তারা দুজনে যখন পার্কে দাঁড়িয়ে কথা বলা শুরু করে, সূর্যের তেজ তখনো অতোটা প্রখর হয়ে উঠেনি । ধুলো ময়লায় আচ্ছাদিত বিমর্ষ পাকুর গাছটা তখনো সুশীতল ছায়া বিলিয়ে দিনের প্রথমভাগের কোমলতা ছড়িয়ে যাচ্ছিলো । কিন্তু সূর্য যখন ধীরে ধীরে মাথার উপর এসে দাঁড়ায়, দুজনের কথোপকথন ততক্ষণে তিক্ত বিতন্ডায় রুপ নিয়ে নেয় ।
বাউন্সারের শুরুটা সজলই প্রথম হেঁকেছিল । তার সরাসরি অভিযোগ, শ্রাবণী তাদের সম্পর্ক নিয়ে লুকোচুরি খেলছে । একদিকে তার সাথে প্রেমের অভিনয় চালিয়ে অন্যদিকে ফ্যামিলির ঠিক করা পাত্রের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করে সে দ্বিচারিতায় নেমেছে । মোক্ষম রেফারেন্স হিসেবে শ্রাবণীর মায়ের সাথে তার আলাপচারিতার সম্পূর্ণ বর্ণনা আগেই দিয়ে রাখে সে । শ্রাবণী প্রথমে কাকুতি মিনতি করে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল যে এই ব্যাপারটা তার জীবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ । তাই এটা নিয়ে কোন লুকোচুরি বা খেলাধুলার কোন প্রশ্নই আসে না । সে শুধুই সজলকেই বিয়ে করতে চায় । কিন্তু সজলের মুখে দ্বিচারিতার মত অভব্য শব্দ শুনে মুহূর্তে বাউন্স হওয়া বলের উপর হুক খেলতে দুহাত শক্ত করে গুটিয়ে আনে শ্রাবণী । 'কি বলছ তুমি?' 'কি বললে তুমি.." বলতে বলতে প্রকাশ্য দ্বিপ্রহরে উন্মুক্ত পার্কে উন্মত্তের মত সজলের বুকে কাঁধে আঁচড়-ধাক্কা-কিলঘুষি চালাতে থাকে ।
অকস্মাৎ আক্রমনে অপ্রস্তুত সজল চুড়ান্ত বিব্রত আর দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে এক কদম দু'কদম করে পিছিয়ে আসে । 'এটা কি হচ্ছে' বলে তোতলানো গলায় মিনমিনে প্রতিবাদ করে । শ্রাবণীর ক্রমাগত নখের আঁচড়ের কাছে তার প্রতিবাদের ব্যর্থ চেষ্টা মিইয়ে যায় । পরিস্থিতির চুড়ান্ত প্রতিকুলতা বুঝতে পেরে সজল ঘোষণা দিয়ে পিছু হটে । 'আমার পক্ষে আর এখানে থাকা সম্ভব নয়, বলে দ্রুত হেটে পার্ক থেকে বেরুতে শুরু করে ।
পার্কের মুল গেটের কাছাকাছি পৌছে গতি সামান্য কমিয়ে আড়চোখে পেছনে তাকিয়ে দেখে নেয় । শ্রাবণীও তার পিছু পিছু হনহন করে এগিয়ে আসছে । সজল প্রমোদ গুনে, মাঝ রাস্তার উপর আজ একটা কেলেংকারি না বাঁধিয়ে ছাড়বেনা । তার ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে পালিয়ে এখান থেকে চলে যেতে । কিন্তু এই ভর দুপুরে রাজপথে একটা মেয়ে তাকে ধরার জন্য পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে, দৃশ্যটা ভাবতেই সে চুপসে যায় । হাটার গতি আরো একটু বাড়িয়ে রাস্তায় চলমান একটা খালি রিক্সার উপর লাফ দিয়ে উঠে বসে ।
বাসার সামনে এসে রিক্সা থেকে নেমে ভালো করে পেছন দিকটা আবার খেয়াল করে । শ্রাবণীকে দেখতে না পেয়ে নিশ্চিত হয়ে সে তালাবদ্ধ দরোজাটা খুলে ঘরে ঢুকে । তারপর দরোজাটা বন্ধ করে সোফার উপর ধপাস করে বসে পড়ে । নিজের হৃদপিন্ডের ধপধপ শব্দে নিজেই কেঁপে উঠে দরোজার দিকে তাকায় । চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে আপাত সরে পড়তে পারায় যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সে । হঠাৎ মাথাটা যেন ছিঁড়ে ফুঁড়ে যেতে থাকে দরোজায় ক্রমাগত ধাক্কা আর কলিংবেলের যুগপৎ শব্দে । ভয়ংকর পরিস্থিতি এড়ানোর আর কোন উপায় বাকি থাকে না । অনিচ্ছায় উঠে গিয়ে সে দরোজাটা খুলে দেয় । এক ঝটকায় শ্রাবণী ভেতরে ঢুকে তাকে পাশ কাটিয়ে সোজা বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে । পরিশ্রান্ত নরম শরীরে অস্ফুট কান্নার বদলে শুধু কাঁপনটাই সজলের চোখে পড়ে ।
বেশ কিছু সময় নীরবতার মাঝেই বয়ে যায় । এক সময় শ্রাবণী বিছানা থেকে উঠে এসে রক্ত লাল আগুনে চোখে সজলের দিকে তাকায় । শ্রাবণীর চোখের দিকে তাকানোর সাহস সজল অনেক আগেই হারিয়েছে । এবার শ্রাবণীর কথা আর প্রশ্নবানের তীব্র ঝাঁঝ অশান্ত সাগরের ঢেউয়ের মত সজলের বুকে আছড়ে পিছড়ে পড়তে থাকে । সজল মেঝের দিকে নির্বিকার চোখে তাকিয়ে থাকে, এই মূহুর্তে কোন প্রশ্নের উত্তর দেবার কোন ইচ্ছেবোধ কাজ করছে না । তার এই নির্বাক প্রতিক্রিয়াহীনতা শ্রাবণীর মাথায় দ্বিগুন বেগে আগুন জ্বালিয়ে দেয় । টেবিলের উপর ডায়েরিটা পড়েছিল তখনো । ভেতরে গুজে রাখা খোলা কলম সাক্ষ্য দিচ্ছিলো রাত্রি জাগরণের । শ্রাবনী ডায়েরিটা যখন প্রচন্ড জোরে ছুড়ে মারে, নিজেকে সরাতে এবার কোন চেষ্টাই করেনি সজল । কাঁধে আঘাত করে ডায়েরি তার সকল পাতা ছড়িয়ে মেঝেতে ভুলুন্ঠিত হয় । কলমটা তীব্র বেগে ছুটতে ছুটতে ঝনাৎ করে শব্দ তুলে দেয়ালের কিনারে আশ্রয় নেয় । সজলের মতোই মূক ডায়েরির পাতা অব্যক্ত থেকে যায়, গুমট মুখ থুবরে নিশ্চুপ পড়ে থাকে শুধু ।
কলিং বেলের শব্দে আবার নীরবতা ভাঙ্গে । শ্রাবণী ফ্ল্যাটে আসলে কলিংবেলের শব্দে সজল এমনিতে প্রচন্ড বিরক্তবোধ করে । তার ইচ্ছে হয় নচ্ছার বেলটাকে এক আছাড়ে ভেঙেচুরে ফেলে দিতে । সাধারনত সজলের বাসায় কেউ খুব একটা আসে না, শুধু কাজের মহিলা ছাড়া । আর তার আসার কোন নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই । তবে শ্রাবণী বাসায় আসলে এই মহিলা কিভাবে যেন ঠিক সেই সময়ে এসে উপস্থিত হয় । প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে সজল যখন দরোজায় দাঁড়িয়ে মুখের উপর বলে দেয় যে তার আজকে কাজ করার দরকার নেই, মহিলা তখন দুই ঠোঁটে মেজাজ গরম করা একটা ফিচকা হাসি ফুটিয়ে বিদায় নেয় । কিন্তু আজ এই সময়ে বিরুপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে মনে মনে সে সেই কাজের মহিলাকেই প্রত্যাশা করে ।
দরোজা খুলে দিয়ে মূর্তিমান কাজের মহিলাকে দেখে সজল আস্বস্ত হয় । 'আজকে কাজ করা লাগবেনা, আপনি কাল সকালে আসবেন'- সজলের মুখ দিয়ে হঠাৎ করে চেনা কথাটাই বেরিয়ে আসে । সজল আশ্চর্য্য হয়ে লক্ষ্য করলো তার কথা শুনে মহিলা আজকে হাসেনি, তার মুখটা হঠাৎ কেমন যেন মলিন হয়ে গিয়েছে । 'আইচ্ছা' বলে মহিলা বিমর্ষ মুখে প্রস্থান করে । সজল অবাক হয়ে ভাবে, এই মহিলা কি তাহলে সব কিছু বুঝে ফেলেছে!
দরোজা বন্ধ করে আসার পরেই শ্রাবণী হাতব্যাগটা নিয়ে সজলের সামনে দাঁড়ায় । 'তোমার মত অসভ্য কাপুরুষকে আমি ঘৃনা করি! বাবা মায়ের পছন্দের ছেলেটিকেই আমি বিয়ে করছি!' মূহুর্ত না থেমে হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় শ্রাবণী । সজল তাকে একবারের জন্যেও ফেরানোর চেষ্টা করেনি । তার চলে যাওয়া দেখতে অই দিকে ফিরে তাকায় নি পর্যন্ত । বরং ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রিলাক্স মুডে অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকে সোফার উপর ।
ঠিক কত সময় ধরে সে বসে আছে তা হিসেব করতে পারলো না । মানুষের মস্তিষ্ক নাকি কখনো থামেনা, ঘুমের ঘোরেও অবচেতনে বিরতিহীন ভাবে সে কাজ করে যায় । কিন্তু সজলের মনে হলো মাঝখানের সময়টা সে শূন্যতার ভেতর দিয়ে অতিবাহিত করেছে । মনে হলো মাথাটা ভীষণ ধরে আছে অনেকক্ষন । এই অবস্থায় ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার । তাই বাসা থেকে বের হয়ে আসলো সে ।
বাইরে ঝকঝকে দিনের আলোর মুখোমুখি হয়ে তার মনে হলো এইমাত্র কোন আলোহীন সুরঙ্গ থেকে বের হয়ে এসেছে । হঠাৎ আলোর ঝলকে চোখ দুটি তার স্বয়ংক্রিয় ভাবে ছোট হয়ে আসে । রোদের তীব্রতা কিছুটা কম, তার মানে দুপুর গলিয়ে বিকেল হয়েছে । বিকেলের এই নরম আলো তার মনে প্রশান্তির এক আমেজ এনে দেয় । একটা দীঘল দীর্ঘশ্বাস যেন তার বুক চিরে বের হয়ে তাকে অনেক হালকা করে দিয়েছে । তার হাটতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব ।
হাটতে হাটতে বিকেলের নরম আলো ক্রমে হালকা সোনালী বরণ ধারণ করছে । সজল হঠাৎ বুঝতে পারে কোন এক ফাঁক গলে আবার সেই দীর্ঘশ্বাসের দীঘল শীতল হাওয়া শিরশির করে তার বুকের ভেতর প্রবেশ করছে । শেষ বিকেলের সোনালী রোদ এমনিতে বিষাদমাখা । তার উপর সকালের সেই বিভীষিকাময় পার্কের ঠিক পাকুর গাছটির নিচে নিজেকে আবিষ্কার করে সজল বুঝতে পারে, নিয়তি তাকে নিয়ে এখনো ছক কষে যাচ্ছে । কোন কিছু না ভেবে সেখানেই সে পাটাতনের উপর চুপ করে বসে পড়ে ।
অনেকটা সময় চুপচাপ বসে থাকে সজল । ভাবনার চোরাস্রোত বেয়ে শ্রাবনী বারবার তার মাথায় আসা যাওয়া করতে থাকে । ঘোরগ্রস্থের মত স্পর্শ, গন্ধ, অনুভুতি, অনুভবে শ্রাবণীকে খুঁজে ফিরে সজল । কিন্তু সন্ধ্যা লেগে যেতেই পার্কের শান্ত পরিবেশ অন্য রকম হতে থাকে । সেখানে বিভিন্ন মানুষের আনাগোনা হঠাৎ যেন বেড়ে যায় । কড়া মেকাপ নেয়া একটা মেয়ে বেশ কয়েকবার তার সামনে দিয়ে যাওয়া আসা করে দৃষ্টি আকর্ষণের বৃথা চেষ্টা করে । এই অবস্থায় পার্কে বসে থাকা সমীচীন হবেনা ভেবে সে সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে বাসায় ফিরে আসে ।
ছিন্নভিন্ন ডায়েরিটা তখনো মেঝেতেই পড়েছিল । সেটা তুলে এনে টেবিলে রেখে গত রাতে লেখা পাতাগুলোর উপর চোখ বুলিয়ে যায় । সারা রাত জেগে কত আঁকিবুকি, কত অংক সে মিলাতে চেষ্টা করেছে । শ্রাবণী যদি তাকেই বিয়ে করার ইচ্ছে, তাহলে সেটা তার মাকে বলেনি কেন? কেন সে ঐ ছেলেটার সাথে দেখা করতে যায়? শ্রাবণীর মা তো বলেছেন, শ্রাবণীর সম্মতি পেয়েই নাকি তারা তার বিয়ে ঠিক করেছেন! বিয়েটা ভাঙতে পারতো একমাত্র শ্রাবণী, কিন্তু সে এটা নিজে না করে তার মা বাবাকে বোঝানোর জন্য সজলকে কেন চাপ দিচ্ছে ? কোন হিসেবই সে মেলাতে পারেনি । শ্রাবণীর বিয়ে সাত তারিখ, ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে সজল খেয়াল করে, সাত তারিখের আর মাত্র দুই দিন বাকি । দেয়ালে ঝুলে থাকা ক্যালেন্ডারের বিশেষ সংখ্যাটা ল্যাম্প পোস্টের মত সারা রাত ঝলঝল করে জ্বলতে থাকে সজলের চোখের সামনে ।
কলিংবেলের অনবরত শব্দে সজলের ঘুম ভাঙে । কাজের মহিলা বাসার ভেতরে ঢুকে তার দিকে না তাকিয়ে সোজা বেড রুমে চলে যায় । ত্বরিত গতিতে অগোছালো রুমটাকে গোছাতে শুরু করে । কাজ করতে করতে হঠাৎ সজলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, 'আইজ অফিসে যাইবেন না?' সজল যাবেনা বলে জানায় । তখন মহিলা আবার বলে, 'হেরে আটকাইলেন না ক্যান?' অযাচিত প্রশ্নে সজল বিরক্ত আর বিব্রতবোধ করে । সজলের বিব্রত হওয়া মহিলার চোখ এড়ায় না । সে তখন সুর পাল্টিয়ে বলে, 'ঘরেতো কিছু নাই, বাজার নিয়া আসেন ।' সজল মানিব্যাগ খুলে পাঁচশ টাকা বের করে মহিলার দিকে বাড়িয়ে দেয়, মহিলা খুশি মনে টাকাটা নিয়ে বাজার আনতে চলে যায় ।
আবদ্ধ ঘরে অস্থির পায়চারি আর ঘোরের মাঝেই কেটে যায় সারাটা দিন । বোধহীন বিমূঢ় সময় পার হয়ে যায় অনেকটাই বেখেয়ালে । রাতে চেয়ার টেনে টেবিলে রাখা ডায়েরি খুলে বসে কিছু লিখবে বলে । কলম দিয়ে ডায়েরির পাতায় পাতায় অর্থহীন আঁকাবুকি ছাড়া কিছুই লেখা হয়ে উঠেনা । রাত ক্রমশ গভীর হয় । হুতুম প্যাঁচার ডানা ঝাপটানি আর করুণ ডাকে শুনশান নিস্তব্ধতা আড়মোড় ভাঙ্গে । তারপর আবার শূন্যতা আর পিনপতন নীরবতার অন্ধকারে ডুবে যাওয়া । রাতের নিকষ কালো বিষাদেরা এসে ভীর করে তার মাঝে । বুকের ভেতর শূন্যতা কেবলই দীর্ঘ হয় । দীর্ঘশ্বাসের লম্বা বিনুনীর মায়াজালে ক্রমাগত জড়িয়ে যেতে থাকে সজল । একটা উৎকট মাতাল গন্ধ এসে বারবার কন্ঠনালী চেপে শ্বাসরোধ করে যাচ্ছে যেন । ডায়েরির শাদা পাতায় কেবলই ভেসে উঠতে থাকে শ্রাবণীর মায়াভরা ম্রিয়মান মুখচ্ছবি । নরম ঘাসে মোড়া সবুজ মাঠ পেরিয়ে শ্রাবনী ছুটে চলেছে যেন কালচে সবুজ বনের গভীরে, একাকি নিরবধি । ওকে যেভাবেই হোক আটকানো দরকার..
ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেলো সজলের । দরোজায় কি কেউ কড়া নাড়লো? নাকি ভোরের পাখির কিচিরমিচিরে তার ঘুম ভাঙলো বুঝে উঠতে পারছে না । তবে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তার ভালোই লাগছে । একটা ফুড়ফুড়ে ঠান্ডা বাতাস যেন বয়ে যাচ্ছে বুকের ভেতর । বাইরে কি তবে ভোর হচ্ছে? কতদিন ভোর দেখা হয়না, আজকে প্রাণ ভরে সোনালী ভোরের প্রথম আলো ফোঁটা দেখবে বলে সজল মনস্থির করে ।
দরোজা খুলে সজল বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় । তখনো আঁধার পুরো দূর হয়নি । চারিদিকে আবছা অন্ধকার ফুঁড়ে একটু একটু করে আলো ফুটছে । মায়াবী আলোর রেখা রঙধনু রঙে সেজে চিকচিক করে নাচছে । ধীরে ধীরে সেই মায়াবী আলো গ্রাস করে নিচ্ছে সকল আঁধার । সোনালী আলোর সেই ক্রম বিস্তার, অন্ধকার সরিয়ে আলোকিত করার সেই মোহময় দৃশ্য তাকে মোহিত করে তুলে । সামনে থেকে কুয়াশার পর্দা সরে যেতে যেতে চোখের সামনে ভেসে উঠে সবুজ বৃক্ষরাজি । কচি ঘাসের ডগার উপর জমে থাকা শিশির বিন্দুতে সোনালী আলো প্রতিফলিত হয়ে মুক্তোর মত ঝলকানি দিচ্ছে । কাছেই একটা গাছের উপর পাখিদের কিচিরমিচির এক আনন্দময় অনুভুতি তৈরি করেছে । পাখিদের অশান্ত কলরবে মধুমাখা ভৈরবী রাগ আর ঝুমকা তালের এক অপার মেলবন্ধন ডুবে যায় সে । যাদুময় ভোরের স্নিগ্ধতায় সজল স্থির-মৌন-স্থানু হয়ে থাকে । পূবের আকাশের রক্তিম আভা উজ্জ্বলতর হয়ে রাঙিয়ে দিয়ে যায় দিগন্ত নীলিমায় । মিঠেল রোদের অস্থির ঝিলিক গাছের কচি ডালে ডালে লুকোচুরি খেলে যায় । একটা হলুদ পাখি হঠাৎ ডানা মেলে উড়াল দেয় সোনালী সূর্যটাকে ছুঁবে বলে । সেই আনন্দে সূর্য্যের বিস্তৃর্ণ রাঙা হাসি ছড়িয়ে পড়ে পুরো দিগন্তজুড়ে ।
দরোজার সামনে ব্যাগেজ হাতে সলাজ মিটিমিটি হাসিতে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রাবণী কে দেখে এক অপ্রত্যাশিত নতুন ভোর অপার বিস্ময় হয়ে আজ এভাবেই ধরা দেয় সজলের চোখে ।