চে গেভারা তার আত্বজীবনীতে লিখেছেন,
কিউবা বিপ্লবের সময় 'গ্রানমা'র কমরেডদের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছিলো ! কিন্তু একজন ম্যাজিস্ট্রেট সেই মৃত্যুদন্ডের আদেশের বিরোধিতা করে ভোট দিয়েছিলেন ! তার নাম উরুতিয়া !
বিপ্লবীরা জয়লাভ করলে উরুতিয়াকে সে দেশের প্রেসিডেন্ট পদে বসানো হয়েছিলো, কিন্তু তার মাত্র কয়েকমাসের মাথায় জনগন তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো কারন দেশের ইতিহাসে সেই উরুতিয়া ছিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবচেয়ে ব্যর্থ এবং দিকভ্রান্ত, কপর্দকহীন !
বিপ্লবী চে গুয়েভারা তার বিশ্লেষনে লিখেছেন, সেই ব্যক্তিগত ভোটটা উরুতিয়া বিপ্লবী আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে দেন নি, ওটা জাস্ট তার একটা ব্যক্তিগত মতামত ছিল মাত্র !
আরেক অধ্যায়ে চে গেভারা আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন !
সানতিয়াগো থেকে অস্ত্রশস্ত্রের চালানের খবরাখবর নিয়ে আসতো আনদ্রেস নামের এক ভদ্রলোক যে কি না ওই বনের মধ্যেই বাস করতো আর চোলাই কাঠের ব্যবসা করতো, বিপ্লবীদের সহায়তা করতো আনদ্রেস সহ ওর পরিবারের অন্যান্যরা ! কিউবার ঘন জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা বিপ্লবীদের জন্যে এই আনদ্রেস পরিবার খুবই সহায়তা করেছিলো !
কিন্তু চে গুয়েভারা সেই বেবুন পরিবারদের এই সহায়তাকে ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে যে, বিপ্লবীদের সহায়তা করার পেছনে বেবুন পরিবারের উদ্দেশ্য ছিল যে, যদি এরা কখনো ক্ষমতায় যায় তাহলে তারা নির্বিঘ্নে চোরাই কাঠের ব্যবসা করতে পারবে এবং এই জঙ্গলে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে ! এই উদ্দেশ্যেই তারা বিপ্লবীদের সহায়তা করেছিলো মাত্র ! তারা কেউই বিপ্লবের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে পাশে ছিল না !
চে বলেছেন, 'বিপ্লব হতে হবে আদর্শকে সামনে রেখে, আদর্শ থেকে পিছপা হওয়া মানে বিপ্লবকে সংকুচিত করা, কেননা বিপ্লব পরবর্তী সময়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেটা কেবল বিপ্লবের আদর্শধারীরাই সমুন্নত রাখতে পারে, নইলে সেই বিপ্লব হাতছাড়া হতে বাধ্য'
'বিপ্লবীদের চিন্তাধারা কিংবা তৎপরবর্তীকালের রাষ্ট্রগঠন' নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে তো সবার আগে রাউল কাস্ত্রো, চে গুয়েভারা, ফিদেল কাস্ত্রো, হুয়ান আইমেইদা, রামিরো ভালদেস এদের নামগুলাই তো আগে চলে আসে, অথচ ওই বিপ্লব হয়েছিলো ১৯৫৬ সালে ! আপনি যদি ২০২৪ সালে বাংলাদেশে যে ছাত্রজনতার অভ্যুথান বা বিপ্লব হয়েছিলো(?) সেখানে তাকান, তাহলে দেখবেন সেখানে আদর্শবাদ জিনিসটার ঘাটতি ছিল প্রবল ! স্বৈরাচার কেনো হটাতে চাই সেটা বিপ্লবের একটা প্রশ্ন মাত্র কিন্তু যে আদর্শের পরিবর্তন চেয়ে বিপ্লবকে এগিয়ে নিতে চাই সেইখানে এই বিপ্লব নড়বড়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে ! বিপ্লবের উদ্দেশ্য নড়বড়ে বলেই ফারুকীরা উপদেষ্টা হয়, ফেইল করা শিক্ষার্থীরা নিজেদের পাশ করানোর জন্যে সচিবালয় ঘেরাও করে, আবার তারা সফলও হয়, বুয়ারা রাস্তা অবরোধ করে যাতে তাদের বুয়া বলে না ডাকা হয়, অটোচালকেরা রাস্তা বন্ধ করে রাখে ঘন্টার পর ঘন্টা, শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দেওয়া শিক্ষার্থীরা ট্রেনে ঢিল ছোড়ে, ঢাকা কলেজ বনাম সিটি কলেজের মধ্যে কারা বড় সেটার আধিপত্য প্রমানের জন্যে সাইন্সল্যাবকে মৃত্যুকূপ বানায়, অথচ শিক্ষা নিজেই তাদেরকে শিক্ষার্থী পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে.... ! এর সবই হয় কারন এই বিপ্লবের পেছনের আদর্শ ভঙ্গুর, ঝুরঝুরে একই সাথে উদ্দেশ্যহীন !
নিজেদের বিপ্লবী বলে আমাদের যে বিপ্লবীরা(স্বঘোষিত) সরকার পতনের ডাক দিয়েছিলো, যারা আসলে উরুতিয়ার মতোই আর সাধারন সুশীলেরাও কোনো আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সেই বিপ্লবে সমর্থন দেয় নি বরং তারা প্রত্যেকেই ছিল আনদ্রেসের মতো সুযোগসন্ধানী ! বিপ্লবের কিছু অন্যায় সুফল নিজেদের অধিকারে নেওয়ার আশায় আমাদের কিছু সুশীল সেই ২৪ বিপ্লবকে সমর্থন যুগিয়েছিলো মাত্র ! তাদের এখন ফসল ঘরে তোলার সময় ! ফসলের বাম্পার ফলনও হয়েছে !
চারিদিকে ধানের বাম্পার ফলন, সেই ফলন মাপার জন্যে প্রস্তুত দাঁড়িপাল্লা, ফসল মাপতে গিয়ে যদি গরম লাগে তার জন্যে হাতপাখাও প্রস্তুত ব্যাকাপ হিসাবে, বিপ্লবী ঝড়ে নৌকাটাও ডুবু ডুবু !
সবই আছে, নেই শুধু বিপ্লবীদের আইডিওলজি, বিপ্লবের উদ্দেশ্য !
চে গুয়েভারা বলেছেন, এই আদর্শহীন বিপ্লব ব্যর্থ হতে বাধ্য !