আজ মাধবীলতা-তন্ময়ের বিবাহের ৬ বছর পূর্তি। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার, ছয় বছর আগে এই দিনে তাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়। পরীক্ষা শেষে ১৫ দিনের ছুটিতে তন্ময় চলে যাবে তার বাসা চট্টগ্রামে, মাধবীর বাসা ঢাকাতেই।গোল বাধে পরীক্ষা শুরুর কিছুদিন আগে, মাধবীর বাসা থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়,পরীক্ষার পর ই তার বিয়ে, অবশ্যই তন্ময়ের সাথে না। পরিবার কে কোনভাবেই বুঝাতে না পেরে তারা সিদ্ধান্ত নেয়,নিজেরাই বিয়ে সেরে ফেলবে কাজি অফিসে গিয়ে।
এভাবেই তাদের বিয়ে হয়ে গেল। আস্তে আস্তে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলছে তাদের সংসার। মাধবী ভাল একটা জব করছে ঢাকায়, তন্ময় অবশ্য চাকুরির জন্য চট্টগ্রামে থাকে। রান্নায় অপটু মাধবী এখন চমৎকার রাঁধুনি! তন্ময় এখন অনেক রেস্পন্সিবল। সামনে তাদের একটা বাবু হবে, নাম ও ঠিক করা হয়েছে,আহনাফ।
মাধবীর এই অসুস্থতার সময় তন্ময় খুব ই কেয়ার করে তাকে, ঠিক যেমন হলে থাকতে করত। ছেলেদের আর মেয়েদের হল পাশাপাশি ই ছিল, তন্ময় কখনো বাইরে গেলে মাধবির জন্য টুক টাক কিছু না কিছু আনত ই, বাইরে থেকে আসার সময় একটা কল দিয়ে কি কি আনব জিজ্ঞাসা করার মধ্যে সংসার সংসার একটা ভাব আছে! কখনো কখনো বেলি ফুলের মালা নিয়ে আসত সে, মাধবির ঘন কালো চুলের খোঁপায় বেশ মানাত। মাধবীর জন্য চোট কিছু করতে পারলেও সে বর্তে যেত।
একবার এক ব্লগে সন্তানসম্ভবা মা দের নিয়ে কিছু লিখা তন্ময় কে দেখিয়েছে মাধবি, সেই থেকে তন্ময় ঠিক করেছে, সন্তান জন্মের আগে মাধবিকে সে রানী বানিয়ে রাখবে। এখন শুধু দুজনের অনাগত সন্তানের অপেক্ষা, বড়ই মধুর সেই অপেক্ষা।
পুনশ্চঃ
কল্পনার জগত থেকে সহসা বাস্তবে ফিরে এল তন্ময়।সেদিন তাদের বিয়ে হয় নি। মাধবি পরিবারের মতের অবাধ্য হয় নি। এক সপ্তাহ পরই তার বিয়ে হয়ে যায়, অকুল পাথারে দিকভ্রান্ত তন্ময় ডুবে যায় কষ্টের চোরাবালিতে। সেই থেকে প্রতিবছর এই দিনে তন্ময় আনমনেই পালন করে তাদের বিবাহ বার্ষিকী, কল্পনায় সাজায় তাদের স্বপ্নের সংসার, তার আর মাধবীলতার সংসার।
জীবন চলে যায় জীবনের গতিতে, থেকে যায় স্মৃতির দগদগে ঘা, একটু স্পর্শেই যা তার উপস্থিতি জানান দেয় নির্লজ্জের মত।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:০০