দীর্ঘকাল পর ইদানীং বেশ গান শোনা হয়, তারই রেশ ধরে আজ শুভ্রদেবের "হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা" শুনতে ইচ্ছে করছিলো।
আজকাল গান শোনা, নিউজ ক্লিপ দেখা, নাটক দেখা সব কিছুর প্যান্ডোরা বাক্স হলো ইউটিউব। সেই প্যান্ডোরা বাক্সে গানটি খুঁজতে শুরু করে দেখি শুভ্রদেবের সাক্ষাৎকার টাইপ অণুষ্ঠান আর রিমিক্সের নামে শ্রুতিকটু কিছু উচ্চশব্দের বাদ্যবাজনার মাঝে গান খুঁজে পাওয়া দুস্করঅ্যা
সার্চের পর প্লে করে ডান পাশে আসা একটি ক্লিপের শিরোনামে চোখ পরে, ব্লগে বেশ হৈচৈ দেখেছি এ ব্যাপারে। ক্লিপের প্রতি আগ্রহী না হয়ে অরিজিনাল হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার খোঁজে নতুন ভাবে সার্চ করে পেয়ে যাই। নতুন কথামালায় দেয়া সার্চের পরও গান শোনার সময় ডান পাশের লিস্টে আবারও সেই ক্লিপ!
কৌতুহলী হয়ে দেখা শুরু করি। প্রথম দেখায় যে অভিনেতাকে অভিনেত্রী মনে করেছিলাম সে দেখি বীরদর্পে নিজেকে বারংবার "সুপারস্টার" বলে দাবী করার মতো নির্লজ্জ কাজটি করছে আর সাক্ষাৎকার গ্রহনকারীও কেমন তৈলাক্ত চেহারা করে গদগদ ভাবে গলে পরছে। ঘটনা জানার আগ্রহ হলেও এমন বিরক্তিকর সাক্ষাতকার দেখার রুচী হলোনা।
এই একই বিষয়ে দেশের বিভিন্ন চ্যানেলের এতো এতো ক্লিপ সংখ্যা দেখে অবাক হতেই হয়। দেশে হঠাৎ সামরিক শাসন কায়েম হলেও সব চ্যানেলে মনে হয় এভাবে প্রচার হবেনা, মনে হলো কোন ইমারজেন্সী অবস্থা চলছে। সব চ্যানেল মরিয়া হয়েই এই টানা কাভার করছে যেনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এই মুহুর্তে গত হয়েছে!! শুধুমাত্র নির্বাচনের সময়টাকে এমন প্রতিযোগিতা করে বিভিন্ন চ্যানেল কাভারেজ দেয়। আরেকটি ক্লিপের শিরোনামে দুজনের সাক্ষাৎকার দেখে অন করি।
অপু বিশ্বাসের নাম এই প্রথম শোনা, আর শাকিবের নাম ব্লগে দেখেছি কয়েকবার। যাইহোক, এই অনুষ্ঠানের মান আগেরটির চেয়ে কিছুটা উন্নত মনে হলো। উপস্থাপিকার পিছনে ফ্লোর থেকে ছাদ পর্যন্ত পুরো দেয়াল জুড়ে স্ক্রীন দেখে ভালো লাগলো, যদিও সেই স্ক্রীনের বিশাল সাইজ সামলাতেই কিনা স্ক্রীনটি চার ভাগে বিভক্ত। তারপরও দেশের মিডিয়ায় এমন প্রযুক্তির ব্যবহার দেখে ভালো লাগারই কথা। সেই বিশাল স্ক্রীনে লাইভ আসবে অ্পু আর ফোনে শাকিব, এই হলো যৌথ সাক্ষাৎকারের সেটআপ।
............... উপস্থাপিকা মাইক্রোফোনে ডাকছে অ্পুকে, আমি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি অপুকে দেখার--- একি! যা দেখালো, আমার প্রথম রিএ্যাকশন "এর নাম অ্পু কিভাবে হয়!!!!!"- দৃশ্যটি খুব সম্ভবত এয়ারপোর্ট থেকে লাইভ ক্লিপ, প্রধানমন্ত্রীর চরম ব্যর্থ ভারত সফর শেষে দেশে প্রত্যাবর্তনের!!
তড়িঘড়ি সেটা বন্ধ করে এক ভদ্রমহিলার শোকাতর(দেখে তাই মনে হলো) চেহারা ভেসে উঠলো। সাক্ষাৎকারে বেশ গুরু গম্ভীর আলোচনা চলছিলো তবে মনের কোথায় যেনো কাঁটার মতো বিধছে!!! সাক্ষাৎকার ভালো লাগলোনা!
ত্রিশ লক্ষা প্রাণের বিসর্জন দিয়ে অর্জিত স্বাধীনাতা কাঁদছে দূরে দাঁড়িয়ে। একটি দেশে ভীন দেশের সেনা, নৌ বাহীনির অবাধ যাতায়াতের অনুমতি দেয়া সে দেশের সার্বভৌমত্ব বিসর্জনের সমান, ক্ষমতায় টিকে থাকার লোভের কাছে অসহায় ভাবে পরাজিত দেশপ্রেম- সেই বির্সজনও যথেষ্ট হয়নি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মাঝে একটি অলিখিত অভ্যাসের প্রচলন আছে, তাঁরা ভীনদেশে বেড়াতে গেলে নিজেদের স্পীচ বা বক্তব্যে সেদেশের মাতৃভাষায় একটি লাইন হলেও বলতে চেষ্টা করে। দীর্ঘকাল আগে রাজীব গান্ধীকে সার্ক সন্মেলনে "আরুণপ্রাতের তরুণ দাল, বাদারে বিনদিয়া চাল" বলতে শুনে জেনেছিলাম। পরবর্তীতে আরো অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন দেশ সফরে গিয়ে এমনটা করেছেন, সে দেশের মানুষের সাথে নিজের আন্তরিক নৈকট্য প্রমানে। মোদীভাইয়ের কাছে সকল বিষয়ে নতজানু হয়ে দেশের স্বার্থ বিকিয়েও মৃত তিস্তার জন্য এক বিন্দু জল পেতে যখন ব্যার্থ, তখন তাদের সাথে নৈকট্য প্রমানে মরিয়া হয়েই হিন্দীতে বাতচিত শুরু করেন!! যদিও গুনে গুনে দেড় মাস আগেই কান্নাকাটি করে, পাদুকা খুলে শহীদ দিবস পালিত হয়েছে! আসলে এখানেও একটা ভুল হয়েছে, মমতা দিদি আবার কট্টর বাঙালী, আর পানি দেয়া না দেয়া তার মর্জি- তাঁর সামনে তাঁর ভাষাকে(যা কিনা মেহমানের নিজেরও মাতৃভাষা) উপেক্ষা তিনি ভালো ভাবে নিবেননা, এমনটাই স্বাভাবিক! শুধু কি একটি ভুল? আপামনি আরেকটু কষ্ট করে মোদী ভাইয়ের স্বার্থে গুজরাটীটা শিখে নিলেও হয়তো কিছু কাজ হতো।
দিদিমনি যে ক্ষোভে ভিক্ষায় দেয়া ইলেকট্রিসিটিটা ফিরিয়ে নেয়নি তাই আমাদের বিশাল সৌভাগ্য।
আমি জোর দাবী জানাবো এই শাকিব আর তার স্ত্রী অপু বিশ্বাসকে রাষ্ট্রীয় সন্মানে ভূষিত করার। এই মোক্ষম সময়ে তাদের স্ক্যান্ডাল বাজারে এসে সকল মিডিয়া গরম করে না রাখলে তো মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি পরে যেতো। যদিও গ্রেফ্তার, গুম, জেল আর হত্যাকান্ডের হোলিখেলা দিয়ে দীর্ঘদিন আগেই আমাদের মিডিয়ার মুখে কুলুপ এঁটে দেয়া হয়েছে, তারপরও দুষ্টু জনগণের ঠিক নেই। এই শাকিবের বিয়ের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিয়ে মুখরোচক আলোচনায় ব্যস্ত থেকে নির্বোধ জনগনের মনযোগ তো অন্যদিকে সরেছে- এই বা কম কিসের।
নিজের ঘরের স্বামী স্ত্রীর সমস্যাকে জাতীয় সমস্যার মতো টেলিভিশনে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রচার খুব চাট্টিখানি কথা নয়। সকল প্রকার আত্মমর্যাদাবোধ আর সন্তানের ভবিষ্যত সন্মান জলান্জ্ঞলী দিয়েই এমনটা সম্ভব!!! এই ত্যাগ স্বীকারের একটি মূল্যায়ন জরুরী!
তবে কৃতীত্ব শুধু শাকিবখান পত্নিকে দিলে হবেনা। এই যে এমন বিশ্বস্ত পালিত হুক্কাহুয়া নির্বোধের পাল, তারা কি চুপ করে বসেছিলো? নাহ্, মোটেও না। বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনুস যে দেশ ও জাতির জন্য কতোখানি হুমকী স্বরূপ তা প্রমানে রীতিমতো রচনা প্রতিযোগিতা চলেছে। এটা কারো অজানা নয় যে নিরোট মূর্খরা আর্থিক অর্থেই গাঁজা সেবন করতে করতে মনের গাঁজা মিশিয়ে আওয়ামী সমালোচকদের সম্পর্কে বানোয়াট গল্প লিখে বেড়ায়। আর এসব অপপ্রচারের বৈধতা দিতে এরা জুড়ে দেয় তাদের তীর্থভূমি কোলকাতার পত্রিকার সাংবাদিকদের খবর! কলকাতার দাদাবাবুদের বাক্য এসব তেলাপোকাদের কাছে কুরআন, বাইবেল, গীতার চেয়েও পবিত্র! তাদের এই অপপ্রচারে পিঠ চাপড়ে দেবার মতো মগজহীণ এবং নৈতিকতাহীন কীটদের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। তবে ঘটনা এবার একটু বেশিই হয়েছে।
ডঃ ইউনুসের পক্ষে হিলারী(ওবামার সময়) নাকি প্রণববাবুকে বলেছে হাসিনাকে সমর্থন না করতে!! আর এমন গোপন বিষয়টি প্রকাশ পেলো কিভাবে? বাহ্! ঐযে উন্নত বিশ্বের রাজাধিরাজ- গোপালগন্জ্ঞের নবাব হলেও তার যুক্তরাষ্ট্রের নেট ওয়ার্ক নাকি এমনই শক্তিশালী যে হোয়াইট হাউজের গোপন খবরও টেনে আনতে পারে!!! আমি মনে করি এই মুহুর্তে সিআইএ এবং এফবিআইয়ের সকল কর্মকর্তাদের রিট্যায়ারমেন্টে যাওয়া জরুরী। নিজেরা এতোদিন চেষ্টা করে রাশিয়ার সাথে ট্রাম্পের নির্বাচনপূর্ব ফোনালাপ প্রমান করতে পারছেনা আর বাংলার গোপালগন্জ্ঞের নবাব এক নিমেষেই জেনে যাচ্ছে হোয়াইট হাউজের গোপন তথ্য। ব্লগপ্রহরী এফ বি আই ভাইয়েরা, কিছু জ্ঞানার্জন করুন এই গন্জ্ঞের নবাবের কাছ থেকে!
আমরা জাতি হিসেবে নির্বোধ এবং বিশেষভাবে অশিক্ষিত বলেই রাজনীতিবিদ ও তাদের চাটুকারেরা যা ইচ্ছে তাই বলে পার পেয়ে যায়। যুগ যুগ ধরে ক্ষমতাসীন ও তার পরিবারবর্গের পদতলে নিষ্পেষিত বলেই আমরা জানিনা আমেরিকা তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন সজিব ওয়াজেদের মূল্য আর একজন ঝাড়ুদারের মূল্য সমান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেক জিয়ার উপর নির্যাতনে তার মেরুদন্ডের হাড় গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো জানি তবে পরবর্তীতে যে আওয়ামী বিরোধী সকল দলের সাথে সাথে জলপাই বাহিনীরও মেরুদন্ড গুড়িয়ে গেছে তা এখন বুঝতে পারছি। তা নাহলে শুধুমাত্র হোয়াইট হাউজ সম্পর্কে এধরনের অপপ্রচার পুঁজি করেই বিরোধীরা ভয়ানক বিপদে ফেলতে পারে, আমি নিশ্চিত আজ আওয়ামিলীগ টেবিলের অপরপার্শ্বে অবস্থান করলে এই মুহূর্তে গদি বাঁচাতে খালেদা জিয়া হিমশিম খেতো। লীগের মগজধোলাইকৃত ক্রীতদাসের পাল দেশ প্রেম বর্জিত হতে পারে, হতে পারে তারা নীতি বর্জিত তবে দলের জন্য নেত্রীর জন্য তারা নিজের জীবন দিতে প্রস্তুত, মার্কিন ক্ষমতাসীনদের নিজের বিরোধীমতের প্রতি ক্ষেপিয়ে দেবার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করতো এই মিথ্যাচার।! এই বড়ই কর্মঠ তেলাপোকাদের জন্য একটি মূল্যবান টিপস্, চাটুকারদের মাঝে প্রথম স্থান অধিকারের লক্ষ্যে জাতির আপাকে আজ থেকে গুজরাটি ভাষার পাঠ দেয়া শুরু করুন। তা শুনে মোদীভাই আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতা নিশ্চিত করার সাথে সাথে দুফোটা জলও দিতে পারে!!
নির্বোধের সবচেয়ে বড় শত্রু সে নিজেই। আমাদের দেশের সাধারন মানুষের এই নির্বুদ্ধিতাকে পুঁজি করেই গত কয়েক দশক ধরে এসব নেতা নেত্রীরা টিকে আছে। সেই পুঁজির আরেকটি সুদ হিসেবে আশঙ্কা করছি খুব হঠাৎ করেই আমাদের দেশে এখন লোডশেডিং এর পরিমান বেড়ে যাবে। কথায় কথায় লোড শেডিং দিয়ে নির্বোধ জাতিকে মনে করিয়ে দেয়া হবে ভারত থেকে পানি না পেলেও এই বিদ্যুৎ পাওয়া খুব কম কিছু নয়। পানি দিয়ে হবেই বা কি, জনসংখ্যা রোধেরও তো প্রকল্প প্রয়োজন! জন্মনিরোধক যখন খুব কাজে আসছেনা, এই পানি শুকিয়ে যাওয়াও জনসংখ্যা কমিয়ে আনার বিকল্প পথ হিসেবেই বিবেচনা করা যায়। প্রচন্ড গরম আর আঁধার রাতে হাসঁফাস করতে করতে বেকুব জনতা উপলব্ধি করবে হুক্কা বার সম প্রেম ভালোবাসার কি মূল্য- প্রেম উপহার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের কি মূল্য্!!
সেক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তিতে যথেষ্ট পরিমান মোমবাতি, চার্জার, ফ্লাশ লাইট কিনে রাখা ভালো!
আমরা রক্তের বিনিময়ে বাংলাভাষা অর্জন করে বিশ্বের বুকে নাম লিখিয়েছি, তাই বুঝি মোদী ভাইয়ের এ্মন সন্মান এদেশের জনগণের প্রতি!!!
ুশুনেছিলাম দাদাবাবুদের সাথে বিশেষ ইতিবাচক সম্পর্ক। এ কেমন ভালোবাসা বোধগম্য হয়না! মনে হলো এমন প্রেম, এমন ভালোবাসা স্মরন করেই কবি গেয়েছেন "তেরা পেয়ার পেয়ার পেয়ার, হুক্কা বার বার বার"
***পোস্টে জুড়ে দেবার জন্য ভিডিও লিংক খুঁজতে গিয়ে দেখি অ্পু বিশ্বাস স্ক্রীনে আসার আগে প্রধান মন্ত্রীর এয়ারপোর্টৈ পৌঁছানোর দৃশ্যটি এডিট করে দেয়া হয়েছে। কি চমৎকার!!! :-) যাইহোক এক্ষেত্রে সেই দৃশ্যটি জরুরী নয়। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের চেয়েও "শাকিব কেনো বউকে সামনে আনিলোনা" যে দেশ ও জাতির জন্য অধিকতর এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা নিশ্চিত হলো***
ছবিসুত্রঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৪৩