somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হন্টেড হোটেল।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হন্টেড হোটেল।
মঞ্জুর চৌধুরী

বিশ্বাসের দিক দিয়ে আমি প্রচন্ড আস্তিক হলেও ভূত-প্রেতের ব্যাপারে আমাকে নাস্তিক বলা যেতেই পারে। মুসলিম হিসেবে জ্বিনে বিশ্বাস করি, তবে এও জানি, আমাদের সমাজে জ্বিনের নামে যেসব কাহিনী প্রচার হয়, এর ৯৯ অথবা ১০০ শতাংশই ভুয়া মনগড়া, অথবা মানসিক রোগ, কিংবা কোন রোগের ভুল ব্যাখ্যা।
তারপরেও ভূত আমার অত্যন্ত আগ্রহের একটি বিষয়। ভূতের ভাল গল্প পড়তে ভাল লাগে, ভূতের ভাল সিনেমা দেখতে ভাল লাগে এবং মানুষের "বাস্তব ভৌতিক" অভিজ্ঞতা শোনার সুযোগ পেলেতো কথাই নাই।
তা নিজের জীবনে কিছু উদ্ভট ঘটনা ঘটলেও সেগুলোকে ঠিক "ভৌতিক" বলার উপায় নাই। একটি ভৌতিক অভিজ্ঞতা হলে ভাল একটা গল্প বা উপন্যাস সেই কবেই লিখে ফেলতাম!
তা সেই ভৌতিক অভিজ্ঞতা পেতে সেদিন আমাদের টেক্সাসের দক্ষিণের একটি শহরে গেলাম। সঙ্গত কারণেই নাম প্রকাশ করতে চাইছি না, তবে টেক্সাসের যে কেউ একটু পড়লেই বুঝবেন কোন শহরের কথা আমি বলছি।
শহরটা মেক্সিকো উপসাগরের কোলে একটি দ্বীপ। সমুদ্র সৈকত থাকায় পর্যটন নগরীও। যদিও আমেরিকার অন্যান্য অতি বিখ্যাত কিছু সমুদ্রসৈকত নগরীর তুলনায় এটি সেভাবে জনপ্রিয় না। কিছুদিন আগেও পানিতে সামুদ্রিক শ্যাওলার গন্ধ পাওয়া যেত।
এইবার যে গেলাম, দেখলাম পানি বেশ পরিষ্কার। বাচ্চারাও সমুদ্রে সাঁতার কাটাকাটি করে বেশ আনন্দ পেয়েছে।
আমার জন্ম চিটাগংয়ে, পতেঙ্গা ছিল আমাদের ঘুরেবেড়াবার জায়গা। পাহাড় থেকে সমুদ্রের বুকে বড় বড় জাহাজ দেখা ছিল আমাদের বৈকালিক বিনোদন। বঙ্গোপসাগর যখন দিন শেষে ক্লান্ত সূর্যটাকে কপ করে গিলে ফেলতো, বাড়িতে ফিরতাম ঠিক তার পরেই।
বড় হয়েছি সিলেটে। আমার বাড়ির ছাদ থেকে লাক্কাতুরা চা বাগান তখন দেখা যেত। পাশেই মিতালি আবাসিক এলাকা ছিল টিলার উপরে। প্রায়ই বিকালে ঐ ছোট্ট পাহাড়ি টিলার উপর ক্রিকেট খেলতে যেতাম। কিছুদিন পরপর পাহাড়, সমুদ্র ইত্যাদি না দেখলে মনটা কেমন হাহাকার করে। তাই আমার শহর ডালাস থেকে পাঁচ-ছয় ঘন্টার একটা রোড ট্রিপে বেরিয়ে যাই।
তা এইবার ভাবলাম কেননা একটু এডভ্যাঞ্চারাস হওয়া যাক।
যে শহরে গেলাম সেখানে একটি অতি বিখ্যাত ভুতুড়ে হোটেল আছে। কেননা এইবার সেই হোটেলেই থাকা যাক!
খুব বেশি হলে কি হবে? ভূতের দেখাইতো পাব? তাহলে একটা গল্পও লেখা হয়ে যাবে। আর নাহলে চুপচাপ সমুদ্রে গোসল করে শহরের দেশ বিখ্যাত কাবাবের দোকানে কাবাব-পরোটা খেয়ে বাড়ি ফিরে আসবো।
বাসার কাউকে জানালাম না যে আমাদের হোটেলটি হন্টেড। বললে আর যাওয়া হবেনা।
তা যাওয়ার জন্য রওনা দিতেই গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেল। আস্ত বড় একটা গজাল ঢুকেছে।
লক্ষণটা শুভ নাকি অশুভ বুঝতে পারলাম না। কারন সাধারণত গাড়ির এই রোগ নিয়ে "ফ্র্যাঞ্চাইজড" টায়ার শপে গেলে ওরা টায়ার পাল্টে আস্ত নতুন টায়ার ধরিয়ে দেয়। কমসেকম দেড় দুইশ ডলারের ধাক্কা। সাথে ওরা এমনভাবে ভয় দেখায় যে এই মুহূর্তে আমার চারটা টায়ারই না পাল্টালে ভয়াবহ বিপদে পড়বো। আর কিছুক্ষন ড্রাইভ করলেই আমার বাকি তিন টায়ারও ফেটে যাবে। রাস্তায় তখন কোথায় টায়ারের দোকান খুঁজে পাব? তারপরে যখন বুঝে আমি আতঙ্কিত হয়েছি, তখন ওরা আস্বস্ত করতে বলে "আমাদের স্পেশাল অফার চলছে। আজকেই সেটা এক্সপায়ার করবে। আজকে তুমি চারটা টায়ার কিনলে একশো ডলার ছাড় পাবে।"
এইগুলি আসলে সবই সেলস টেকনিক। আমেরিকান ব্যবসায়ীরা এই ধান্দায় ওস্তাদ! ওদের সারা বছর জুড়েই "বিশেষ ছাড়" চলে। এমনভাবে আপনার সামনে প্রচার করবে যেন এখন এই মুহূর্তে না কিনলে আপনি আর জীবনেও এই দামে কিনতে পারবেন না। অথচ বাস্তব অভিজ্ঞতা হচ্ছে, বাতিল মাল ছাড়া নিজের পছন্দের জিনিস বছরের যেকোন দিনই কিনিনা কেন, দাম একই পড়ে।
তা পথের ধারে একটি অখ্যাত টায়ার শপে (স্থানীয় ভাসায় এমন দোকানকে "মামা-পাপা'স শপ" বলে) গেলে ওরা বেশ গভীরভাবে সমস্যা পর্যবেক্ষন করে বলে "সারাই করতে দশ ডলার লাগবে।"
তাও এমনভাবে বলল যে আমি যদি বলি "এত দাম! ফাইজলামি পাইছো!" তাহলে সাথে সাথে আট ডলারে দিয়ে দিবে।
আমার আতংক ছিল দেড়শো-দুইশ ডলার না চলে যায়! আমি সাথে সাথে বললাম, "তুমি নিশ্চিত যে এতেই সেরে উঠবে? টায়ার পাল্টানো লাগবে না?"
সে আরও অবাক হয়ে বলল, "শুধু শুধু টায়ার পাল্টাবে কেন? এই টায়ারে আরও কমসে কম তিরিশ হাজার মাইল চালাতে পারবে।"
"ঠিক আছে।"
ওরা টায়ার সারাই করে দিল। সেই টায়ার আজও টিকে আছে।
আমি একটা ভাল টায়ার শপ পেয়ে গেলাম। ওসব বিখ্যাত টায়ার গ্যারাজগুলোতে আর যাব না। হাজার খানেক ডলার বেঁচে গেল।
যাত্রার শুরুতে এই ব্যাঘাতটা তাহলে খুব একটা মন্দ সংবাদ নিয়ে আসেনি।

তা সেই শহর পর্যন্ত যেতে পথে আর কোন সমস্যা হলো না। বাকি'স নামের বিখ্যাত গ্যাস স্টেশনে গাড়ির জন্য তেল নিলাম। এত বড় গ্যাস স্টেশন যে হওয়া সম্ভব সেটা এই গ্যাস স্টেশনগুলো না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। যেন আস্ত একটা সুপার শপ। যখনই যাবেন, দেখবেন লোকে গিজগিজ করছে। সেখানেই বাচ্চাদের বাথরুম করালাম। ওরা হাল্কা খাওয়া দাওয়াও করলো। আমি কফি খেলাম না। আমার বৌ দুর্দান্ত কফি বানায়। ওর কফি খাওয়ার পর বাজারি কফি খেতে অরূচিবোধ হয়। লং ড্রাইভে তাই "রেডবুল"ই আমার জ্বালানি।
শহরের অতি বিখ্যাত এক বাঙালি দোকানে ভাত খেলাম। ভাত, মাছ, মুরগি, মিষ্টি ইত্যাদি। যদিও এরচেয়ে মজাদার বাঙালি খাবারের দোকান আমার ডালাসেই আছে। আমার আশা ছিল নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস বা জ্যামাইকার বাঙালি রেস্টুরেন্টের মতন স্বাদ হবে। ধারে কাছেও না। শুধু শুধু সময় আর টাকা নষ্ট মনে হলো।
অবশেষে হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।

দেখে অবশ্য বুঝার উপায়ই নেই এইটাই সেই কুখ্যাত ভুতুড়ে হোটেল। রসিক আমেরিকানরা থিম অনুযায়ী ব্যবসা সাজায়। হন্টেড হাউজগুলো এমনভাবেই সাজানো হয় যে দেখেই মনে হয় এখুনি টেবিলের নিচ থেকে কোন কাটা হাত উঠে এসে আমার হাত খাবলে ধরবে।
কিন্তু এই হোটেলটির মধ্যে তেমন কিছুই পেলাম না। যদিও দেখেই বুঝা যায় এর বয়স এক শতাব্দীর কম হবেনা। ভিতরে ফ্লোরের ডিজাইন, আসবাবপত্র, স্যান্ডেলিয়ের ইত্যাদি সবই যেন পুরানো যুগের গৌরবময় ইতিহাসের দীর্ঘশ্বাস। রিসিপশনে সুন্দর দুজন তরুণ তরুণী, হাসিমুখে চেক ইন/চেক আউট করছে। লবিতে অতিথির আনাগোনা। আমরা নাম বলতেই আমাদের রুম নম্বর বলে দিল। কোন সমস্যাই হলো না।
বাচ্চারা ঘ্যান ঘ্যান করতে শুরু করলো কখন সমুদ্রে যাব। তখন রাত হয়ে গিয়েছিল। বললাম যে সকালে উঠেই যাব। কিন্তু ওরা মানতে নারাজ। ওদেরকে এখুনি নিয়ে যেতে হবে। ধমক ধামক দিয়ে শান্ত করতে হলো।
ক্ষিধে পেয়েছিল প্রচুর। গেলাম শহরের বিখ্যাত কিছু বোট রেস্টুরেন্টে। এগুলো হচ্ছে বড় বড় বোট/জাহাজের মধ্যে স্থাপিত কিছু রেস্টুরেন্ট। নোঙর করা থাকে, ramp দিয়ে হেঁটে জাহাজে ঢুকলেই সেটা আস্ত একটা রেস্টুরেন্ট। বিভিন্ন বয়সী, বিভিন্ন জাতের মানুষজন দল বেঁধে কিংবা শুধুই দুজনে খেতে এসেছে। একদিকে চলছে লাইভ মিউজিক। সামনে আছে ডান্সফ্লোর। বিভিন্ন বয়সী নরনারী সুরের তালে শরীর হাত পা দুলাচ্ছে, হুল্লোড় করছে।
আমরা ডেকের একটি টেবিলে বসে খেলাম। সমুদ্র থেকে ভেসে আসছে খোলা হাওয়া। নোনা জলের ঘ্রান মিশে আছে তাতে। সাগরের ঢেউ তালে তালে এসে আছড়ে পড়ছে বোটের দেয়ালে। ওয়েস্টার, চিংড়ি, লবস্টার, ক্র্যাব ইত্যাদি মিলিয়ে একটি সী ফুড প্ল্যাটার আছে যার নাম "ক্যাপ্টেইনস স্পেশাল" - ওটাই অর্ডার করলাম। দাম একটু বেশি গেল। কিন্তু আমিতো আর প্রতিদিন এখানে খেতে আসছি না। এ খাবার আমি ডালাসে কোথায় পাব?
বাচ্চারা সাগর দেখেই খুশি। এই রাতেও সাগরের বড় বড় বিভিন্ন জাতের পাখি পানিতে সাঁতরে বেড়াচ্ছে। ওরা পাখি দেখেও মজা পাচ্ছে।
খাওয়া দাওয়া শেষে রাতে ফিরলাম হোটেলে।

এখন এই হোটেলের ব্যাপারে কিছু প্রচলিত ভৌতিক কাহিনী বলে ফেলা যাক।
হোটেলটি যে বছর নির্মাণ করা হয় এর কয়েক বছর আগেই আস্ত শহরটি একটি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এতে বহু মানুষ নিহত হন। প্রচুর নান এবং এতিম শিশুর কবর হয় এই ভূমিতে। এবং সেই কবরের উপরেই হোটেলটির একটি বড় অংশ গড়ে উঠেছে। লোকে বলে, আজও ওরা সেইসব নান এবং এতিম শিশুগুলোর আত্মার দেখা পায়।
এছাড়াও এখানে আরেক নারীর "অতৃপ্ত" আত্মাও দেখা যায়।
শোনা যায় সেই ভদ্রমহিলা নিজের বাগদত্তের জন্য এই হোটেলেই অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁদের বিয়ের কথা ছিল এই হোটেলে। খবর আসে, তাঁর বাগদত্তের জাহাজটি সাগরে ডুবে গেছে। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তরুণী হবু বধূটি এর জানালা খুলে নিচে লাফ দেয়। ট্র্যাজেডি হচ্ছে, ঘটনার পরেই সেই জাহাজটি তীরে ভিড়ে, এবং বাগদত্ত যুবকটি সুস্থাবস্থায় নেমে আসে। জাহাজডুবির খবরটি আসলে গুজব ছিল।
তা এখনও নাকি হোটেলটিতে সেই মেয়েটির দেখা পাওয়া যায়।
আরও টুকিটাকি গল্প গুজব আছে হোটেলটিকে নিয়ে। তবে আমি এসেছি আজ নিজের কোন গল্প লিখতে।

রাতে হোটেলে ফিরে নিজেদের রুমে ঢুকে শুয়ে পড়লাম। অন্যান্য স্বাভাবিক হোটেলগুলো যেমন হয়ে থাকে, এটিও তেমনই ছিল। কোন আলাদা বৈশিষ্ট্য নেই যা দেখে মনে হবে এটি ভুতুড়ে।
দীর্ঘ পথ ড্রাইভ করে গেছি, সবাই ক্লান্ত ছিলাম। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। আমার ঘুম আসে না। এটিও অস্বাভাবিক কিছু না। বিছানা/বালিশ ইত্যাদি বদল হলে আমার ঘুম আসতে দেরি হয়। ভাবলাম একটা গল্পের বই পড়া যাক। এমন সময়ের জন্য মোবাইল ফোনে কিছু বইয়ের পিডিএফ সেভ করা থাকে। সেগুলোর একটা খোলার জন্য মোবাইল ফোন হাতে নিতেই বৌ জিজ্ঞেস করলো "জেগে আছো?"
"হু।"
"বাবুর খাবারের ব্যাগ এনেছো?"
আমার ছোট ছেলের মাঝরাতে খুব ক্ষুধা পায়। ঘুম ভেঙ্গে উঠলে সে কাঁদে। ওর জন্য ছোটখাটো স্ন্যাকসের ব্যবস্থা তাই রাখতে হয়।
"না, গাড়িতে রয়ে গেছে।"
বৌ এমন একটা নিশ্বাস ফেলল যার মানে হচ্ছে "তোমাকে এতবার বলার পরেও গাড়িতে ফেলে এসেছো? একটা কাজও যদি ঠিকভাবে করতে!"
আমি উঠে দাঁড়ালাম। এমনিতেও ঘুম আসছে না। একটু বাইরের হাওয়া খেয়ে আসা যাক। আর কে জানে, হয়তো সেই মহিলার আত্মার সাথেও করিডোরে বা লিফটে দেখা হয়ে যেতে পারে।
"কি হলো?"
"ব্যাগ নিয়ে আসি।"
"থাক, সকালে আনলেও চলবে।"
"না, উঠেছি যখন, নিয়েই আসি।"
আমি পায়ে স্যান্ডেল চাপিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। পুরো হল খালি। যেন সমস্ত হোটেল ঘুমন্ত। রুম থেকে এলিভেটর পর্যন্ত বেশ খানিকটা পথ। নিচে রিসেপশনের সুন্দর তরুণ তরুণী এখন নেই, এক বৃদ্ধা সেখানে বসে কম্পিউটার মনিটরের সামনে ঝিমুচ্ছেন। হলের দিকে চেয়ারে বসা কিছু মানুষকে দেখলাম। হয়তো হোটেলের অতিথি, সময় কাটাতে নিচে এসে বসেছেন। ঘুম পেলে কামরায় ফিরে যাবেন।
আমি পার্কিং লটে গাড়ি পর্যন্ত গেলাম। শহর এখনও জেগে আছে। আশেপাশের হোটেল, দোকান, রেস্টুরেন্টগুলো থেকে আলো, মানুষের কোলাহল ইত্যাদি ভেসে আসছে। সাগরের বিরামহীন ছন্দময় গর্জনও শোনা যাচ্ছে। হোটেলের সামনেই সৈকত। আমার গোটা জীবনের শখ, বৃদ্ধাবস্থায় চাকরি বাকরি ইত্যাদি থেকে অবসর নিয়ে এমনই সাগরতীরবর্তী কোথাও ছোট্ট একটা বাড়ি নিয়ে সেখানেই শেষ জীবন কাটিয়ে দিব। বারান্দা থেকে, নিজের ঘরের জানালা থেকে সাগর দেখা যাবে। সকাল বিকাল শুধু সমুদ্র দেখবো। স্নায়ুর প্রশান্তির জন্য সমুদ্র আর পাহাড়ের কোন বিকল্প নেই।
এখন মনে হলো, বাড়ি না কিনে একটা হোটেল বা মোটেলেও থাকা যায়। বেশ কিছু আমেরিকান বৃদ্ধ বৃদ্ধা এই কাজটাই করে। ঘর পরিষ্কার করার বা গোছানোর কোন যন্ত্রনা থাকেনা, ইলেক্ট্রিক বিল, গ্যাস বিল, সকালের নাস্তা ইত্যাদি নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। হোটেলে থাকো, সমুদ্র দেখো, একঘেয়েমি চলে আসলে হোটেল পাল্টে ফেল।

আসল ঘটনা ঘটলো রুমে ফেরার সময়ে।

লবি পেরিয়ে এলিভেটরে উঠেই মনে হলো এলিভেটরে আমার সাথে অন্য কেউ আছে। যদিও খালি এলিভেটর, তবু মনে হচ্ছে কেউ একজন আছে। চোখ বন্ধ করলেও আমরা পাশের মানুষের অস্তিত্ব টের পাইনা? ব্যাপারটা ঠিক তেমন।
এমন খেয়ালকে পাত্তা দেয়ার কিছু নেই। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া ক্লান্ত মন। তারউপর ভূতের হোটেল। মস্তিষ্ক একটু চাপতো দিবেই।
নিজের ফ্লোরে এসে ডানদিক বরাবর হাটতে শুরু করেছি। মনে হলো কেউ একজন আছে আমার পেছনে। হাঁটছে না, কারন তেমন পায়ের শব্দ পাচ্ছি না। কিন্তু উপস্থিতি টের পাচ্ছি। মনে হচ্ছে যেন ভেসে ভেসে কেউ আসছে।
পিছন ফিরে তাকালাম। কেউ নেই। নীরব, মানে একেবারেই নিস্তব্ধ। বাতাসেরও শব্দ নেই।
আবার ঘুরে হাঁটতে শুরু করলাম। আবারও একই অনুভূতি। মনে হলো কেউ খুব কাছে ঘেঁষে হাঁটছে।
আবারও পাত্তা দিলাম না। মনের ভূতই আসল ভূত। দেখা যাবে পেছন ফিরলে এইবার কিছু একটা দেখবো।
কিছুক্ষন হাঁটার পর হঠাৎ মনে হলো এই যে আমি এতক্ষন ধরে হাঁটছি, আমার পথ কিন্তু ফুরোচ্ছে না। মানে এলিভেটর থেকে নেমে ডানদিকে পাঁচ কামরা পেরিয়েই আমার ঘর। যতক্ষন ধরে হাঁটলাম, ততক্ষনে আমার পৌঁছে যাওয়ার কথা। আমি একের পর এক ঘর পেরিয়ে যাচ্ছি, অথচ আমার রুম পর্যন্ত আমি যেতে পারছি না। এমনও না যে আমার আশেপাশের ঘরগুলো, দেয়াল, মেঝে, ছাদে ঝোলানো ঝাড়বাতি ইত্যাদি সব স্থির হয়ে আছে। আমি এগোনোর সাথে সাথে সেগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আবার পরমুহূর্তেই সেগুলো সামনে এগিয়ে আসছে। ঠিক যেন একটা লুপের মতন। বৃত্তাকারে আমি ঘুরছি। রুম নাম্বার সাতশো সাত এই যে পার হয়ে এলাম, পরের ঘরটাই হওয়ার কথা সাতশো নয়, অথচ সেটাই আবার সাতশো সাত হয়ে যাচ্ছে। থমকে দাঁড়ালাম। এমন কেন হচ্ছে? আমি পেছনে হাঁটা শুরু করলাম। একই কান্ড। সাতশো সাত আবারও সাতশো সাত, আবারও সাতশো সাত। কিছুতেই লিফটের দেখা পাচ্ছিনা। কোথায় লিফ্ট? যেখানে লিফ্ট থাকার কথা সেখানেও রুম দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই করিডরের কোন শুরু বা শেষ নেই। সব ঘরই সাতশো সাত নম্বর রুম।
উল্টো ঘুরলাম। নিজের রুম পর্যন্ত যেতে হবে। যেভাবেই হোক। বৌকে ফোন দিতে হবে। পকেটে হাত দিয়ে দেখি ফোন নেই। অথচ এমনটা হওয়ার কথা না। ফোন যদি সাথে না থাকতো তাহলে আমার গাড়ির দরজা খুলে খাবারের প্যাকেটটা আনতে পারতাম না। আমার গাড়ি লক আনলক বা চালু হয় আমার ফোনের অ্যাপে বা ব্লুটুথে। আমার ফোনই আমার গাড়ির চাবি। এখনও স্পষ্ট মনে আছে গাড়ি থেকে ব্যাগ নামিয়ে ফোনের অ্যাপেই গাড়ি লক করেছি। তাহলে পকেট থেকে ফোন গায়েব হয়ে গেছে?

বিপদের সময়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। আমি কিছুক্ষন দাঁড়ালাম। চোখ বন্ধ করে বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলাম। এই মুহূর্তে ব্রেনের জন্য প্রচুর অক্সিজেন দরকার। সারাদিনের ক্লান্ত উত্তপ্ত মস্তিষ্ক আমাকে নিয়ে খেলছে। যদিও এমন খেলাই আমি মনে মনে চাইছিলাম, তবু এখন চাইছি এটা বন্ধ হোক।
তিনবার গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিয়ে ও ছেড়ে চোখ খুলে দেখি আমি সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। আমার পাশে রুম নম্বর সাতশো সাত, দেয়ালে ঝুলানো ভিক্টরিয়ান পেইন্টিংটাও একই, এবং মাথার উপরে ঝাড়বাতিও এক। সামনে পেছনে অনন্ত করিডোর।
এইবার বুকের ভিতর হৃদপিণ্ড লাফাতে শুরু করলো। আমি দৌড় শুরু করলাম। কিন্তু ঘটনা একই। আমি যতই সামনে এগুই না কেন, আমি ঠিক সেই একই জায়গাতেই থমকে আছি। এসির ঠান্ডাতেও আমি দরদর করে ঘামছি। বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছি, তবু মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব বাতাস দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
এমন সময়ে আমার সামনের দিকে কয়েক কামরা ছাড়িয়ে একটি ঘরের দরজা খুলে গেল। ভিতরের উজ্জ্বল আলো করিডরে এসে পড়লো।
আমি দৌড় থামিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। ঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারছি না। হাঁটুর উপর দুই হাতের ভর দিয়ে দিলাম। দৃষ্টি সামনের খোলা দরজার দিকে। মুখ হা করে শ্বাস নিচ্ছি।
খুবই ধীর স্থিরভাবে একটি কুকুর বেরিয়ে এলো। কুকুরের ব্রিড সম্পর্কে আমার ধারণা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। জার্মান শেফার্ড, সাইবেরিয়ান হাস্কি, ডোবারম্যান, বুলডগ ইত্যাদি কিছু পরিচিত জাত ছাড়া তেমন কোন কুকুর ব্রিড হিসেবে চিনিনা। এই কুকুরটা বিশাল। কুচকুচে কালো চামড়া। নতুন কেনা চামড়ার জুতার মতোই চকচক করছে এর শরীর। মধ্যরাতে এই ভুতুড়ে হোটেলের রহস্যময় করিডোরে এই কুকুরকে দেখেই মনে হচ্ছে যেন প্রেতপুরী থেকে উঠে আসা কোন শ্বাপদ!
খুবই উদাস ভঙ্গিতে সে আমার দিকে তাকালো। জিভ বের করে হাপাচ্ছে। জিভের পাশে এর তীক্ষ্ণ দাঁত স্পষ্ট উঁকি দিচ্ছে। চাইলেই আমাকে আস্ত চিবিয়ে খাবার ক্ষমতা এর আছে।
আমি অপেক্ষায় রইলাম এর মালিকের। সেও নিশ্চই ঘর থেকে বেরুবে। মালিক ছাড়া একটা কুকুর নিশ্চই এমন হোটেলের রুমে উঠে আসেনি।
কিন্তু, এর গলায় কোন কলার দেখতে পেলাম না। সাধারণত পোষা কুকুরের গলায় কলার বাঁধা থাকে। এর নেই কেন?
আমি জোরে আওয়াজ করলাম। "হ্যালো!"
কোন উত্তর কেউ দিল না। কুকুরটা আমার দিকে তাকিয়ে এইবার দৃষ্টি বদলালো। ভাল লক্ষণ না। চোখ জ্বল জ্বল করছে। এমনিতেও আমার কুকুরভীতি আছে। জন্মগত। আমাদের বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে প্রচুর পাগলা কুকুরের দেখা মিলে। সেগুলোর কামড়ে লোকের জলাতঙ্ক হয়। নাভিতে চৌদ্দটা ইনজেকশন নিতে হয়। আমার পরিচিত বহু মানুষকেই চৌদ্দটা ইনজেকশন নিতে হয়েছে। এসবের মাঝে বেড়ে উঠতে উঠতে কুকুরকে আমি বাঘের চেয়েও বেশি ভয় পাই। বইয়ে পড়েছি কুকুর নাকি মানুষের এই ভয়টা পড়তে পারে। এতে ওরা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। তাই বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, কুকুরের সামনে কিছুতেই ভীত হওয়া চলবে না।
কিন্তু এটা যে আমার কন্ট্রোলে নেই। আমি বাচ্চা কুকুর দেখলেই পাশের ব্যক্তির কোলে ঝাঁপিয়ে উঠি, আর এতো বাঘের সাইজের সারমেয়। আমি আবারও জোরে ডাকলাম "হ্যালো! এনিওয়ান দেয়ার?"
কোন উত্তর পেলাম না। তবে কুকুরটা আমার দিকে এগুতে শুরু করলো।
আমি আল্লাহর নাম নেয়া শুরু করলাম। শুরুটা করলাম আয়াতুল কুরসী দিয়েই। যদিও নিশ্চিত না এই পরিস্থিতিতে আয়াতুল কুরসী কতটা কাজে দিবে। ওটাতো ইবলিস শয়তানের হাত থেকে রক্ষার কবচ। এইটা একটা জীবন্ত কুকুর। হিংস্র কিনা এখনও নিশ্চিত না।
কুকুরটা হা করলো। বিশাল ভারী জিভ বেয়ে মেঝেতে লালা ঝরছে। আমি আবারও ডাকলাম "এনিওয়ান দেয়ার? প্লিজ হেল্প!"
কারোর কোন সাড়া পাওয়া গেল না।
কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে উঠলো। আমি ভয়ে আতঙ্কে জমে গেলাম। ভয়ংকর সেই ডাক! জোরে জোরে আয়াতুল কুরসী পড়তে লাগলাম। কেউ কি নেই এই ডাক শুনেও এসে দেখে যে একটা কুকুর কোত্থেকে হোটেলের লবিতে এলো?
কুকুরটা এইবার আমার দিকে দৌড় শুরু করলো। চিতার দৌড়ের ব্যাপারে শুনেছি। কুকুরের গতিও যে এমন তা জানতাম না। চোখের পলক ফেলার আগেই সে আমার দিকে তীরের বেগে ছুটে এলো। আমি জীবনের শেষ দিন ভেবে নিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।
এরই মাঝে টের পেলাম কুকুরটি আমাকে অতিক্রম করে আমার পেছনে চলে গেছে। কারোর সাথে ধস্তাধস্তি করছে।
আমি দৌড়ে সামনের দিকে এগোলাম। যদিও জানি হয়তো কিছুই লাভ হবেনা, আমি একই জায়গায় থমকে থাকবো।
সাতশো সাত নম্বর রুম পেরিয়ে সাতশো নয়, সাতশো নয় পেরিয়ে সাতশো এগারো! আমি এগুচ্ছি! পেছনে কুকুরের হিংস্র গর্জন শোনা যাচ্ছে। হুটোপুটির শব্দও। সে একা নয়। কিছু একটার সাথে লড়ছে সে। সেই প্রাণীরও একটা চাপা গর্জন শোনা যাচ্ছে। পিছনে ফিরে দেখার ক্ষমতা ও সাহস আমার নেই। অবশেষে নিজের রুমে পৌঁছালাম! কি কার্ড দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলাম। প্রচন্ড ভয়ে ও ক্লান্তিতে হাপাচ্ছি।
কি আশ্চর্য! মোবাইল ফোন আমার পকেটেই পাওয়া গেল।
বৌ অবাক হয়ে বলল "কি হলো? এমন হাঁপাচ্ছ কেন?"
"কিছু না।"
বিস্তারিত বললাম না। সে ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলো "কিছু ফেলে গেছো?"
"না।"
"তাহলে ফিরলে যে? তুমি যাও নাই?"
আমার হাতের ব্যাগ দেখিয়ে বললাম, "এই যে।"
সে বিস্মিত হয়ে বলল, "গাড়ি থেকে এনেছো?"
"হু।"
সে আরও অবাক হলো। বলল, "তুমি মাত্রই গেলে, এক মিনিটও হবে না, এত জলদি পার্কিং লটে গিয়ে ব্যাগ নিয়ে ফিরলে কি করে?"
এইবার অবাক হওয়ার পালা আমার। ওর ভাষায় আমি যাওয়ার পর সে বিছানা থেকে নেমে পানি খাওয়ার জন্য গ্লাসে পানি ঢেলেছে। পানি এখনও মুখে তোলেনি, এরই মাঝে নাকি আমি ফিরে এসেছি।
অন্যদিকে আমাকে অনেকখানি পথ হেঁটে লিফটে চেপে নিচে লবিতে নেমে দীর্ঘ পথ হেঁটে পার্কিং গ্যারাজে নিজের গাড়ি পর্যন্ত গিয়ে আবার একই পথে ফিরতে হয়েছে। অনন্তকালের একটা লুপে যে আটকে গিয়েছিলাম, সেটার কথা বাদ দিলেও এত দ্রুত আমার পক্ষে ব্যাগ নিয়ে রুমে হাজির হওয়া সম্ভব না। কমসে কম বিশ মিনিট থেকে আধাঘন্টা সময়তো লাগবেই।
বেচারিকে বিস্তারিত কিছুই বললাম না। বললে ভয়ে আজকে রাতেই হোটেল ছাড়তে চাইবে।
আমি সাহস করে দরজা খুলে একবার করিডোরে তাকালাম। একেবারেই স্বাভাবিক, নিস্তব্ধ, জনমানবশূন্য।
হচ্ছেটা কি এখানে? আমার কল্পনা ছিল? কিন্তু আমি যেভাবে হাপাচ্ছি, ঘামছি, আমার হাতে বাচ্চাদের স্ন্যাক্সের ব্যাগ ইত্যাদি সবইতো সত্য।
বাকিটা রাত বিছানায় শুয়ে জেগে জেগেই কাটিয়ে দিলাম। শেষ রাতের দিকে শরীর আর নিতে পারলো না। ঘুমিয়ে গেলাম।

ঘুম ভাঙলো ভোরে। বাচ্চারা সাগরে যেতে অধৈর্য্য হয়ে উঠেছে। হোটেল রূমের জানালা দিয়ে দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি দেখেই উত্তেজিত। সাগরেরও নিজস্ব ভাষা আছে, সেই ভাষায় একটা ডাকও আছে। ওরা সেই ডাক শুনেছে, এখন আর তর সইছে না। সকাল থেকেই ওদের সাঁতারের পোশাক, লাইফ জ্যাকেট ইত্যাদি নিয়ে প্রস্তুত। রুমের ভিতর লাফালাফি উল্লাস শুরু করে দিয়েছে। নাস্তাও খেতে আগ্রহী নয়। ওরা এখুনি সৈকতে স্যান্ড ক্যাসেল বানাতে চায়। ঢেউয়ের সাথে খেলতে চায়।
আমিও গতরাতের দুঃস্বপ্ন ভুলে যেতে চাই। নতুন দিন, নতুন যাত্রা ভালভাবে শুরু হোক।
সকালে সবাইকে নিয়ে রওয়ানা হলাম। বিস্ময়কর প্রশ্নটা করলো আমার ছোট ছেলে, "বাবা, জেসন আমাদের সাথে যাবে না?"
আমি জিজ্ঞেস করলাম, "জেসনটা কে?"
উত্তরটা দিল আমার বড় ছেলে "আমাদের বন্ধু। সে হোটেলে আমাদের রুমে ছিল।"
আমি ভুরু কুঁচকে বললাম, "আমাদের রুমেতো কেউ ছিল না।"
ছোট ছেলে বলল "ছিল। আমরা সকালে ওর সাথেই খেলেছি।"
"তোমরা দুইজনই খেলেছো?"
"হ্যা।"
এরপরে আরও কিছু প্রশ্নোত্তর চললো। বলল যে ওরা নিজেদের বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল, এমন সময় জেসন ওদের ডেকে তুলেছে। একসাথে খেলেছে। তারপরে আমরা ঘুম থেকে উঠতেই ও চলে গেছে।
বাচ্চারা বানিয়ে বানিয়ে অনেক কথা বলে সত্যি, কিন্তু আমার দুই বাচ্চাই এমনভাবে কনসিস্ট্যান্টলি কথাগুলো বলছে যে এটাকে বানিয়ে বলা কথা বলে মনে হচ্ছেনা। জেসনের পোশাকের রং কি, চুলের রং কি, উচ্চতা কত ইত্যাদি বর্ণনায় দুই ভাইই সামঞ্জস্যপূর্ণ। এমনটা তখনই সম্ভব যখন কেউ বাস্তবেই কারোর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে। তাছাড়া বাবার সাথে ভৌতিক প্র্যাংক করার বুদ্ধিও ওদের মাথায় আসার বয়স হয়নি। ওরাতো জানেও না হোটেলটা ভুতুড়ে।
তাহলে কি হোটেলটা নিয়ে যেসব ভৌতিক কাণ্ডের কাহিনী শোনা যায়, ঘটনাগুলো সত্য? সেটাই বা কিভাবে সম্ভব? একটা ভুতুড়ে হোটেলে চেক ইন করলাম আর ভূত দেখে ফেললাম - ভূতের সাক্ষাৎ পাওয়া এত সহজ হলেতো দুনিয়ায় কোন রহস্যই রহস্য থাকতো না।

মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। গতরাতে কুকুরটা কি আমার উপর আক্রমন করছিল? ওকে অন্য কেউ (অশরীরী কেউ) সরিয়ে দিয়ে আমাকে রক্ষা করেছে?
নাকি অশরীরী কেউ আমার উপর পেছন থেকে আক্রমন করছিল আর কুকুরটা আমার হয়ে লড়েছিল?
অথবা এমন নয়তো যে কুকুর এবং অশরীরী দুইজনই আমার উপর আক্রমন করতে গিয়ে নিজেরা নিজেরা লড়েছে?
এই জেসন নামের পিচ্চির ঘটনাটাই বা কি? কে সে?
কে জানে! রহস্যগুলোর উত্তর জানার ইচ্ছাও নাই। যতদ্রুত হোটেল থেকে পালানো যায়, তত ভাল।

ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫৯
৯৭০ বার পঠিত
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক সিস্টেম কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনের পর ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্কার কাজের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচন কমিশন ও ভোটের পদ্ধতি সংস্কারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

WW3 WARNING ☣️- ব্রিটেন, আমেরিকা,রাশিয়া,ইউক্রেন

লিখেছেন সরকার পায়েল, ২০ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮

এই প্রথম রাশিয়ায় ব্রিটেনের স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ইউক্রেনের
এই প্রথমবারের মতো রাশিয়ার অভ্যন্তরে যুক্তরাজ্যের তৈরি দূরপাল্লার স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইউক্রেন। বুধবার (২০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে আমি.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১১

কে আমি?.....

Jean-Paul Charles Aymard Sartre (আমরা সংক্ষেপে বলি- জ্যা পল সাত্রে) নাম ভুলে যাওয়া একটা উপন্যাসে পড়েছিলাম, জার্মানীর অর্ধ অধিকৃত ফরাসীদের নিয়ে।

'হিটলারের সৈন্যরা প্যারিস দখল করে নিয়েছে। কয়েকশো মাইল দূরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে না!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৮


বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার জন্য সমাজের একটি বৃহৎ অংশ দাবী জানিয়ে আসছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি কে অনেকে দায়ী করছে কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পকে আধুনিকায়নের চেষ্টা

লিখেছেন জটিল ভাই, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

বনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×