তালুকদার আব্দুল খালেক বা খালেক তালুকদার।খুলনা অঞ্চলের রাজনীতির অন্যতম স্তম্ভ।ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে উত্থান হয়ে খুলনা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কমিশনার নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটের রাজনীতিতে প্রবেশের পর টানা ছয় বার বিভিন্ন নির্বাচনে জয়ী হলেও আজ খুলনা সিটি নির্বাচনে হয়ত ( যেহেতু এখনও পুরা রেজাল্ট পাওয়া যায়নি) তিনি হারের স্বাদ নিবেন।একজন কমিশনার থেকে সংসদ সদস্য,সংসদ সদস্য থেকে বাংলাদেশ সরকারের সফল মন্ত্রী।তারপর খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র।
বাংলাদেশের মন্ত্রিত্ব পাইছে কিন্তু দুর্নীতি মামলা খায় নাই,এমন মন্ত্রীর সংখ্যা অনেক কম।বাংলাদেশে মন্ত্রী হলে দুর্নীতি করুক না করুক ক্ষমতার পালা বদল হলেই মামলা নিশ্চিত।যে সকল অল্প কয়েক মন্ত্রী পালা বদলের পর মামলা খায়নি এমন কি ১/১১ এর পরেও।তাদের অন্যতম খালেক তালুকদার।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে বেশ কিছুদিন খুলনা শহরের বাড়ীতে কাটিয়েছি।নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছি বিভিন্ন স্থানে।নির্বাচনের ২দিন আগে অর্থ উপদেষ্টা পত্নী ইভা আপার সাথে নির্বাচনী প্রচার শেষে তাকে একাকী বলেছিলাম,আপা খেটে খাওয়া মানুষেরা খালেক তালুকদারকে ভোট দিবে কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একটা অংশ এবং বিত্তবানদের বড় একটা অংশ খালেক তালুকদারকে হারানোর জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।আমার কথা শুধু আপা নয় বরং আমার চারপাশের অনেকেই কথাটা মেনে নেয়নি।তাদের আমি যে যুক্তিগুলা বলেছিলাম তা ছিল ঃ
#খালেক তালুকদার একজন সফল মানুষ ভোটের রাজনীতিতে।প্রথম নির্বাচনে কমিশনার হবার পর বাগেরহাট-৩ {রামপাল-মংলা }আসন থেকে বার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।এমন কি ১/১১ এর পর খুলনার মেয়র হবার পর যখন তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি,সেই আসন থেকে তার স্ত্রী নুরুন্নাহার খালেক ব্যাপক ভোটে জয়ী হয়।আর তাই দলের হাই কমান্ডের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল ব্যাপক।খালেক তালুকদারের এই গ্রহণযোগ্যতা কমানোর জন্য দরকার ছিল একটা পরাজয়ের।আর তাই আওয়ামী লীগের চিহ্নিত ক্ষমতাশালী একটা গ্রুপ এবারের নির্বাচনে সেই পরাজয়ের তিলক খালেক তালুকদারের ললাটে পরানোর জন্য ছিল মরিয়া।
# খুলনা শহরে যে যাই বলুক না কেন বিএনপি কক্ষনই রাজনীতির মাঠ দখল করতে পারেনা যেটা আওয়ামী লীগ বরাবরই করে আসছে।ক্ষমতাসীন দল বা বিরোধী দল যে অবস্থানে আওয়ামীলীগ থাকুকনা কেন রাজনৈতিক কর্মসূচী পালনে কক্ষনও বিএনপি বা তাদের জোটের তুলনায় পিছিয়ে থাকেনি।কিন্তু মজার বিষয় হল ১৯৭২ সালে মরহুম এম,এ বারি সাহেব ছাড়া কেউ আজ পর্যন্ত খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা নিয়ে গঠিত খুলনা- ২ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হতে পারেননি।হোক প্রার্থী সাদা মনের সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত মরহুম এড.মনজুরুল ইমাম কিংবা তরুণ নেতা আলহাজ্জ মিজান।
মঞ্জুরুল ইমাম
এখন প্রশ্ন হল কেন আওয়ামীলীগ সংসদ নির্বাচনে জিততে পারেনা?উত্তর হল কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কারসাজির জন্যই আওয়ামী লীগ সদর থেকে জিততে পারেনি।যেমন পারেনি ১৯৯৬ সালের আওয়ামীলীগের জোয়ারে কিংবা ২০০৮ সালের গণজোয়ারের সময়ও।
যারা খুলনায় বসবাস করেন তারা জানেন শহরের রাজনীতিতে টুটপাড়ার বিষয়টা কেমন।টুটপাড়া--খুলনা শহরের তিনটা ওয়ার্ড ২৮,৩০ ও ৩১ নিয়ে যার অবস্থান।বলা হয়ে থাকে খুলনা সদরের তিনভাগের একভাগ নিয়ে টুটপাড়া গঠিত।এই টুটপাড়ার সাথে মাত্র একটা এলাকা বরাবরই সমকক্ষ হবার প্রতিযোগিতা করে গেছে তা হল বানিয়া খামার।পূর্ববানিয়া খামার আর পশ্চিম বানিয়া খামার নিয়ে গঠিত অঞ্চল খুলনার অন্যতম বড় একটা এলাকা।
বানিয়া খামার এলাকা সেই পাকিস্থান আমল থেকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল রাখাল হাজী পরিবার।এই পরিবার খুলনা শহরে পরিচিত হাজী বাড়ি হিসেবে।একটা সময় হাজী বাড়ি মানেই বানিয়াখামার বা বানিয়াখামার মানেই হাজী বাড়ি ধরা হত।রাখাল হাজী বিপক্ষের হাতে নিহত হবার পর পরিবারের হাল ধরেন দুই ভাই আবুল কাশেম আর আবুল হোসেন।
আবুল কাশেম-খুলনা শহর বা খুলনা,বাগেরহাট,সাতক্ষীরা,যশোর সহ দক্ষিনঞ্চলের অন্যান্য জেলা গুলার মিথলজি নিয়ে যদি কখনও লেখা হয় তবে আবুল কাশেম বা কাশেম সাহেব মিথ হিসেবেই আসবে।
তিনিই দক্ষিণ অঞ্চলের মনে হয় একমাত্র ব্যক্তি যার হত্যার পর সেই ৯৫ সালে বি,বি,সি বা সি,এন,এন খুব গুরুত্ব সহকারে নিউজ করে।নিহত হবার আগ পর্যন্ত যে দল ক্ষমতায় থাকুকনা কেন কাশেম সাহেবের সম্মতি ছাড়া খুলনা অঞ্চলের রাজনৈতিক গাছের একটা পাতাও নড়ত না।আমি যতবার গডফাদার ছবির কোন পর্ব দেখিনা কেন মনে ভাসতে থাকে কাশেম সাহেবের ছবি।যে যে দলের যত বড় নেতা হোকনা কেন সবার তার কাছে নিয়মিত হাজিরা দেওয়া লাগত।তার আরেক ভাই আবুল হোসেন জাতীয় পার্টি থেকে এম,পি হয়েছিল এবং এখনও জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে রাজনীতি করছেন।
হাজী বাড়ীর পতনের ঘণ্টা বাজে ১৯৯৫ সালে।এস,এস,পরীক্ষা সামনে এমন সময় জীবনে প্রথম মামলা বা কেস খেলাম।জামিন নিয়ে পরীক্ষা দিতে গেছি,১ম পরীক্ষা শেষ করে হল থেকে বেরিয়েই শুনি তখনকার দিনের তরুণদের কাছে ক্রেজ {আমার নিজের কাছেও}ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ক্যাপ্টেন সুজা গুলিবিদ্ধ।বর্তমান ২৬ নং ওয়ার্ড কমিশনার জীবন্ত কিংবদন্তী কিলার!! গোলাম মাওলা শানু একে একে ৬টি গুলি করে সবথেকে কাছের বন্ধুটিকে।তখনকার যুবদলের নেতা ক্যাপ্টেন সুজা প্রথম মোটর সাইকেলের লুকিং গ্লাস খুলে মোটর সাইকেল চালাত।ট্রাউজারস হাঁটু পর্যন্ত উঠানো থাকবে,পরনে গোল গলা অথবা কলার ওয়ালা টিশার্ট,তার মত করে শত তরুন-যুবা খুলনায় ঘুরছে।বাংলা সিনেমার অনেক নায়কের থেকে সুদর্শন ক্যাপ্টেন সুজা রাইজিং সান নামক প্রথম বিভাগ জয়ী বাস্কেট বল দলের ক্যাপ্টেন যিনি কিছুদিন আর্মিতেও ছিলেন। ওয়াজেদ- শানু- সুজা খুলনা আন্ডারওয়ার্ল্ডের তিন কিংবদন্তি।শানু ভাই ক্যাপ্টেনকে গুলি করলে অনেক মানুষের মত আমারও অবস্থা কেরোসিন।খুলনার ২৫০ বেড হাসপাতালে নেওয়ার পর ক্যাপ্টেনের অপারেশনের সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় এবং সেখানেও হামলা করা হয়।ওইদিনই তাকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় নেওয়া হয়।৬টির মাঝে ৫টি গুলি বের করা গেলেও শেষটা থেকে যায় মেরুদণ্ডে।নিয়ে যাওয়া হয় ভারতে।সেখানেই মারা যায় ক্যাপ্টেন সুজা।কথিত আছে ভারতের হাসপাতালে বিষ দিয়ে হত্যা করা হয় তাকে।যেহেতু ঐ দিণগুলায় ক্যাপ্টেনের খুব আদরের পাত্র হওয়ায় আমি ও আমার অনেক বন্ধু অভিভাবকদের পাহারায় এস এস সি পরীক্ষা কোনমতে শেষ করি।কারণ ক্যাপ্টেনের সাথে ভাল সম্পর্কের কারণে অনেক এলাকার ছেলেদের সাথে মারামারির সময় তাদের আচ্ছা ধোলাই দিছি,এখন সেই ধোলাই ফেরত দেবার জন্য সবাই উন্মুখ।
কৃতজ্ঞতা ঃ প্রশ্ন কত চলবে .