২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়। দেশজুড়ে এক ধরনের শান্ত রিল্যাক্সড ভাব। ছিনতাই, রাহাজানি, ধর্ষন, হত্যা, গুম, চাঁদাবাজি আর অবৈধ ভাবে সম্পত্তি দখলের তান্ডব প্রায় নেই বললেই চলে। দেশের সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে প্রায় নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যেতে পারে। শুধু অস্বস্তি ভয় আর যতো শংকা এক শ্রেনীর দূর্নীতিগ্রস্থ অপরাধীদের মাঝে। তাদের স্বস্তি নেই, নেই কোন শান্তি- সদা সর্বদা গ্রেফ্তারের আশংকা।
দূর্নিতিবাজ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ আমলা সহ কিছি শিক্ষক শিক্ষিকা যারা রাজনীতির দুর্গন্ধ গায়ে মেখে পক্ষপাত দুষ্ট হয়ে ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে তারাও বেশ অস্বস্তির মধ্যে!
এমন যখন দেশের পরিস্থিতি তখন প্রায় মাঝে মাঝেই এই ব্লগে "গণতন্ত্র গেলো, গণতন্ত্র গেলো..." বলে আহাজারি শোনা যেতো!
এর মাঝে একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রাজনৈতিক পক্ষপাত দুষ্ট শিক্ষকের উস্কানীতে একদল ছাত্র আন্দোলনের নামে ভাঙ্গচুর ও নাশকতামূল কাজে লিপ্ত হয়। কঠোর হাতে বিশৃঙ্খলা দমনের লক্ষ্যে তৎকালীন প্রশাসন ও সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহন করেন তার সুফলের সাথে সাথে বেশ কয়েকজন নিরীহ সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়। তাঁদের মাঝে এই ব্লগের কয়েকজন প্রিয় ব্লগার ছিলেন, তাঁদের অপ্রিয় অভিজ্ঞতা জেনে আমরা আহতবোধ করি। নিঃসন্দেহে সেই হয়রানীর নিন্দা জানাই আজও তবে সে সময় যারা প্রায় বিরতিহীন ভাবে "গণতন্ত্র গণতন্ত্র" রবে তুলে আহাজারি করতো আজ তারা বড় নিরব।
চারপাশে চাঁদাবাজি, গুম, হত্যা ধর্ষনের নারকীয় উল্লাসের মাঝে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস অবস্থা তখন তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের নিরবতা বড়বেশি দৃষ্টিকটু ও নিন্দনীয়। তাদের নিরবতা প্রমান করে তখনকার সেই আহাজারী শুধু মাত্রই রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ছিলো, গণতন্ত্রের প্রতি এ্তোটুকু শ্রদ্ধা বা ভালোবাসার জন্য নয়।
গণতন্ত্র গণতন্ত্র মাতম করে আমরা যা পেয়েছি...
*বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়ংকরতম হত্যাযজ্ঞ। ২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারী নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় ৫৬ জন বীর সেনা কর্মকর্তা, তাঁদের পরিবারসহ সাধারণ সিপাহী জনতাকে। স্বয়ং প্রধান মন্ত্রী এবং সেনা প্রধানকে আক্রান্ত হবার আশংকা জানিয়ে সাহায্য চাইলেও তাঁদের অসহায় ভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়।
নির্মমতা আর নৃশংসতায় যা হার মানায় অতীতের সকল কালো হত্যাকান্ডের রেকর্ডকে। এই দেশের একমাত্র শোক দিবস ২৫শে ফেব্রুয়ারী।
*পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের ঐতিহ্য, নতুন বর্ষবরণের আনন্দ এখন দেশের নারীদের আতংকে পরিনত হয়েছে- অপমান, হেনস্থা আর সম্ভ্রম হানীর আনন্দ, স্কুল কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকার সামনে। এক শ্রেনীর নর্দমার কীটকে দিবালোকে শত জনতার সামনে নারীদের সম্ভ্রমহানীর অধিকার এনে দিয়েছে কাঙ্খিত গণতন্ত্র!''।
*প্রাণের বইমেলা হয়ে উঠেছে সশস্ত্র হামলা আর নৃশংস হত্যাকান্ডের অভয়ারণ্য!
*ভীষণ রকমের নিন্দিত মৌলবাদী দল ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার সময়ও যা ঘটেনি এখন তা ঘটছে, ইসলামধর্মকে কলংকিত করতে হঠাৎ করেই একদল "নাস্তিক" হত্যার হোলিখেলায় মেতে উঠেছে! একদল কাপুরুষ গণতান্ত্রিক অধিকার পেয়েছে জঙ্গী জঙ্গী খেলার।
*নিজ গৃহেও নিরাপদ নেই মানুষ। নিষ্পাপ অবোধ শিশুর সামনে নৃশংস ভাবে হত্যা করে মৃতদেহ ফেলে রেখে গেছে ঘৃন্য হায়নার পাল। ভালো মানুষ ব্লগার সাগর সারোয়ার আর তাঁর স্ত্রীকে প্রায় চার বছর আগে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়, স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হত্যাকারীদের গ্রেফ্তারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও বিগত প্রায় চার বছরেও গ্রেফ্তার করেনি নর্দমার কীটের পাল। গণতন্ত্র এনে দিয়েছে নৃশংস খুনিদের স্বাধীনতার অধিকার।
*জুম্মার নামাজ পড়ে এসে যে সাদামাটা নিরীহ মুসলিম ব্লগার অন্ধকার(ফয়সাল আরেফিন দীপন) স্মৃতিচারন করেন পিতার হাত ধরে শৈশবে জুম্মা পড়তে যাবার, ছারপোকা সম একদল পুঁতি দুর্গন্ধময় নর্দমায় বেড়ে ওঠা কীটের পাল তাঁকে কাপুরুষের মতো হত্যা করে "নাস্তিক"তা প্রচারের অভিযোগ এনে। লালমাটিয়া নারকীয়যজ্ঞ চালিয়ে প্রকাশক লেখককে হামলা করে অতি নির্বিঘ্নে তারা চাপাতি নিয়ে পৌঁছে যায় শাহবাগের আজিজ মার্কেটে...... গণতন্ত্র এসব হিংস্র শ্বাপদের পালের এই নির্বিঘ্ন যাত্রা সুনিশ্চিত করেছে।
*শুধু কি দেশের মানুষ! দেশের স্রোতস্বিনী তিস্তা নদীকেও প্রাণ হারাতে হয় তথাকথিত গণতান্ত্রিকের পদলেহিতার কারনে!
গণতন্ত্রের এমন সব সুফলের তালিকা অগুনিত.....
*১৯৯০ সালের গণতান্ত্রিক অর্জনের পর সবচেয়ে ঈর্ষনীয় ও গণতন্ত্রমূখী অর্জন ছিলো 'নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়ন্ত্রনে সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সিদ্ধান্ত ও প্রয়োগ! এবারে নব্য গণতন্ত্র সেই সিদ্ধান্তকেও বিলুপ্ত করে।
*বর্তমান গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উপহার "বাক স্বাধীনতা হরন"।
প্রশ্ন করা যাবেনা সেদিন সেনাবাহীনি প্রধান, রাষ্ট্র প্রধানের কাছে ফোন করে সেনাকর্মকর্তারা সাহায্য চাইবার পরও কোন সাহায্য এসে কেনো পৌঁছেনি পিলখানার বিডিআর সদরদপ্তরে? জঙ্গীদের প্রায় শিকড় উপড়ে ফেলা, জঙ্গীবাদের যম বাংলাদেশের সম্পদ বীর সেনা কর্নেল গুলজার র্যাব প্রধানের কাছে জরুরী সাহায্য চাইলেও তাঁকে কেনো অসহায় ভাবে প্রান হারাতে হয়েছিলো একদল নর্দমার কীটের কাছে?
কোনভাবে প্রশ্ন করা যাবেনা বাংলার যে দূরন্ত চৌকষ সেনাবাহীনি দেশের সীমান্তরক্ষাসহ বিভিন্ন দেশে বীরোচিত কাজের সুনাম কুড়িয়ে এসেছে, মাত্র কয়েক মাইল দূরে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে কেনো তাঁদের প্রেরণ করা হয়নি সহকর্মী বীরসেনাদের প্রাণ রক্ষার্থে!
জানতে চাওয়া যাবেনা, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সহ প্রতিদিন পথে ঘাটে ছাত্রলীগের শ্বাপদবাহীনির হাতে নারী লান্ছিত হলেও আজও কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়নি কেনো? প্রশ্ন করা যাবেনা এমন স্পর্ধা বার বার তার পায় কিভাবে?
প্রাণের বইমেলা ঘৃন্য অপরাধীর অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে কিভাবে সেই প্রশ্নও আজ করা যাবেনা।
মৌলবাদী দল ক্ষমতার কাছে অবস্থানের সময়ও যে জঙ্গীরা সাহস পায়নি আজ তারা কিভাবে বার বার নাস্তিক হত্যার নামে এমন ঘৃন্য ও নৃশংস অপরাধ করে যাচ্ছে!
প্রিয় সাগর সারোয়ারের মৃত্যুর পর পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এই নির্মম হত্যাকান্ড সংক্রান্ত যে (?)সুখবর দিতে চেয়েছিলো তা কি ছিলো? আজও যেহেতু এই নৃশংসতার বিচার হয়নি তারপরও জানতে চাওয়া যাবেনা, সেই (?)সুখবরটি কি খুনিদের নিরাপদ আশ্রয়ে প্রেরণের ঘটনাটি ছিলো কিনা?
লেখক ও প্রকাশকের উপর প্রাণনাশি হামলার পর রক্তমাখা(আহতদের রক্তাক্ত শরীরের ছবি দেখে স্পষ্ট যে ঘৃন্যখুনি খুব কাছ থেকে কাপুরুষোচিত হামলা করেছিলো, এত যে তার পোশাকও রক্তমাখা ছিলো তা বুঝা কঠিন নয়) ঘাতক কিভাবে অল্পসময়ের মাঝে নির্বিঘ্নে পাড়ি দেয় লালমাটিয়া থেকে শাহবাগের দুরত্ব সেই প্রশ্নও আজ করা যাবেনা। জানতে চাওয়া যাবেনা আজিজ মার্কেটের মতো একটি জনবহুল স্থানে কিভাবে হত্যাকারীরা এমন নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চুপচাপ সরে যা্য় আর আজও ধরা পড়েনা।
ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বিদেশী মিডিয়া কিভাবে জানতে পারে এটা জঙ্গীদল হরকাতুল জিহাদের কাজ? প্রশ্ন করা যাবেনা এই হরকাতুল জিহাদ আর জে এমবি কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এতোখানি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে!! আর এই জঙ্গীদের যম বীর কর্নেল গুলজারকেই বা কেনো তড়িঘড়ি র্যাব থেকে সরিয়ে নির্মম পরিনতি মেনে নিতে বিডিআরে প্রেরণ করা হয়েছিলো!
জানতে চাওয়া যাবেনা, বিশ্ব জুড়ে নন্দিত, জনগনের কাছে সমাদৃত ও আস্থাভাজন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীতিটি কিসের ভয়ে বিলুপ্ত করা হলো!
এসব কোন প্রশ্নই এখন করা যাবেনা।
প্রতিদিন ঘৃন্য হায়নার পালের এমন সব নারকীয় উল্লাসে জনজীবন যতোই অতীষ্ট হোক চুপ, একদম চুপ! কোন কথা বলা যাবেনা.... এখন গণতন্ত্র!
গণতান্ত্রিক নিত্যনতুন ধারার ভয়ে আজ সকলের কন্ঠরুদ্ধ!
গণতান্ত্রিক জোয়াড়ে ভাসছে সারা দেশ!
আর তারই সুফল ভোগ করে সেদিনের (?)গণতন্ত্রকামীরা আজ নিরব!!!
((---দেশের আনাচে কানাচে সহ অনলাইনেও একদল মগজ ধোলাইকৃত ক্রীতদাসের পাল আছে, এরা শুধু জানে নিজেদের রাজনৈতিক প্রভুদের বন্দনা সঙ্গীত আর তাদের স্বরূপ উন্মোচিত হলেই মিথ্যার আর নোংরামীর আশ্রয় নিয়ে দুর্গন্ধ ছিটানো। ছারপোকা সম এই ক্রীতদাসের পালের মগজধোলাই করে যেনো ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে, দেশে শুধু দুটো দল 'আওয়ামিলীগ" আর 'রাজাকার"!))
*******উৎসর্গ প্রিয় ব্লগার অন্ধকার (ফয়সাল আরেফিন দীপন) এবং প্রিয় ব্লগার সাগর সারোয়ার *******