somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের বিজ্ঞানী ফিজিক্সে নোবেল পাবে! আঃ! কি আনন্দ!

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ফোনে ঘুম ভাঙলো। ইন্টারন্যাশনাল কল। বুক ধক করে উঠে। অসময়ে ইন্টারন্যাশনাল কল মানেই দুঃসংবাদ!
ফোন রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে সুইডিশ উচ্চারনে ইংলিশ শোনা গেল। মেয়েলি কন্ঠ।
“হ্যালো, মঞ্জুর চৌধুরী বলছেন?”
“জ্বি।”
“আমি সুজানা স্মিথ, নোবেল কমিটি থেকে বলছি।”
“কি বেল থেকে বলছেন?”
“নোবেল। ইউ নো, ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার, যা পেলে মানুষ ধন্য হয়ে যায়।”
“রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন আর ড ইউনুস যেটা পেয়েছেন, সেটা?”
“জ্বি।”
“শেখ হাসিনা যেটা পাননি, সেই নোবেল?”
“এইতো ধরতে পেরেছো।”
“ফোন রাখ গাঞ্জাখোর!”
ধমক দিয়ে ফোন রেখে দিলাম। নোবেল কমিটি আমার কাছে ফোন করবে কোন সুখে? নিশ্চই স্ক্যাম। বলবে, “তোমাকে আমরা নোবেল দিব, কিন্তু সেজন্য ফি হিসেবে পাঁচ হাজার ডলার এডভান্স দিতে হবে।”
আজকাল এইসব স্ক্যামারের যন্ত্রনায় অপরিচিত নাম্বারের ফোন কল ধরতে ইচ্ছা করেনা।
সাথে সাথে আবার ফোন বেজে উঠলো, “হ্যালো, তুমি মনে হয় বিশ্বাস করছো না। আমরা সত্যি নোবেল কমিটি থেকে ফোন করেছি। তোমার বিশেষ সাহায্য প্রয়োজন।”
“কি সাহায্য?” যদিও বিশ্বাস করিনি, তবু মুখ ফস্কে বেরিয়ে এলো।
“তোমাদের দেশের এক বিজ্ঞানীকে খুঁজে বের করতে হবে। ফিজিক্স শাখায় ওকে এ বছরের নোবেল দেয়া হবে। ওর যুগান্তকারী আবিষ্কারকে রেকগনাইজ করে নোবেল কমিটি ধন্য হতে চায়।”
মাথা চুলকে বুঝার চেষ্টা করলাম কোন বিজ্ঞানী কি আবিষ্কার করে ফেলেছে যে আজকে নোবেল কমিটি ওকে খুঁজছে?
“আমি কিভাবে তোমাদের সাহায্য করবো?”
“আমরা তোমার দেশের অনেক ফেসবুক ইউজারের সাথেই যোগাযোগ করছি। এলগরিদম ব্যবহার করে তোমার নামও আমরা খুঁজে পেয়েছি। রেজাল্ট বলছে যে তোমার নিউজফিডে একটা থিওরি খুব শেয়ার হচ্ছে। নিউটনের গ্র্যাভিটি আবিষ্কারের পর এটাই বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। ফিজিক্সের মোড় ঘুরিয়ে দিবে। আমরা সেই থিওরির আবিষ্কারককেই খুঁজছি। হয়তো তুমি আমাদের সাহায্য করতে পারবে।”
আমি চুপ করে আছি বলে মহিলা বলল, “তুমি নিউটনের ল গুলো জানোতো?”
“না, আমি সায়েন্সের স্টুডেন্ট। পরে একাউন্টিংয়ে এসেছি। ল নিয়ে পড়াশোনা করি নাই।”
মহিলা একটু থমকে গেল। তারপর হাসতে হাসতে বলল, “তোমার রসবোধ আছে। হাহাহা। আই লাইক ইট। এখন আমাকে বল যে “ইলেকট্রিক চেয়ার মেটালের তৈরী হয়না, কাঠের হতে হয়। নাহলে ফ্লোরে দাঁড়ানো আশেপাশের সবাই শক খায়।” - এই বৈজ্ঞানিক থিওরি কে আবিষ্কার করেছে?”
খাইছে! বলে কি মহিলা!
আমি বললাম, “তুমি নিশ্চিত এমন থিওরি কেউ আবিষ্কার করেছে?”
“অবশ্যই। বাঙালিদের সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গেছে এই থিওরিতে। এবং যারাই পোস্ট করছে, তারাই দাবি করছে অপর পক্ষ মূর্খ। ড ইউনূসের আয়নাঘর নাটকের স্ক্রিপ্ট অতি দুর্বল এবং কোন মূর্খ সেটা লিখেছে। এই সামান্য বৈজ্ঞানিক লজিকের ব্যাপারেও যার জ্ঞান নেই! এ নিয়ে খুউব হাসি তামাশা করছে!”
আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।
“হোলি কাউ! বলো কি!”
“অবশ্যই! একটু আগে মিস্টার স্টিভেন ওয়েইনবার্গ আমাদের অফিসে ফোন করে এই কথা বললেন। তিনি নিজেও মূর্খের ক্যাটাগরিতে পড়ে গেছেন বলে একটু মর্মাহত হয়েছেন।”
“উনি একা না, আমিও একই কাতারে পড়েছি। দাঁড়াও, আমি দেখি কি করতে পারি।”
ফোন রেখে গভীর ভাবনায় পড়ে গেলাম। আমার এখনও মনে আছে প্রাইমারি স্কুলের বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছি প্লাস্টিক ও কাঠের মতন সিমেন্টের ফ্লোরও বিদ্যুৎ অপরিবাহী। যদি না তাতে পানি ছড়ানো হয়, যদি না সেটা ভেজা বা স্যাতস্যাতে হয়, তাহলে তা দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে না।
ক্লাস নাইনে উঠে ফিজিক্স নিলাম, সেই বইয়েও একই কথাই লেখা ছিল। আরেকটু ডিটেইলে। সিমেন্ট সাধারণত একটি **অপরিবাহী (ইনসুলেটর)** পদার্থ। এর মানে হল এটি বিদ্যুতের প্রবাহকে সহজে অনুমতি দেয় না। সিমেন্টের গঠনগত বৈশিষ্ট্য এবং এর মধ্যে বিদ্যমান উপাদানগুলি বিদ্যুতের প্রবাহকে বাধা দেয়।
এইচএসসির ফিজিক্সেও দেখি একই কথা লেখা ছিল। ওমা, ইউনিভার্সিটিতে উঠে ফিজিক্স নিয়েছি, সেই বইয়েও লেখা যে সিমেন্টে প্রধানত সিলিকেট এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ থাকে, যা বিদ্যুতের জন্য উচ্চ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও, সিমেন্ট শুষ্ক অবস্থায় থাকলে এর বিদ্যুৎ পরিবাহিতা আরও কমে যায়। তবে, যদি সিমেন্ট ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে হয়, তাহলে এর মধ্যে বিদ্যুৎ কিছুটা প্রবাহিত হতে পারে, কারণ জল বিদ্যুতের একটি ভাল পরিবাহী। কিন্তু সাধারণভাবে শুষ্ক সিমেন্টের ফ্লোর বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে দেয় না।
এই বৈশিষ্ট্যের কারণে সিমেন্টকে বিল্ডিং নির্মাণে নিরাপদ এবং উপযুক্ত পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
তা বাংলাদেশের বিজ্ঞানী এমন বিদ্যুৎ আবিষ্কার করে ফেলেছে যা লোহার চেয়ার থেকে সিমেন্টের শুকনো ফ্লোর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আশেপাশের সবাইকেই ঝাকানাকা শক দেয়? কে এই মহান বিজ্ঞানী? এই কারণেই ওকে নোবেল কমিটি খুঁজছে!
আমার জীবনের যাবতীয় পড়াশোনা মিথ্যা প্রমাণিত হলো? বাপ্পারাজের মতন বলতে ইচ্ছা করছে, “এ আমি বিশ্বাস করিনাআআআআআ!”
আবার অন্যদিকে খুশিও লাগছে। দেশের বিজ্ঞানী ফিজিক্সে নোবেল পাবে! আঃ! কি আনন্দ!
তা আপনারা যদি সেই বিজ্ঞানীর নাম ঠিকানা একটু জানাতেন, আমার বিশেষ উপকার হতো। ভদ্রমহিলা এখনও ফোন ধরে আছেন। ইন্টারন্যাশনাল কলে বিল উঠছে।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩৫
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরাকানে 'স্বাধীন মুসলিম রাজ্য' প্রস্তাব কতটা বাস্তবসম্মত ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:১২


বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী সম্প্রতি একটি ‘স্বাধীন মুসলিম রাজ্য’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যা আসলে হাস্যকর এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা, আরাকান আর্মি , এবং চীনের ভূ-রাজনীতির ব্যাপারে সম্পূর্ণ অজ্ঞতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

১০০ টা নমরুদ আর ১০০ টা ফেরাউন এক হলেও একজন হাসিনার সমান নৃশংস হওয়া সম্ভব ছিলো না!!

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:৫২

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জন্য কবর খুঁড়তে হয়েছিলো ২ টা।
একটা না।
ফাঁসির ৪ ঘন্টা আগেও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী জানতেন না, আজকেই তাকে যেতে হবে।
ফ্যামিলি যখন শেষবারের মতো দেখা করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিন নিয়ে এতো লাফালাফির কি আছে?

লিখেছেন অপলক , ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:১০

ফিলিস্তিনে গত ৩ বছরে মারা গেছে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫১ হাজার। বাংলাদেশে ১৯৭১এ মাত্র ৯মাসে মারা গেছে ৩ লক্ষ, যদিও শেখ মুজিব বলেছিল, ৩০ লক্ষ।
কোথায় ৫১ হাজার কোথায় ৩০ লক্ষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন ...

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:১৯





****
আরো দেখতে চাইলে ভেতরে আসেন ...







...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুগে-গুজবে বাংগালী....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৩

হুজুগে-গুজবে বাংগালী....

"হুজুগে-গুজবে বাংগালী"- বলে আমাদের একটা দুর্নাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। গুজব আর হুজুগ যমজ ভাই।
গুজব বা হুজুগের সবকিছু মানুষ কিনতে পারে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্যোতনা দেয় অন্ধ বিশ্বাস।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×