বাংলাদেশে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্মদিন পালন হয়েছে। আবেগে আপ্লুত হয়ে কিছু দালাল-এ-পাক উর্দু বয়ান করেছে। কেউ বাংলাতেই শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছে।
হতভম্ব হয়ে গেছি। দেখলাম লোকজন গালাগালি করছে, এবং এইটাই স্বাভাবিক।
যদিও একাডেমিক্যালি ও লজিক্যালি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বিরুদ্ধে বাংলাদেশিদের বিদ্বেষের কিছু নেই। জিন্নাহ ১৯৪৮ সালেই মারা গেছেন। বাঙালিদের সাথে উনার ঝামেলা একটাই, উনার কুখ্যাত বয়ান - "উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা।" এখানেও উনাকে ১০০% ভিলেন বলার জো নেই। উনার মাতৃভাষা ছিল "সিন্ধি" উনি স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন ইংলিশে, অধিকাংশ পাকিস্তানিদেরও মাতৃভাষা উর্দু ছিল না (যেমন হিন্দি ইন্ডিয়ার সবার মাতৃভাষা নয়) এবং যতদূর জানি উনাকে বাঙালি সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়া হয়েছিল।
যদিও অনেকেই বলবেন ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের মূল কারিগর উনি, তবে ব্যক্তিজীবনে তিনি সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। উনার বৌ ছিল পার্সি, উনার মেয়েও পার্সিই বিয়ে করেছে। জিন্নাহ সংখ্যালঘুদের প্রতিও যথেষ্টই উদারমনা ছিলেন।
যতদূর জানি, পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করে লিয়াকত আলী খান, ওদের প্রথম প্রাইম মিনিস্টার।
গান্ধীর মতন জিন্নাহও ছিলেন একজন দুর্দান্ত শক্তিশালী নেতা। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে এদেরকে ছোট করে দেখা মূর্খতার শামিল।
তারপরেও, পাকিস্তানের সাথে আমাদের যেহেতু রক্তাক্ত ইতিহাস আছে, কাজেই ওদের জাতির জনক জিন্নাহর জন্মদিনে কিছু বাংলাদেশির এই আলগা পিরিতি আমাদের একটু মেজাজ খারাপতো করবেই।
এখন আসি আসল কথায় - "বাক স্বাধীনতার বাংলাদেশ" কিন্তু এইটাই এবং এই ঘটনাটাই একটি চমৎকার উদাহরণ। আমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও, আমার ধর্ম, ফিলোসফি, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদির বিরুদ্ধে গেলেও আমাদের মেনেই নিতে হবে আমাদের দেশে বিহারি, কিছু থেকে যাওয়া জেনুইন পশ্চিম পাকিস্তানী, দালাল-এ-পাক, রাজাকার, সবাই আছে যারা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে নিজেদের ড্যাডির মতন শ্রদ্ধা করবে। তেমনই থাকবে কিছু দালাল-এ-হিন্দ। It's ok and normal.
ওদের গালি খাওয়ার মতন কর্মকান্ডে আমাদের মন বিষিয়ে উঠলে আমরাও মনের মাধুরী মিশিয়ে গালাগালি করবো, সুশীল হলে ওদেরকে "শিক্ষিত" করার চেষ্টা করবো - সবই এই "বাক স্বাধীনতার" অধিকারের মধ্যেই পড়ে।
শর্ত একটাই, কেউই হাত উঠাতে পারবো না।
আমি জানি, খুবই জটিল - কিন্তু এইটাই মেনে নিতে হবে।
বাক স্বাধীনতার দেশ আমেরিকায় যেমন খ্রিষ্টান ধর্মেরই বহু শাখার বহু গির্জা আছে, শিয়া-সুন্নি মুসলিমদের আলাদা আলাদা ইবাদতখানা আছে, হিন্দুদের হাজারো মন্দির আছে, আছে গুরুদুয়ারা আবার শয়তানেরও মন্দির আছে। লোকে সেখানে শয়তানের পূজা করে।
গে-লেসবিয়ানরা রেইনবো প্যারেড করার অধিকার রাখে। নাস্তিকরা নিজেদের মত প্রকাশের অধিকার রাখে, এমনকি জো বাইডেনের সমালোচনা করতে হলে হোয়াইট হাউজের বাইরে গিয়ে কার্টুন, ক্যারিক্যাচার ইত্যাদি সহ সমালোচনা, গালাগালি এমনকি আমেরিকার জাতীয় পতাকায় আগুন লাগানো সহ যা খুশি করেন - যতক্ষন না আপনি ওকে ফিজিক্যাল ক্ষতির হুমকি দিচ্ছেন, আপনাকে পুলিশ প্রটেক্ট করবে।
এটুকু বুঝাতে পারছি?
এখন আসেন, মনের সুখে ওদের গালাগালি করি।