ভণ্ডামির পাঠশালাঃ
ত শুরু করা যাক এখনই-
যদি আপনি সরল মনের মানুষ হয়ে থাকেন,তাহলে এখনি ফুটেন, আপ্নারে দিয়া হবে না, খালি খালি সময় নষ্ট করে লাভ কি ???
প্রথম ধাপঃ শুরুতেই কিছু ব্যাপার আপনাকে একদমই ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে, (নিজের মনের ভালোমানুষি কে একেবারে পাত্তা দিলে হবে না), এই যেমন ধরুন আত্মসম্মানবোধ,মনুষত্ব,বিবেকবোধ,মান ইজ্জত এবং লজ্জা।
দ্বিতীয় ধাপঃ এই ধাপে আপনাকে কিছু বিশেষ গুণাবলি অর্জন করতে হবে, যেমনঃ মিথ্যা বলার অপূর্ব ক্ষমতা,প্রতারণা করতে একটুও কেপে উঠেনা এরকম একটা হার্ট ,অসম্ভবরকম চতুর বুদ্ধি ,কান্নাকাটি করার ক্ষমতা, স্ট্রিক্টলি কিছু বলে ফেলার ক্ষমতা (তাতে অন্যপক্ষ যা মনে করে করুক, আপনার তাতে কি ই বা আসে যায় !), অভিনয় করার অপূর্ব গুন, ইমোশোনালী ব্ল্যাকমেইল করায় অসম্ভব দক্ষতা এবং ফাইনালি ভন্ডামি।
তৃতীয় ধাপঃ পার্টনার নির্বাচন- এই ধাপে আপনাকে নিচের সতর্কতাগুলো অনুসরণ করতে হবে। প্রথমেই নির্বাচন করুন দু-জন ভালো মানুষ যারা এই রিলেশনটাকে টিকিয়ে রাখতে চাবে যে কোন ভাবে।ভালো মানুষরা সবাইকে ভালো মনে করে। আপনার মতো কুৎসিত চিন্তাভাবনার কেউ হলে সমস্যা। পার্টনার কুৎসিত মনের/লম্পট হলে আপনার লাম্পট্যও ধরা পড়ার চান্স থাকবে বেশি।
স্বাভাবিকভাবেই দুই পার্টনারের কাছ থেকে শুনবেন অসংখ্য প্রশ্ন। এই ধাপে আপনাকে কমন কিছু প্রশ্ন ও সেইসব প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে ধারণা দেয়া হলোঃ
প্রশ্ন ১। তোমার নামে এই কথা শুনলাম?
উত্তরঃ কে বলছে ????(কি বলছে সেইটা কোন সমস্যা না, কে বলছে সেইটাই সমস্যা। ভাবটা এমন আপনি নোংরামি করছেন সেইটা কোন ব্যাপার না, যে দেখছে তারই সব দোষ !!!)
প্রশ্ন ২। ঐ ছেলে/মেয়ের সাথে তোমার এতো কি?
উত্তরঃ ঐ ছেলে/মেয়ে আমার ফ্রেন্ড। বেস্ট ফ্রেন্ড। মহা আপনা বান্ধব।(কন্ঠে কনফিডেন্স ঝরে পড়বে)
প্রশ্ন ৩। তোমার বয়/গার্ল ফ্রেন্ডের থেকে ঐ ছেলে/মেয়েকে প্রাধান্য দিচ্ছো কেনো?
উত্তরঃ তোমার কারনে আমি একটা ফ্রেন্ডশিপও রাখতে পারবো না? তুমি এতো খারাপ? তোমার মন এতো ছোট?(আহা! আপনার মন বিরাট বড়। এক মনে কতোজনকে যায়গা দিতে পারেন। মাশআল্লাহ!) আমি তোমাকে অন্যদের থেকে আলাদা ভাবছিলাম।
প্রশ্ন ৪। ঐ ছেলে/মেয়েকে আমাদের রিলেশনের কথা জানাচ্ছো না কেনো?
উত্তরঃ আমি কেনো তাকে আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপারে জানাবো?(উলে বাবা!)
প্রশ্ন ৫। দুনিয়ার সবাইকে জানাচ্ছো। ওকে জানাতে সমস্যা কি?
উত্তরঃ কান্নাকাটি(কারণ এই প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছে নেই)
প্রশ্ন ৬। তুমি অইখানে গেছিলা এইটা অই ছেলে জানল কিভাবে ?
উত্তরঃ কত মানুষই ত জানে, আরেকজন অতিরিক্ত লোক জানলে সমস্যা কোথায় ?
প্রশ্ন ৭। ঐ ছেলে/মেয়ের সাথে লাস্ট কবে কথা হইছে?
উত্তরঃ মনে নাই,২/৩ মাস আগে।(ফোন হাতে নিলে ডায়াল লিস্টে প্রথম নামটা তার, মিসকল /রিসিভড কল হইলেও বুঝতাম !!)
প্রশ্ন ৮। তুমি কাকে চাও? আমাকে না তোমার ফ্রেন্ডকে?
উত্তরঃ ছিহ। তুমি আমাকে সন্দেহ করো?
প্রশ্ন ৯। প্লিজ, সব কিছু ক্লিয়ার করো। আমি এই কষ্ট আর নিতে পারতেছি না।
উত্তরঃ তুমি আমাকে লম্পট/প্রস্টিটিউট মনে করো?(খেয়াল করে দেখুন। আপনি নিজেই কিন্তু নিজেকে লম্পট/প্রস্টিটিউট হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। হা হা হা)। এই বিশ্বাস তোমার আমার উপরে !!
প্রশ্ন ১০।পহেলা বৈশাখে তোমাকে অই ছেলের সাথে দেখা গেছে কেন?
উত্তরঃ রাস্তায় দেখা হয়ে গেছে (ঢাকা শহর আসলে দিন দিন খুব ছোট হয়ে আসছে মনে হয় !)
প্রশ্ন ১১। বাসায় আমাদের রিলেশনের কথা জানাচ্ছো না কেনো?
উত্তরঃ আমার বাসায় এর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা চলতেছে, সময় হলে জানাব(আপনার সময় যে কখন হবে আল্লাহ ই জানে)
প্রশ্ন ১২। ফেসবুক থেকে অই ছেলেকে বাদ দিবা কি না বল? হয় আমাকে রাখবা নাহলে তাকে!
উত্তরঃ নাহ। আমার ফ্রেন্ড লিস্টে কে থাকবে আর কে থাকবে না সেইটা তুমি ঠিক করার কে !(খুব রাগ!!!)
এক পর্যায়ে দুই পার্টনারই আপনাকে চাপ দিবে। ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে তৃতীয় ছেলে/মেয়েকে বাদ দেয়ার জন্য। এই ধাপটার আপনার জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। আপনি কাকে বাদ দিবেন? সিদ্ধান্ত নিন নিচের ব্যাপারগুলো উপর ভিত্তি করে।
১। কে আপনার জন্য বেশি ডেডিকেটেড?
২। কে আপনি যাই করবেন তা মেনে নিবে? (২ টাই আপনার কাছে ছাগল, এখন কোনটা বেশি দুধ দেয় সেইটাই হইল ব্যাপার)
৩। কে আপনার সব অন্যায় দেখেও বেশিরভাগ সময় বিশ্বাসের উপর জোর দিয়ে ভুলে যায় ?
৪। কাকে আপনি সব চেয়ে ইজিলি ইউজ করতে পারেন?
এইসব প্রশ্নের উত্তর যার পক্ষে যাবে তাকেই ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে কাটুন।
মোবাইল সংক্রান্ত ঝামেলাঃ
যেহেতু একসাথে একাধিক প্রেম করছেন তাই বিভিন্ন সময় আপনাকে ফোনে কথা চালিয়ে যেতে হবে। কল ওয়েটিং কিংবা বিজি রাখলে সমস্যা হতে পারে। তাই বিজি ডাইভার্ট করে রাখুন। এক পার্টনারের সাথে কথা বলার সময় অন্য পার্টনার ট্রাই করবে। পরবর্তিতে প্রশ্নের সম্মুখিন হবেন। সমস্যা নেই। উত্তর আছে রেডিমেইড। আরে ধুর! মা ফোন করেছিলেন। কথা বলছিলাম ফুপাতো বোনের চাচার ছোট মেয়ের দাদার আপন ছেলের সাথে(প্রায় ঘন্টা খানেক কথা বলছিলেন কিন্তু) আমার টিচার ফোন করেছিলেন। নোট বুঝে নিচ্ছিলাম। ইত্যাদি ইত্যাদি…।
ডেটিং সংক্রান্ত ঝামেলাঃ
এক ডেটিঙের মধ্যে আরেকজনের কল আসছে ! সমস্যা নাই, ফিসফিস করে কথা বলুন, আর পাশে থাকা বলদ প্রেমিকটিকে বলুন যে মামা ফোন করছিল!(কি যুগ আসছে ,মামার সাথেও ফিসফিস করে কথা বলতে হয় !!)
যেহেতু দুই যায়গায় করছেন প্রেম সেহেতু ডেটিং-এও যেতে হবে। একজনের সাথে ডেটিং-এ যাওয়ার পর অন্যজনকে বুঝ দিতে পারেন এভাবেঃ
১।এই আজকে না আব্বুর অফিসে যাবো। তুমি এর মাঝে আমাকে ফোন দিও না।
২।এখন যাবো অগ্রনী ব্যাংকে। ওখানে ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত ঝামেলা আছে কিছু আমার।
৩।একটু বাইরে যাচ্ছি (এইটা একটা ভেগ টার্ম, সত্য ও না, আবার মিথ্যা ও না)।
নির্লজ্জ্বতা আর নষ্টামীর সব সীমা অতিক্রম করুন এভাবেঃ
এক পার্টনারকে বলুন অন্য পার্টনার আপনার রিলেশনে ঝামেলা করছে। এক পার্টনারের কাছ থেকে এস এম এস নিয়ে অন্য পার্টনারকে খুশি করুন। একজনের থেকে শুনা গল্প আরেকজনের সাথে করুন। ফেসবুকে অপেনলি চালিয়ে যান দুইটা প্রেম। কেউ কিছু বললে চোখ বন্ধ করে অস্বীকার করুন সব।
জঘন্য মিথ্যা আর প্রতারনার জন্য তীব্র অপরাধবোধ সৃষ্টি হবে? আরে ধুর। “অপরাধবোধ” শব্দটা কেবল মানুষের সাথেই যায়। সৌভাগ্যজনকভাবে আপনি এটা অনুভব করে কষ্ট পাবেন না। কারণ আপনার মাঝে ন্যুনতম মনুষত্বও নেই।
আপনার মেকি প্রেমকে বিশ্বাসযোগ্য করতে জানান, “আমাদের রিলেশনের কথা ফ্যামিলিকে জানিয়েছি”। পার্টনার ভাববে, “বাপ্রে! কি সাংঘাতিক পিরিতি”
ধরা পড়ে যাবার পরে আপনার লাম্পট্যের কথা জেনে যাবে সবাই। পরিস্থিতি তখন অনেকটাই আপনার আওতার বাইরে। কি করবেন এখন? আলাদা আলাদা ভাবে দুই পার্টনারকে সময় দিন। (হাউ মাউ করে কান্নাকাটি করে)।
আমি পা ফস্কে ফেলেছি। ফিরতে চাই।
শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকে চাইছিলাম।
ওর সাথে ডেট-এ গেলেও আসলে আমার চিন্তা চেতনায় কেবল তুমিই ছিলা।
ওর সাথে সেক্স করলেও আমার ঠোঁট আমি তোমার জন্যই রেখে দিছি।
** বিদ্রঃ দুই পার্টনারকেই এটা বলতে হবে। মানে হাতে রাখতে হবে দুইজনকেই। পার্টনার তখন অনেক সচেতন। সে আর ভুল করতে রাজি না। ইমোশোন হয়েছে অনেক। এবার সে আপনাকে বলতে পারে- – সরি। এবার ফিরে আসতে চাইলে ঐ ছেলে/মেয়েকে ব্লক করতে হবে। পারবা?
কিন্তু আপনি তো মহা ধুরন্দর। এইবারও পিছলাবেন। বলতে পারেন নিচের কথাগুলো। দেখো সেও ভালো ছেলে, আলতু ফালতু ছেলে হইলে একটা কথা ছিল। তাকে কিভাবে ব্লক করবো? পার্টনারঃ আচ্ছা তাহলে আমি ঐ ছেলে/মেয়ের সাথে কথা বলবো এবার। সব জানিয়ে আবার তোমাকে ফিরিয়ে নেবো। না। (কান্নাকাটি) দুই যায়গায়ই এই কথোপকথন চালিয়ে যাবেন।
এক পর্যায়ে পার্টনার অথবা পার্টনারদ্বয় বুঝে যাবে আপনি কি। মুখোশ উন্মোচিত হবে আপনার। আপনার সাথে দুরত্ব সৃষ্টি করবে সে/তারা। সব শেষে “এই তোমার ভালোবাসা?” বলে আপনি ফুটে যান।
“চোরের মা-র বড় গলা” কথাটাকে মনে করুন। আপনাকেও এমন হতে হবে। গলার সাউন্ড কমানো যাবে না একদম। উচু স্বরের কথা দিয়ে নিজের লাম্পট্যকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে যান। ও হ্যা। পুংটা ছেলেপেলে আপনাদের মতো মানুষের মুখোশ উন্মোচন করে এরকম পোস্ট দিয়ে দিতে পারে। পোস্ট দেখে মুখ কুচকে বলুন ছিহ(যথারীতি হ-এর উপর জোর দিয়ে)। তারপর খেয়াল করে দেখুন “ছিহ”টা আপনার দিকেই ছুটে আসছে। তারপর কনফিডেন্স এর সাথে বলুন “আমার লাইফ নষ্ট করতে পারবে না কেউ”।
সো, এইবার ধুমাইয়া ফেসবুকে কাপল ছবি আপলোড করুন আর শখানেক ছাগলের লাইক আর "বেরি নাইছ কাপল" কমেন্ট পড়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলুন।
পুনশ্চঃ যাদের সাথে মজা নিলেন, তারা হয়ত আসলেই আপনাকে ভালবাসত, এককভাবে। আপনি হয়ত অপেক্ষাকৃত বোকাটির গলায় মালা দিলেন, যে আপনার সকল ভণ্ডামি জেনেও মেনে নিবে, আর যে গিলতে পারবে না, সামান্য উচ্চবাচ্চ করলেই তার প্রেমের গলায় ঝুলিয়ে দিলেন ঘণ্টা ! এতে বাকি জীবন আপনি বহন করে বেড়াবেন তার ঘৃণা ।
প্রথম প্রেমের সুন্দর স্মৃতিগুলি খুবই মূল্যবান, এসব তার কাছে কেন গলার কাঁটা হিসাবে বিঁধিয়ে দিলেন ? আপনি নাহলে ফাউল পাবলিক, কিন্তু আরেক জনের মন নিয়ে ফাইজলামি করার অধিকার আপনাকে কে দিল !
আর আপনি কি ভেবেছেন যার সাথে আছেন,তার মনে কি খুব শান্তি দিয়ে ফেলছেন আপনি ! তার সাথে যে চালাকি আর ভণ্ডামি করেছেন সেটাও কিন্তু সে ভুলে যায় নি, যাওয়ার কথা ও না।