সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অথচ জীবনযাপনের মৌলিক প্রতিটি অধিকার নিয়েই প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকে দেশের মানুষ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাসস্থানের সমস্যা। বাড়িভাড়া এখন যন্ত্রণার আরেক নাম।
বেসরকারি একটি স্কুলের শিক্ষক দেবাশীষ রায় বেতন পান সব মিলিয়ে আট হাজার টাকা। পল্লবীর ডি ব্লকের ৯ নম্বর রোডের একটি ছোট্ট বাসায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন। হঠাৎ করে বাড়িওয়ালা দুই হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দেন। তিনি এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেন। এরপর তাঁর বাসায় সন্ত্রাসী হামলা হয়। কেটে দেওয়া হয় বাসার বিদ্যুৎ ও পানির লাইন। এরপর দেবাশীষ রায় যান আদালতে।
দেড় কোটি মানুষের এই শহরে বাড়িভাড়া নিয়ে এ রকম জিম্মিদশা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। নতুন বছর শুরুই হয় ভাড়া বৃদ্ধির আতঙ্ক দিয়ে। এ জন্য আদালত পর্যন্ত যান অল্প কিছু লোক। বাড়তি ভাড়া দিতে না পারলে বাড়ি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া বাকিদের সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকে না।
দেশে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৯১ সালের একটি পুরোনো আইন আছে। আইনে বলা আছে, ভাড়াটের কাছে কোনো ধরনের জামানত বা কোনো টাকা দাবি করা যাবে না। অগ্রিম হিসেবে এক মাসের ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা নেওয়া যাবে না। প্রতি মাসে ভাড়া পরিশোধের রসিদ দিতে হবে।
কিন্তু আইনকানুনের ধার ধারে না কেউ। আর আইন থেকেও নেই। একদিকে আইনটি উপযোগিতা হারিয়েছে, অন্যদিকে এর কোনো প্রয়োগও নেই। ভাড়াটেদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করা বিভিন্ন সংগঠনের অভিযোগ, সরকার বাড়িওয়ালাদের স্বার্থরক্ষার জন্য বাড়িভাড়ার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ বছরে (১৯৯০-২০১১) ঢাকা শহরে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৩৫০ শতাংশ। আর ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে বাড়িভাড়া বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। লাগামহীন এই বাড়িভাড়ায় মানুষের জীবন বিপর্যস্ত।