আমাদের অধিকাংশ মানুষ পারিবারিক সুত্রে ধর্মের নাম পেলেও, ধর্মের উপলব্ধি থেকে তারা অনেক অনেক দূরে। আমাদের অধিকাংশই ধর্ম কে অনেকটা দর্শন বা ধারণার মত মনে করে। মনে করে কিছু উৎসব বা রীতিনীতি ছাড়া ধর্মের তেমন কোন প্রয়োজনীয়তা জীবনে নেই। ধর্ম কে শুধু সামাজিকতা ভেবে যতটুকু না করলেই নয়, ততটুকু করে এড়িয়ে চলেন। মানুষ মনে করে ধর্ম অনেক বিতর্কিত একটি বিষয়, এ নিয়ে সময় নষ্ট করার সময় কই। অনেকে শুধু নিজের সুবিধা অনুযায়ী মিললে পক্ষে,না মিললে বিপক্ষে, বা নীরব থাকেন।
আসলে মানুষ হিসেবে আমাদের মস্তিষ্কের প্রকৃত ব্যবহার আমরা অধিকাংশ মানুষ ই করিনা। সত্য বলতে যে কিছু আছে তা আমরা আপেক্ষিকতার ফাঁদে ফেলে সেফ জোনে থাকতে ভালোবাসি! অথচ এই পুরো মহাবিশ্ব সৃষ্টির, প্রত্যেক্টি মানুষের সৃষ্টির পিছনে কি কারণ, স্রষ্টা বলতে আসলেই কি কেউ আছেন, নাকি শুধু প্রয়োজনে - হায় আল্লাহ এবার বাচাও, প্রয়োজন শেষে আলহামদুলিল্লাহ এইটুকুর মাঝেই স্রষ্টার ধারণা সীমাবদ্ধ, এই নিয়ে আমরা ভাবতে চাইনা! আমরা এও ভাবতে চাইনা, কেনো আমাদের সত্য জানা উচিত, কোরআন, হাদিস, নবীজীর জীবনী আসলে আমাদের কি বলে, কেনো বলে, সেগুলো অনুযায়ী জীবন যাপন এর আসলে প্রকৃত পাওনা কি শুধু ভোগ বিলাস বিরোধী, নাকি মনের প্রকৃত আত্মতৃপ্তি, শান্তি, এসব আমরা ভাবতে চাইনা! আমাদের মস্তিষ্ককে আমরা এই ভেবে কাজে লাগাতে চাইনা যে স্রষ্টা কেনো এভাবে চলতে বলেছেন, কেনো এভাবে না চললে আখিরাতে আগুনে পুড়তে হবে, কেনোই বা জান্নাতে যাবে মানুষ, কেনো এবং কিভাবে উপলব্ধি করা যায় সত্য কে, আমরা তা ভাবতেই চাই না।
আমরা ধর্ম কে যেমন ধরতে ভয় পাই, তেমনি পুরোপুরি ছাড়তেও চাই না। বিশ্বাস আছে বলে কাজে কর্মে সম্পূর্ণ বিপরীত দেখাই। জীবনের এই গোল, সেই গোল করে প্রকৃত অর্থ আর বোঝা হয়ে উঠে না। জীবন যেনো শুধু বিনোদনের উদ্দেশ্যে নিমিত্ত। এবার তা যেভাবেই হোকনা কেনো। আমাদের মস্তিষ্ক গুলোকে কে যেনো অজান্তেই প্রবৃত্তির দাস হিসেবে ভাড়া দিয়ে রেখেছি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। আমরা সবাই অন্যায় এর বিচার চাই, কিন্তু ভেবে দেখি না, পৃথিবীতে সব বিচার সঠিকভাবে সম্ভব নয়, এর যথাযথ বিচার এর জন্য আখিরাত প্রয়োজন। একজন রাস্তায় জন্মানো শিশু এবং বিল গেটস এর ছেলের ভাগ্য শুধু নিছক প্রকৃতির খেলা না, পাওয়া না পাওয়ার হিসেব পুরো করতে পরকাল আছে। আমাদের চাওয়ার শেষ নেই, কিন্তু আমরা কেউ ই এক জীবনে সব শখ পূরণ করতে পারবো না। তাই প্রকৃত সত্য অনুসন্ধানী এবং এর ফলোয়ারদের পরকালে সকল সুখ, শখ পূরণ এর সুযোগ দেয়া কেনোই বা প্রয়োজন, যারা ইহকালে কষ্ট, দুঃখ ছাড়া কিছুই পায়নি।
বিজ্ঞান এর অনুসারী বলে আমরা পার পেতে চাই, অথচ যে বিজ্ঞান কে প্রকৃত রূপে উপলব্ধি করেছে, সে স্রষ্টা সম্পর্কে আরো বেশি পরিষ্কার বিশ্বাসী হয়েছে, সে উপলব্ধি করেছে কেনো একমাত্র আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ই শান্তি সম্ভব। কারণ যার নিয়ন্ত্রণে এই কোটি কোটি মহাবিশ্ব রয়েছে, তার নিয়ম কানুনে ফাক ফোকর খুঁজতে যাওয়া জ্ঞানের নয়, চরম মূর্খতার লক্ষণ! ( শুধু ফাইন টিউনিং বুঝলেও হতবাক হবার কথা)
আমরা একটা কথা সবসময় ভুলে যাই, আমরা কেউ ই স্বাধীন নই, মানুষ মাত্রই দাস, যে স্রষ্টার দাস নয়, সে সৃষ্টির দাস। সেই সৃষ্টি হতে পারে তার প্রবৃত্তি, হতে পারে কোন মানুষ ( তাদের মতবাদ), অথবা মিথ্যের দাস। তবে এই দাসত্ব এক জন্মগত বৈশিষ্ট্য। একে কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই, সৃষ্টির দাস না হয়ে আমরা যদি সত্যি ই স্রষ্টার দাস হবার চেষ্টা করতাম। সত্য কে যদি সত্য ই আমরা নিজেদের অস্তিত্বের সার্থে হলেও খুঁজতাম। যদি এভাবেই স্রষ্টা বাদ দিয়ে সৃষ্টির দাসত্ব করে মরতে না হতো! এখনো মৃত্যু আসে নি, সুযোগ যে এখনো আছে
সত্য কে অন্যের চোখ দিয়ে না খুজে, অন্তত একটা বার নিজের তরে উপলব্ধির জন্য খুজি, অন্তত একটা বার??
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:০৩