***বই পড়ার অপকারিতা...!
জানি উপরোক্ত শিরোনাম অধিকাংশ বই পড়ুয়া/ না পড়ুয়া সবাইকেই অবাক করতে পারে, করতে পারে ক্ষুব্ধ ও। কিন্তু কেনো এই শিরোনাম? আদৌ কি বই পড়ার অপকারিতা আছে? যদি থেকেও থাকে তা আসলে কেমন এবং এর ফলাফল কি সেই সম্পর্কেই এই পোস্টে আলোচনার চেষ্টা করবো।
বই কিভাবে অপকারী হয়ে উঠে আসুন সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করা যাক তবে-
বই খুব ই শক্তিশালী এক মাধ্যম একজন মানুষের মনন এবং মানসিকতার বিকাশের ক্ষেত্রে। তবে সকল বই একজন মানুষের জন্য ভালো নয়। মদের যেমন কিছু ভালো গুণ এবং অধিকাংশই খারাপ গুণ রয়েছে এবং সেজন্যই যেমন তা বর্জনীয়, তেমনি বই এর ক্ষেত্রেও অনেক বই ই আসলে বর্জন করা উত্তম। না আমি নিষিদ্ধ বই, ফালতু লেখকের বই, প্রেম ভালোবাসার বই কোন নির্দিষ্ট ক্যাটাগরীর কথা বলছিনা। একটু পরেই আপনারা মিলিয়ে নিতে পারবেন কোন ধরণের বই আসলে স্বল্পমেয়াদে আনন্দদায়ক মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং ধ্বংসাত্মক!
কিছু কিছু বই পড়ুয়া মানুষকে আমি দেখেছি জীবনে তারা খুব ই হতাশ, বাস্তবতাবিমূখ, এবং কল্পনার জগতে বসবাসকারী। তাদের এই অবস্থার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেছি, তাদের বই পড়ার লিস্টে এমন কিছু বই এর আধিক্য রয়েছে যা তাকে প্রেম ভালোবাসার এক কাল্পনিক জগতে অভ্যস্ত করে ফেলে। সে সেই বইগুলোর চরিত্রের ভালোবাসায়, ঘটনার চমকে এতোটাই মোহান্বিত হয়ে পড়ে যে, নিজেদের মনের অজান্তেই এক ধরনের ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড তৈরি করে নেয়। এই পর্যন্ত তেমন কোন সমস্যা নেই, তবে সমস্যা শুরু হয় তখন ই যখন তারা ঐ কল্পনার চরিত্রগুলোর সাথে বাস্তবের চরিত্রগুলোর মিলবন্ধন খুঁজতে শুরু করে এবং তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে বাস্তবতাবিমূখী এক ধরণের না পাওয়ার অতৃপ্তি তাদের মাঝে কাজ করতে শুরু করে, যা তাদেরকে কখনোই খুশি, বা সুখী হতে দেয়না। যেমন ধরুন, কোন এক উপন্যাস এর চরিত্রের প্রেমে আপনি এতোটাই মজে গেলেন যে তার সাথে আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে সবসময় মেলানোর চেষ্টায় রত থাকেন। ফলে হয় কি, সেই বাস্তবের মানুষটা আপনাকে যতই ভালো রাখার, খুশি রাখার চেষ্টা করুক না কেনো, তাতে আপনি কখনো খুশি হতে পারেন না। কেনোনা, যত কিছুই হোক, সে কেনো অমুক চরিত্রের মত নয়!
এমন অনেক উপন্যাসের চরিত্রের মোহে হাবুডুবু খাওয়া মানুষেরা বাস্তবতার সাথে চরম সংঘাত এ লিপ্ত হয়ে একাকি বোধ করা শুরু করেন এবং সেই চরিত্র, বইগুলোর মাঝে নিজের কল্পনার জগতে মন খুলে শ্বাস নেয়ার উপকরণ খুঁজতে থাকেন। এর ফলে বাস্তবে দেখা যায়, অনেক বই পড়ুয়া বাস্তব দুনিয়া থেকে অনেকটাই একঘরে রাখতে পছন্দ করেন এবং সবসময় তাদের মাঝে একাকিত্ব, ডিপ্রেশন, অসুখী এক অবস্থা বিরাজ করে। অনেকটা সাইকোলজিকাল সেপারেশন ঘটে আশেপাশের পরিবেশ, জগতের সাথে। এতো শত উপকরণ থাকা সত্বেও তারা সবসময় না পাওয়ার অতৃপ্তি কে বড় করে দেখেন। যা ধীরে ধীরে তাদের কে মানসিকভাবে উদ্দেশ্যহীন এক জীবনের দিকে নিয়ে যায়। জীবনের উদ্দেশ্য, সত্যতা জানা, বোঝা এবং মানার মত মানসিক অবস্থা আর থাকে না। নিয়ম কানুন, স্রষ্টা, সৃষ্টি, উদ্দেশ্য এইসব তাদের কাছে অর্থহীন মনে হতে হতে চিরস্থায়ী রূপ লাভ করে!
এবার আসি আরেকটি ভিন্ন প্রসঙ্গে-
আপনি যদি অংক না শিখে থাকেন তবে ২+২=৪ হয়, সেটিকে কোন না কোন ভাবে ২+২=৫ প্রমাণ করে তা ই শিখিয়ে আপনার মস্তিষ্কে বদ্ধমূল এক সত্য তে পরিণত করা সম্ভব! এই বিশেষ ব্যাপারটাই ধর্মবিদ্বেষী, নাস্তিক লেখকেরা তাদের বই এর মাধ্যমে করে থাকেন। আপনার যদি ধর্ম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকে, তবে নাস্তিকতামূখী এবং ধর্মবিদ্বেষী বই এর মাধ্যমে খুব সহজেই নাস্তিকমূখী করা সম্ভব। যখন আপনি ২+২=৫ শিখে বড় হবেন এর উত্তর যে ৪ হয়, সেই যুক্তি ভালো লাগবে না এটাই স্বাভাবিক। ধর্ম না জেনে এর আগেই এর ক্রিটিসিজম পড়ে ধর্মকে যাচাই করতে গেলে ধর্মের লজিক ভালো লাগবে না এটাই বাস্তবতা। আমি আমার বাস্তব জীবনে দেখেছি, আমার এক বন্ধুর (বিশ্ববিদ্যালয় সহপাঠী) নাস্তিক হবার পিছনে (৩ বছর) গবেষণার পর এটাই পেয়েছি যে, তার ধর্ম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন এর জায়গাটি না থাকায়, নাস্তিকদের বই এর মাধ্যমে তার মস্তিষ্কে ধর্মবিদ্বেষী এক বিশ্বাস ধৃঢ়মূল হয়ে গিয়েছে। এই ক্ষেত্রে যেটা হয়, এই মানুষেরা কোনভাবেই এটা ভাবতে পারে না যে ঐসব লেখকেরা কোন ভুল করতে পারেন। তাদের কাছে ঐ লেখকেরা সৃষ্টিকর্তার জায়গাটি দখল করে নেন। এমনকি অবাক করা ব্যাপারটি হচ্ছে, এই পর্যন্ত এমন ডায়ভার্ট হওয়া যতজন কে দেখেছি তাদের প্রায় সবাই ই নির্দিষ্ট কিছু (নাস্তিক, ধর্মবিদ্বেষী) লেখকের বই ছাড়া আর তেমন কোন অন্য লেখকদের বই পড়তে চায় না। অনেকটা অন্ধ ভক্তির পর্যায়ে চলে গিয়ে সেই লেখক নামের গুরুদেরকেই তাদের ধ্যান এবং জ্ঞান মনে করে। আর এভাবেই, বই পড়ার ক্ষেত্রে অসতর্কতা অনেক মানুষকেই ধর্মবিচ্যুতি ঘটিয়ে চরম বিদ্বেষী বানিয়ে দেয়। এবং এই গ্রুপেও এমন অনেকেই আছেন, যারা বিশেষত ধর্মের পূর্ব সঠিক জ্ঞানচর্চা, সঠিক অনুসন্ধান না থাকায়, এই ধরণের লেখকের বই পড়ে নাস্তিক বা ধর্মবিদ্বেষী হয়ে গিয়েছেন!!
উপরোক্ত এই ক্ষেত্রগুলো বাস্তব জীবনে লক্ষ করে বলেই, এই লেখাটির অবতারণা। তাই বই পড়া সবসময় উপকারী নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, উপযুক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড এর জ্ঞান না থাকায়, কিছু বই মানুষকে সাময়িকভাবে আনন্দ দিলেও দীর্ঘমেয়াদে জীবনটাকে অনেকটা ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। তাই বই পড়ার সময় উপরোক্ত বিষয়গুলো আমলে নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বলে আমার মনে হয়।
মনে রাখা উচিত- সব বই ই বই নয়, কিছু বই ই বই! বই মানেই জ্ঞান নয়, বই মানে জ্ঞানের অপব্যবহার ও হতে পারে। এটাই আপনাকে গড়ে দিতে পারে, আবার এটাই করতে পারে আপনাকে বিভ্রান্ত, ধ্বংস।
এবং সবশেষে, যেটা আমরা অধিকাংশ মানুষই ভুলে যাই- “দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য!” লেখকের ক্ষেত্রেও তাই, বই এর ক্ষেত্রেও তাই, অন্তত আমার দৃষ্টিতে….
(বিঃ দ্রঃ সম্পূর্ণই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং উপলব্ধি থেকে লেখা...দ্বিমত থাকতেই পারে। সেটা বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হলো, বই পড়ে আমি কি শিখলাম, আমার চিন্তাশক্তিকে কতখানি সত্যমূখী করতে পারলাম, মস্তিষ্কের সঠিক ব্যবহারে কাজে লাগাতে সমর্থ হলাম!)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:৩৪