তিনি বলেন, দেশে অশান্তির কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। এ অশান্তি দেশের মানুষের প্রাপ্য নয়, কারো কারো ইচ্ছার কারণে, কোনো দল বা দলসমূহের ইচ্ছার কারণে যদি অশান্তির সৃষ্টি হয় তাহলে দেশের মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। আগের দিন ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন দেখা করতে ইউনূস সেন্টারে গেলে
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ বক্তব্যের জের ধরে তাকে ‘কৌশলী রাজনীতিবিদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি রাজনীতিবিদদের পোশাক পরতে চান না উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন তিনি যা করছেন, তা একান্তই রাজনীতিবিদের কাজ, সম্পূর্ণভাবে নীতিবর্জিত এবং গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার একটি উদ্যোগ।
গত বুধবার ভাসানী পরিষদের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে ড. ইউনূসের দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এ কথা
বলেন। ভাসানী পরিষদের নেতাদের ড. ইউনূস বলেন, যারা গ্রামীণ ব্যাংককে ভাঙতে চায়, দেশের মানুষ ও নাগরিকদের প্রতি তাদের মমত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাদের হাতে কি দেশ তুলে দেয়া যায়? ক্ষমতাসীন দলের প্রতি ইঙ্গিত করে তাদের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব না দেয়ার জন্যও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান ইউনূস।
এদিকে ড. ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে দেশের প্রধান দুদল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতা দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়ে ড. ইউনূস বিএনপির পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। কারণ সরকার সংবিধানের আলোকে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন করবে। আর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ড. ইউনূস কোনো দলের পক্ষে-বিপক্ষে নয়, তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তার এই অবস্থান সব সময়ের।
ড. ইউনূসের রাজনৈতিক বক্তব্যের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, তিনি দীর্ঘদিন পর ঘোমটা খুলে রাজনীতিতে এসেছেন, এজন্য আমরা তাকে অভিনন্দন, ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তিনি ওয়ান ইলেভেনের সময় ফখরুদ্দিন ও মইনুদ্দিনকে নিয়ে রাজনীতির মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু দুদিনের ব্যবধানে তিনি মাঠ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এবার আশা করবো তিনি রাজনীতির মাঠ ছেড়ে চলে যাবেন না। আমরাও তার সঙ্গে রাজনৈতিক ভাষায় কথা বলবো।
অন্যদিকে আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ড. ইউনূসের চেয়ে জামাত-শিবির অনেক ভালো। তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুযারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে জামাত-শিবির ও শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত ড. ইউনূস কোনো দিবসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বলে কেউ বলতে পারবে না। ড. ইউনূসের রাজনৈতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে কামরুল বলেন, ইউনূস নিজেই বক্তব্য দিয়ে নিজের স্বরূপ উন্মোচিত করেছেন। বিশ্বের কোনো নোবেল বিজয়ী এতো অল্প সময়ে বিতর্কিত হয়েছেন বলে আমার জানা নেই।