অনেক আলোচনায় থাকা দশম সংসদ নির্বাচন শেষ হল।আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে যতটা জয়ী হল তারথেকে বেশী পরাজিত হল বিএনপি-জামাত জোট।তফশীল ঘোষণার আগ থেকেই বিএনপি-জামাত জোট নির্বাচন বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছিল।আর তফসীল ঘোষণার পর থেকে হরতাল,অবরোধ নানা কর্মসূচী দিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করল।কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। নির্বাচন হয়ে গেল । আওয়ামী লীগ এই নির্বাচন শেষ করার জন্য বেশীর কৃতিত্ব বিএনপি-জামাত জোটকে দিতেই পারে।প্রশ্ন হল কেন ?
মহাজোট সরকারের শেষ দিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার জনমত কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলনা ।সরকারের ৫ বছরের নানা বিতর্কিত কাজ জনগণ মেনে নেয়নি।জনগণের সেই বিরূপ মনোভাব কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি-জামাত।আর ঐ ব্যর্থতার জন্য দায়ী হরতাল-অবরোধ এর সহিংসতা ।যে জনগণ আওয়ামী লীগের নানা কাজের সমালোচনায় মুখর ছিল সেই জনগণ ই বিএনপি-জামাতের আন্দোলনের সহিংসতায় দিশেহারা হয়ে গেল । যে জনতা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার জন্য প্রস্তুত ছিল সেই জনতাই যখন দেখল ককটেল বা পেট্রোল বোমায় পুড়ছে বাস,ট্রাক আর নানা যানবাহন । পেট্রোল বোমায় পুড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তখন কিন্তু আওয়ামী লীগের ৫ বছরের সব খারাপ কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়ার সেই প্রতিবাদের শক্তি কিন্তু সরব হয়ে গেল আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস-সহিংসতার বিরুদ্ধে ।বিএনপি-জামাত শেষ সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচীতে পুড়ে যাওয়া কয়টি যানবাহন সরকার বা সরকারী দলের কারো ? যে মানুষগুলি জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হয়ে ঝলসে গেল ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হিসেবে ধরে নেওয়া বিএনপি-জামাতের পেট্রোল বোমায়,তারা কি সরকারের কেউ নাকি সরকারি দলের সুবিধাভোগী কেউ?আর এভাবেই কিন্তু বিএনপি-জামাতের ছুঁড়ে দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই গেল আওয়ামী লীগ বা মহাজোট সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ । আওয়ামী লীগ এজন্য কিন্তু বিএনপি-জামাতকে ধন্যবাদ দিতেই পারে ।
আজকের নির্বাচন যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে অনেক প্রাপ্তি দিয়েছে সেটা ভাবা অনেক বড় ভুল ।কিন্তু এই নির্বাচন বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রভিত্তিক যে সহিংসতা চালালো এতে কি বিএনপি-জামাত জোট অনেক কিছু পেয়ে গেল ? মোটেই না । লন্ডনে আয়েশি জীবন কাটানো দুর্নীতির বরপুত্র তারেক রহমান ভিডিও বার্তায় যে কর্মী-সমর্থকদের সহিংসতার পথে যেতে উৎসাহ দিয়ে এতগুলা মায়ের বুক খালি করল তাতে বিএনপি- জামাতের প্রথম বা দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির কোন নেতাই ছিলনা । সব সাধারণ কর্মী সমর্থক ।বড় নেতারা নিরাপদে থেকে সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মৃত্যু মুখে ঠেলে দেয় তার জ্বলজ্বল উদাহরণ হয়ে থাকল নির্বাচন বানচালের ঐ আহবান ।এই মানুষগুলা মারা না গেলে কি এই নির্বাচন ব্যাপক সাধুবাদ পেত,কক্ষনোই না ।এমনিতেই এই নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষ বা ভোটারদের কোন মাথাব্যাথা ছিলনা । কেন্দ্রভিত্তিক সন্ত্রাস না করলেও কিন্তু খুব বেশী মানুষ ভোট দিতে আগ্রহী ছিলনা বরং এই কেন্দ্রভিত্তিক সন্ত্রাস আওয়ামী লীগ কে ভোটার না আসা বা শতকরা হিসেবে ভোটার উপস্থিতির হার কম কেন তার একটা যুক্তি বা রাজনৈতিক ফায়দা নেবার সুযোগ করে দিল । আওয়ামী লীগ এজন্য বিএনপি-জামাতকে ধন্যবাদ দিলেও দিতে পারে।
শেষ কথা হল,এই নির্বাচনে গঠন হতে যাওয়া সরকারের ভবিষ্যৎ কি ? আমার মনে হয় খুব বেশী হলে দেড় বা দুই বছরের মাথায় আবার নির্বাচনের ব্যবস্থায় যেতে হবে এই নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠন করা হবে তাদের । এখন দেখার বিষয় হল বিএনপি-জামাত তাদের কর্মকাণ্ডে সরকারের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় কিনা ।