somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্যামলের ''জীবন রহস্য'' বইয়ের কিছু অংশবিশেষ

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বই - জীবন রহস্য
লেখক- শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ
মূল্য -২৩৮
পাওয়া যাবে - বাতিঘর ( চট্টগ্রাম )
জীবনরহস্য বাংলা ভাষার অন্যতম সেরা লেখক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের আত্মকথা।মোহ জাগানিয়া লেখা।নিরাসক্ত ভঙ্গিতে নিজেকে নিয়ে মজা করতে করতে বলে ফেলেছেন অনেক কঠিন কথা- বড় সহজ করে।আত্মজীবনির শুরুটাই এরকম।

‘সময়ের দূরত্বে সাধারণ কথাই রূপকথা হয়ে যায়। জীবনে কেউ তো আর বিশিষ্ট হওয়ার জন্য গুছিয়ে ঘটনা ঘটায় না।বহতা নদীর মতই জীবনটা নাচতে নাচতে ঢেউ তুলে কালের তীর ধরে কথা-কাহিনী ছড়াতে ছড়াতে বয়ে যায়।’
' আমি এমন কেউ নেই যে, আমার কথা বলতে গেলে এত গম্ভীর হয়ে যাব।বরং বিদায়,মৃত্যু,পতন - এসব ত চিরকাল হাসতে হাসতে বলেছি। দুঃখের ভেতর ও হাসির ঝিলিক আমার আগে চোখে পড়ে। গুরুগম্ভীরের অসঙ্গতি আমাকে হাসায়। '
'
কিন্তু শ্যামল ত অন্যরকম।তার জীবন , তার লেখা । তার দেখা।তার বিষয় , তার ভাষার তীরন্দাজিতে শুধু বিস্ময় প্রকাশ করতে হয়।তাই তার বলার প্রানশক্তি পাঠককেও আলোড়িত করে তোলে।কখনো মুগ্ধ,কখনো মানুষ হয়ে জন্মাবার দুখে একটু শ্বাস ফেলতে হয়।তার বলা কথাগুলোর কিছু ছড়ানো - ছিটানো অংশ এরকম -
১)নিজের জীবন, শরীর, সম্মান, অস্তিত্ব, নিরাপত্তা বার বার নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার মত বিপজ্জনক জুয়ায় তলিয়ে যেতে যেতে ভেসে উঠে ঢেউয়ের ফেনায় যেটুকু খড়কুটো ধরা যায়, সেটুকুই শিল্প। নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে যা জানা যায় তা শুধুই জানা যায় বোধিও বটে। এই বোধিকে আমি এভাবে বলি যে চিন্তা ঘাম দিয়ে আয় না হয় সে চিন্তার কোনও দাম নেই।
ঘাম ঝরিয়ে নিজেকে ক্ষয় করে যে ভাবনাকে পাই তাই হোক শিল্পের বিষয়।’
২) ‘আমাকে আমার পাঠক তৈরি করতে করতে এগোতে হয়েছে। তাঁরা আমাকে চেনেন। আমিও তাঁদের চিনি। গল্পের বেলপানা দিলে তাঁরা ওয়াক থু করে ফেলে দেবেন। আমাকে তাই মাঝে মাঝে এক চামচ মহাকালের জিজ্ঞাসা, দু চামচ জীবনরহস্য, কে যেন সাতসকালে যেকে ছিলÑইত্যাদি জিনিস লেখার ভেতর গুঁজে দিতে হয়। এই মিশেল গোজামিল হয়ে দাঁড়াতে পারে-যদি না তা আমার শরীর ও মনের ভেতর দিয়ে চোলাই হয়ে আসে। নিজেকে বারবার বকযন্ত্রের ভেতর তরল করে ঢালি। বাষ্পে, অশ্রুতে একাকার হয়ে পরিণামে গিয়ে ফোঁটা ফোঁটা হয়ে পড়ি। এই পাতন প্রণালী আমার সারা লেখায় ছড়িয়ে আছে। এরকম লেখা বেশি লেখা যায় না। সেই কম-লেখাও আমি লিখে উঠতে পারছি না।…’
৩)বিরাট বিশ্ব। কাল অনন্ত। তার মাঝে মানুষজন দেখি। দেখি গাছপালা। নদী-মেঘ-পাহাড়-আলো। দেখতে দেখতে কোনও ব্যাপারকে মনে হয় বুঝি বা গতজন্মের। কী এক অজানা ইশারায় আমাকে সব মনে করিয়ে দিতে গিয়ে পারছে না। আবার কোনও জিনিস বা মনে হয়- খুবই আগামীর। তার জন্য আমি এখনও তৈরি হয়ে উঠতে পারিনি।
পুরনো আসবাবের খাঁজে ধুলো ঝাড়তে গিয়ে সোনার গুঁড়ো পাই। পাই রুপোর গুঁড়ো। রূপের গুঁড়ো। মানুষের যে কত রূপ। কী বিস্ময়কর এই মানুষ। অবিরাম অনুসন্ধানেও এই মানুষ ফুরোবার নয়। এ এক অনন্ত খনি।
ভালোবাসারও নানা চেহারা। একটা বয়সে যে মন নিয়ে কাউকে ভালোবেসেছি- বেশি বয়সে পৌঁছে গিয়ে দেখি সে মন আর নেই। হাঁটুর পুরনো ব্যথার মতো ভালোবাসার স্মৃতিটুকু শুধু পড়ে আছে। ভালোবাসা আর নেই। তখন অনুসন্ধানে নামি। এমন হল কেন?
এক ডাক্তারবন্ধু বলল, তুমি যখন ভালোবাসায় পড়েছিলে- তখন যেসব কোষ দিয়ে তোমার শরীরটা তৈরি ছিল- সে সব কোষের বহুকাল হল মৃত্যু ঘটে গিয়েছে। সেখানে নতুন নতুন কোষ এসে তোমার দেহকে নিরন্তর নতুন রাখার চেষ্টা করে চলেছে।
তাই বলো! সেই তখনকার দেহটাই আর নেই। তার মানে শুধু মনে হয় না। আধার চাই। সেই দেহের ভালোবাসা এই দেহে থাকবে কোত্থেকে।
আধার বদলায়। কেননা, কোষ বদলায়। মনও তো বদলায়। বোধি এবং মেধা অবিরাম স্নায়ুবিক সংঘর্ষে নতুন নতুন দৃষ্টি পায়। মনের দেখবার প্রকৃতিই তাতে পাল্টে যায়। এই নব নব দেখার ভঙ্গি মনকে পুরনো ব্যথা থেকে আনন্দে এনে তোলে। আনন্দ থেকে ব্যথায়।
এইসব কথাই গল্পে লিখতে চেয়েছি। কতটা পেরেছি জানি না। কেননা, আমার কোনও লেখার পাণ্ডুলিপি ছাপতে দেওয়ার পর কোনওদিন ফিরে পড়ে দেখিনি। নতুন লেখায় চলে গিয়েছি।তাই কেউ যখন আমার লেখার প্রশংসা করেন- বুঝতে পারি না।
কেউ যখন সমালোচনা করেন- বুঝতে পারি না।
কারণ, লেখাটা তো আর মনে নেই। আর কোন লেখার কথা বলছেন- বুঝতেই পারি না।
জীবন থেকে- আশপাশের মানুষের ভিতর থেকেই লেখার বীজ পাই। সে বীজ নানান অভিজ্ঞতা- কল্পনা- স্বপ্নের আলোয় অঙ্কুরিত হয়। গল্পের পা থাকে তাই জীবনের মাটিতেই। অভিজ্ঞতা, কল্পনা, স্বপ্ন- এই ত্রি-শিরার কিশলয়ে ভাষালক্ষ্মীর বারিধারা নিয়ে আমি কোনওদিন ভাবিনি। মাথা ঘামাইনি।
কারণ ভাষা আমার কাছে মনের ভিতরকার অস্ফুট, অসম্পূর্ণ স্বগতোক্তির মতোই। যা কিনা মনে মনে আপনা আপনি ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। তাই আমি একটা একটা করে তুলে এনে কাগজে বসিয়ে দিই। আশ্চর্যবোধের পাশে সম্পূর্ণ বাক্য।
বছর পঁয়ত্রিশ আগে একদিন জ্বর গায়ে জীবনের প্রথম গল্পটি লিখে ফেলেছিলাম। অবাক হয়েছিলাম তখন- যখন দেখেছিলাম- চরিত্ররা নিজেরাই নিজেদের পথ ঠিক করে নিয়ে হাঁটাচলা করছে- কথা বলছে- কথা বলছে না।
এরপর তিরিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ- নানারকম বয়স পেরিয়ে দেখছি- সামনেই ষাট। কিছুই যে করা হয়নি।
কিছুই তো থাকবে না। কিছুই তো করা হল না।
যে-গল্প সতেরোবার কেটেছি- কপি করেছি- ভেবেছি- না জানি কী লিখলাম- সে গল্প ছাপা হতেই সবাই একযোগে মন্দ বলেছেন। আবার যে-গল্প খবরের কাগজের নিউজ ডিপার্টমেন্টে টেলিপ্রিন্টারের অবিরাম ক্ষুরধ্বনির মধ্যে- হাজারো লোকের জিজ্ঞাসার ভিতর- খবরের চাপের মাঝখানে পড়ে মরিয়া হয়ে লিখেছি- পাছে ভুলে যাই বলে- সে গল্প পাঠক ধন্য ধন্য করেছেন। সমালোচক তাতে খুঁজে পেয়েছেন মনীষা।
ছোটগল্প বাঙালির প্রায় কুটিরশিল্প। সবাই কিছু না কিছু ভালো গল্প লিখে গেছেন এই ভাষায়। আমি কী করেছি আমি জানি না।
পাঠক জানেন।
আমি জানি শুধু আমায় কী করতে হবে। ছিপ ফেলে পুকুরে ঠায় বসে আছি। মাথায় গামছা। আকাশে সূর্য। ছায়া নেই কোথাও। ফাৎনা ঠোকরালেই কাত করে ছিপে টান দেব। জলের নিচে বড়শি।
এইভাবে বসে বসে দিন যায়। মাস যায়। কদাচ বড় মাছ পাই। পেলেও স্বস্তি নেই। তাকে ঠিকমতো পরিবেশন করতে হবে। নিজেকে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত রেখে। যদি-বা আমি গল্পে সামান্য উঁকি দিই- তবে তা হবে অতি নিচু পর্দায়। দীনহীনভাবে। গল্পের প্রয়োজনটুকু সেখানেই রাজকীয়। বাদবাকি সব কিছু ম্যান অন দ্যা স্ট্রিট।
গল্প আবার অনেক সময় আমার কাছে নিজের পায়ে হেঁটে চলে আসে। আমার শুধু তুলে নেওয়া। আমি তখন অনেকদূর দেখতে পাই। এক প্রৌঢ় গীতা চণ্ডী বেদ বেদান্ত পুরাণ উপনিষদ পড়ে ঈশ্বরে পাড়ি দিয়েছেন। আর এক অতি প্রৌঢ় ফুলের পরাগ, গাছের পাতার হিন্দোল চিনতে শিখেছেন সারা জীবন ধরে। তিনিও এই মহাপ্রকৃতির মূলে যাওয়ার যাত্রী। সেখানে যদি ঈশ্বর বলে কেউ থাকেন, তো ভালো। সেই ঈশ্বরই অজান্তে তার কাম্য। এই দুই প্রৌঢ়কে কাছাকাছি এনে একটি গল্প লিখেছিলাম। প্রথাসিদ্ধ পথে ঈশ্বর। অপ্রথানুগ পথে ঈশ্বর। দুই মানুষকে কাছাকাছি আনায় এক নতুন গল্প হয়ে গেল। সেই গল্প এই গ্রন্থে রয়েছে। শুনতাম- বুড়ো হলে ছেলে দেখে। ছেলে না থাকলে টাকা দেখে। একজনের ছেলে ছিল। টাকা ছিল। বাড়ি ছিল। কেউ তাকে দেখল না। মেয়ে সব সম্পত্তি লিখিয়ে নিয়ে বোধ হারানো বৃদ্ধ বাবাকে অজানা মেল ট্রেনে তুলে দিল। ট্রেনটা বাঁশি দিয়ে ভারতবর্ষের ভিতর হারিয়ে গেল। এই তো জীবন। সব কিছুর সাক্ষী হয়ে থাকল একটি নির্বাক ডুমুর গাছ।

এরকম নানান গল্প নানান সময়ে কলমে এসেছে। সে-সব গল্প জীবনকে দেখার এক-একটা সময়কে ধরে রেখেছে। পরবর্তী মানুষ যদি কখনও পড়েন তো মনে করবেন- ওর সময়ে পৃথিবীটাকেও এইভাবে দেখতে পেয়েছে। এর বেশি আর কী আশা করতে পারি।
পৃথিবীতে এক এক সময় মনে হয়- কোনও ঘড়ি নেই, দিন নেই, নাম নেই, বন্ধু নেই, আত্মীয় নেই। এ কোথায় এসে পড়লাম। আর কতদিন এখানে থাকতে হবে। যাওয়ার সময়টা কেমন হবে। কে জানে। আবার নিশুতি রাতে ঝমঝম বৃষ্টির ভিতর মশারিতে আর কেউ নেই। সন্তানরা বড় হয়ে চলে গিয়েছে। পুরনো ক্যালেন্ডারে বাদুলে পোকা বসল থপ করে। বর্ষীয়সী স্ত্রী আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ফেরেননি। তখন বিছানায় শুকনো কাঁথা জড়িয়ে টের পাওয়ার চেষ্টা করি- বিশ-পঁচিশ বছর আগে সন্তানদের এ্যা করা ভিজে গন্ধ কাঁথায় আছে কিনা। ভাবতে ভাবতে সেই কাঁথা জড়িয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। ভাবি আর যেন বেঁচে না উঠি। একদম মরে যাই। -এসব কথা তো লিখতে পারিনি।
আবার ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, ছেলে-মেয়েতে ভরা বারান্দা আনন্দে টলটল করছে। এক-একটা কথায় হৃদয়ের ভিতরকার মানুষকে ছুঁয়ে থাকার মানুষী সুখ তির তির করে বহে যায়। সবাই সবার ওমের ভিতর রয়েছি। পরদিন দুপুরে সেই বারান্দাই একটি ডেয়ো পিঁপড়ে আড়াআড়ি একা পার হচ্ছে। কী শূন্য। -এ কথা তো লিখতে পারিনি।
কত কথাই যে লেখা হয়নি। লিখতে পারিনি। চোখ খুলে যতটা দেখা যায়- তার চেয়ে বেশি দেখা যায় চোখ বুজে। আর যেটুকু দেখা যায়- দেখার জিনিস তার চেয়ে অনেক বড়। যা দেখি- তারই-বা কতটুকু তুলে ধরতে পারি। একজন লেখক সামাজিক রিপোর্টার হলেও শিল্পসম্মতভাবে তুলে ধরার একটা সীমা আছে। কোথাও দেখা- পথ হারায়। কোথাও ভাষা- পৌঁছতে পারে না।

এত অপটু, অশিক্ষিত লাগে নিজেকে। তারপর আছে গল্প হারিয়ে ফেলা। মানে গল্পের বীজ হারিয়ে ফেলা। একদিন একটা ডবল ডেকারে এসপ্ল্যানেড যাচ্ছি। ফাঁকা বাস। একটা মিনিবাস এসে কম্পিটিশন বাঁধাল। রেগে গিয়ে ডবল ডেকারের ড্রাইভার মিনিবাসটাকে ধাক্কা দিল। মিনিবাসটা চার চাকা শূন্যে তুলে বিড়লা তারা মণ্ডলের কাছে উল্টে গেল। ডবল ডেকার বেআইনিভাবে চলতে চলতে নিষিদ্ধ পার্ক স্ট্রিটে ঢুকল। রাস্তার লোক চেঁচাচ্ছে- ড্রাইভার পাগল হয়ে গিয়েছে। একটু স্পিড কমতেই আমি প্রাণ নিয়ে বাসটা থেকে টুক করে নেমে গেলাম। এ ঘটনা যতদূর জানি- একদিন মে-জুন মাসে বেলা বারোটা নাগাদ আমার জীবনে ঘটেছিল। বছরদশেক আগে। কাউকে বললে বিশ্বাস করে না। সবাই বলে- আপনি হয়তো স্বপ্নে দেখেছেন। আমি বলতে চাই- না, স্বপ্নে নয়- স্বচক্ষে বেলা বারোটার সময় দেখেছি। এখন মনে হয়- স্বপ্নে? হবেও-বা! পার্ক স্ট্রিটে ঢুকে পড়ে টালমাটাল ডবল ডেকারটা আরশোলা থ্যাঁতলানোর মতোই প্রায় ফট মতো শব্দ করে এক- একটা অ্যামবাসাডর ফিয়াট গাড়িকে থেঁতলে ছিবড়ে করে দিচ্ছিল। হয়তো স্বপ্নেই দেখেছি। ওল্টানো মিনিবাসের যাত্রীরা আশ্চর্যভাবে বেঁচে গিয়েছিল। আমি স্বচক্ষে দেখেছিলাম। এই স্বপ্ন ও জাগরণের দেখা- এ আমার প্রায়ই ঘটে। দুই দেখা গুলিয়ে গিয়ে এক আলো আঁধারির সত্য তৈরি হয়। নানান গল্পে এ জিনিসটি এসে গিয়েছে। আবার কোথাও-বা হারিয়ে ফেলেছি। স্মৃতি গলে বেড়িয়ে গিয়েছে।

৪) আমরা বলতে চেয়েছি - দেখো পৃথিবীটা এমন । মানুষকে নানাভাবে খোসা খুলে দেখার একটা চেষ্টা সবার লেখাতেই। এর ভেতর শীর্ষেন্দু একটি ন্যালাখ্যাপা চরিত্রকে সব লেখায় বার বার আনে। সে এই কাজের পৃথিবীতে অপটু । বিপন্ন। কিন্তু গোপন কোন ঢেউয়ে
সে বুকের ভেতর টের পায় এই পৃথিবী ঈশ্বর শাসিত। শীর্ষেন্দু একজন মরণশীল মানুষকে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বলে বিশ্বাস করে । ভালবাসে,তার পায়ে সব বিশ্বাস সমর্পণ করে। তার বিধান অনুযায়ী অনুলোম প্রতিলোম বিবাহ ইত্যাদী সঠিক মনে করে ( পারাপার)।
সেখানে তার মনে শান্তি আসে। অস্তিরতা কাটে। প্রসন্নতা ফিরে পায়।

ভগবান কি জানি না । তবে খুব বিরাট কিছু । কবি সাধকরা যদিও বলে গেছেন - মানুষই ভগবান । এই বাণী সত্য হলেও বিশ্বাস করতে চায় না। আমি শীর্ষেন্দুর মত বিশ্বাস করতে - ভালবাসতে পারলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতাম।

আমাদের কি কোন রাজনৈতিক বিশ্বাস আছে? নেই। যৌবনে আবছামত কিছু একটা ছিল। কিন্তু বয়স বাড়তে বাড়তে বাড়তে - দেখতে দেখতে তা তলিয়ে গেছে। মানবচরিত্রের বর্ণচ্ছটার নিচে। গান্ধীজীর মনের চেহারাটাও যেমন - তেমনি হিটলারের মনের চেহারাটাও লেখার বিষয়।কোন ও মতবাদ সে পথে বাধা বা প্রধান নয়।

৫) আসলে দুনিয়া কখনো রেস্ট নেয় না।আমরা তার সাথে দৌড়াচ্ছি। দম ফুরালে বসে পড়ছি।আসক্তি না থাকলে এই দৌড় অনেক আগে থেমে যায়।তখনই আকাশের সাদা কাজল চোখে দেখা যায়। কিন্তু জায়গাটা ভোগবাসনার।অভাব দুঃখের।সুখ আহ্লাদের।ঠগানো ভোগানোর।দুনিয়া দৌড়াচ্ছে।আর তার জানালায় বসে এসব দেখা যাচ্ছে।কেউ বলে জীবন দ্যাখো।ভালবাসা দ্যাখো।উল্টো বেঞ্চে আরেকজন বসে টিটকিরি দিচ্ছে - ন্যাকামি দ্যাখো।ফক্কা দ্যাখো।
এরকম দুই ভাবনা দুটো নদী হয়ে ছুটে এসে কাছাকাছি হয়।তারপর কোনওদিন না মেলার দুই পথে চলে যায়।আমরা রঙ মেলান্তি খেলতে বসে ওদের মেলাতে চাই।না মেলাতে পেরে দুঃখ পাই। এই দুঃখে খানিকটা ভাষা,খানিকটা রহস্য,দেড়শো গ্রাম জীবন ভাল করে থেঁতলে নিয়ে চ্যাপ্টারে ভাগ করে সাজিয়ে নিলেই উপন্যাস।লোকে পড়তে বসে বই বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। যদি আকাশের নেমে আসা চোখে দেখা যায়।কিন্তু সাদা কাজল চোখে না টানলে ত দেখা যাবে না।
এই কাজল খগেনের (উপন্যাসের মূল চরিত্র) চোখে ছিল।তাই মাইতি -বেধবার কথা নিয়ে সে কোনদিন বাড়াবাড়ি করেনি।ইচ্ছে মরে গিয়ে সে কোনও বড় বাণী দেয়নি।শোষণ,অভাব,খিদে,লড়াই এসব ত সম্রাট আশোকেরও আগের জিনিস।মানুষের ইতিহাসের নিত্যসঙ্গী।তাকে বাদ দিয়ে খগেন চলতে চায়নি।তাকে নিয়ে পড়ে থাকতে চায়নি।বরং জীবন রহস্যে কে যেন আসেনি- এই কথাটা জানতে পেরে মাদি কেউটেকে ছেড়ে দেয়। শিবানী,সুমতি,মেছুনি,- সব একাকার করে ফেলে।
আমারও বোধ হয় ইচ্ছে মরে গিয়ে স্বর্গের আগের স্টেশনের সঙ্গে দেখা- আর এই নিয়ে লেখা।আমি তাই কখনো খগেনে-কখনো বিজনে মিশে গেছি।ওরা দুজনেই আকাশ হয়ে নেমে এসেছে।যাকে বলে আকাশ হতে আকাশ নেমে আসা।
( উপন্যাস ' স্বর্গের আগের স্টেশন ' এ ভূমিকার শেষ অংশ - শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় )

আমাদের জীবনের কাছে যে অব্যক্ত কথাগুলো রহস্য হয়ে অধরা থাকে, শ্যামলের বলা কথাগুলো সেই রহস্যের দিকে তাকিয়ে লেখা।তাতে কখনো ঠাট্টা , কখনো ব্যঙ্গ,কখনো বৈরাগ্য । জীবন রহস্য আসলে অনেক জীবন জিজ্ঞাসার ও জবাব।পাঠক ও বটেই যারা টুকটাক লেখালিখি করেন তারাও এখান থেকে নেয়ার মত অনেক উপকরণ খুজে পাবেন।
বইটি সংগ্রহে রাখার মত । বার বার পড়ার মত।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×