BLINDNESS by José Saramago
নোবেল সাহিত্য পুরষ্কারজয়ী সাহিত্যিক হোসে সারামাগোর নাম আমি প্রথম শুনি ব্লাইন্ডনেস বইটা কেনার সময়ই। ব্লাইন্ডনেস বইটার কাহিনী এতটাই দারুণ এবং অভিনব যে আমি পুরোপুরিই মোহগ্রস্থ হয়ে যাই। গোগ্রাসে পাতার পর পাতা উড়ে যায়, আর মাত্র দুরাতে নাওয়া খাওয়া ফেলে বইটা শেষ করে আমি একটা নিশ্বাস ফেলি। নিসন্দেহে আমার পড়া সেরা বইগুলোর একটা।
ব্লাইন্ডনেস বইটির কাহিনী শুরু হয়েছে নামহীন এক দেশের সড়কপথে গাড়িতে ভ্রমণরত এক ব্যক্তিকে দিয়ে। অন্যান্য দিনের মতোই তার দিন শুরু হয়েছিল। সকাল বেলা নাস্তা সেরে স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সে গাড়িতে করে রওনা দিয়েছিল তার কর্মস্থলের দিকে। রাস্তায় এক লালবাতিতে গাড়ি থামাবার পর হঠাৎই সে আবিষ্কার করল যে সে অন্ধ হয়ে গেছে। কোন ব্যথা বেদনা আঘাত বা কোন অসুখ ছাড়াই। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এক ডাক্তারের কাছে যিনি নিজেও এই আকস্মিক অন্ধত্বের কোন কারণ উদ্ধার করতে পারেন না। চিন্তিত ডাক্তার তার স্ত্রীর সাথে গল্প করতে করতে যখন রাতের বেলা ঘূমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন তিনি টের পেলেন যে তিনি নিজেও অন্ধ হয়ে গেছেন। এভাবেই কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই হাজারে হাজারে মানুষ এই অজানা মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে অন্ধ হয়ে যেতে থাকে। এবং অন্ধ ব্যক্তিদের সংস্পর্শে যে-ই আসছিল ২৪ ঘন্টার মাঝেও সেও অন্ধত্ব বরণ করছিল। ভীত সন্ত্রস্ত সরকার করবার কিছু না পেয়ে অন্ধদেরকে পুরোপুরি কোয়ারেন্টাইন করবার জন্য শহরের প্রান্তে একটা ছোট্ট বাসায় জোরপূর্বক আলাদা করে রাখে। সেখানে নব্য অন্ধদের এক নতুন জীবন শুরু হয়, কম্পাউন্ড থেকে এক পা বাইরে রাখলেই গুলিতে মরণ লেখা, আর হঠাৎ অন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্ধরে চলাফেরার নিয়ম কানুন কিছুই জানা নেই তাদের। এর মাঝে এগিয়ে আসে এক নারী, সেই ডাক্তারের স্ত্রী। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি তখনো অন্ধ হন নি কিন্তু স্বামীকে একা ছাড়তে চান নি বলে অন্ধত্বের ভান করে স্বেচ্ছায় এই বন্দীজীবন মেনে নিয়েছেন। সেই বাড়িতে বন্দী অন্ধদের তৈরী হয় এক নতুন সমাজ ব্যভস্থা, প্রতিদিন নতুন কষ্ট, নতুন নৃশংসতা আর প্রতিদিনই বেঁচে থাকার যুদ্ধ। একদিন একদিন করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। এভাবে একদিন ঐ বাড়িতে বন্দী অন্ধরা গুলির ভয় ত্যাগ করে বেরিয়ে আসে বাইরে, লক্ষ্য করে কেউ তাদের দিকে গুলি ছুঁড়ছে না। কারণ দেশের সকলেই তখন অন্ধত্বের সেই রহস্যময় ব্যাধির শিকার। অন্ধ দেশের অন্ধ নাগরিকদের শুরু হয় নতুন এক জীবনধারা। এই নিয়েই ব্লাইন্ডনেস বইটির কাহিনী।
হোসে সারামাগোর আগে কোন বই পড়ি নি বলে তাঁর স্টাইলটা আমি জানি না। কিন্তু এই বইটিতে কোন প্রকার নাম ব্যভহার করেন নি। কাহিনীর পটভূমি হলো একটি নামহীন দেশ, এবং পুরো বইটিতে বেশ কয়েকটি চরিত্রের সমাহার হলেও বইয়ের শেষ পর্যন্ত কারো কোন নাম উল্লেখ করা হয় নি। পুরোটা সময়ই চরিত্রগুলোকে "প্রথম অন্ধ ব্যক্তি", "ডাক্তারের স্ত্রী", "কালো চশমা পড়া মেয়ে" এভাবেই সম্বোধন করা হয়েছে। এবং সেটাই যুক্তিসংগত মনে হয়েছে কারণ অন্ধ সমাজের কেউই একে অপরের নাম জানার প্রয়োজনবোধ করে নি। তাঁর লেখার স্টাইলের আরেকটি মজার বৈশিষ্ট্য হল উদ্ধৃতিত চিহ্ন ব্যতিত সংলাপ। আমি প্রথমে ছাপার ভূল ভাবলেও পরে খেয়াল করি পুরো বইটিই এরকম। আর অন্ধত্বের কষ্ট আর অন্ধতদর সমাজব্যবস্থার চিত্রণ পুরোপুরিই ইউনিক একটা আবহ সৃষ্টি করেছিল আমার মনে। এরকম একটা বই পড়ার অভিজ্ঞতা সহজে ভূলে যাবার নয়।
এখন সারামাগোর ব্লাইন্ডনেসের অপর পার্ট সিইং টা খুঁজছি। কারো সন্ধানে থাকলে আওয়াজ দিয়েন।