খুলনায় এক ছেলে আমাদের মুসলিমদের নবীকে (সঃ) অসম্মান করায় ওকে পুলিশের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে নিজ হাতে পাবলিক শাস্তি দিয়েছে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, এবং গুজব রটে যে ছেলেটিকে হত্যা করা হয়েছে। গুজবটি এমন অনেকেই রটিয়েছেন যাদেরকে ভরসা করতাম। পরে শুনি ছেলেটি মারা যায়নি। কেউ বলছেন আইসিইউতে আছে, কেউ বলছেন তাও না, পুলিশ এসে ওকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।
যেটাই হোক, আমি জেনেরিক একটা লেখা লিখলাম যে ইসলাম ধর্মে রাষ্ট্র যদি শরিয়া আইনে না চলে, তাহলে গালির বদলে গালি ছাড়া কিছুই করতে পারবেন না। ইসলাম আইনকে নিজের হাতে তুলে নিতে আপনাকে অনুমতি দিবে না।
আমি নিজেই এমন প্রচুর "ভার্চুয়াল" মারামারি করেছি। ঐ ছেলেটার পোস্টেও এমন ঝগড়া করতাম যে ছেলেটা উত্তেজনায় ঘুমাতে পারতো না। কিন্তু সামনাসামনি কেউ বলতে পারবে না, কখনই আমি কারোর সাথে কখনও তর্কে জড়িয়েছি। আমিই থেমে যাই। ছেড়ে দেই। ও যদি মনে করে হেরে গেছি, ওকে খুশি করতেই চুপ থাকি। কারন আমি জানি একটা পর্যায়ে এসব ঝগড়া হাতাহাতি পর্যন্ত যেতে পারে, এবং এই বিষয়টাই আমি শুরু থেকেই এড়াই।
হ্যা, যদি দেশ শরিয়া আইনও চলতো, তবুও এই কাজের জন্য পুলিশ থাকে, শরিয়া আদালত থাকে। রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিক যাকে তাকে মারধর করতে পারে না। হুকুম নেই।
তো যাই হোক।
গুজবটা নিয়ে যে হৈচৈ দেখলাম, স্বর্ণা রানী দাস বা জয়ন্ত কুমার হত্যা নিয়ে তেমন হৈচৈ দেখতে পেলাম না। জয়ন্ত যে মারা গেছে, সেটা জানতে আমাকে আজকে পত্রিকা পড়তে হয়েছে, ভারত সীমান্তে গত নয়দিনে দ্বিতীয় হত্যা ঘটনায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্বেগের খবর পড়তে গিয়ে জানলাম ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে আমার দেশের এক যুবককে হত্যা করেছে।
একটা গুজব নিয়ে লোকে এত হৈচৈ তুললো, অথচ দুই দুইটা মৃত্যু ঘটনা নিয়ে ওদের কাউকে টু শব্দটা পর্যন্ত করতে দেখছি না - একটু অদ্ভুত না? ইন্ডিয়া মেরেছে বলেই চুপ থাকতে হবে আর আমার দেশের মাওলানারা হাত তুললেও আমি কেয়ামত নামায় ফেলবো? যে মরেছে ওর পরিবার কি বলে? ওরাতো ওদের আদরের ধন হারালো, নাকি? আমরা মৃত্যুর ব্যাপারেও সিলেক্টিভ মানবতা দেখাই?
গত পনেরো বছর ধরে দেখে এসেছি ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে টু শব্দটাও করলে সরকার পক্ষ তেড়ে আসতো, এখনও বললে বলে "আপনি কি উস্কানি দিচ্ছেন? যুদ্ধ লাগাবেন? থাকেনতো বিদেশে, মরবো আমরা!"
নারে বেয়াক্কেল, যুদ্ধ লাগা এতটা সহজ না। দুনিয়ার সব দেশের মতন তোমাদের ড্যাডি ইন্ডিয়াও জানে যে আধুনিক পৃথিবীতে একটা যুদ্ধ শুরু করা সহজ, তারপরে আর সেটা শেষ হতে চায় না। মাঝে দিয়ে নিজের ইকোনমির বারোটা বেজে যায়। লোকক্ষয় হয়। গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে থাকে। ইউক্রেনের চাইতে বহুগুন শক্তিশালী রাশিয়া আজও তেমন অশ্বডিম্ব প্রসব করতে পারে নাই - মাঝে দিয়ে নিজের কোটি কোটি টাকা আর মানুষের জীবন শেষ করলো। গোটা ইউরোপকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে।
তেমনি ইন্ডিয়ার বিএসএফের ইতরামির জবাবে বাংলাদেশ যদি আগের সরকারের মতন লেজ গুটায়ে রাখে, তাহলে সীমান্তে মৃত্যু কখনই বন্ধ হবে না। ইন্ডিয়াও চাইবে বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে পেতে। নিজেদের স্বার্থেই। বুদ্ধিমান প্রতিবেশী নিজের পাশের বাড়ির লোকের সাথে ঝামেলা করেনা। নিজের পোষা কুকুর/বিড়ালকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার থেকে শুরু করে গাড়ির হেডলাইট গুড়িয়ে দেয়া, বাড়িতে চুরি ডাকাতিতে সহায়তা করা ইত্যাদি যেকোন কিছুই করার ক্ষমতা প্রতিবেশীর থাকে। সেজন্য ওকে আন্ডারটেকারের মতন পালোয়ান হওয়ার দরকার পড়ে না। এই মুহূর্তে একটা প্রতিবেশীর সাথেও ইন্ডিয়া খাতির নেই। ওরা চাইবেনা বাংলাদেশের নামও সে তালিকায় যুক্ত হোক। এমনিতেও "সাত বোনের" চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম।
কাজেই, দয়া করে দলের লেজুড়বৃত্তি ত্যাগ করে একটু দেশের কথা ভাবেন, দেশের মানুষের কথা ভাবেন। দেশটা আমাদের। সরকারকে পছন্দ হোক বা না হোক, স্বর্ণা, জয়ন্ত ওরা আমার দেশি ভাই - বেঁচে থাকলে হয়তো বড় হয়ে অনেক কিছুই করার ক্ষমতা ছিল ওদের। আবার হয়তো কিছুই করতে পারতো না, অতি সাধারণ জীবন যাপন করতো। তবু একটা সুস্থ, সুন্দর ও দীর্ঘ জীবন যাপনের অধিকার ওদের ছিল। সাইকো কিলার বিএসএফের কারনে সেটা সম্ভব হলো না। যেমনটা সাড়ে পাঁচশোর বেশি বাংলাদেশী নাগরিক যাদেরকে গত পনেরো বছরে ওরা কীটপতঙ্গের মতন মেরেছে, ওদের ক্ষেত্রে হয়নি।
আশা করি এই সরকার ইন্ডিয়ার সাথে অবশ্যই এই বিষয়ে একটা সুরাহা করবে।
আমরা সীমান্তে শান্তি চাই। বন্দুকতো আমাদেরও আছে। আমরা যদি ভারতীয় নাগরিক না মারি, তাহলে ওরাও পারবে নিজেদের বন্দুকের নলকে ঠান্ডা রাখতে।