
হোয়াইট ফ্যাং পড়েছিলাম সেই ছোটবেলায়। তখন থেকেই জ্যাক লন্ডনের লেখার ভক্ত আমি। এরপর কল অফ দা ওয়াইল্ড পড়ে তাঁর ভক্ত হওয়ার ঝামেলাটা শেষ করলাম মাত্র। এরপর ডায়াবল - এ ডগ পড়া যখন শেষ করেছি তখন মনে হতে লাগল এই ভদ্রলোক মনে হয় পশুপাখি ছাড়া আর কিছু নিয়ে কখনো গল্প ফাঁদতে পারেন না। ঠিক তখনি আমার হাতে এল "সি উল্ফ" নামের বইটা। বইটার ফ্ল্যাপে কাহিনী দেখে আশান্বিত হলাম - যাক এবার আর কোন ঘোড়া বা নেকড়েবাঘের কাহিনী আর নয়। কিন্তু পরদিন যখন বইটা শেষ করে বিমূঢ় হয়ে বসেছিলাম তখন বুঝতে পারলাম যে আমার ধারণাটা কতটা ভূল ছিল। আরো একবার একটা পশুর জীবনকথা নিয়ে একটা দারুণ উপন্যাস লিখলেন জ্যাক লন্ডন। তবে এক্ষেত্রে পশুটির নাম মানুষ।
সি উল্ফ উপন্যাসের নায়ক হলেন উল্ফ লারসেন নামের এক বাঘা নাবিক। কুখ্যাত "দা গোস্ট" নামক সীলশিকারী জাহাজের ক্যাপ্টেন। তার বুদ্ধিমত্তা যেমন তীব্র তেমনি ভয়ংকর তাঁর নৃশংসতা এবং অত্যাচারের আখ্যান। জ্যাক লন্ডন এই চরিত্রটিকে বইয়ে এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে বইটা পড়লে আপনার মনে হবে যে উল্ফ লারসেন যদি সত্যিকারের কোন চরিত্র হতো তবে হয়তো সে আজ স্থান নিতো কোন জাদুঘরের সংরক্ষণাগারে। ক্ষণে ক্ষণে চরম মেধাবী আর শাণিত মেধার ঝলক আবার পরক্ষণেই অধস্তনদের প্রতি প্রবল হিংস্র আর বৈরী মনোভাব। শরীরী শক্তির এক অদম্য গর্ব সেইসাথে স্বশিক্ষায় প্রখর হওয়া দর্শনশাস্ত্রের জ্ঞান - সবমিলিয়ে লারসেনের মতো চরিত্র সাহিত্যে খূঁজে পাওয়া ভার।
পুরো কাহিনীটি বর্ণিত হয়েছে হামফ্রে ভ্যান উইডেন নামক অকর্মার ধাড়ি, বিলাসবহুল, জীবন সম্পর্কে ধারণাহীন এক যুবকের জবানিতে। বিলাস ভ্যমণরত এই যুবক এক দুর্ঘটনার কারণে গিয়ে পৌছে বাঘ আর গরুকে এক ঘাটে জল খাওয়ানো পাবলিক লারসেনের জাহাজে। এই অনাকাঙ্খিত অ্যাডভেঞ্চারে উইডেন দেখতে পায় প্রকৃতি এবং মানুষের ভয়ংর রুদ্র রূপ। বইয়ের বিশেষ কিছু মুহূর্ত আসলেই ভয়ংকর - বিশেষ করে যখন লারসেন বিদ্রোহকারী নাবিকদের পানিতে রেখেই জাহাজ ছেড়ে দেয় - তারা কোনমতে নৌকা বেয়ে কিছুদূর এগোয়, কারণ লারসের সামনেই জাহাজ থামিয়েছে। আবার তারা কাছে আসতেই লারসেন জাহাজের গতি বাড়ায়। অন্য সকল সহযাত্রীর সামনে ধূঁকিয়ে ধূঁিকয়ে তাদের মেরে ফেলে লারসেন দেখিয়ে দেয় বিদ্রোহ কিভাবে দমন করতে হয়। তাছাড়া নাবিক লীচ আর জনসনের ওপর তার নির্যাতন আর মেটের মৃত্যুতে ভাবলেশহীনতাও আপনার অন্তরকে কাঁপিয়ে দেবে। কাহিনীর শেষটা যেমন হয়েছৈ সেভাবে অবশ্য আমি আশা করিনি। তবে এটাও যে আমার পড়া সেরা বইয়ের লিস্টিতে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। স্মৃতিতে থাকবে এই বইটি পড়ার আনন্দ - স্মৃতিথে থাকবে বাঘা লারসেন।
আগের লেখার লিংক -
আমার বই পড়া - হোসে সারামাগোর "ব্লাইন্ডনেস"
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:৩৫