..এখানে বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়, এখানে বাড়ি ভাড়া দেয়া হবে চোখের সামনে এই রকম নেমপ্লেটই ঝুলছে শশীর। এসব আর ভাল্লাগেনা। বৃষ্টিকে নিয়ে আসবে একসাথে আদা রসুন পিষবে তা না। এখনো সংসারই শুরু করতে পারলোনা শশী।
কাল রাতে বৃষ্টি যে কঠিন ঝগড়া করেছে তাতে ইচ্ছে করছে আজই বাসায় চলে যেতে। মেয়েটা পারেও ঝগড়া করতে! অল্পতেই রেগে যায়। অবশ্য শশীর ও খুব ভাল লাগে রাগিয়ে দিতে। আগামী সপ্তাহে বাসায় যাবার কথা ছিল, বস আটকে ফেলেছে। বলতেই কঠিন ঝগড়া। কাল ঝগড়ায় কি কি বলেছে মেয়েটা ভাবতেই এখন শশীর হাসি এসে যাচ্ছে। বৃষ্টি নিশ্চয় নাক ফুলিয়ে ফুলিয়ে তখন বলছিল, পৃথিবীর সব মানুষকে ডেকে ডেকে বলতে ইচ্ছে করছে আই হেইট ইউ। তোমাকেও...!
বাপরে কি কঠিন মেয়েরে বাবা। দিনের মধ্যে পঁচিশবার লাভ ইউ না বললে নাকি তার অস্থির লাগে আর ঝগড়ার মধ্যে একেবারে সরাসরি হেইট!
-ভাই একটু সরে দাঁড়ান। এরকম রাস্তার মধ্যে এসে দাঁড়াইলেতো গাড়ি চাপা খাইবেন!
আারে তাইতো!
'' দেখো মেয়ে তোমার কথা ভাবতে গিয়ে একটু আগে গাড়ি চাপা খাইতেছিলাম। খাইলে আর কি। দুনিয়ার আর সবার মত তুমিতো আমারেও হেট কর।''
মেসেজ লিখে পাঠিয়ে দিয়ে শশীর খুব হাসি পায়। এখনি মেয়েটা চিন্তায় অস্থির হয়ে যাবে।
আচ্ছা ভালবাসা এরকম হয়! কি অদ্ভুত যে লাগে শশীর। সুরভীকে এখনো মাঝে মাঝেই খুব মনে পড়ে। দিন রাত যে কিভাবে কেটেছে সে সময়। ভাবলে শরীর কেঁপে ওঠে! উপেক্ষা ভাল জিনিস। কিন্তু অপেক্ষা বড় কঠিন। শশীর মনে হয়েছিল আর কোনদিন হয়ত সে ভালবাসতে পারবেনা। সারারাত ঘুম হতনা। একেরপর এক কবিতা লিখে গেছে। কি হয়েছে ওসব লিখে? শুধু শুধু যন্ত্রনা। সুরভী বন্ধু থাকতে চেয়েছিল। ঐ মেয়েরা যেমন হয় আর কি। ভবিষ্যত ভেবে বন্ধুকে আর প্রেমিকের জায়গা দিতে চায়নি। এই যে চাওয়া, সব দোষ কি একার ছিল শশীর? সুরভী কি আগুন উস্কে দেয়নি? রাগ আবদার ইচ্ছেপূরণ ঘোরাঘুরি প্রতিমুহূর্ত ঝুলিয়ে রাখা ! ভালবাসা কি কোন সূত্রমেনে চলে? শশীর ভেতরটা পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছিলো।
উড়ুক উড়ুক হাওয়ায় পুড়ুক
আবছায়া মেঘদল;
আমি বৃষ্টিভেজা মুখ-
আমার কঠিন এক অসুখ!
আমি বাড়ি ফিরে যাব
আমি তোমার কাছে যাব
আমি টিকিট কিনে নেব
এই শহর বেচে দেব
এই শহর বেচে দেব অনেকটা কম দামে-
শুনছো বৃষ্টি শুনছো তুমি
এই চিঠিটা লিখছি তোমার নামে...
এই চিঠিটা লিখছি তোমার নামে!
মনে মনে সুর দিতে ইচ্ছে করে শশীর। ইশ গানটা যদি গাইতে পারতো বৃষ্টি শুনে কি অবাকটাই না হত। ধুর কেন যে গাইতে পারেনা সে!
-''তুমি যদি গাড়ি চাপা খাও আমিও রাস্তার মধ্যে গিয়ে গাড়ি চাপা খাব। মনে রাইখো।''
আরে কি বলে এই মেয়ে! তোরে আমি পুতুলের বাক্সে বন্দী করে রাখব, রাস্তায় বেরুতে দিলেতো!
বিয়ের দিন ও শশীর মনে হয়েছিল মা এত বড় ভুল করছে। একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হবে ভাবতেই শশীর খারাপ লাগছিলো। শশীতো আর কখনোই কোন মেয়েকে ভালবাসতে পারবেনা। অথচ কি যে হল! এই পাগলী মেয়েটা অস্তিত্ব দখল করে এখন মহাসুখে রাজত্ব করছে।
''আজ কিন্তু আমি ভাত খাবনা। তুমি আমাকে অনেক কষ্ট দিসো,হু।''
এই টুকরো টুকরো মেসেজ পাঠাতে গিয়েও শশীর মনে হয় এত সুখ কেন!
-''বৃষ্টি তুমি একটা কাঁচা আমড়া।''
'' বৃষ্টিকে কাঁচা আমড়া মনে করে এখন ভাত দিয়ে মেখে খেয়ে ফেলো তো দেখি চাঁদকুমার। কেমন পারো...''
নাহ আর পারা যাচ্ছেনা। মেসেজ না দিয়ে একবার ফোন দিলে কি হয়? কথা শুনতে ইচ্ছে করেনা শশীর?
বৃষ্টি ফোন ধরতেই শশী হড়বড় করে বলতে থাকে, ''এই শোন, বিয়ের পর এরকম প্রেম হয়? ইশ আগে জানলে না আমি দু চারটা বিয়ে ছোট বেলাতেই করে ফেলতাম। '' ওদিকে বৃষ্টি রেগে গেছে দেখে শশী টুপ করে ফোনটা রেখে অফিসের দিকে হাঁটতে থাকে। সারাদিন আজ অনেক কাজ। সন্ধ্যায় বের হয়েই আবার বাসা দেখতে হবে। অফিসের এক কলিগ তার পাশের ফ্ল্যাটের খোঁজ দিয়েছে। ভাড়া কম। দুজনের জন্য একরুম, রান্নাঘর, বাথরুম,ছোট একটা বেলকুনি।আরো কয়েকটা বাসার খোঁজ আছে। খুব দ্রুত দেখে ফেলতে হবে।
বৃষ্টি নিশ্চয় এখন মুখ হপ করে বসে থাকবে! মুচকি হাসে শশী।
সারাদিন আর কথা হয়নি। ঘুমুতে যাবার আগে শশী ছোট্ট একটা মেসেজ লিখে বৃষ্টিকে পাঠায়।
''শুনছো এক রুমের ছোট্ট বাসায় থাকতে তোমার কি খুব কষ্ট হবে?''
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৩