ইলিশ রপ্তানি নিয়ে তর্ক বিতর্ক হচ্ছে।
আসিফ নজরুল ২০১৯ সালে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানি নিয়ে হাউকাউ করেছিলেন, এইবার ৩০০০ টন ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে এবং উনি সরকারের দায়িত্বে আছেন।
হাসিতামাশা, আলোচনা সমালোচনা ইত্যাদি চলবেই। এইটাই #বাকস্বাধীনতা।
আলহামদুলিল্লাহ! খুবই ভাল লাগছে আমাদের দেশে এই ব্যাপারটা ধীরে ধীরে ফিরে আসছে।
এখন সরকারের দায়িত্ব কিছু প্রশ্নের জবাব দেয়া। ওদের বারবার স্মরণে রাখতে হবে, ওরা জনতার "সেবক" - শাসক না। জনতার প্রতিনিধি, তাই জনতার কাছেই ওদের জবাবদিহি করতে হবে।
প্রশ্নগুলো হচ্ছে, কত দামে রপ্তানি করা হচ্ছে? আগের সরকারের সময়ে কত দামে রপ্তানি হতো? ৩০০০ টন ইলিশ রপ্তানির ফলে দেশের রেমিটেন্স কতটা বৃদ্ধি পাবে? বিনিময়ে ভারত কি আমাদের কোন সুবিধা দিবে? পানি চুক্তি, বা তেমন কোন বিষয়ে ওদের মনোভাবের পরিবর্তন হবে? ইত্যাদি।
যেকোন ব্যবসায়ী চায় ওর দোকানের মাল বিক্রি হোক। নাহলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়না। মাল বিক্রি না করে বসিয়ে বসিয়ে পঁচিয়ে লাভ নেই। দেশে উৎপাদিত রপ্তানি পণ্যের ব্যাপারটাও তাই। দুনিয়ায় আমরা ছাড়া ইলিশ মাছ কলকাতার বাঙালিরাই খায়। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান বা ইউরোপিয়ানদের কাছে মনে হয়না এখনও আমরা আমাদের এই মহামূল্যবান, বিশ্বের যে কোন মাছের স্বাদের সাথে টেক্কা দেয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন পণ্যটিকে পরিচিত করতে পারিনি। জাপানিজ টুনা লাখ লাখ ডলারে বিক্রি হলেও আমাদের ইলিশ ওরা ছুঁয়েও দেখে না।
যদি দেখা যায় আগের সরকার ১ টাকায় দিত, এবং এই সরকার ৩ টাকায় দিচ্ছে, তাহলে কোন কথাই উঠবে না।
আর যদি দেখা যায় আগের সরকারও ৩ টাকায় দিত আর এই সরকারও একই দামে দিচ্ছে, তখন দেখতে হবে বিনিময়ে কি গরু আমদানির চুক্তি করেছে? ইন্ডিয়ান গরু বাংলাদেশে না আসায় আমাদের দেশি গরু ব্যবসায়ীরা গরুর মাংস খাওয়াকে রাজাবাদশার কারবার বানিয়ে ফেলেছে।
বা তেমন কিছু যা আমাদের দেশের জন্য লাভজনক?
মানুষের যে ধারণা ইলিশ মাছ ইন্ডিয়ায় চলে যায় তাই দেশে ইলিশের দাম অনেক বেশি - এমনটা আমার মতে আংশিক সত্য। এইটা ঠিক যে বাজারে প্রচুর ইলিশ থাকলে দাম কমার কথা, কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট একেকজন মুমিন বান্দা কিনা, তাই ওদেরকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। ওরা ঠিকই কৃত্রিম সংকট তৈরী করে দাম চওড়া রাখবে।
সাথে আমাদের গ্রাহকদেরও একটা দোষ আছে। বিশেষ দিনে ইলিশ না খেলে প্রেস্টিজ থাকবে না, সমাজে ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হবে, গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ হয়ে যাবে, চাকরি চলে যাবে, কিডনি ফেইল করে মরে যাবে ইত্যাদি নানান অজুহাতে হলেও দাম বেশি দিয়ে কিনে খেতেই হবে, তারপরে বলবে "সিন্ডিকেটগুলোর যন্ত্রনায়....." এরা জানেই না, এরাও সিন্ডিকেটের অংশ!
আর যদি দেখা যায় আগের সরকারের দামেই দিচ্ছে এবং বিনিময়ে কোন লাভই আনতে পারছে না, তাহলে মিস্টার আসিফ নজরুলকে নিজের ফাত্রামি মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।
তবে, বাণিজ্য উপদেষ্টা যদি বলেন, ওদের দুর্গাপূজাকে মাথায় রেখে এই রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তাহলে বিষয়টা মানবিক। পজেটিভ নেগেটিভ দুইভাবেই দেখতে পারেন। জাতি হিসেবে আমরা অধম নই, বেশিরভাগ সময়েই ইমোশনালি ড্রিভেন, এবং আমাদের কাছে ঈদ যা, ওদের কাছে দূর্গাপূজাও তাই।
আশা করি এই বাহানায় কোরবানির ঈদে গরু আমদানি করে আমাদের মাংসের বাজারকে মধ্যবিত্তের জন্য সহনীয় পর্যায়ে আনবে।