১ম সেমিস্টার। চারিদিকে সব কিছুই নতুন । ক্লাশের ভেতর ও বাইরে নতুন নবীন বন্ধু, নতুন শিক্ষক এবং নতুন ক্যাম্পাস । এখনও ভার্সিটির অলি গলি চিনি নাই । তবে, ভালোই জমে শেষ বিকালের আড্ডা । এক কাপ চায়ের সাথে ধূম্রশলাকার চিরচেনা হাওয়া । সেই সাথে আরো চলে সারাদিনে ক্লাসে বাঁশ খাওয়ার গল্প ...
সন্ধ্যা যখন আসন্ন, আমরাও তখন ক্লান্ত শ্রান্ত। গল্পে গল্পে বেলা শেষে আমরা যার যার বাড়ী ফেরার পথ ধরি। সেই পুরনো পথ। পুরনো বাহন। তবুও মনের ভেতর কোথায় যেন কীসের দহন! সন্ধ্যার গোধূলীবেলায় স্মৃতির ক্যনভাসে জড়ো হয় আমার ফেলে আসা কৈশোরের রঙিন সাতকাহন।
হুম । ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে আমি বারবার আমার কলেজবন্ধুদেরকেউ খুঁজে ফিরি। ভার্সিটি গুরুগম্ভীর লেকচার কিংবা ক্যাম্পাসের সাজানো গোছালো আঙিনা আমার কাছে বড্ড ধূসর মলিন মনে হয়। আসা-যাওয়ার যাত্রাপথে বারবার সেই বন্ধুদেরকেই মনে পড়ে।
যখন কলেজে পড়াতাম কলেজ ছুটির পর কৌশিকের সাথে ক্লাস থেকে বের হওয়া । NDBP থেকে শেষ ধোয়া ছেড়ে কৌশিক চলে যেত পুরান ঢাকা । আর সিয়াম এবং আমি লোকাল বাসের কদাকার চেহারা দেখে পদব্রেজে হাটা দিতাম আরামবাগ থেকে ।
আমরা কতো অলি গলি পেরিয়ে আইডিয়ালের সামনে দিয়ে যেতাম। দেখার মত থাকুক আর নাই থাকুক হাসির খোরাকের অভাব হতো না । অবশেষে কিছু ইভটিজিং এবং এড্যামটিজিং এর নাটক শেষে, আমরা ঢুকতাম রেলওয়ে কলোনিতে ।
প্রথম অনেকদিন তো রেললাইন ধরেই যেতাম আর রেললাইন ধরেই আসতাম বন্ধুরা মিলে । কতো বিচিত্র মানুষ দেখতাম তার থেকেও বিচিত্র
ছিল তাদের পেশা । যদিও রোদে পুড়ে রেললাইন ধরে গন্তব্যহীন পথচলা থামে মারাত্মাক জন্ডিস হওয়ার পর ..
তবে থেমে থাকেনি আমার আর সিয়ামের গন্তব্যহীন পথচলা । সব ক্লান্তি , সব ক্ষুধা, সব হতাশা সিগারেটের ধোয়ায় উড়িয়ে দিয়ে পৌছতাম মাকার কাছে । কোচিং ফাকি দিয়ে টাইম কাটাতাম এই দোস্তদের সাথে । সেই সাথে চলত কত মোচড় পর্যবেক্ষণ ...
ততক্ষণে ক্ষুধা-পিপাসার যন্ত্রনায় পেট পিঠ একাকার হয়ে যখন আমরা বিপর্যস্ত- তখন হয়ত কেউ (আমি আর সিয়ামই ) কিনত চিপস অথবা মামার অলটাইম ভেলপূরি ভোজনে ব্যস্ত ...উদরপূর্তির সামান্য আয়োজন সেরে পাশের স্কুলের মসজিদে অযুখানায় যেতাম- কারণ আমরা পিপাসার্ত।
ফিল্টারে ভরা কলের ভেজাল পানি গলধকরণের চেয়ে মসজিদের দু চুমুক পবিত্র পানি খেয়েই আমরা পরিতৃপ্ত, পবিত্র।
বাসায় গিয়ে ঢুকতাম ঘরে চুপি চুপি । সারাদিনে যত ধোয়া গায়ে লাগে তাতে আমার মায়ের নসিকা গ্রন্থিকে ফাকি দেওয়া বেসম্ভব । তবে ,
মা বুঝেও হয়ত বুঝতে দিত না আমাকে । এই পাগলটার কত যন্ত্রণাই তো সহ্য করে গেল আমার মা, এ আর এমন কি !
পাগলের মত খাওয়া দেখে মায়ের মমতাময় বকুনি ''টিফিন নিতে বলি নেস না কেন ?? গাস্টিক, আলসার বাধাইয়া ছাড়বি ।''
তারপর দিতাম এক ঘুম । রাত নয় টা দশ টা পর্যন্ত ঘুমাতাম যদিও বাবার বকা থেকে মা ই বাঁচাত ।
তারপর ননস্টপ ফেবু আর পড়ালেখা, সাথে নানা ধরণের বই- জ্ঞান-বিদ্যার ভারে আমি কুপোকাত । রাতের খাবার খেতে বসে দেখি, রাত গড়িয়ে মাঝরাত । হয়তো বাসি হয়ে যেতো, তবু মায়ের হাতের রান্নায় খুঁজে পেতাম খাবারের অমৃত স্বাদ।
আহা! কৈশোরের সেইসব দুরন্তপনার কী অপূর্ব আনন্দময় প্রহর পার করে এসেছি এই তারুণ্যে। হৃদয়কোণে প্রার্থনা, আগামীর ব্যস্ততাঘেরা দিনগুলোও হাসি-আনন্দে কেটে যাক প্রাণোচ্ছল বন্ধুদের সতেজ সান্নিধ্যে।