শীত কাল অথচ বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হতে হবে।
শুধু বৃষ্টি হলেই হবে না, আপনার মনও একটু কেমন কেমন লাগে এমন হতে হবে। এমন দিনে সব কাজ ফাকি দিয়ে, বুকের নিচে বালিশ চেপে জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখবেন নাকি বাইরে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবেন। আপনি ঠিক বুঝে উঠতে পারবেন না। তখনই ঘটবে আসল ঘটনা, আপনি চট করে বাইরে চলে যাবেন। এলিফেন্ট রোড়ের দিকে। হঠাত করেই আপনার বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যাবে। একটু কথাবার্তা বলবেন। অনেক দিন পরে দেখা...
আর তখনই ঘটবে সেই ঘটনা, জীবন'টা আচমকাই বড় একঘেয়ে লাগতে শুরু করে দিবে। দুজনে মিলে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন না ! জীবন আসলে কি ? চাইলে এই সময়ে, দেশের রাজনীতি, শেখ হাসিনা'র কি করা উচিত কি করা উচিত নয়, এই নিয়ে কয়েক মিনিট জ্ঞান গর্ব মূলক বক্তিমা দিয়ে দেশ উদ্ধার করে ফেলতে পারেন।
বন্ধু বলবে, চল একটু নিউমার্কেট যাই। আপনি পুরোপুরি চলে যাবেন। আচমকাই আপনারা দেখতে পাবেন বৃষ্টি বেড়ে গিয়েছে। অতপর, বলাকা সিনেমা হলের টিকেট কাউন্টারের সামনে নিজেদের দেখতে পাবেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বাসায় চলে যাবেন নাকি আর কিছুক্ষন অপেক্ষা করবেন, বুঝে উঠার আগেই নিজেদের দেখবেন, সিনেমা হলের ভিতরে !
পর্দা জুড়ে চলছে ' অগ্নি ' ! পুরো হাউজ ফুল, যাকে বলে কানায় কানায় পূর্ন, একেবারে টইটুম্বর এত্তগুলা দুষ্ট পোলাপাইন আর মাঝে মাঝে মিষ্টি বালিকার কিচির-মিচির কলতানের মাঝে আপনি বাকি দুনিয়া ততক্ষনে হারিয়ে ফেলবেন। মোবাইল অফ করে, বাংলা সিনেমা দেখতে এত মানুষ হয়, এটা দেখে আশ্চর্য হওয়ার আগেই দেখেবেন, সিনেমার নায়িকা একজন ভিলেন খুন করে ধরা খেয়েছে, আরেক ভিলেনের হাতে !
ভিলেন নায়িকার হাত ততক্ষনে বেধে ফেলেছে, একটা যা-তা করার প্লান। যা তার সিরাম শ্লীল হাসি দেখে আপনি সিওর হয়ে যাবেন। কিন্তু না, বল ততক্ষনে মাঠের বাইরে চলে গিয়েছে, এই ভিলেন'টাও ফিনিশ !
লাইফ ইজ বিউটিফুল, মাহি ইজ বিউটিকুল।
এই বাক্য স্মরণ রেখেই খুব শান্ত শিষ্ট মাহি হয়ে যাবে সিরিয়াল কিলার। একটার পর একটা খুন হতেই থাকবে, হলে কি হবে, নায়ক কিছুতেই খুনিকে চিনতে পারবে না। এ যেন, চাদপুরের রসু খা'র ফিমেল কোমল ভার্সন। কিন্তু না, আপনি এই সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন না। কারন নায়ক যখন, শুভ। এরাম ফিগার নায়ক সিনেমা শুরুই করবে সিরাম দৌড় দিয়ে, বাকি সিনেমা অবশ্য সে দৌড়াতে থাকে। না আপনি ঠিক ধরেন নাই, ভিলেনের পিছনে নয়, পুরো সিনেমা জুড়ে সে দৌড়াতে থাকে নায়িকা'র পিছনে ! এ এক আজব ইকুয়েশান। আপনি কোন কিছুই মিলাতে পারবেন না।
সিনেমা'র নায়ক আসলে ভিলেন'দের বডিগার্ড !!!
ঠিক ধরেছেন, আপনি ততক্ষনে একটা ধাধার মধ্যে পড়ে যাবেন। আসলে বুঝে উঠতে পারবেন না, কি ঘটতে যাচ্ছে... এই টেনশান থেকে আপনাকে মুক্তি দেয়ার জন্য, শুরু হয়ে যাবে আইটেম গান। ঠিক আইটেম না, হলের মধ্যে তখন ছোট বিল্পব শুরু হয়ে যাবে। চারদিকে দুষ্ট পুলাপাইনের মার্জিত চিত্কারে... !! সাথে পয়সা উসুল হয়ে যাওয়া নানাবিদ কমেন্ট...
ইতিমধ্যে, হলের বাইরের বৃষ্টি হলে চলে আসবে। আপনি ভিজবেন না, নায়কও ভিজবে না, ভিজবে শুধু নায়িকা। ফুলের মত নিষ্পাপ মাহি !! ঠিক ধরেছেন, প্রেমের হাত ধরে বিরহের নদী পার হয়ে আপনি ততক্ষনে থাইল্যান্ডের পাতায়াতে।
গান শেষে আপনি নিজেকে দেখতে পাবেন, থাইল্যান্ডে ! এ এক অ-সাধারন গল্প। সিনেমার গরু গাছে উঠে গেলেও এই সিনেমার গরুটা মাটিতেই থাকবে। আপনি এর সাউন্ড কোয়ালিটি, গান, দৃশ্য সিলেকশান সব মিলিয়ে ততক্ষনে খুশি হয়ে যাবেন। কিন্তু ততক্ষনই ঘটবে সব থেকে বড় ঘটনা, নায়ক ড্রাগন, ফুলের মত নিষ্পাপ নায়িকা, মাহির পা'য়ে গুলি করে দিবে !
কারণ ? নায়িকা' একটা গাড়ির সাথে ধস্তাধস্তি করে গাড়ি'র রক্ত বের করে ফেলেছে ! কথা সত্যি ... এই দৃশ্য কেউ মিস করলে তার বেচে থাকাই বৃথা !!
ততক্ষনে, পুরো থাইল্যান্ডেই যেন অগ্নীকান্ড ঘটে যেতে থাকবে। এ এমন এক আগুন, যা জল দিলে বাড়ে দ্বিগুণ। আপনার তখন কিছুই করার নেই, এমন কি আপনি যদি ফায়ার ফার্ভিসের কর্মকর্তাও হন !!
এতক্ষনে ভিলেন-টিলেন সব শেষ। কি ভাবছেন ? এরপর, গোলাপ-রজনীগন্ধা ফুলে সাজানো বাসর ঘর, নায়ক আর নায়িকা, অতপর তারা সুখে-শান্তি'তে বাস করতে লাগল ? কিন্তু না, যা ঘটবে তা দেখলে মনে হবে ... ধুর ! কি আছে জীবনে, কালই যা হয় একটা হয়ে যাবে... আমি শিওর রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে আর কোন সিনেমাতে আপনি এমন ফিনিশিং পাবেন না।
এ এক অস্থির ইকুয়েশান ! এ এক অস্থির গল্প !! এ এক অস্থির অগ্নী... যার সাথে বেগম রোকেয়ার ' জাগো গো ভগ্নী 'র কোন মিল নেই।