শেক্সপীয়র সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। হ্যামলেট,ওথেলো,কিং লীয়র আর
ম্যাকবেথ -শেক্সপীয়রের এই চারটি নাটককে তাঁর শ্রেষ্ঠ ট্র্যাজেডি হিসেবে ধরা
হয়।এরা প্রত্যেকেই আপন আপন বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। ওথেলোর অনন্যতা বিভিন্ন দিক
থেকেই। হ্যামলেটের মত গভীর দার্শনিক তত্ত্বজিজ্ঞাসা, কিং লীয়রের মত বিশাল
মহাকব্যিক ব্যাপ্তি কিংবা ম্যাকবেথের মত প্রলম্বিত মর্মান্তিক বিশ্লেষন এতে
নেই। অথচ ওথেলোর ট্র্রাজিক আবেদন তীব্রতম।
ওথেলোর কাহিনী অনেকেই জানেন হয়ত। প্রধান চরিত্র ওথেলো একজন কৃষ্ণাঙ্গ মূর
সেনাপতি।তার জীবনের বেশিরভাগ অভিজ্ঞতা রনাঙ্গনের।
ডেসডিমোনার ভালবাসা তাকে মুগ্ধ আর বিস্মিত করে তোলে,সেখানে কামুকতা নেই।
ডেসডিমোনার অপরূপ সৌন্দর্য্য,তা যে শুধু দেহের নয় মনের ও তা বুঝতে আমাদের দেরী হয়না।
ইয়েগো খল চরিত্র। যার ছল আর প্রতিশোধস্পৃহার শিকার হয় ওথেলোর জীবন। বর্তমান পৃথিবীতে আমরা যাদের সাইকোটিক বলি এবং যাদের কুকর্মের জন্য তাদের সরাসরি দায়ী না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলতে হয়,তেমনি একজন ইয়েগো। আপাত ভাবে ওথেলোর ক্যাসিওকে সহ সেনাপতি করায় মূল কারন মনে হতে পারে,কিন্তু সে শুনেছে তার স্ত্রী এমিলিয়ার সাথে ওথেলোর গোপন সম্পর্কের কথা,আবার ক্যাসিও সম্পর্কেও এমন কিছু।ক্যাসিওর যে সহজাত সৌন্দর্য্য তা তাকে পীড়া দেয়। সব মিলিয়ে সে ঈর্ষার চরম প্রতীক। আত্মস্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে সে মিথ্যে আর কূটচাল দিয়ে বিপর্যস্ত করে তোলে গোছানো জীবন। ওথেলোর মনে বিষ ঢুকিয়ে দেয় ডেসডিমোনা সম্পর্কে।
ভাগ্য ইয়েগোকে অকৃপন হাতে সাহায্য করে,অথচ সে নিজে ভাগ্যের মুখাপেক্ষী
নয়।ওথেলোর মত বীর্যবান কৃতী পুরুষ তাই বলে ওঠে,
'' But o vain boast
Who can control his fate?''
সবার কাছে অনেষ্ট ইয়েগো।নৈপুন্যের সাথে ধূর্ত সে অভিনয় করে চলে।সাহায্যের জন্য
তার দ্বারস্থ হয় ক্যাসিও,ওথেলো,রোডেরিগো,ডেসডিমোনা। ওথেলো প্রমান চাইলে
এমিলিয়ার মাধ্যমে হস্তগত রুমাল ক্যাসিওর ঘরে ফেলে আসে এবং ওথেলোর কাছে প্রমান করে ডেসডিমোনা ক্যাসিওকে তা ভালবেসে দিয়েছে । ওথেলোর দেয়া ভালবাসার নিদর্শন ছিল এই রুমালটি।
ডেসডিমোনার ট্র্যাজিক মৃত্যু করুন আর বিষাদের।বেশিরভাগ সময় সে নিষ্ক্রিয় তবু তার সারল্য,স্বভাবের মাধুর্য্য,নোংরা দিকের অজ্ঞতা,ওথেলোর প্রতি চূড়ান্ত ভালবাসা তাকে অন্যতম আকর্ষনীয় করেছে।
ডেসডিমোনা সংসার জীবনে অনভিজ্ঞ বলেই ওথেলোর ভেতরের ক্রোধ পড়তে পারার আগেই তাকে মৃত্যু বরন করতে হয়।শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার বাঁচার আকুতি আমাদের স্পর্শ করে। তাকে নির্বাসিত করার জন্য অনুরোধ করে ওথেলোকে।কিন্তু ওথেলো তখন উন্মত্ত।
অথচ এ দুটি চরিত্রের প্রতি তাদের রোমান্টিসিজমের প্রতি আমাদের আবেগ কখনো কমেনা। মৃত্যুর পূর্বে ও সে তার হত্যাকারী হিসেব স্বামীকে অভিযুক্ত করতে পারেনা।এমিলিয়ার প্রশ্নের উত্তরে তাই সে বলে,
Nobody- I myself, Farewell
Commend me to my kind lord. O farewell ;
ডেসডিমোনাকে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলছে ওথেলো।
ওথেলোর কান্না কেবল শুরু-
এই হাত দিয়ে সে তার প্রিয়তমাকে হত্যা করেছে।
এমিলিয়ার কাছে যখন সে জানতে পারে ডেসডিমোনা ছিল নিষ্পাপ আর পবিত্র,এবং তার হত্যার বিচার করতে লোডোভিকো আসে তখন সে নিজেই ছুরির আঘাতে মৃত্যুকে বরন করে নেয়।নাটকের রক্তাক্ত সমাপ্তি ঘটে।
অবশ্য এ নাটকে সময় সমস্যা রয়েছে।অসঙ্গতিটাও সময় নিয়েই।হঠাৎ মনে হয় খুব অল্প সময়ের মধ্যে সব ঘটে যাচ্ছে,আবার কাহিনী মাঝে মাঝে দীর্ঘ সময় দাবী করে।যাই হোক সবমিলিয়ে ওথেলো চমৎকার একটি নাটক।শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনাকে আবেশিত করে রাখবে তাতে সন্দেহ নেই।
অ:ট: ওথেলো নিয়ে পোষ্ট দেয়ার জন্য ইমন জুবায়ের কে বহুবার অনুরোধ করেছি।উল্টা তিনি আমাকেই লিখতে বলেছিলেন।আমি আমার মত করে একটা রিভিউ লেখার চেষ্টা করলাম।একসময় আমি যেমন প্রয়োজন মনে করছিলাম,তেমন যদি কেউ ভাবে তবে তার যেন উপকার হয়। আমি আমার একশতম পোষ্টটি ইমন জুবায়ের কে উৎসর্গ করছি। একসময় উনি আমার পোষ্টে আসতেন,কমেন্ট করতেন।এখন আর আসেন না।হয়ত আমার একঘেয়েমি লেখায় তার একমাত্র কারন।(চিক্কুর দিয়া কান্দনের ইমো।)
সবার জন্য শুভকামনা...
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৮