মেয়েটা রেললাইন ধরে আসতে থাকবে। তার এক হাতে থাকবে স্যান্ডেল। আর এক হাতে ধরা থাকবে তরুন কবির হাত। রেল লাইনের পাশ ঘেসে থাকা ধানক্ষেতের কৃষক আক্কাস দাঁত বের করে একবার তাকাবে তাদের দিকে।
রমিজকে ডেকে বলবে, ' দেখ কবি সাব যাচ্ছে। সাথে বজলু মেম্বারের মাইয়াডা। ঢাকাত পড়ে।'
রমিজ আক্কাসকে ধমক দিয়ে বলবে, ' যাক না। তুই কামে মন দে, ধান দেইখা কাটিস। মাইয়া দেখতে গিয়া আগাছা রেখে ধান কাইট্টা লাইস না। '
- এই পর্যন্ত ভাবতেই মিহি হাজির। কই তুমি এখনো দাড়িয়ে আছো ? তোমাকে না বললাম রিকশা ঠিক করতে ?
: এই তো যাচ্ছি।
- তাড়াতাড়ি যাও। দেখ একটা রিকশা পাও কিনা ? আমার আজ এমনিতেই ক্লাসে দেরি হয়ে গেছে।
: আবির বেশ অবাক হয়, রাস্তায় দাড়িয়ে মিহি তাকে যেতে বলছে রিকশা ডাকতে। অথচ তাদের সামনে দিয়েই রিকশা যাবে !
- যা যা বলেছি, সব কিছু এনেছ ? নাকি আবার চশমার মত সব ভুলে রেখে এসেছো ?
: আবির, চোখে হাত দিয়ে দেখে, চশমা আছে কিনা। একবার পকেটেও হাত দেয়, হু ঠিক আছে। সবকিছু এনেছে।
মিহিকে আজকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। কারণ'টা শুরুতে ধরতে না পারলেও এখন পারছে। মিহি আজ শাড়ি পড়েছে।
: তুমি কি আজ ক্লাসে যাবে ?
- যেতেও পারি। বলা যাচ্ছে না।
: তাহলে আজকের প্লান ?
- প্ল্যান বাদ যেতে পারে। তুমি, হুড উঠিয়ে দাও।
: কেন ?
- আর একটু পড়েই মাষ্টার চাচা এই পথে বাজার করে বাসায় ফিরবে। পথে আমাকে তোমার সাথে দেখলে বাড়ি মাথায় তুলবে।
: আবির, হুড উঠিয়ে দিল। তার একটু একটু বুক কাপছে। সেটা মিহি'র মাষ্টার চাচা'র জন্য না। বাসায় কি বলবে সেটা ভেবে। আসার সময় ভাবি বারবার বলেছে, পান্জাবি পড়েছো কেন ? কোন ফাংশান আছে ? সে কোন উত্তর দেয় নি। অথচ এমনিতে ভাবির সাথে সবকিছু শেয়ার করে।
সবকিছু মিহি'র জন্য, আবির অবশ্য আরো পরে চেয়েছিল কাজটা করতে। তবে মিহি'র কথার বাইরে যাওয়ার উপায় নেই।
আবির ও মিহি দুজনেই একটা ঘোরের মধ্যে আছে। এমন অবশ্য ওরা প্রায়ই থাকে, দেখা যায় শেষ পর্যন্ত সে ঘোর কেটে যায়। আজ কি হয় বলা যাচ্ছে না।
মগবাজার কাজি অফিসের সামনে রিকশাটা থামবে। এরপর বাসে করে ওরা চলে যাবে গাজীপুর। মিহি'র খালাতো বোন সায়মার বাসায়। আবির আর মিহি অনেকবার সেখানে গিয়েছে। ওদের বাড়ীর পাশ দিয়ে রেললাইন। কিন্তু কখনো রেল লাইনে হাটা হয়নি। আবিরের অনেক দিনের শখ, মিহি'র হাত ধরে সে রেললাইন ধরে হাটবে।
ক্লান্ত হয়ে গেলে, সে কবিতা লিখবে, রেল লাইন নিয়ে, মিহি'কে নিয়ে অথবা ধানক্ষেত নিয়ে...