
১. একটা স্বপ্ন খামার তৈরি হয়েছিলো। সেখানে নানা রকম স্বপ্ন উৎপাদিত হতো। স্বপ্ন দু:স্বপ্ন দুটোই সেখানে গা জড়াজড়ি করে থাকতো। হাসত, খেলত, সংখ্যাবৃদ্ধি করতো, ছড়িয়ে যেতো । স্বপ্ন দেখার ভিত্তিতে তাদের শ্রেণীবিভাগ হতো। স্বপ্ন শ্রমিক, স্বপ্ন পালক, স্বপ্ন সম্রাট। সেখানে ছিলো কিছু স্বপ্নকানন। যারা হতাশায় পুড়তো, তারা নিয়মিতই সেখানে আড্ডা বসাতো। সেটা ছিলো স্বপ্নের অভয়ারণ্য......... গতরাতে একদল বিবর্তিত মানুষ কিছু ফসিল খুজে পায় । কার্বন টেস্টে দেখা যায়, তাদের বয়স সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি।। দেয়াল চিত্র থেকে আমরা তাদের ধারণা গুলো উদ্ধার করতে পেরেছি। ধ্বংসের আগ মূহুর্তে তারা বোঝাতে চেয়েছিলো -
...... "সম্ভবত, আমরা মানুষ হচ্ছি"
২. রাস্তার পাশে বৃষ্টিজমা জল দেখলেই দাড়িয়ে পড়ি ।। টলটলা জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখি। একজন সুখমগ্ন শয়তানের মুখ দেখি। কাচের আয়না ভেঙে যায়, জোড়া যায় না কে বলল? জোড়া হয়ত দেয়া যায়। কিন্তু চিড় টা থেকেই যায় । জলের আয়না নাড়া দিলে কাপে, গাছ থেকে ঝড়ে পড়া বৃষ্টির ফোটায় কাপে; অস্থির হয়, কিন্তু চিড়ে যায় না ।। আবার হাটি পথ ধরে। ................................ দেখে নিও, একদিন আমার মতোই তোমারো আর কিচ্ছু ভাল্লাগবেনা ।
৩. আমাদের নগরে আজ কিছু সুটেড বুটেড স্রষ্ঠা এসেছিলো । পদধূলি দিয়ে নগর ধন্য করে দিয়েছে তারা। কিছু বোকা, ভুখা নাঙা, অসুস্থ, বিকৃত, ক্ষুধাতুর আর হতাশাগ্রস্থরা প্রার্থনায় হাটু গেড়ে বসেছিলো তাদের সামনে। হাত পেতে দিয়েছিলো । স্রষ্ঠারা তখন লাথি দিয়ে চলে গেছেন। রোদচশমার দৃষ্টিতে রক্তের রং আলাদা করা যায় না।
কোনো একদিন আমিও ছদ্মবেশে স্রষ্ঠাদের দলে ভিড়ে যাবো শালা ...স্বজাতির রক্ত ঝড়ানোর জন্য।
৪. দোয়েল ফড়িং ফিঙের জীবনে ফিরে যাওয়া হয়নি আমার । মেটালিক বার্ড হয়ে চৌরাস্তার মিলনস্থলে শোভা বর্ধন করছি এলিট শ্রেণীর । ........ একদিন আমি কাদামাখা কাকতাড়ুয়া হবো। হবোই ।।
মাথায় বসানো মাটির হাড়ির ফুটো দিয়ে অসভ্য সভ্যতার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকবো।
৫. ছেলেবেলার কাদামাখা, আর যৌবনের কাদামাখার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। ছেলেবেলার কাদায় জীবাণুরা ঘুরঘুর করতো না। মা নাইয়ে দিতো। তাতেই শেষ, এক আনন্দ ধুয়ে গিয়ে আরেক আনন্দ আসতো। যৌবনের কাদায় প্রচুর জীবাণু, কোয়ারেন্টাইন চেম্বার না হলে হচ্ছে না। লিকুইড ওয়াশ নিয়েও নিশ্চিত থাকতে পারছি না।
......যৌবনের কাদায় অনেক দূর্গন্ধ । ডিওডরেন্ট আর বডি স্প্রের স্রোতে, তোমার গায়ের গন্ধ ভুলেই গেছি কবে।
৬. কত বিকেল গেল । কত সন্ধ্যা এলো ... তুমি আসো নি । আজো তোমার সমস্যা ছিলো .... আমি জানি
..... আজ একটা ব্যক্তিগত স্বপ্ন গণকবরে সমাহিত হবে ।
৭. অন্ধকার চোখে সয়ে গেছে । সাধারণ মেটামরফোসিস। অন্ধকারে অন্ধ হয়ে থাকি। আলো পেলে চোখ পিটপিট করে, আলো টাকে সইয়ে নিই চোখে। এখন আর অবাক হইনা। আলো থাকলে তার বিপরীতে অন্ধকার থাকে। আলো না থাকলে চির অন্ধকার থাকে। অন্ধকার টা ধ্রুব সত্য হয়ে যাচ্ছে।
........আলো জ্বালিয়ে কিছু প্রাচীন সুবিধা ভোগ করছি কর্পোরেট হাহাকারে।
৮. শাড়ির আচল উড়িয়ে, যখন বসন্ত ওড়ে চারপাশে, আমার তখন ভীষণ ভালোলাগে। সকাল সন্ধায় ছাদে উঠে যখন ছড়ানো চুলের দিকে বুভুক্ষের মতো তাকিয়ে থাকি কান্ডজ্ঞান ভুলে - কল্পনার পংখিরাজ কে দাবড়ে বেড়াই অনেকদূর। ভীষণ সর্বগ্রাসি কল্পনায় মত্ত থাকি । তখনো আমার ভীষণ ভালো লাগে। কি রেখে কি করি - অনুভূতি হয়, আপন মনে হাসি, গম্ভীর হই। তখনো ভালো লাগে। তুমি যখন বলো - অসভ্য ছেলে, লজ্জা করে না তোমার অসভ্য আবদার করতে ... আমি মাথা নিচু করে ফেলি, আবার তোমার দিকে তাকাই। ঠোটে একটা মিষ্টি-সরল হাসি থাকে । আমার ভালো লাগে ।।।
.... অনেক কিছুর তফাত ধরতে পারি এখন ...
তাই, তোমাকে ভালোবাসতে , একদম ভালো লাগে না ।
৯. কলার পাতা মাথায় নিয়ে বৃষ্টিতে হাটা হয় না ... জানালার কাচ দিয়ে বৃষ্টি দেখা হয় । জানালায় জমা বিন্দু বিন্দু ফোটা বৃষ্টির কান্না হয়ে ঝরে । হে নাগরিক, তোমার জন্য, তোমাদের জন্য আমার ঝরে পড়া। তোমরা আমাতে ভেজো না। সবটা সময় আমি আসতে পারিনা তোমাদের কাছে । তোমাদের নাগালের বাইরে আমি বন্দি থাকি। যেদিন তোমাদের কাছে আসার অনুমতি পাই, তোমরা আমাকে দেখো। আমাকে অবজ্ঞা করো। আমাকে দেখে, ঘরদোর বন্ধ করে ..... আমার কষ্ট উদযাপন কর। মাটি ভিজে যায়। মানুষ গুলো ভেজে না। ........ তোমরা আজ কাব্য লিখে প্রকৃতিপ্রেমিক হও। কাব্যে ভিজে যাও তোমরা। বৃষ্টিতে ভেজোনা। নাগরিক-সর্দি আর নাগরিক-জ্বরে আমি অবহেলিত। অভিমানে আজ এসিড রেইন হয়ে ঝড়ি।
তোমরা জানো ? জানো কি ? - বৃষ্টি কাঁদে । যে বৃষ্টি কাঁদে না, সে বৃষ্টি অনুর্বর । সে বৃষ্টি ভেজায় না।
১০ রাতের আধারে ঐ জানালার স্বচ্ছ্ব সাদা পর্দাটায় একটুকরো আলো। মানব মানবীর একত্রে মিশে যাওয়া দেখছি। পর্দায় তার ছায়া পড়ছে। আর কিছুক্ষণ পর দুটো দেহ, একদেহ হয়ে উঠবে। আমি চলে যাচ্ছি।। ..
বাই ডিফল্ট আজ কিছু দুস্বপ্ন জুটে গেলো কপালে। কেউ যৌবন-পরিশ্রমে ঘামছে। কেউ যৌবন প্রত্যাশায় ... আর কেউ রাত বিরেতে উকি দিতে গিয়ে পাগলা কুকুরের তাড়া খেয়ে।
১০.১ অর্ফিয়ুস আর প্রমিথিউস কে আজ একসাথে দেখা করিয়ে দেবো কোনো একটা পাহাড়ের উপরে । বনভূমির পাশে এক টুকরো সবুজ ঘাসের আস্তানায় , আজ একটা বিলাসি রাত যাপন করব। চুরি করা আগুনের পাশে হৃদয় পোড়ানো লাল তরল আর অগ্নি-তন্ময় বাঁশরি।
বাঁশির মাথাটায় একটা মেটালিক রাধাকৃষ্ণর রেপ্লিকা থাকবে।