somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমারও পরাণও যাহা চায় তুমি তাই....!!!!

০২ রা মে, ২০১৭ সকাল ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমারও পরাণও যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাইগো
তোমা ছাড়া আর এজগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো


বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা।

পরিচিত এক বড় ভাইসম ভদ্রলোক ছিলেন, শহীদ ভাই(ছদ্মনাম)। শিক্ষিত, মার্জিত, সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সুদর্শন। ভদ্রতা আর মার্জিত কথাবার্তার কারনে তাঁকে সবাই পছন্দ করতো।
উচ্চ শিক্ষিত, সুপ্রতিষ্ঠিত শহিদ ভাইয়ের স্ত্রী উচ্চতায় তাঁর চেয়ে প্রায় ৬ ইন্চি বেশী। নাহ্, কোন গতানুগতিক মডেল কন্যা নয়, বরং উচ্চতার কারনেই তাঁর ভারী গড়নে তাঁকে ছোটখাটো জায়ান্ট মনে হতে পারে। শুধু তাই নয় ঘোর কৃষ্ণবর্ণের সেই ভাবীটা সামনের দাঁতগুলো তাঁর উচ্চতার সাথেই পাল্লা দিয়ে উঁচু যেনো, বড় বড় সেই দাঁত মুখের মাঝে ঢেকে থাকায় আপত্তি জানায়।

শহীদ ভাই আর ভাবী, ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। ভাবীর গড়নের কারনেই হয়তো তাঁকে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে অতীতে, সেকারনেই কিনা জানিনা... বেশ কিছুদিন পর একদিন অন্য এক আলাপ প্রসঙ্গে তিনি নিজের গল্প টেনে এনে বলেন, গভীর ভাবে ভালোবেসে তিনি তাঁর স্ত্রীকে বিয়ে করেছেন। আত্মীয়া হবার সুত্রে দীর্ঘ দিনের পরিচয়, আর তিনি জীবন পথে চলতে গিয়ে লক্ষ্য করেন- কোন অনিন্দ্য সুন্দরী তিলোত্তমাদের সাথে আলাপ করে তিনি ততোটা ভালো বোধ করেননা যতোটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন লিপিভাবীর সাথে। নিজে আগ্রহ করে প্রস্তাব দিয়ে ঘর বাঁধেন।

আমাদের দেশে তথা পুরো দক্ষিন এশিয় অন্চলেরই পুরুষদের মাঝে এক সংকীর্ণ ভাবনা কাজ করে। নিজে দেখতে জনি লিভার হলেও প্রেমিকা, বিশেষ করে স্ত্রী হিসেবে প্রায় সকলেই ঐশ্বরিয়া রাইয়ের চেহারা খুঁজে! নিজের যোগ্যতা, চেহারা, অর্জন যেমনও হোক, স্ত্রী হতে হবে শোকেসে সাজিয়ে রাখার মতো পুতুল। স্ত্রীর সৌন্দর্য্যের সাথ সাথে তার নিজেরও যেনো সামাজিক পদোন্নতি ঘটে।
অথচ নিজদের অন্ধকার কুয়োর বাইরে দৃষ্টি ফেরালে দেখা যায়, সুবিশাল পৃথিবীর আসল সৌন্দর্য্য, ভালোবাসাটা ত্বক বা দৈহিক গড়নের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। শীর্ণকায় আর তিলোত্তমা চেহারার খোঁজের স্থুলতাটা পশ্চিমা বিশ্বে বিশেষ করে পশ্চিমা মিডিয়ায় প্রাধান্য পেলেও ইদানীং সে শৃঙ্খল ভেঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠান বেরিয়ে আসছে।

কর্পোরেট জগৎ যেহেতু লেখার উদ্দেশ্য নয়, তাই আসল প্রসঙ্গে ফিরে আসি...

ভালোবাসা।

বিশ্বে যদি একজন পুরুষ সম্পর্কেও বলা যায় যে সে ইচ্ছে করলে পৃথিবীর যেকোন নারীকে বিয়ে করতে পারে, তাহলে সেই নামটি বিল গেটস বললে খুব ভুল হবেনা। পৃথিবীর ধনাঢ্যতম এই মানুষের জীবনের প্রথম প্রেমিকা আর স্ত্রী, সাধারন চেহারার মেলিন্ডা গেটস।


দুজন মানুষের ভাবনা, আদর্শ আর মন মানসিকতার মিলটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ! আর তাই চেহারা দেখে নয়, নিজের ভাবনার সাথে মিল দেখে বিল গেটস খুঁজে নিয়েছেন তাঁর জীবন সঙ্গীনি।

বর্তমানে উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কন্ঠ, যাঁর গান শুনে প্রায় ৯০% প্রেমিকেরা ভালোবাসার স্বপ্ন বুনে- সেই অরিজিত সিং পাগলের মতোই ভালোবেসে বিয়ে করেছেন ছেলেবেলার বান্ধবী খুব সাধারন কোয়েলকে।


ইচ্ছে করলে যে ছেলেটি ভারতের গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের আনিন্দ্যসুন্দরী স্ত্রী পেতো, পোড় খেয়ে শিখেছে সুখী হতে জীবন সঙ্গীনি হিসেবে অনিন্দ্য সুন্দরী অনিবার্য নয়, বরং যে তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু সেই কৃষ্ণবর্ণের কোয়েলই যথার্থ!


"বন্ড, জেমস্ বন্ড" ডায়ালগটি মনে করিয়ে দেয় সুদর্শন, চৌকষ এক চরিত্র জেমস্ বন্ড- আর এই চরিত্রটিকে আমাদের জেনারেশণের কাছে বিমূর্ত করে তুলে ধরেছে পুরুষালী সৌন্দর্যের এপিটম পিয়ার্স ব্রসন্যান।



একজন সফল চৌকষ স্পাই হিসেবে জেমসবন্ড যতোটা পরিচিত ততোটাই পরিচিত প্রায় সর্বদা শীর্ণকায়া অনিন্দ্য সুন্দরীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হবার কারনে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মিডিয়া থেকে সেরা সুন্দরীদের খুঁজে সুযোগ দেয়া হয় জেমস্ বন্ডের সঙ্গীনি হিসেবে অভিনয়ের।
সিনেমার স্পাই বাস্তবে স্পাই নয় একজন অভিনেতা তবে সিনেমায় দেখা তার সৌন্দর্য্যটা বাস্তবে অনেকটাই সত্য।


সেই সুদর্শন পিয়ার্স ব্রসন্যানের বাস্তব জীবনের বাহুলগ্না জীবনসঙ্গীনিকে দেখে কিছুটা হোঁচট খায় অনেকে!

বর্তমান বিশ্ব সরগরম ফ্রান্সের আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে! নির্বাচনের হটফেভারিট তরুণ ইমানুয়েল ম্যাকরন।
ম্যাকরন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবে কিনা জানা নেই, তবে বাস্তব জীবনের একজন রোমান্টিক নায়ক হিসেবে সফল!
প্রচন্ড ভালোবেসে ইমানুয়েল বিয়ে করেছে ব্রিজিতকে। ১৭ বছর বয়সে ভালোবাসা শব্দটি সবেমাত্র যখন বুঝতে শিখে তখনই তিনি ঘোষণা দেন, "আমি একদিন তোমাকেই বিয়ে করবো"। হেসে উড়িয়ে দেয় সেই পাগলামী সেসময় ৪১ বছরের ব্রিজিত!


অদ্ভুতভাবে নিজ প্রতীজ্ঞায় দৃঢ় থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর পর ২৪ বছরের বড় ব্রিজিতকে বিয়ে করে ইমানুয়েল ম্যাকরন। নির্বাচনের এই আড়ম্বর আর প্রচারণার মাঝে বয়সের ছাপ সুস্পষ্ট চেহারার ব্রিজিতকে কখনও আড়াল করে রাখেনা তার স্বামী, বরং প্রায় সর্বক্ষেত্রে নিজের স্ত্রীর পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দৃঢ়পদক্ষেপে এগিয়ে যায়।


এমন নয় ব্রিজিত অনিন্দ্য সুন্দরী কোন তরুণী ছিলো, শৈশব থেকে ক্ষুরধার বুদ্ধির অধিকারী, আর সবার চেয়ে আলাদা মেধাবী ইমানুয়েল বরাবরই স্বীকার করে ভালোবাসাটা ছিলো ইন্টেলেকচুয়্যাল লেভেলে- নিজেদের মাঝে ভাবনা চিন্তা, মন মানসিকতার মিলের কারনেই তাঁদের মাঝে প্রেম এতোটা গভীর আর সফল হয়েছে।
(ম্যাকরন আর ব্রিজিতের প্রেম কাহিনীর মাঝে নৈতিকতা আর সামাজিক নিয়মাকানুনের কিছু প্রশ্ন আছে, সেসব এড়িয়ে শুধু তাঁদের ভালোবাসাটাই এই পোস্টের সাথে প্রাসঙ্গিক বলে উল্লেখ করা।)

এধরনের একটি পোস্ট লেখার কারন, বিভিন্ন সময় কৃষ্ণবর্ণের মেয়েদের নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা! যাঁরা লিখেন তাঁরা পজিটিভ ভাবনা থেকে লিখেছেন, কৃষ্ণাঙ্গীনিদের সমর্থন করেই লিখেছেন। তবে আমার মনে হয়, এমনি ভাবে কৃষ্ণবর্ণ বা শ্বেতবর্ণ, স্থূলকায় বা শীর্ণকায়, দীর্ঘকায় বা খর্বাকৃতি নারী পুরুষ নিয়ে বিশেষভাবে লেখাটা যেনো তাঁদের মনে করিয়ে দেয়া "এই যে তোমাদের অনেকে হেয় করছে, এটা আমি সমর্থন করছিনা।আমি তোমাদের পাশে আছি।"

কথা হলো, তাঁদের মনে করিয়ে দেয়াটাও এক ধরনের বৈষম্য!

যাঁরা মানুষের বর্ণ, উচ্চ্তা, শারিরিক সৌন্দর্য্য বিচার করে ভালোবাসে বা জীবন সঙ্গী সঙ্গীনি খুঁজে নেয় তারা নিতান্তই স্থূলভাবনার মানুষ। আলোকিত মানুষদের কাছে একজন মানুষই প্রধান, তাঁর আকার আকৃতি, বর্ণ, গোত্র নয়!


ছবি সুত্র: - ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৭ সকাল ১০:৪৯
৪২টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×