গণতন্ত্র,ছোট্ট একটা শব্দ।এই ছোট্ট শব্দটার স্বপ্নে সমস্ত পৃথিবীতে কত মানুষ তাদের জীবন দিয়েছে তার হিসাব একসাথে আছে কিনা জানিনা । যদি থেকে থাকে তবে সেখানে বাংলাদেশের মানুষের হিসাবটাও নিশ্চয়ই আছে।তবে আজকের প্রেক্ষাপটে সেই তালিকা থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বপ্নে জীবন দেওয়া মানুষদের তালিকা বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত । কারন অন্য দেশে সেই মানুষদের আত্নহুতি সেখানকার সাধারণ মানুষকে গণতন্ত্র উপহার দিয়েছে ।আর বাংলাদেশে গনতন্ত্র উপহার পেয়েছে এ দেশের দুই নেত্রী । সারা দুনিয়ায় গণতন্ত্রের অর্থ এক আর বাংলাদেশে গনতন্ত্রের অর্থ নির্ভর করে দুই নেত্রীর চাওয়া বা পাওয়ার উপর । তাদের কাছ থেকে এদেশের মানুষ গনতন্তের কতটুকু কি পেয়েছে আজীবন তা ব্যাপক আলোচনা যোগ্য। তবে সাম্প্রতিক কিছু বছর আমাদের দুই নেত্রীর কাছ থেকে আমরা গণতন্ত্রের যে অর্থ সারা পৃথিবী দেখল তা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া,আপোষহীন নেত্রী বলে দাবী করে তার কর্মী সমর্থকরা ।এই আপোষহীন নেত্রীর পুরানো সব হিসাব বাদ দিয়ে গণতন্ত্রের নতুন সংজ্ঞা দেখা দিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল কেন্দ্র করে ।
#যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেন্দ্র করে সারাদেশে ১৮ দলের নিয়ন্ত্রক জামায়াত-শিবির যে নারকীয় তাণ্ডব সৃষ্টি করায় ডজন ডজন মানুষ প্রাণ হারাল,পুড়ে গেল শত শত কোটি টাকার সম্পদ । বেগম খালেদা জিয়া প্রকাশ্যে সেই তাণ্ডবের বিরোধিতা না করে তাদের পক্ষ নিলেন । কারন বেগম জিয়ার গনতন্ত্রে ঐ তাণ্ডব বৈধ ।মারা যাওয়া মানুষদের স্বজনদের কান্না কিংবা সব হারিয়ে নিঃস্ব মানুষের হাহাকার তার কানে পৌঁছেনি। আর এটাই তো গণতন্ত্র ।
#নির্বাচন কেন্দ্র করে যে জটিলতা তৈরি হল, সারাদেশ বা সারা বিশ্ব দুই নেত্রীর সংলাপ বা সমঝোতার দাবী জানাল। শেখ হাসিনা তাকে ফোন করে আলোচনার দাওয়াত দিলেন,তিনি গেলেন না।হয়ত তার আপোষহীন তকমায় বাধা লাগল কিংবা জোটের ইমেজ বা অন্য চাপে আলোচনায় না যেয়ে যে আন্দোলন বা নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেন । ভেবে দেখলেন না দেশের কথা,সাধারণ মানুষের কথা।এটাও তো তার গণতান্ত্রিক অধিকার।
#নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কৌশলে হেরে গেলেন খালেদা জিয়া,ডাক দিলেন হরতাল-অবরোধের।তার এই গণতান্ত্রিক আন্দোলন সমস্ত দুনিয়ায় হইচই ফেলে দিল।কারন সেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ও তার নিয়ন্ত্রক জামায়াত শিবির ককটেল আর পেট্রোল বোমার যে গণতান্ত্রিক ব্যবহার দেখল তার নজির আর কোথাও কি ছিল।গণতন্ত্রের তাত্ত্বিক অর্থ তো গণমানুষ কেন্দ্রিক। আর তাই ঐ পেট্রোল বোমা তো সাধারণ মানুষের উপরেই পড়বে । হোক সে ট্রাক,পিকাপ বা অন্য কোন গাড়ির চালক,অফিসগামী ছাপোষা মানুষ বা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। মানুষের জীবনের সাথে সাথে পুড়ছে হাজার কোটি টাকার সাধারণ মানুষের সম্পদ ।
সেই পোড়া ধোঁয়ার গন্ধ কিংবা মানুষের আর্তনাদ কোন কিছুই দমাতে পারেনি আপোষহীন নেত্রীকে।আর কেনইবা তিনি সেসব কানে তুলবেন,সাধারণ মানুষ হয়ে গণতন্ত্র চাইবে আর আগুনে পুড়তে পারবেনা তা তো হবেনা?
#নির্বাচনের আগে হটাত ভিডিও বার্তা দিয়ে হাজির হলেন লন্ডনে বসে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রেমে মত্ত আপোষহীন নেত্রীর পুত্র তারেক রহমান।চার দলীয় জোট সরকারের সময় যে তার গণতান্ত্রিক অধিকার দেখিয়ে প্যারালাল সরকার গঠন করে শাসন করেছিল এই বাংলাদেশকে।যাকে খালেদা জিয়াই নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারেননি,চার দলীয় সরকার ডুবানোর অন্যতম প্রধান নায়ক সেই তারেক রহমান বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় উস্কে দিলেন তাণ্ডবের সেই ভয়াল আগুন।যে কোন মুল্যে কেউ কোন নির্দেশনা না দিলেও নির্বাচন বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন।নির্বাচন বন্ধ হয়নি কিন্তু বন্ধ হয়ে গেল ৫০০ এর উপর স্কুল,২৫/৩০ টি পরিবার স্বজন হারিয়ে সব সুখ।খালেদা জিয়া পুত্রের তাণ্ডব উস্কে দেওয়া ভিডিও বার্তাও তো গণতন্ত্র ।
# প্রহসন হোক আর যাই হোক নির্বাচন শেষ হল,সরকার আবারও আলোচনার প্রস্তাব দিল কিন্তু বেগম জিয়া সাড়া দিলেন না।চালিয়ে যাচ্ছেন অবরোধ-হরতাল।প্রতিদিন আগুনে পোড়া মানুষের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে,নতুন করে যোগ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা।হয়ত যোগ হবে আরও নতুন কিছু।কিন্তু বেগম জিয়ার গণতন্ত্র যাত্রা চলতেই থাকবে।
---- বেগম খালেদা জিয়া, আপনাকে বলছি,সাধারণ মানুষের গণতন্ত্রের নামে আপনার ও আপনার উপর নিয়ন্ত্রণকারী জামায়াত-শিবির যে তাণ্ডব চালাচ্ছে সেটা থামান ।সরকার বা আওয়ামী লীগের উপর আপনাদের যে ক্ষোভ সেই ক্ষোভের আগুনে সাধারণ মানুষের জান-মাল তো বিনষ্ট হবার কথা নয়,কথা নয় বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের নামে আফগানিস্থান বানানোর চেষ্টা।বর্তমানে আপনাদের কাছে যে গণতন্ত্রের অর্থ সেই অর্থ আর দেখতে চাইনা আমরা, দেখতে চায়না বাংলাদেশ।আলোচনায় বসলে আপোষহীন তকমায় দাগ লাগে কিনা যদি সেই চিন্তা থাকে তাহলে মাঝে কাউকে রাখতে তো পারেন। চলমান আন্দোলনে নির্বাচন বন্ধে সাধারণ মানুষের থেকে বিদেশী বন্ধুদের সাথে যে পরিমাণ দেন-দরবার করেছেন সেই অনুযায়ী একটু চেষ্টা করুন সরকারের সাথে আলচনায় বসার ব্যাপারে ।
প্লিজ, গণতন্ত্রের নামে সব সহিংসতা থেকে মুক্তি দিন সাধারণ মানুষকে,মুক্তি দিন বাংলাদেশকে।
আওয়ামী লীগ ও সরকার প্রধান শেখ হাসিনা,যিনি তার কর্মী-সমর্থকদের কাছে গণতন্ত্রের মানসকন্যা বলে পরিচিত । বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে গণতন্ত্রের অর্থ বদলে দিলেন তিনিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেন্দ্র করে।
#২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে সরকারে এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে জাতিকে একটা কলংক থেকে মুক্তি দেবার পথে হাঁটলেন। অবশ্যই তা সঠিক ছিল কিন্তু পাঁচ বছর মেয়াদে তা শেষ করতে পারলেন না ? শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কি জানত না জামায়াত-শিবির তার হিংস্র দাঁত বের করবেই এবং ক্ষতবিক্ষত করবে এদেশকে,অবশ্যই জানত । কিন্তু তাদের নিস্ক্রিয় বা নির্মূলের ব্যবস্থা করলনা ,এটা হয়ত গণতন্ত্র ।
#যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বা নির্বাচন কেন্দ্রিক যে সহিংসতা ঘটল,এত মানুষ আগুনে পুড়ল বা সম্পদ বিনষ্ট হল শেখ হাসিনা বা তার সরকার তা সামাল দিতে পারলনা ।হয়ত কোন মতে নির্বাচন কাটানোর জন্যই কড়া ব্যবস্থা নিলনা সরকার।এটাও গণতন্ত্র,নিজের দলের স্বার্থ দেখাও হয়ত গণতন্ত্র।
#একটি নির্বাচন হয়ে গেল,দেশের অর্ধেক মানুষ ১৫৩ টা সংসদীয় আসনে তার গণতান্ত্রিক অধিকারের মুল শর্ত ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলনা ।শেখ হাসিনা বলেছেন,নির্বাচনে কেউ না আসলে কি করব? আসলেই তো দেশের অর্ধেক মানুষ ভোট দিতে পারলনা, মানুষের প্রধান গন্তান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে সরকার কিছুই করতে পারেনি- এটাও শেখ হাসিনা সরকারের গণতান্ত্রিক অধিকার।
#সংবিধান রক্ষার নামে যেনতেন নির্বাচন শেষ করল শেখ হাসিনা । নির্বাচনে জিতেছে ব্যাপক ব্যবধানে । কিন্তু যে সংবিধান দেখিয়ে নির্বাচন করলেন সেই সংবিধানে যে সাধারন মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়াও সরকারের দায়িত্ব সেটা কি ভুলে যাওয়াকে গণতন্ত্র বলে ?এই যে নতুন করে হিন্দু পল্লীতে হামলা হচ্ছে,প্রশাসন কি আঙুল চোষে?নাকি এই চুপ থাকা শেখ হাসিনার গণতন্ত্র ?
---- শেখ হাসিনা,আপনাকে বলছি, স্বজন হারানো বা সহায়-সম্বল হারা মানুষের চোখের পানিতে দেশ যে আর্তনাদের দেশে পরিণত হয়েছে সেটা কি আপনার কানে পৌঁছেনা নাকি কোন রাজনৈতিক খেলার জন্য কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা সরকার,এটা কি গণতন্ত্র?কেন নির্দেশ দেওয়া হচ্ছেনা এই তাণ্ডবকারীদের দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ?যে ভাবেই হোক থামান এই তাণ্ডব । যত দ্রুত হোক আলোচনায় বসুন বিরোধী দলের সাথে,ব্যবস্থা নিন সব মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার মত সর্বজনগৃহীত একটা নির্বাচনের।
প্লিজ, গণতন্ত্রের নামে সব সহিংসতা থেকে মুক্তি দিন সাধারণ মানুষকে,মুক্তি দিন বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশ,বীর বাঙ্গালীর দেশ আজ মেরুদণ্ডহীন মানুষের কারণে স্থবির ।যে দেশের মানুষ ভাষার জন্য জীবন দেয়,স্বাধিকার আন্দোলনে জীবন দেয়,নিজের পতাকা-নিজের একখণ্ড ভুমির জন্য জীবনবাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়ে প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনির বিরুদ্ধে,ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা আবার স্বাধীন দেশে স্বৈরাচার শাসন মুক্ত হতে গণতন্ত্র আনতে বুকে পিঠে "স্বৈরাচার নিপাত যাক,গণতন্ত্র মুক্তি পাক " লিখে শাসকের রাইফেলের গুলিতে লুটিয়ে পড়ে রাজপথে শ্লোগান লেখা কালি আর বুকের তাজা রক্তে রচনা করে যায় গণতন্ত্রের মহাকাব্য--সেই কাব্যে সব দল,সব মত,সকল মানুষ তাদের অধিকারের শব্দ যোগ করে স্বৈরাচার মুক্ত করে গণতন্ত্রের জন্ম দেয় ,সেই দেশ আজ রাজনৈতিক দালালী,অন্ধ দলবাজি আর নীতিহীন মানুষের নির্দেশে প্রাণহানি আর সম্পদ ধংসের উন্মত্ততায় এগিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের দিকে। রাজনৈতিক দলগুলির নিজেদের ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি যা তাদের ভাষায় গণতন্ত্র,সেই গণতন্ত্রের জন্য তাণ্ডব আর ব্যাথিত করেনা সাধারন জনতার হৃদয়কে,বুকে জলে ওঠেনা রাজনৈতিক দলগুলার বিরুদ্ধে ঘৃণার আগুন । কি এক অজানা সংশয়ে চোখ বুজে,মুখ বন্ধ করে মাথা ঝুকিয়ে রাখতে রাখতে ক্ষয়ে যাচ্ছে মেরুদণ্ড, একটা সময় মেরুদণ্ডহীন জাতির তালিকায় যুক্ত হবে বীর জাতির নাম ।
---অপেক্ষায় থাকলাম,দুই নেত্রীর গণতন্ত্র,মানুষ পোড়া আগুন আর প্রায় মেরুদণ্ডহীন হয়ে যাওয়া জনতা কোথায় নিয়ে যায় বাংলাদেশ কে ।