somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওথেলো... (শেক্সপীয়রের শ্রেষ্ঠ চার ট্র্যাজেডি নাটকের একটি)

১৫ ই এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেক্সপীয়র সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। হ্যামলেট,ওথেলো,কিং লীয়র আর
ম্যাকবেথ -শেক্সপীয়রের এই চারটি নাটককে তাঁর শ্রেষ্ঠ ট্র্যাজেডি হিসেবে ধরা
হয়।এরা প্রত্যেকেই আপন আপন বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। ওথেলোর অনন্যতা বিভিন্ন দিক
থেকেই। হ্যামলেটের মত গভীর দার্শনিক তত্ত্বজিজ্ঞাসা, কিং লীয়রের মত বিশাল
মহাকব্যিক ব্যাপ্তি কিংবা ম্যাকবেথের মত প্রলম্বিত মর্মান্তিক বিশ্লেষন এতে
নেই। অথচ ওথেলোর ট্র্রাজিক আবেদন তীব্রতম।
ওথেলোর কাহিনী অনেকেই জানেন হয়ত। প্রধান চরিত্র ওথেলো একজন কৃষ্ণাঙ্গ মূর
সেনাপতি।তার জীবনের বেশিরভাগ অভিজ্ঞতা রনাঙ্গনের।


ডেসডিমোনার ভালবাসা তাকে মুগ্ধ আর বিস্মিত করে তোলে,সেখানে কামুকতা নেই।
ডেসডিমোনার অপরূপ সৌন্দর্য্য,তা যে শুধু দেহের নয় মনের ও তা বুঝতে আমাদের দেরী হয়না।


ইয়েগো খল চরিত্র। যার ছল আর প্রতিশোধস্পৃহার শিকার হয় ওথেলোর জীবন। বর্তমান পৃথিবীতে আমরা যাদের সাইকোটিক বলি এবং যাদের কুকর্মের জন্য তাদের সরাসরি দায়ী না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলতে হয়,তেমনি একজন ইয়েগো। আপাত ভাবে ওথেলোর ক্যাসিওকে সহ সেনাপতি করায় মূল কারন মনে হতে পারে,কিন্তু সে শুনেছে তার স্ত্রী এমিলিয়ার সাথে ওথেলোর গোপন সম্পর্কের কথা,আবার ক্যাসিও সম্পর্কেও এমন কিছু।ক্যাসিওর যে সহজাত সৌন্দর্য্য তা তাকে পীড়া দেয়। সব মিলিয়ে সে ঈর্ষার চরম প্রতীক। আত্মস্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে সে মিথ্যে আর কূটচাল দিয়ে বিপর্যস্ত করে তোলে গোছানো জীবন। ওথেলোর মনে বিষ ঢুকিয়ে দেয় ডেসডিমোনা সম্পর্কে।


ভাগ্য ইয়েগোকে অকৃপন হাতে সাহায্য করে,অথচ সে নিজে ভাগ্যের মুখাপেক্ষী
নয়।ওথেলোর মত বীর্যবান কৃতী পুরুষ তাই বলে ওঠে,
'' But o vain boast
Who can control his fate?''


সবার কাছে অনেষ্ট ইয়েগো।নৈপুন্যের সাথে ধূর্ত সে অভিনয় করে চলে।সাহায্যের জন্য
তার দ্বারস্থ হয় ক্যাসিও,ওথেলো,রোডেরিগো,ডেসডিমোনা। ওথেলো প্রমান চাইলে
এমিলিয়ার মাধ্যমে হস্তগত রুমাল ক্যাসিওর ঘরে ফেলে আসে এবং ওথেলোর কাছে প্রমান করে ডেসডিমোনা ক্যাসিওকে তা ভালবেসে দিয়েছে । ওথেলোর দেয়া ভালবাসার নিদর্শন ছিল এই রুমালটি।


ডেসডিমোনার ট্র্যাজিক মৃত্যু করুন আর বিষাদের।বেশিরভাগ সময় সে নিষ্ক্রিয় তবু তার সারল্য,স্বভাবের মাধুর্য্য,নোংরা দিকের অজ্ঞতা,ওথেলোর প্রতি চূড়ান্ত ভালবাসা তাকে অন্যতম আকর্ষনীয় করেছে।


ডেসডিমোনা সংসার জীবনে অনভিজ্ঞ বলেই ওথেলোর ভেতরের ক্রোধ পড়তে পারার আগেই তাকে মৃত্যু বরন করতে হয়।শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার বাঁচার আকুতি আমাদের স্পর্শ করে। তাকে নির্বাসিত করার জন্য অনুরোধ করে ওথেলোকে।কিন্তু ওথেলো তখন উন্মত্ত।


অথচ এ দুটি চরিত্রের প্রতি তাদের রোমান্টিসিজমের প্রতি আমাদের আবেগ কখনো কমেনা। মৃত্যুর পূর্বে ও সে তার হত্যাকারী হিসেব স্বামীকে অভিযুক্ত করতে পারেনা।এমিলিয়ার প্রশ্নের উত্তরে তাই সে বলে,
Nobody- I myself, Farewell
Commend me to my kind lord. O farewell ;

ডেসডিমোনাকে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলছে ওথেলো।


ওথেলোর কান্না কেবল শুরু-


এই হাত দিয়ে সে তার প্রিয়তমাকে হত্যা করেছে।


এমিলিয়ার কাছে যখন সে জানতে পারে ডেসডিমোনা ছিল নিষ্পাপ আর পবিত্র,এবং তার হত্যার বিচার করতে লোডোভিকো আসে তখন সে নিজেই ছুরির আঘাতে মৃত্যুকে বরন করে নেয়।নাটকের রক্তাক্ত সমাপ্তি ঘটে।


অবশ্য এ নাটকে সময় সমস্যা রয়েছে।অসঙ্গতিটাও সময় নিয়েই।হঠাৎ মনে হয় খুব অল্প সময়ের মধ্যে সব ঘটে যাচ্ছে,আবার কাহিনী মাঝে মাঝে দীর্ঘ সময় দাবী করে।যাই হোক সবমিলিয়ে ওথেলো চমৎকার একটি নাটক।শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনাকে আবেশিত করে রাখবে তাতে সন্দেহ নেই।




অ:ট: ওথেলো নিয়ে পোষ্ট দেয়ার জন্য ইমন জুবায়ের কে বহুবার অনুরোধ করেছি।উল্টা তিনি আমাকেই লিখতে বলেছিলেন।আমি আমার মত করে একটা রিভিউ লেখার চেষ্টা করলাম।একসময় আমি যেমন প্রয়োজন মনে করছিলাম,তেমন যদি কেউ ভাবে তবে তার যেন উপকার হয়। আমি আমার একশতম পোষ্টটি ইমন জুবায়ের কে উৎসর্গ করছি। একসময় উনি আমার পোষ্টে আসতেন,কমেন্ট করতেন।এখন আর আসেন না।হয়ত আমার একঘেয়েমি লেখায় তার একমাত্র কারন।(চিক্কুর দিয়া কান্দনের ইমো।)
সবার জন্য শুভকামনা...
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৮
৬২টি মন্তব্য ৬২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×