বিষয়: জাতিগত পরিচয় থেকে ধর্মীয় পরিচয়ে রূপান্তর
---------------
গত কয়েকদিন আগে একজন হড় এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইতিহাস পরীক্ষা দিয়ে আসার পরে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম পরীক্ষা কেমন হলো ?
-সে বলল ভালোই হয়েছে।
হঠাৎ কি মনে করে আবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা আদিবাসীদের, হড়দের ইতিহাস কিছু জানো? তোমাদের সিলেবাসে কি আদিবাসীদের কোন ইতিহাস আছে?
- সেরকম কিছু নাই তবে একজায়গায় সাঁওতাল বিদ্রোহের কথা শুধু বলা আছে বলে সে প্রতিউত্তর দিল।
আমি অাবার জিজ্ঞেস করলাম যে আর কি কি জানো? আচ্ছা বলোতো হড়দের সৃষ্টি কিভাবে হলো, হড়দের সৃষ্টিকর্তার নাম কি? হড়দের কি কি উৎসব আছে?
-সে একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো আমিতো কিছু জানিনা এবং আমাকে উল্টো জিজ্ঞেস করলো যে হড়দেরও সৃ্ষ্টিকর্তা আছে নাকি?
আমি বললাম কেন থাকবে না। পৃথিবীর সকল জাতির কাছেই পৃথিবী সৃষ্টির তত্ত্ব আছে। তাদের নিজেদের ভাষায় সৃষ্টিকর্তার নাম আছে। তারপরে আমি তাকে সরাসরি নামটি না বলে হড়কোরেন মারে হাপড়ামকো রেয়াঃ কাথা বইটি তাকে দিবো বললাম। আর বললাম যে তোমার পরীক্ষা শেষ হলে বইটি পড়ে আমাকে উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিও।
-আমার কথা শেষ হতেই সে সহরায় এবং বাহা পরবের কথা বলে উঠল এবং বলল যে আমরা বড়দিনের সময় সহরায় করি এবং পাস্কার (স্টার সানডে) সময় বাহা করি।
এটা শুনে আমার মাথায় আকাশ পড়ার মতো অবস্থা হলো। আমি তাকে বললাম বুঝেছি, খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারকরা নিশ্চয় এইটা শিখিয়েছে যে সহরায় ও বড়দিন এক এবং বাহা ও পাস্কা এক তাইনা?
-ছেলেটি বলল তা জানিনা তবে এইভাবেই দেখে আসছি, আমাদের গ্রামে যেটা বড়দিন সেটাই সহরায় আর যেটা পাস্কা সেটাই বাহা।
আরো বেশ কিছু দিন আগের একটি কথা যথন ছেলেটির সাথে প্রথম পরিচয় হলো। তার বাড়ির ঠিকানা বলতে গিয়ে সে বলেছিল "আমার বাড়ি মারিয়ামপুর মিশনে"। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এই তোমার বাড়ি কি মিশনের ভিতরেই নাকি।
-সে বলল না না মিশনের ভিতরে হবে কেন?
তাহলে তোমার গ্রামের নাম কি?
-তখন সে বললো শ্যামপুর।
আমি বুঝলাম যে ছেলেটি শুধু ধর্মীয় পরিচয়েই বড় হচ্ছে। খ্রিস্টান ধর্মীয় ব্যবসার জালে এই কেবল বেড়ে উঠা ছেলেটিও ধরা খেয়েছে যেখানে হড়দের সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ নেই বলেই তাকে শেখানো হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:৩৬