১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব ৪র্থ পর্ব ৫ম পর্ব ৬ষ্ঠ পর্ব ৭ম পর্ব ৮ম পর্ব
এতদিন ঘোরাঘুরি, বিনোদন, আর খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করার পর মনে হচ্ছে টুকিটাকি কেনাকাটা ছাড়া আর তেমন কিছু করার নেই, কারন এতদিনে অনেকেরই বাড়ী ফেরার সময় হয়ে এসেছে। তাই কেনাকাটার হাল্কা বিবরন দিয়ে আমার এই মালয়েশিয়া ভ্রমন গাইড পর্বগুলোর সমাপ্তি করে দিতে চাই।
কেনাকাটার জন্য বিপনী বিতানগুলোকে আমরা পন্যের কোয়ালিটি এবং দামের দিক দিয়ে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি, সাধারনত বাংলাদেশীরা যে সকল শপিং মল হতে পন্য কেনে, এই পোষ্টে সেগুলো নিয়েই আমি আলোচনা করব,
১. হানিফা টেক্সটাইল : নামে টেক্সটাইল হলেও কামে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, মসজিদ ইন্ডিয়া এলাকায় অবস্থিত এই তিনতলা বিশিষ্ট স্টোরটিতে আপনি পাবেন আপনার পছ্নদমত প্রায় সব পন্য, বাংলাদেশী কর্মজিবী ভাইদের প্রথম পছন্দ এই হানিফা টেক্সটাইল। কারন হল এখানকার পন্যের কোয়ালিটি অনেক বড় বড় শপিং মলের পন্যের কোয়ালিটির চেয়ে কোন অংশে কম নয়, কিন্তু সেই তুলনায় দাম তুলনামূলক কম। {মোদ্দা কথা এখানে সুলভ মুল্যে কম্বল এবং টর্চলাইট পর্যাপ্ত রয়েছে এবং সোনার গ্রাম এখানে অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় কম হয়}
২. মাইডিন : মাইডিন মার্ট নামে পরিচিত এই মার্ট!! বাংগালী কর্মজিবী ভাইদের ২য় পছন্দ। পন্যের কোয়ালিটির দিক দিয়ে আমার ধারনা ১০/৫। মানে অর্ধ। মানে খুব একটা ভালো নয়। বুঝটে পারছেন নিশ্চ্য়। তবে দাম পানির মত। পন্যের কোয়ালিটি ভালো হলে আমার মনে হয় বাংগালী ভাইদের প্রথম পছন্দ থাকতো কোতারায়ায় অবস্থিত এই মাইডিন মার্ট। একটু দুর-দুর সম্পর্কের আত্মীয়দের জন্য কসমেটিক বা বাচ্চাদের মন ভুলানো হরেক রকমারীর চকলেট আপনি কম দামে পাবেন এখানে তুলনামূলক কম মূল্যে। তবে মাইডিন কম-বেশী সবার পছন্দ বাচ্চাদের খেলনা ও চকলেটের জন্য, ভালো মানের চকলেটও পাওয়া যায়
৩. সোগো : রাজধানী কুয়ালালুমপুরে অবস্থিত এই শপিং সেন্টারটিতে আপনি ডিজেল, জন মাস্টার, লেবি, লিবাইস সহ অনেকগুলো নামকরা ব্র্যান্ডের জামা-পায়জামা কিনতে পাবেন, যদিও সেগুলোর উচ্চ দাম, তথাপি সোগোর গ্রাউন্ডফ্লোরে বছরের ১২ মাসই আপনি পাবেন ৫০-৮০% ছাড়। ৮০% ছাড় বাদ দিলেও সেটার যে দাম পড়বে তা দিয়ে নরমা দোকান থেকে ২-৩টা কিনতে পাওয়া যায়, কিন্তু অরিজিনাল ব্র্যান্ডের কথা চিন্তা করলে খুশিতে আপনার মন ভরে যাবে। জামা-পায়জামার জন্য সোগো অনেকেরই পছন্দের লিস্টে ১ নং থাকে। কোতারায়া থেকে বাসে ১ রিংগিত ভাড়া
৪. পেরতামা কমপ্লেক্স : সোগো মার্কেটের গা ঘেষে দাড়িয়ে আছে পর্তামা কমপ্লেক্স। সুদৃশ্য এই শপিং মলটিতে রয়েছে আপনার পছ্নদের প্রায় সব পন্য সামগ্রী। তবে ভাল মানের জুতা কেনার জন্য উৎকৃষ্ট এই পের্তামা কমপ্লেক্স। যদিও আপাত দৃষ্টিতে দাম একটু শোনা যায়, তথাপি জিনিস ভাল, এবং অরিজিনাল।
৫. মিডভ্যালী মেগামল : সুবিশাল এই শপিং সেন্টারে আপনি চোখ ধাধানো অনেক কিছুই দেখতে পাবেন। মালয়েশিয়ান ইয়াং জেনারেশনের প্রথম পছন্দ মিডভেলী (টাংকি মারার জন্য), প্রচন্ড কনকনে কম্বল মূড়ী দেয়া শীতে যদি ছবি দেখতে চান তবে মিডভ্যালীর সিনেপ্লেক্স উপযুক্ত যায়গা। কোতারায়া থেকে বাস ১ রিংগিত ভাড়া, ট্রেনেও যাওয়া যায়
৬. সানওয়ে পিরামিড : সানওয়ে লেগূন পার্ক এবং সানওয়ে রিসোর্টের মাঝে অবস্থিত সুদৃশ্য এই শপিং মল টিতে আছে পছ্ন্দের সব কিছু। এখানকার সবচেয়ে আকর্ষনীয় এর গ্রাউন্ডফ্লোরের আইস স্কেটিং, ছোট-বড় ছেলে মেয়েরা কিসুন্দর স্কেটিং করে, উপর থেকে দেখলে প্রানটা জুড়িয়ে যায়, আপনি চাইলে নিজেও একটা চেস্টা করে দেখতে পারেন। ঘন্টা হিসেবে বিশেষ গুতা ভাড়া নিয়ে স্কেটিং করতে পারেন। {দু-একবার আছাড় খাইলে লজ্জা পাইবেন না}। কোতারায়া থেকে বাস পাবেন ২-২.৫০ রিংগিত ভাড়া
৭. ওয়ান উতামা শপিং সেন্টার : সুবিশাল এই শপিংসেন্টারে আপনি কেনাকাটা করতে পারেন। রাজধানীর দামানসারা নামক স্থানে অবস্থিত এই শপিং সেন্টারে আপনি যেতে কোতারায়া থেকে বাস পাবেন।
৮. বি.বি প্লাজা , সুন্গাই ওয়ান্গ এবং টাইমস স্কয়ার এই তিনটা বিশাল আকৃতির শপিং মল রাজধানীর বুকিত বিনতাং এলাকায় রয়েছে, তিটার মধ্যে টাইমস স্কয়ারের পন্যের মান সবচাইতে ভাল, আর দামটাও সেখানে বেশখানিকটা বেশী, সেই তুলনায় সু.ওয়ান্গ ও বিবি প্লাজায় দাম কম, তবে সেখানকার পন্যের মান কোনভাবেই খারাপ বলা চলে না। মেয়েদের নাকের কানের দুল, ভুং-ভাং ইত্যাদি কেনার জন্য সুন্গাই ওয়ান্গ প্লাজার বেশ নাম ডাক রয়েছে।
৯. প্লাজা লাও ইয়াট : সয়ন্গাই ওয়ান্গের পাশেই অবস্থিত। মোবাইল এবং কম্পিউটারের যাবতীয় পাইকারী এবং খুচরা সামগ্রী কেনাকাটার জন্য লাও ইয়াটের বিকল্প মালয়েশিয়ায় নেই।
১০. ফুটপাত শপিং সেন্টার : এটা মুলত বুকিত বিনতাং এবং পেতালিং স্ট্রীট এলাকায় গড়ে উঠেছে। প্রচূর পরিমান বাংলাদেশী ভাইয়েরা এখানে দোকানের (স্টলের) মালিক এবং কর্মচারী হিসেবে অবস্থান করছে। অনেকটা গুলিস্থান বাংলাবাজার। এছাড়াও পুত্রাজায়া এবং অন্যান্য কিছু টুরিষ্ট স্পটেও পাবেন এ ধরনের বাজার। তবে পেতালিং স্ট্রীটের ব্যাবসাটাই সবচেয়ে জমজমাট এবং বড় ধরনের। পে.স্ট্রীট এবং বু.বিনতাং এর এশ ফুটপাতে আপনি গুসি, আরমানি ব্র্যান্ডের পার্স, বা অন্যান্য সামগ্রী পাবেন ২০-৩০ রিংিতে, (অভাবনীয় মূল্যে)। হিউগো বস, কে.সির মত ব্র্যান্ডের পারফিউম পাবেন ১০-২০ রিংগিতে। তবে এসব জায়গায় ১০০% সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। একটু অসাবধান হলেই ১৫ রিংগিতের পন্য আপনাকে ৩০০-৪০০ রিংগিতে কিনে নিতে হবে, এবং পরিস্থিতি এমন দাড়াবে যে আপনি কিনতে বাধ্য হবেন, কারন ঐসব দোকান দেখাশোনার দায়িত্বে থাকে মালয়েশিয়ার টপ সারির কিছু গ্যাংস্টার। তাই খুব সাবধান, আপনি সারাদিন (যদিও দোকাংুলো বিকাল ৫ টা থেকে রাত ১২টা অব্দি খোলা থাকে) ঘুরলেও কেউ কিচ্ছু বলবেন, শুধু আসেন-আসেন ডাকাডাকি করবে এই যা, কিন্তু যেই আপনি জিনিস ছুয়ে দেখেছেন তো মরেছেন, না কিনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। তাই বুঝে শুনে পা দেবেন তাদের জালে। তবে সেখানকার কোন নির্দিষ্ট দাম নেই, তাই আপনি যেই দামে কিনলে খুশি হবেন সেই দামে কিনবেন, তবে মনে রাখবেন তারা যদি আপনার কাছ থেকে একেবারেই লাভ না করে তাও ২-৩ গুন লাভ করে। আর দাম চাইতে কম করে হলেও ৪-৫ গুন দাম চাইবে।
১১. পাসার সেনী সেন্ট্রাল মার্কেট : পাসার সেনীতেই অবস্থিত, শো-পিস, বিভিন্ন ধরনের সুভ্যেনির জন্য পাসার সেনী উল্ল্যেখযোগ্য। ভালো কৃষ্টালের জিনিষ পাওয়া যায় এখানে
১২. চোও কিট : এটা একটা এলাকা, কোতারায়ার পাশেই। আপনি কাটা কাপড়, মেয়েদের বোরকা, স্কার্ফ, যায়নামাজ সহ অন্যান্য পন্য পাবেন অত্যন্ত সুলভ মুল্যে। শার্ট প্যান্ট পিসের জন্য ওটাও সর্বোত্তম জায়গা।
এছাড়াও আছে অনেক শপিং মল এবং কেনেকাটার ছোট বড় স্পট। ফুটপাতে এবংহয়ত চোও কিটে আপনাকে কিছুটা দরদাম করা লাগতে পারে, অন্য জায়গাগুলোতে তেমন দরদাম কিছুই করতে হবেনা। ও। কে.এল সিসি শপিং মলটা?? ওটার নাম ইচ্ছা করেই উচ্চারন করিনি (অনেক চড়া দাম)। দেখার জন্য হলে যেতে পারেন, অথবা সিনেপ্লেক্সে ছবি দেখতে পারেন। অথবা ওখানে একুয়ারিয়া আছে, দেখতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৪৪