somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্কিন ক্যানসার - জেনে নিন কিছু জরুরি বিষয়

০৬ ই মে, ২০১৬ রাত ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন আগে আমার এক আঙ্কেল মারা গেলেন। মৃত্যুর আগে আগে আমি তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আন্টি দেখা করতে দেননি। আঙ্কেলের চেহারা দেখার মতন ছিল না। আন্টি পর্দা টেনে দেয়ার আগে সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশের জন্য আমি আঙ্কেলকে শেষবারের মতন জীবিত দেখেছিলাম। শরীর ছেয়ে গেছে টিউমারে। মনে হচ্ছিল তাঁর শরীরে চামড়ার ভিতরে কেউ অসংখ্য ছোট বড় বল ঢুকিয়ে সেলাই করে দিয়েছে। বিভৎস অবস্থা। ইশ! কী যে কষ্ট হয়েছিল সেদিন!
আঙ্কেল মারা গিয়েছিলেন তার মাস খানেক পরেই।
স্কিন ক্যান্সার হয়েছিল তাঁর।
একটি জরুরী তথ্য, আঙ্কেল সিগারেট-মদ-জর্দা ইত্যাদি কিছুই খেতেন না। তারপরেও মরণব্যাধি তাঁর শরীরে বসত গড়েছিল। কেন?
তা "ক্যান্সার" শুনলেই আমাদের মাথায় প্রথমেই আসে সিগারেটই বুঝি এর একমাত্র কারন। বিজ্ঞাপনে লেখা থাকে, "সিগারেট ক্যান্সার রোগের কারন" কাজেই আমরা ধরে নেই - সিগারেট না খেলে হয়তো জীবনেও ক্যান্সার হয়না। বাস্তবতা হচ্ছে, সিগারেট কেবল একটি সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে, সিগারেট খেলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা অনেকগুন বাড়ে ঠিকই, কিন্তু ধুমপানই কর্কট রোগের একমাত্র কারন নয়। যেমন এক্ষেত্রে স্কিন ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে বড় শত্রু বেনসন এন্ড হেজেস বা আকিজ বিড়ি নয়, বরং সূর্যের আলো।
জ্বী, আমাদের অতি প্রিয় সুয্যি মামা! যিনি দিনের বেলা আমাদের আলো দিয়ে ইলেকট্রিসিটির বিল বাঁচান, যিনি আমাদের বাড়ির ছাদে বা উঠানে বিনা পয়সায় ভেজা কাপড় চোপর-আচার-মরিচ ইত্যাদি শুকিয়ে দেন, সেই তিনিই আবার মেজাজ খারাপ করলে শকুনি মামা হয়ে আমাদের ত্বকে মরণ ব্যাধি ঢুকিয়ে দেন। ভিটামিন ডির লোভে যারা গায়ে রোদ মাখেন - বিশেষ করে সকাল দশটা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত বাইরে চলাফেরা করেন, তাঁরা দয়া করে, আল্লাহর ওয়াস্তে এখন থেকে একটু সাবধান থাকবেন। কারন এইসময়েই মামার মুড থাকে খিটখিটে, তেজ থাকে বেশি, এবং যাকেই সামনে পান তার দিকেই থুথুর মতন রোদ ছুড়ে মারেন। সেখানে উপস্থিত আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি "এ" এবং "বি"ই সর্বনাশটা ঘটায়। এই সময়টাতে আপনি যদি লেকের পারে গাছের ছায়ায় বসে গার্লফ্রেন্ডের সাথে বাদাম খেতে খেতে পানিতে পাথর ছুরেন, তখনও সাবধান থাকবেন। কারন এই অতি ক্ষতিকারক রশ্মি পানিতে রিফ্লেক্ট হয়ে আপনার গায়ে এসে পড়তে পারে।
কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মতন জায়গায় মামার এই তেজ থেকে বাঁচবেন কিভাবে?
উত্তরটা সহজ। বাইরে থাকলে যতটুকু পারেন, ছায়ায় থাকার চেষ্টা করবেন।
মাথায় ক্যাপ পরবেন। শরীর যতটুকু সম্ভব কাপড়ে ঢেকে রাখবেন। এবং পারলে ছাতা ব্যবহার করবেন। কোন অবস্থাতেই দশ মিনিটের বেশি রোদে হাঁটাহাঁটি করবেন না। যদি করেন, তাহলে অবশ্যই মুক্ত হস্তে শরীরে সান স্ক্রিন লোশন (SPF ৩০ বা এর বেশি) ঘষাঘষি করবেন। মনে রাখবেন, একবার সানস্ক্রিন লোশন গায়ে মাখলে দুই ঘন্টা পর তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। তা যে কোম্পানি আপনাকে যতই ভুগিচুগি বুঝাক না কেন। কাজেই প্রতি দুই ঘটনা পরপর নতুন করে লোশন মাখুন। এবং এর মাঝে যদি ঘেমে যান, অথবা গোসল করেন, তাহলে আরও ঘন ঘন মাখুন।
কথা হচ্ছে, বাংলাদেশী অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সানস্ক্রিনের দাম অনেক বেশি। যাদের সামর্থ্য আছে, তাঁরাতো মাখবেনই। যাদের নেই, তাঁরা কী করবেন? ছাতা ব্যবহার করুন। ছাতাকে শুধু বৃষ্টির সাথে লড়াইয়ের জন্যই তুলে রাখবেন না, রোদের বিরুদ্ধেও একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করুন।
এখন মহা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
কিভাবে বুঝবেন স্কিন ক্যান্সার হয়েছে?
ভাল করে নিজের শরীর পরীক্ষা করুন। শরীরের প্রতিটা তিল, প্রতিটা ফোড়া সনাক্ত করুন। সুবিধার জন্য একটি কাগজে নিজের শরীরের ছবি একে (ভয় নেই, আপনাকে পিকাসো বা ভ্যানগগ হতে হবেনা, ওটা যে আপনার শরীর, সেটা মোটামুটি বুঝা গেলেই চলবে) কোথায় কোন তিল/ফোড়া আছে সেটা লিখে রাখুন।
শরীরের যে অংশ আপনি দেখতে পারেন না, সেটা দেখতে আয়নার সাহায্য নিন। পরিবারের ঘনিষ্ট ভাই/বোন/মা/বাবা/ জীবন সঙ্গী/সঙ্গিনীর সাহায্য নিন। ওদেরও সাহায্য করুন।
এক সপ্তাহ পরপর সেইসব তিল/ফোড়া রি-চেক করুন।
দেখুন কোন পরিবর্তন ঘটছে কিনা। যদি দেখেন আকৃতিতে বাড়ছে, চুলকাচ্ছে অথবা রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তাহলে ইমিডিয়েট বেসিসে ভাল কোন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। যদি আমার আশংকা সত্যি হয়, তাহলে যত তাড়াতাড়ি পারেন ওটাকে শরীর থেকে কেটে ফেলে দিন। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে যত দেরী করবেন, শেকড় ততই গভীরে গেঁথে যাবে। স্কিন ক্যান্সার সেই সব হাতে গোনা ক্যান্সারগুলোর একটি, যা আপনি সহজেই নিজের চোখে একদম প্রাথমিক পর্যায়েই দেখতে পারবেন, এবং সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে প্রতি একশর মধ্যে ৯৮ জনেরই সুস্থ্য হবার সুযোগ থাকে!
আশা করি আপনি সেই অতি দুর্ভাগা দুইজনের একজন হবেন না।
এখন সবচেয়ে মজার তথ্যটা দেই।
স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি কাদের বেশি থাকে জানেন? যাদের ত্বক উজ্জ্বল থেকে ফর্সা, যাদের চুল বাদামী থেকে সোনালী। যাদের চোখের রং কটা থেকে নীল। জ্বী, ড্রপ ডেড গর্জিয়াস, যেসব সুন্দরী ব্লন্ড দেখলে আমাদের চক্ষু এবং মস্তক চক্কর দিয়ে উঠে - তাদের ত্বকের কোয়ালিটি আমাদের, মানে যাদের ত্বকের বরণ শ্যামলা থেকে ময়লা, চোখের এবং চুলের রং কুচকুচে কালো - তাদের ত্বকের কোয়ালিটি থেকে অনেক অনেক নিম্নমানের।
কাজেই আগামীতে কোন ছাগল যদি আপনাকে আপনার ময়লা গায়ের রংয়ের জন্য তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার চেষ্টাও করে, তাহলে সাফ মুখের উপর জানিয়ে দিবেন, "সামান্য রোদের সাথেই ফাইট করার ক্ষমতা যে ত্বকের নেই, সেই ফালতু চামড়া তুই মাগনা দিলেও আমি নিমু না। গেলি?"
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৬ রাত ২:৫২
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×