আমি তখন ক্লাস টু কিংবা থ্রিতে পড়ি।
বাড়ীর পাশে, গাছের ডাল পড়ে বিদ্যুতের তার ছিড়ে গেছে। ছিড়ে যাওয়া অংশের এক মাথা মাটিতে পড়ে, সামান্য একটু জ্বলে উঠছে।
কি থেকে কি ! আমার মনে হল, পুরো গ্রামে আগুন লেগে যাবে। আমি দৌড়ে বাড়ীর ভিতরে এসে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিলাম। এরপর, একে একে পাশের বাড়ী, তার পাশের বাড়ী গিয়ে বললাম, ' আমাদের পুকুর পাড়ে বিদ্যুতের মেইন তার ছিড়ে পড়ে গেছে, আপনারা মেইন সুইচ বন্ধ করে দেন। আগুন লেগে যেতে পারে।' এমন করে, নানাবাড়ী পার হয়ে দাদুবাড়ী পর্যন্ত প্রায় সব ঘরে ঘরে বার্তা পৌছে দিতে দিতে সকাল থেকে দুপুর হয়ে গেল।
ভয় পেয়ে দাদুবাড়ী থেকে গেলাম। দাদুবাড়ীর পূর্বদিকের পুকুর'টাতে মাছ ধরতে ছিল। আমার চাচাতো ভাইয়েরা। আমি পাড়ে দাড়িয়ে দেখছি। আর মনে মনে অপেক্ষা করছি, কখন পুরো গ্রাম এক সাথে জ্বলে উঠে। অবশ্য আমার মনের আশাংকার কথা কাউকে বলছি না। টেনশনেও মাথায় আর কিছু ঢুকছে না।
পরে বড় হয়ে যেনেছি, নানুবাড়ী, দাদুবাড়ীর বিদ্যুতের লাইন আমাদের থেকে সম্পূর্ন আলাদা।
ওদিকে আব্বা আম্মা মিলে সারা বাড়িতে আমাকে খুজে না পেয়ে হয়রান। আমাকে খুজে পাওয়া না গেলে, কমন প্লেস হিসেবে নানাবাড়ী খুজলেই পাওয়ার সম্ভবনা শতকরা ৯০%। আব্বা সেখানে আসলে নানু বলল, না ও তো সকালে একবার এদিকে এসেছিল। বলল, " নানু কারেন্টে আগুন লেগে গেছে, মেইন সুইচ বন্ধ রাখেন। আমিও সেই থেকে মেইন সুইচ বন্ধ করে রাখছি। কোথায় আগুন লাগছে ? "
এদিকে, দুপুরে পুকুর থেকে ধরা, ইয়া সাইজে কই মাছ দিয়ে আরামে ভাত খেয়ে আমি দাদুর পাশে শুয়ে আছি। হঠাৎ, আবার কি থেকে কি !
কে যেন দেখি বিকেল বেলা, ঘুমের মধ্যে আমার কানে মলা দিতেছে। আমি আ করে উঠতেই চোখ খুলে দেখি, আব্বা !
আব্বা কিছু বলার আগেই, দাদু এসে হাজির। কেন ঘুমের মধ্যে কান মলা দিয়েছে, এই জন্য আব্বাকে একটু রাগারাগি করে বলল, যাও ভাই, বাড়ী যাও। আর বাড়ীতে না বলে এসো না। তোমার আম্মু চিন্তা করতেছে।
বাড়িতে এসেই আম্মু কোন কথা না বলেই; কি থেকে কি! কিছু বলার আগেই, পিঠের উপর ধ্রিম ধ্রিম !!
জনগণের জন্য কাজ করা যে কোন শুভকাজ নয়, আমি সেদিনই বুঝে গেছি।
সমগ্র মিঠাপুর গ্রাম'কে সকলের অজান্তে বিদ্যুতের আগুন থেকে বাঁচানোর ফল হিসেবে পেয়েছি, পিঠের শুধু ধ্রিম ধ্রিম !!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫১