নিবেদন - মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় করকমলে ছাড়া আর কাকে !! অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষ ।
১) কবিতা নয় একটি ব্যাখ্যাকৃত মতামত । এটা একটা সঙ্গীত যা বৃদ্ধি পায় একজন আহতের রক্তক্ষরণ থেকে অথবা মুখের একটু হাসি থেকে ।
২ ) একজন কবি হচ্ছে একজন সিংহাচ্যুত রাজা বসে আছে তার রাজপ্রাসাদের ছাইয়ের ভিতরে , চেষ্টা করছে ছাইয়ের ভিতর থেকেই একটা প্রতিমূর্তি তৈরি করতে ।
৩ ) কবিতা হচ্ছে অভিধানের যতিচিহ্নসহ আনন্দ , বেদনা ও বিস্ময়ের ভাগাভাগি ।
৪ ) ব্যর্থতার ভিতর একজন কবি তার হৃদয়ের সঙ্গীতের জননীকে অনুসন্ধান করবে ।
৫ ) একবার আমি এক কবিকে বলেছিলাম আপনি মারা না যাওয়া পর্যন্ত আমরা আপনার
বিশিষ্টতা সম্পর্কে কিছু জানব না । তিনি উত্তরে বললেন হ্যা , ঠিকই বলেছেন । মৃত্যু
হচ্ছে সবসময়েই প্রকাশকারী । বস্তুতপক্ষে আপনি যদি আমার বিশিষ্টতা জানতে চান জিভের চাইতেও আমার হৃদয়ে এবং অধিক রয়েছে আমার হাতের চেয়েও আমার আকাঙ্ক্ষায় ।
৬ ) কবিতা হচ্ছে বিচক্ষণতা যা হৃদয়কে মোহিত করে । বিচক্ষণতা হচ্ছে কবিতা যা মনের ভিতর গান গায় । যদি আমরা মানুষের হৃদয়কে মোহিত করতে পারি এবং একই সাথে তার মনের ভিতরে গান গাই তাহলে সত্যের ভেতর সে বেঁচে থাকবে ঈশ্বরের ছায়ায় ।
৭ ) কবিতার কাছে চিন্তা হচ্ছে সবসময় হোঁচট খাওয়া পাথর ।
৮ ) যদি আমাকে বলা হয় একটা কবিতা লিখার ক্ষমতা ও একটা কবিতা না লিখার পরমানন্দের কোনটা আমি পছন্দ করব তাহলে আমি পরমানন্দ বেছে নেব । এটা উন্নততর কবিতা ।
৯ ) মৃত্যু বৃদ্ধদের নিকটবর্তি নয় , নবজাতকের চেয়ে ।
১০ ) ভুলে যাওয়া বাস্তবতা মারা যেতে পারে ।
১১ ) তুমি কোন মানুষের বিচার করতে পার না , তার সম্পর্কিত
জ্ঞানের ঊর্ধ্বে উঠে এবং দেখো কি কি পরিমাণ ক্ষুদ্র তোমার জ্ঞান ।
১২ ) দ্বন্দ্বের প্রকৃতি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা কিন্তু বিশৃঙ্খলার আকুল আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে
শৃঙ্খলা ।
১৩ ) সৌন্দর্যের উপর না আছে ধর্ম , না আছে বিজ্ঞান ।
১৪ ) সেই প্রকৃত মহৎ মানুষ যে কারো উপর প্রভুত্ব করবে না এবং কারো
প্রভুত্ব মেনে নেবে না ।
১৫ ) সম্ভবত সময়ের সংজ্ঞা হল কয়লার ভেতরে হীরা ।
১৬ ) অপেক্ষা হচ্ছে সময়ের ক্ষুর ।
১৭ ) প্রয়োজনের অন্য নাম হচ্ছে অপরাধ অথবা একটা অসুখের রুপ ।
১৮ ) মানুষ মুলত দুইজন । একজন অন্ধকারে জাগ্রত , অন্যজন আলোর ভেতরে ঘুমন্ত ।
১৯ ) খরগোশের চেয়ে রাস্তা সম্পর্কে অধিক বলতে পারে কাছিম ।
২০ ) শিল্পকলা হল প্রকৃতি থেকে অসীমের দিকে যাওয়ার একটা সিঁড়ি ।
২১ ) একজন দার্শনিক একজন ঝাড়ুদারকে বলল , তোমার জন্য আমার দয়া হয় । তোমার কাছ যেমন শক্ত , তেমন নোংরা । ঝাড়ুদার বলল ,
ধন্যবাদ জনাব , কিন্তু আপনি বলুন আপনার কাজ কি ? উত্তরে দার্শনিক
বলল , আমি মানুষের মন নিয়ে গবেষণা করি , তার কর্ম । তার আকাঙ্খা। তারপর ঝাড়ুদার তার কাজে লেগে গেল এবং হাসতে হাসতে বলল , আপনার জন্য ও আমার করুণা হয় ।
২২ ) একজন বিত্তশালী ব্যক্তি বললো (প্রফেটকে), দান করা সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।
আর তিনি উত্তরে বললেন:
তোমাদের ধনসম্পত্তি থেকে যখন তোমরা কিছু দান করো তখন সামান্যই দাও।
যখন তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে দাও তখনই সত্যিকার কিছু দাও।
কারণ তোমাদের ধনসম্পদ কী? সে সব তোমরা পাহারা দিয়ে রাখো, যেন আগামী কাল প্রয়োজনের মুহূর্তে তোমরা তা পেতে পারো।
আর আগামীকাল? যে অতি-দূরদর্শী কুকুর পবিত্র নগরীর পথে তীর্থযাত্রীদের অনুসরণ করার সময় দিকচিহ্নহীন বালুরাশির মধ্যে হাড়গোড় পুঁতে রাখে তোমাদের অবস্থাতো ঐ রকমই হবে।
আর প্রয়োজনের আশঙ্কা ওই প্রয়োজনটি ছাড়া আর কিছু কি?
তোমাদের কূপ যখন পূর্ণ তখন তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা কি সেই তৃষ্ণা নয়, যা কখনো মেটানো যায় না?
কিছু মানুষ আছে তারা তাদের প্রচুর সঞ্চয় থেকে খুব সামান্য দান করে, আর তারা দান করে স্বীকৃতি লাভের জন্য, আর তখন তাদের গোপন আকাঙ্খা তাদের দানকে অস্বাস্থ্যকর করে গেলে।
আর কিছু মানুষ আছে যাদের সঞ্চয় খুব সামান্য কিন্তু তাদের সবই তারা দান করে।
এরাই জীবন এবং জীবনের প্রাচুর্যে আস্থাবান, আর এদের সিন্দুক কখনোই শুন্য হয় না।
আর কিছু মানুষ আছে যারা দান করে সানন্দে, আর ওই আনন্দই তাদের পুরস্কার।
আর কিছু মানুষ আছে যারা দান করে বেদনার সঙ্গে, আর ওই বেদনা হল তাদের অগ্নিদীক্ষা।
আর কিছু মানুষ আছে যারা দান করে, আর ওই দানের সময় কোন বেদনা অনুভব করে না, তারা তার মধ্যে কোন আনন্দও খোঁজে না, ওই দানের সময় কোন পূণ্য সঞ্চয়ের কথাও তারা ভাবে না;
তারা দান করে ওইভাবে যেভাবে ওই উপাত্যকার চিরহতিৎ গুল্ম তার সুন্দর ঘ্রাণ মহাশুন্যে ছড়িয়ে দেয়।
এই রকম মানুষদের হাতের মধ্য দিয়েই বিধাতা কথা বলেন, আর তাদের চোখের পেছন থেকে তিনি ধরণীর দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসেন।
চাইলে পর দান করা ভালো, কিন্তু না চাইতে, উপলব্দি ক’রে, দান করা আরো বেশি ভালো।
আর মুক্তহস্ত মানুষের কাছে গ্রহীতার অন্বেষণ দানের আনন্দের চাইতেও বেশি আনন্দদায়ক।
আর দান না করে নিজের কাছে ধরে রাখার মতো তোমার কাছে কিছু রাখা কি উচিত?
তোমার যা কিছু আছে সবইতো একদিন দিতে হবে।
অতএব, এখনই দাও, দেওয়ার কাল তাহলে তোমারই হবে, তোমার উত্তরসূরীদের না তোমরা প্রায়ই বলো, আমি দেবো, কিন্তু কেবলমাত্র যোগ্য ব্যক্তিকে দেবো।
তোমার বাগানের ফলের গাছগুলি কিন্তু তেমন কথা বলে না, তোমার চারণক্ষেত্রের পশুরাও না।
তারা দেয় যেন তারা বাঁচতে পারে, কারণ না দিয়ে ধরে রাখলে তারা নিজেরা ধবংস হয়ে যাবে।
নিশ্চয়ই যে মানুষ তার দিবস-যামিনী প্রাপ্তির যোগ্য সে তোমার কাছ থেকেও সব কিছু পাওয়ার যোগ্য।
আর যে জীবনের মহাসাগর থেকে পান করার যোগ্যতা অর্জন করেছে তার নিশ্চয়ই তোমার ছোট্ট স্রোতস্বিনী থেকে তার পেয়ালা ভরে নেবার যোগ্যতাও আছে।
আর গ্রহণ করার মধ্যে যে সাহস, যে আস্থা, যে করুণা আছে তার চাইতে বড়ো কোনো মরুভূমি কি কোথাও দেখা যাবে?
আর তোমরা কারা যে তোমাদের জন্য মানুষ তাদের বক্ষ বিদীর্ণ করবে, তাদের অহংকারের পর্দা উন্মোচিত করবে, যেন তোমরা তাদের মূল্য খোলাখুলি ভাবে তাদের দেখতে পারো আর তাদের অহঙ্কারকে দেখতে পারো কোনো রকম লজ্জাবোধ দ্বারা না আক্রান্ত অবস্থায়?
প্রথমে দ্যাখো তোমরা দাতা হবার যোগ্যতা অর্জন করেছো কি-না, দান করার একটা হাতিয়ার হয়ে উঠছো কি-না।
কারণ, যথার্থই, জীবন দান করে জীবন, আর তোমরা যারা নিজেদেরকে দাতা মনে করো তোমরা আসলে শুধু সাক্ষী।
আর তোমরা যারা গ্রহীতা- তোমরা সবাই তো গ্রহীতা- তোমরা কৃতজ্ঞতার কোন দায় অনুমান করে নিও না, পাছে এর মাধ্যমে তোমরা তোমাদের কাঁধে একটা জোয়াল চাপিয়ে দেবে, আর যে দান করেছে তার কাঁধেও,
বরং দাতার সাথে এক সঙ্গে তার দানের ঊর্ধ্বে উঠে যাও, যেন পাখায় ভর দিয়ে;
কারণ তোমার ঋণ সম্পর্কে অতিসচেতনতার অর্থ হবে তাঁর ঔদার্যে সন্দেহ করা, যার মাতা হলেন মুক্ত হৃদয়ের ধরণী, আর পিতা বিধাতা।
অনুদিত - মোস্তফা মীর
এ বিষয়ক আমার আগের পোস্ট
খলিল জিবরান এর হৃদয় , ভালবাসা ও নারী বিষয়ক বয়ান ।
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা ।