somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্পঃ কনফেশন ও কাব্য

০৫ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নীলা চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।
ফেসবুকে ঢুকে বন্ধুর ট্যাগ করা কমেন্টের নোটিফিকেশন এ চাপ দিতেই আবার সেই পেজ। আবার সেই একজনের পোষ্ট।

"কেমন আছেন মিস নীলা? ভাল আছেন? আমাকে কি ভুলে গেছেন?
যোজন যোজন পথের দুই প্রান্তে
আমরা দুটি প্রাণি,
আমি যদি হই রাজা আর
তুমি আমার রাণী,
তবে কতটা সীমালঙ্ঘন করব
সেটা কি বলবে?
এই অচেনা শহরে আমার হাত
এক মুহুর্ত ধরবে?"

মেজাজ খারাপ হয়ে গেল নীলার। আর কত সহ্য করা যায়। কমেন্টে লিখে দিল,
"প্লিজ যেই ভাই পেজটা চালাচ্ছেন,এরপর থেকে এরকম পোস্ট হলে দয়া করে আর দিবেন না। প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।"

যেই বন্ধু ওকে ট্যাগ করে কমেন্ট দিয়েছিল "ট্রিট দে" তার উত্তরে ও বলে আসলো "আর কখনও ফাজলামি করবি না ট্যাগ দিয়ে"

এরপর হোমপেজে চলে এলো। কনফেশন পেজে যে ই লিখছে তার এটা ২০তম লেখা নীলাকে নিয়ে। প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।

একটু পেছনে যাওয়া যাক।
প্রথমদিকে যদিও খারাপ লাগত না নীলার এতটা। কৌতুহল লাগত সাথে একটা ভাল লাগাও কাজ করত। প্রথম লেখাটা শুরু হয়েছিল এভাবে,
"আকাশের নীলিমায় ছোট্ট একটি নাম
তার নিচেই ছোট্ট একটি গ্রাম,
ভালবাসার বৃষ্টি পড়ে,
অভিমানের সূর্য ওঠে,
অনুভূতির চাঁদের আলো,
তোমার আঁখি-দীঘি জলে,
সেখানেই ভাসাই যত স্বপ্নের ভেলা
ছোট্ট সেই নামটি হলো নীলা।
... ... অচেনা পথিক।"

"কনফেশন পেজে আমার নাম? তুই নিশ্চিত ফাজলামি করছিস? আমার তো মনে হয় তুই ই লিখেছিস!!!" নীলা যখন কনার কাছ থেকে প্রথম জানতে পারে তখন এভাবেই চিৎকার করে ওঠে।
"আরে নাহ। আমাকে কখনও দেখছিস এইসব কবিতা লিখতে? আমার আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই না?"
এরপর একটা একটা করে প্রতি সপ্তাহে। প্রথম প্রথম ভালই লাগত। দুই বান্ধবী মিলে গোয়েন্দাগিরি করত কে এই কাজ করেছে? ওরা নিশ্চিত হলো যে ছেলেটা ওদের সাথে একই ব্যাচের। সেদিনের সেই লেখাটা ছিল,

"আমি আজকের মত প্রতিটা মুহুর্ত
তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে চাই,
শেষ অবধি; সূর্যটা অস্ত যাবে যেদিন
আলতো করে তোমার চুল বিছিয়ে দিও
আমার দুই চোখের 'পরে।
... ... আমি সেই অচেনা পথিক, পথ ছেড়ে তোমার দরজায় কড়া নাড়ছি। হয়ত এটা ভুল কিন্তু পথিকই পথের স্রষ্টা। সেই চিন্তায় বলা যায় পথিক ভুল করেনা। শুধু গন্তব্যে পৌঁছুলে আর কোন ক্লান্তি নেই।
আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছিল। পুরোটা ক্লাসে তোমার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।"

একসাথে ক্লাশ করে যেসব ছেলেরা তাদের মধ্যে থেকে কে হতে পারে? কে হতে পারে?

দুই বান্ধবীর এনালাইসিস শুরু হয়ে গেল সেদিন থেকে।
কণা বলল, "সজল হবে। ছেলেটা মাঝে মাঝে তোর দিকে তাকায়।"

"ধুর। ও সবার দিকেই তাকায়। ও এসব করার ছেলে না।" নীলা বলল।

"তাহলে কবির,জাহিদ,তপু,সাব্বির,শুভ,আতিক এদের কেউ হবে। বাকিদের রিলেশন আছে বা হতে যাচ্ছে এমন।" কনার আত্মবিশ্বাসী জবাব।

নীলা মনে মনে মিলিয়ে নেয়। কবির ছেলেটা অতটা মিশুক না। কেমন যেন ভাব নিয়ে চলে। পড়াশোনায় খু  ভাল। সামনের সারির স্টুডেন্ট। জাহিদ ছেলেটা একটা জোকার। সারাক্ষণ হাসিখুশি থাকে, মজা করেই দিন কেটে যায়। শার্ট প্যান্ট রেডিমেড কখনও কিনেছে বলে মনে হয় না। দেখলেও কেমন বোকা বোকা লাগে। তপু ছেলেটা মিশুক, ভদ্র আর সাধারণ মনের। লেখাপড়া করা ছেলে। বিতর্ক থেকে শুরু যে কোন প্রতিযোগিতায় সে ভাল করবেই। সাব্বির একটু দুষ্ট টাইপের। সারাক্ষণ সবাইকে জ্বালাবে। জাহিদের সাথে প্রায়ই ঝামেলা করে ওর স্বাস্থ্য নিয়ে। বিরক্তিকর! এদের পক্ষে কবিতা লেখা অসম্ভব। তার উপর রোমান্টিকতা বা ওইরকম পোস্ট আশাও করা যায় না এদের থেকে নীলা ভেবে নেয়।

আতিক ছেলেটা বেশ ফ্রেন্ডলি আর স্মার্ট। সবার সাথে বেশ ভাল খাতির আছে ওর। আতিক শুভ, নীলা ও কণার ভাল বন্ধু। ওরা ৫-৬ জন মিলে আড্ডা দেয়, মাঝে মাঝে ঘুরতে যায়। কণার তথ্য যদি ঠিক হয় তবে এদের দুজনের মধ্যে কেউ হলে বেশি ভাল হবে। কিছুক্ষণ পর নীলা নিজেই অবাক হয় কিসব ভাবছে সে। এসব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে দেয় সে। যেই হোক সামনে না এসে যত যা-ই বলুক কিছুই হবে না।

এভাবেই শুরু হলো। একটার পর একটা পোস্ট। তবে কি এক কারণে শেষ পোস্টটা আসতে অনেক দেরী হয়। এতদিনের মধ্যে অনেক কিছু ঘটে যায় ক্যাম্পাসে।

কণার সাথে তপুর সম্পর্ক হয়। কনা আর নীলার অনুসন্ধান কিছুদিনের জন্য ক্ষান্ত হয়। আতিক, শুভ বা তপু কেউ নয়। তপুকেও জানিয়ে রাখে কণা এই ব্যাপারে। এর মধ্যে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। টার্ম পরীক্ষা শেষ হয়,কবিরের সাথে নীলার বন্ধুত্ব হয়, এরকম আরও কিছু ঘটনা ঘটে। নীলা তবুও প্রতিটা দিন কনফেশন পেজে ঘুমানোর আগে একবার ঢু মেরে নিত। রীতিমতো অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল ওর।

একদিন কণার কাছে শুনল কবিরের কথা। সে নাকি লেখালিখি করে। তবে বাইরে কেউ জানে না তেমন। তপুর কাছ থেকে শুনেছে। সে হতে পারে। "তুই কথা বলে দেখতে পারিস তবে কৌশলে। ধরা না পড়িস আবার যে গোয়েন্দাগিরি করছিস।" নীলাকে বলে দেয় কণা।

কণার কথা শুনে ওকে না বললেও মনে মনে কবিরের কথা ভাবতে লাগলো নীলা। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও কবিরের সাথে কথা বলতে শুরু করলো কিভাবে কিভাবে যেন। কবির ছেলেটা বুদ্ধিমান ভাল ছাত্র। নীলার ভাল লেগে গেল ওকে। ওদের বন্ধুত্বটা এভাবেই শুরু হয়।

বন্ধুত্ব আরও ভাল হয় দুজনের। যদিও নীলা কথাটা জানতে চেষ্টা করে অনেকবার কিন্তু পারে না। প্রতিবারই কিছু না কিছু হয় আর জিজ্ঞেস করা হয় না নীলার। ওদিকে বন্ধুত্বটা গাঢ় হয়েই যাচ্ছে। নীলা বুঝতে পারে দেরী করা ঠিক হবে না। ওকে জানতেই হবে।

একদিন ওরা একটা পার্কে ঘুরতে গেল দুজন। সারাদিন আড্ডা,খাওয়া,ঘোরাঘুরি করতে করতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল। চলে আসতে শুরু করলো দুজন। এমন সময় নীলা কবিরকে জিজ্ঞেস করলো,
"আচ্ছা কবির একটা ব্যাপার আমি জানবো জানবো করে আর জানাই হলো না। তুমি কি আমাকে নিয়ে কনফেশন পেজে কখনও লিখেছিলা?"

কবির কয়েক মুহুর্ত ভাবলো। কি বলবে বুঝছে না। তপুর সাথে প্লান করেই সব করেছিল কবির কিন্তু সেটা বলা কি ঠিক হবে? একটু পর সে বলল, " না নীলা; কিন্তু... কিন্তু আমি তোমাকে ভালবাসি।" বলেই হাতটা ধরলো ওর। নীলা কি করবে, কি বলবে সিদ্ধান্ত নিতে পারলো না। হাতটা আস্তে করে সরিয়ে নিজের কাছে রেখে বলল,"কবির আমি তোমাকে পরে জানাবো। এখন আসি।"

রিক্সায় ফেরার সময় নীলা বুঝতে পারল সে ভুল করেছে। কবির সে নয়। সে অন্য কেউ। কে সে? কই সে? কবিরকে কি বলবে সে? এতটা কাছে কেন গিয়েছে সে কবিরের না বুঝে? অনেক প্রশ্ন মাথার ভেতর ঘুরছে। নাকি কবির মিথ্যে বলছে।

সারারাত ঘুমাতে পারেনি নীলা। বালিশে মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো।

পরেরদিন ক্লাশে গেল না। এরপরের দিন কণা ওকে ফোন করে খোঁজ খবর নিল ওর। এরপর জানালো কাল যেন সে আসে। একটা ব্যাপার ঘটেছে। নীলা জানতে চাইলে কণা বলে কাল আসলেই সে জানতে পারবে।

সেদিন রাতে কনফেশন পেজে ঢুকে নীলা অবাক হয়ে গেল। ওকে নিয়ে আবার পোস্ট। ২০তম পোস্ট। খুব রাগ লাগছে ওর। খুব।

পরদিন ক্লাশে যাওয়ার পর কবিরের সাথে চোখাচোখি হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু কোন কথা বলেনি ওরা। ক্লাশের পরে কণা নীলাকে বললো,
"দোস্ত আমি জেনেছি সে কে। আমাকে সে কালকে ফোন করে সব বলেছে। কবির আর তোর কথা সে জেনেছে তাই পোস্ট দেয়নি সে। কিন্তু ছেলেটার খুব মন খারাপ তাই তোর সাথে দেখা করতে চায়। এজন্যই আমাকে বলেছে। আমি বলার পর রাতের পোস্টটা দেয় সে।"
"কে সে??? বল কে সে?"
কণা কোন কথা বলল না। চল আমার সাথে।

নীলাকে নিয়ে হাসপাতালে গেল কণা। নীলা নিজের হৃদস্পন্দন নিজের কানে শুনতে পারছিল যেন।

অবশেষে খুঁজে পেল সে।

"জাহিদ!!!"

চোখ তুলে তাকিয়ে ভাঙা ঠোটে হাসি ফুটিয়ে তুলল জাহিদ।
বলল, "নীলা কেমন আছো? আমাকে মাফ করে দিও। আমি তোমার মন নিয়ে খেলেছি। আই এম সরি।"

নীলা প্রচন্ড রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছে। রাগে ক্ষোভে মুখ থেকে একটা শব্দই বের হচ্ছে ওর "কাপুরুষ!!! "

জাহিদ বললো, "আমি তোমাকে জানাতাম কিন্তু মাঝে আমি এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি হই। এজন্য আর কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। আর আজকে মন খুব খারাপ লাগছিল তাই জানালাম তোমাকে।"

এই ব্যস্ত হাসপাতালের ব্যস্ত ওয়ার্ডে কেউ খেয়াল করলো না নীলার চোখের কোণে জমে থাকা দুফোটা জল। এই অনুভূতিগুলো এভাবেই আসে এভাবেই হারিয়ে যায়। কেউ ধরে রাখতে পারে না।

"তোমার যত অশ্রু সাগর
কাব্য তরীতে করবো পার,
ভালবাসার সব রঙিন মেঘ
হৃদয়ে করুক ধরপাকড়।"


[কমন প্লটে প্যাতপ্যাতা প্রেমের গপ্পো :D ]
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:২৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×