মাধবী চলে যাওয়ার অনেক দিন পরের কথা। ততদিনে তন্ময়ের চোখের জল শুকিয়ে গেছে, আগের সেই শোক নেই,ক্রোধও নেই, নেই কোন ছলনাময় প্রত্যাশা ও । এক ই গ্রহের বাসিন্দা হয়ে, একই চাঁদের আলোয় থেকেও কোন যোগাযোগ নেই, কথা হয় না অনেক অনেক দিন, দেখা ত দূরে থাক। সময় ই আসলে সব ভুলিয়ে দেয়।
তন্ময় তার ভালোবাসার স্মৃতি বহনকারী শহর থেকে চলে গেছে অনেক দূরে, যেখানে স্মৃতিরা তার সামনে এসে প্রতিদিন খোঁচায় না আর। অনেক অনেক মাস পর, তন্ময় কে যেতে হল সেই পুরানো শহরে, পুরানো এলাকায়, বন্ধুদের এক ইফতার পার্টি তে, দুঃখবিলাসী স্মৃতিরা সতেজ হয়ে উঠল আবার। নিজের অজান্তেই তন্ময় চলে গেল মাধবীর অফিসের সামনে, দাড়িয়ে থাকলো অনেকক্ষণ । অথচ প্রেমের সময় এই অফিসের সামনে কখনো আসে নি সে, আজ কেন খুঁজে বের করল সে ! অবশ্য মাধবী এই অফিসে এখনো চাকরি করে কি না, সেটাও একটা প্রশ্ন !! কিন্তু এই মুহূর্তে যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া অসম্ভব, তার জন্য মাথা ঘামিয়ে লাভ কি আর !
মাধবীর পুরানো ফোন নম্বরটি এখনও তন্ময়ের কণ্ঠস্থ আছে, যদিও তার জানা নেই সেই নাম্বারটিতে এখন রিং বাজবে কি না ! কতদিন দেখা হয় না মাধবীর সেই মায়াভরা মুখটা, কতদিন দেখা হয় না সেই নাকফুল, সেই ডাগর চোখ, যার দিকে তাকিয়ে তন্ময় ভুলে যেত সবকিছু ! আজ তার দেখা পাবে কি না জানে না তন্ময়, দেখা পাওয়ার সুতীব্র বাসনা নিয়েও সে আসেনি, তার পর ও কেন যেন দাড়িয়ে থাকা, যার ব্যাখ্যা তার নিজেরও জানা নেই।
চাইলেই দারোয়ান কে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেওয়া যায় মাধবী এখনও এই অফিসে আছে কি না, কিন্তু তন্ময় যায় না। উত্তর টা "না " হলে তন্ময়েরই লস, এরপর কোথায় খুঁজবে মাধবী কে ? মাধবি এখানে না থাকুক, তন্ময়ের মন চিরকাল জানুক যে মাধবী এখানেই আছে, ব্যাপার টা নিখোঁজ মানুষেরও একটা কাল্পনিক খোঁজ থাকার মত মানসিক সান্ত্বনা আর কি !
আর কিছুক্ষন পর অফিস শেষ হবে, মাধবী এই পথ দিয়েই যাবে, সে কি কখনো জানবে এই বাতাসেই মিশে আছে তন্ময়ের তাজা নিঃশ্বাস !
এক সময় আজান পড়ে আসে, মোহের জগত থেকে বাস্তবতায় ফিরে আসে তন্ময়। তাকে যেতে হবে, কিন্তু পা গুলি যেন অনড়, টেনে টেনে হাঁটে সে। দেহটা কে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কাষ্ঠল পা, কিন্তু মন ত বাঁধা পড়ে আছে এখানেই, তাকে টেনে নিয়ে যায় সাধ্য কার।
আচ্ছা, এরই নাম ই কি ভালোবাসা ?? মাধবীর ও কি এমন হয় ????