আমাদের জন্ম আসলে কেনো হয়?
কেনোই বা আমরা মারা যাই?
নিজেদের অস্তিত্বের সাথে জড়িত এই মূল দুটি প্রশ্ন নিয়ে আমরা কয়জন ই বা ভাবি?
আমাদের জীবন কি উদ্দেশ্যহীন পশুর মত,
নাকি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণ এর পথে এক সাময়িক যাত্রা?
কেনো আমি বা আপনি বস্তির ঐ মায়ের ঘরে জন্মাইনি, এর নিয়ন্ত্রণ কি আমার আপনার হাতে আছে?
কেনো আমি বা আপনি বিকলাঙ্গ নই? যদি কোন একটি দেহাঙ্গ ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করতাম, তবে?
কেনো আমি বা আপনি এই সুন্দর দেহটা নিয়ে জন্মগ্রহণ করলাম? নিজের চাহিদা মেটাবার জন্য?
কেনো আমাদের প্রত্যেকটি দেহাংশ এতো নিখুতভাবে তৈরি? যদি মাথার অবস্থান পায়ে হতো, নাকের অবস্থান মুখে, অথবা মস্তিষ্কের ব্যবহার এর ক্ষমতা অন্যান্য প্রাণিদের চেয়ে ব্যতিক্রম না হতো? তবে?
কখনো কি একবারো এইসব ভেবে দেখেন না?
Linguistics ( ভাষাতত্ব) পড়তে গিয়ে কি দারুণ ভাবেই না আবিষ্কার করলাম, মানুষ কথা বলতে নিয়তিপ্রাপ্ত। জন্মগতভাবে তার মাঝে যে কোন ভাষা শেখার সহজাত বৈশিষ্ট্য দেয়া থাকে, যা বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারে না। তাইতো সেটা জার্মান হোক বা বাংলা, একটা শিশু কত সহজেই না মাতৃভাষা হিসেবে শিখে যায়! ( innateness theory).
আরো আবিষ্কার করলাম, আমাদের কথা বলার জন্য স্বরযন্ত্রীয় যে গঠন তা একটু এদিক ওদিক হলেই অনেক শব্দই আমরা উচ্চারণ করতে পারতাম না! কিভাবে এতো নিখুত গঠন এলো আমাদের মাঝে? কখনো কি ভেবে দেখা হয়না?
মানবদেহের গঠণ পড়তে গিয়ে কত জটিল, সূক্ষাতিসুক্ষ্ম বিষয় জেনেছি। শুধুমাত্র ডি এন এ এর গঠন ই যে কত জটিল তা ই যেনো ভাবিয়ে তোলে আকাশে তুলে আছাড় মারে!
কিভাবে এতো জটিলতার সমন্বয় মিলে আমরা এতো নিখুত গড়ণের হলাম তা কি কখনো অবাক করে না?
একটু ও কি ভেবে দেখি না, আমরা নিজেরা কি নিজেদের কে এতো নিখুতভাবে সৃষ্টি করেছি, নাকি আসলেই এর ডিজাইনার এমন কেউ, যিনি একমাত্র এই সব কিছুর প্রশংসার দাবিদার?
দিন শেষে তো ঠিক ই নিজের সুন্দর চেহারার ক্রেডিট আমরা ই নিয়ে নেই, অথচ এর প্রতিটি প্রোটন কণা যে একজন দয়া করে সৃষ্টি করে এভাবে আমাদের সাজিয়েছেন, তাকে কয়বার মনে করি? কয়বার স্মরণ করি? তাকে কি আদৌ গুরুত্ব দেই আমরা?
আমরা কি ভেবে দেখিনা, শুধুমাত্র যদি চোখের পাপড়িগুলো কে কেটে ফেলি, অথবা না থাকতো তবে আমাদের চোখের কি হতো? ধুলাবালি থেকে শুরু করে কত কিছু থেকেই না এই সামান্য পাপড়ি চোখগুলোকে সুরক্ষিত রাখে।
আমরা কি একবারো ভেবে দেখিনা, এতো তেলাপোকা, পোকামাকড় আমাদের ঘরে আশে পাশে ঘুরে বেড়ায়, অথচ আমরা যখন ঘুমাই তখন ভুল ক্রমেও কোন পোকামাকড় আমাদের নাকে, মুখে, কানে ঢুকে পড়ে না কেনো?
এই সামান্য অথচ অসাধারণ বিষয়গুলো আমরা কয়জন ভাবি বলুন?
সেই মহান কারিগর কে খুঁজতে কি আদৌ দূরে যাওয়া লাগে? নিজেদের শরীরের দিকে অন্তত একটা বার তাকাই, নিজেদের ক্ষমতার দিকে একটা বার তাকাই, কিভাবে এতো নিখুতভাবে আমাকে আপনাকে সৃষ্টি করা হলো?
কেনো তবে এই নিখুত সৃষ্টি? শুধু তো মানবদেহ নিয়েই কথা বললাম, একটা বার মহাশূণ্য নিয়ে জেনে দেখুন, কেনো এতো বিশালতার মাঝে এতো নিখুত নিয়ন্ত্রণ? একটা বার ও কি এইসব আপনাকে ভাবায় না? এই সকল সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তার প্রতি এতোটুকুও আনুগত্যবোধ আসে না? কি করে পারি এতোটা জাহেল হতে আমরা? কি করে সম্ভব?
এতো কিছুর পরেও আপনি কি করে ভাবতে পারেন আপনার জীবন এবং মৃত্যুর কোন মানে নেই? কি করে ভাবেন, জীবনের কোন উদ্দেশ্য নেই? কি করে সেই মহান সৃষ্টিকর্তা এবং সব কিছুর মালিক কে অবজ্ঞা করে আপনি অন্য আর সব কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারেন? কি করে সম্ভব এতো কৃতঘ্ন হওয়া? কি করে?
একটা বার ও কি ভেবে দেখেন না, অন্য আর সবাই যাই বলুক, আমি আমার সৃষ্টিকর্তাকে জানবো, খুঁজবো , জীবন এর উদ্দেশ্য কে জানবো, বুঝবো, উপলব্ধি করবো। যত যাই হোক, আপনার কি মনে হয় না, এতো নিখুত যার সৃষ্টি, তিনি ই সবচেয়ে ভালো জানেন, আপনার আসল সুখ কিসে, সবচেয়ে বেশি উপকার কিসে, কিভাবে প্রত্যেকটা মুহূর্ত জীবনের কাজে লাগানো উচিত? একটাবার ও কি মনে হয়না, নিজের মন মত, ইচ্ছে মত চলতে গিয়ে আপনি আসলে কিছুই পান নি, বুক ভরা শূণ্যতা ছাড়া? কি করে সম্ভব সেই সৃষ্টিকর্তাকে অপশনাল হিসেবে এড়িয়ে চলা? এতো পাষাণ কি করে হওয়া সম্ভব?
আপনি কি নিজের জন্ম মৃত্যু নির্ধারণ করতে পারেন, বা আপনার গায়ের রঙ? আপনি কি ধনী বা গরীব পরিবারে জন্ম নেয়া অথবা নিজের কোন ক্ষতি ঠেকাতে পারেন? আপনি শুধু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন না। তবুও কিসের তবে অহংকার, কিসের গৌরব, কিসের মোহ? আমি বা আপনি কেউ জানিনা, কাল আমার বা আপনার শেষ দিন কিনা! তবুও কি করে এতোটা বেখবর থাকতে পারি, শুধু আশেপাশের সমাজ, মানুষ এর দোহাই দিয়ে? কেনো বাকি সবার মত আপনি নিজেকেও ধ্বংসের মুখে, আগুনের মুখে ঠেলে দিবেন? কেনো একটা বার ও ভাববেন না, কেনো?
তবে কি অন্তরগুলো তে ভোগ এর মরিচা পড়ে গেছে?অন্ধ অনুকরণ এর আস্তরণ পড়ে গেছে? চিরতরে কি তবে অন্তরগুলো তালাবদ্ধ হয়ে গেছে? আর কি কখনোই ভাববেনা, চিন্তা করবেনা, বুঝতে চাইবেনা জীবন, মরণ, উদ্দেশ্য কি? কেনো? সেই সৃষ্টিকর্তাকে অবজ্ঞা করে, ভোগবাদে, নিজের মনের বাসনা চরিতার্থ করতে করতে পাগল হয়ে, মত্ত হয়ে, তার দেয়া নিখুত নিয়মগুলোকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, চিরতরে ব্যর্থ হয়েই কি তবে পরকালে পাড়ি জমাবে সেই অন্তরের মানুষগুলো?
তবে কি ফিরে আসা হবে না? একবার ও অন্তর দিয়ে ভাবা হবে না, খোজা হবে না, উপলব্ধি তে নিয়ে মানা হবে না? সমাজের আর সবার মতই তবে কি একইভাবে শেষ হবে সেই গল্পগুলো?
তবে কি সার্থকতা শব্দটি সেই জীবনগুলোকে কখনোই স্পর্শ করবেনা??
কষ্ট লাগে, এই জন্যই বড় কষ্ট লাগে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৩০