somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাতছাড়া বিপ্লবের হাতছানি

২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চে গেভারা তার আত্বজীবনীতে লিখেছেন,

কিউবা বিপ্লবের সময় 'গ্রানমা'র কমরেডদের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছিলো ! কিন্তু একজন ম্যাজিস্ট্রেট সেই মৃত্যুদন্ডের আদেশের বিরোধিতা করে ভোট দিয়েছিলেন ! তার নাম উরুতিয়া !

বিপ্লবীরা জয়লাভ করলে উরুতিয়াকে সে দেশের প্রেসিডেন্ট পদে বসানো হয়েছিলো, কিন্তু তার মাত্র কয়েকমাসের মাথায় জনগন তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো কারন দেশের ইতিহাসে সেই উরুতিয়া ছিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবচেয়ে ব্যর্থ এবং দিকভ্রান্ত, কপর্দকহীন !

বিপ্লবী চে গুয়েভারা তার বিশ্লেষনে লিখেছেন, সেই ব্যক্তিগত ভোটটা উরুতিয়া বিপ্লবী আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে দেন নি, ওটা জাস্ট তার একটা ব্যক্তিগত মতামত ছিল মাত্র !

আরেক অধ্যায়ে চে গেভারা আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন !

সানতিয়াগো থেকে অস্ত্রশস্ত্রের চালানের খবরাখবর নিয়ে আসতো আনদ্রেস নামের এক ভদ্রলোক যে কি না ওই বনের মধ্যেই বাস করতো আর চোলাই কাঠের ব্যবসা করতো, বিপ্লবীদের সহায়তা করতো আনদ্রেস সহ ওর পরিবারের অন্যান্যরা ! কিউবার ঘন জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা বিপ্লবীদের জন্যে এই আনদ্রেস পরিবার খুবই সহায়তা করেছিলো !

কিন্তু চে গুয়েভারা সেই বেবুন পরিবারদের এই সহায়তাকে ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে যে, বিপ্লবীদের সহায়তা করার পেছনে বেবুন পরিবারের উদ্দেশ্য ছিল যে, যদি এরা কখনো ক্ষমতায় যায় তাহলে তারা নির্বিঘ্নে চোরাই কাঠের ব্যবসা করতে পারবে এবং এই জঙ্গলে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে ! এই উদ্দেশ্যেই তারা বিপ্লবীদের সহায়তা করেছিলো মাত্র ! তারা কেউই বিপ্লবের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে পাশে ছিল না !

চে বলেছেন, 'বিপ্লব হতে হবে আদর্শকে সামনে রেখে, আদর্শ থেকে পিছপা হওয়া মানে বিপ্লবকে সংকুচিত করা, কেননা বিপ্লব পরবর্তী সময়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেটা কেবল বিপ্লবের আদর্শধারীরাই সমুন্নত রাখতে পারে, নইলে সেই বিপ্লব হাতছাড়া হতে বাধ্য'

'বিপ্লবীদের চিন্তাধারা কিংবা তৎপরবর্তীকালের রাষ্ট্রগঠন' নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে তো সবার আগে রাউল কাস্ত্রো, চে গুয়েভারা, ফিদেল কাস্ত্রো, হুয়ান আইমেইদা, রামিরো ভালদেস এদের নামগুলাই তো আগে চলে আসে, অথচ ওই বিপ্লব হয়েছিলো ১৯৫৬ সালে ! আপনি যদি ২০২৪ সালে বাংলাদেশে যে ছাত্রজনতার অভ্যুথান বা বিপ্লব হয়েছিলো(?) সেখানে তাকান, তাহলে দেখবেন সেখানে আদর্শবাদ জিনিসটার ঘাটতি ছিল প্রবল ! স্বৈরাচার কেনো হটাতে চাই সেটা বিপ্লবের একটা প্রশ্ন মাত্র কিন্তু যে আদর্শের পরিবর্তন চেয়ে বিপ্লবকে এগিয়ে নিতে চাই সেইখানে এই বিপ্লব নড়বড়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে ! বিপ্লবের উদ্দেশ্য নড়বড়ে বলেই ফারুকীরা উপদেষ্টা হয়, ফেইল করা শিক্ষার্থীরা নিজেদের পাশ করানোর জন্যে সচিবালয় ঘেরাও করে, আবার তারা সফলও হয়, বুয়ারা রাস্তা অবরোধ করে যাতে তাদের বুয়া বলে না ডাকা হয়, অটোচালকেরা রাস্তা বন্ধ করে রাখে ঘন্টার পর ঘন্টা, শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দেওয়া শিক্ষার্থীরা ট্রেনে ঢিল ছোড়ে, ঢাকা কলেজ বনাম সিটি কলেজের মধ্যে কারা বড় সেটার আধিপত্য প্রমানের জন্যে সাইন্সল্যাবকে মৃত্যুকূপ বানায়, অথচ শিক্ষা নিজেই তাদেরকে শিক্ষার্থী পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে.... ! এর সবই হয় কারন এই বিপ্লবের পেছনের আদর্শ ভঙ্গুর, ঝুরঝুরে একই সাথে উদ্দেশ্যহীন !

নিজেদের বিপ্লবী বলে আমাদের যে বিপ্লবীরা(স্বঘোষিত) সরকার পতনের ডাক দিয়েছিলো, যারা আসলে উরুতিয়ার মতোই আর সাধারন সুশীলেরাও কোনো আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সেই বিপ্লবে সমর্থন দেয় নি বরং তারা প্রত্যেকেই ছিল আনদ্রেসের মতো সুযোগসন্ধানী ! বিপ্লবের কিছু অন্যায় সুফল নিজেদের অধিকারে নেওয়ার আশায় আমাদের কিছু সুশীল সেই ২৪ বিপ্লবকে সমর্থন যুগিয়েছিলো মাত্র ! তাদের এখন ফসল ঘরে তোলার সময় ! ফসলের বাম্পার ফলনও হয়েছে !

চারিদিকে ধানের বাম্পার ফলন, সেই ফলন মাপার জন্যে প্রস্তুত দাঁড়িপাল্লা, ফসল মাপতে গিয়ে যদি গরম লাগে তার জন্যে হাতপাখাও প্রস্তুত ব্যাকাপ হিসাবে, বিপ্লবী ঝড়ে নৌকাটাও ডুবু ডুবু !
সবই আছে, নেই শুধু বিপ্লবীদের আইডিওলজি, বিপ্লবের উদ্দেশ্য !

চে গুয়েভারা বলেছেন, এই আদর্শহীন বিপ্লব ব্যর্থ হতে বাধ্য !
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যদি এমন হতো.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:২৮

যদি এমন হতো....

বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা-দারিদ্র-মহামারী, যুদ্ধবিগ্রহের ধ্বংসযজ্ঞে মানুষে মানুষে, দেশে দেশে সকল বৈরীতা ভুলে একটা সুখী পরিবার গঠন করে দুনিটাকে সত্যিকার ভূস্বর্গ করতে...
শুরু হতো বাংলাদেশ থেকে। সব রাজনৈতিক দল মুক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

নির্বিকার ( কবি দাউদ হায়দার স্বরনে তারি লেখা কিছু কবিতা থেকে উৎসাহিত হয়ে)

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:০৫



জন্মেছি, এও এক ঘটনা মাত্র।
কারও ইচ্ছেতে নয়, কারও অনিচ্ছেতেও নয়।
রক্তের গন্ধে ভরা এক সকালে
আমি নেমে এসেছি, অপ্রত্যাশিত চিৎকারে ।

শহরের ধুলো, গলির বিক্রি হয়ে যাওয়া রোদ,
বাসের পাদানিতে ঝিমিয়ে পড়া শরীর,
সবকিছু দেখেছি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের পাশে আমেরিকা-ইসরায়েল। পাকিস্তানের পাশে কারা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩


গত রাতে ইসরায়েল থেকে ভারতে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে গেছে একটি কার্গো বিমান। তাতে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির গাইডেড মিসাইল বিপুল পরিমাণে আছে। এই মিসাইলগুলো অতি নিখুঁতভাবে মেঘ, বৃষ্টি বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত ও পাকিস্তান উভয় সম্পূর্ণ কাশ্মিরের দখল পেতে মরিয়া

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৩



ভারত হয়ত এবার যুদ্ধকরেই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। পাকিস্তানও হয়ত যুদ্ধকরেই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। এমতাবস্থায় ভারতের পাশে ইসরাইল এবং পাকিস্তানের পাশে চীন থাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবার কমন শত্রু আওয়ামী লীগ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৫৮


শেখ হাসিনা সবসময় তেলবাজ সাংবাদিকদের দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন। তেলবাজ নেতাকর্মীরাও বোধহয় তার পছন্দ ছিল। দেশে কী হচ্ছে, না হচ্ছে, সে সম্পর্কে তার ধারণাই ছিল না। সামান্য কোটাবিরোধী আন্দোলন উনার পক্ষে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×