সেই শৈশব থেকেই একটি খেলা আমাদের বড় প্রিয়- লুকোচুরি। খেলাচ্ছলেই এই লোকারণ্যের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখার যে এক আনন্দ, অভিপ্রায়, পালিয়ে বেড়ানোর যে এক আজন্ম ইচ্ছা তা আমাদের মাঝে এক চিরন্তন স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। যতই দৈহিক এবং মানসিক ভাবে পরিণত হতে থাকি, এই লুকোচুরি খেলার প্রবণতা আমাদের মাঝে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করতে থাকে। কখনো মনের সাথে, কখনো বা দায়িত্বের সাথে, কখনো সত্যের সাথে, কখনো বা ভালোবাসার সাথে, আবার কখনো বিবেকের সাথে, সর্বোপরি এই জীবনের সাথে যেনো এই লুকোচুরি খেলা চলতেই থাকে। আমরা কতশত অভিনব সব উপায়ে এই খেলা চালিয়ে যেতে যেনো মরিয়া হয়ে উঠি। মানব মনে এই বাসনা সর্বদাই লালিত হয়- “ইশ যদি চিরাচরিত এই জগৎ থেকে পালিয়ে বেড়াতে পারতাম”। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তা আর হয়ে উঠে না।
তাইতো মাঝে মাঝে মন বলে উঠে-
হেঁটে চলেছি এই পথ ধরে জানিনা কোথায় এর গন্তব্য
পালিয়ে বেড়ানোর শত ইচ্ছা, তবু পালন করতে হবে শত দায়িত্ব কর্তব্য...
(কবিতা- অনন্তকালের পথযাত্রা)
এভাবে যতই পৃথিবীটা কে, জীবনটাকে উপলব্ধি করতে শুরু করি তখন থেকে আমরা যেনো নিজের মনের সাথেই লুকোচুরি খেলতে থাকি নিজের মনের অজান্তেই, কখনো বা স্বপ্রণোদিত হয়ে। এই খেলার দায়ভার আমরা কখনোই নিজের উপর চাপাতে দিতে চাই না। শৈশব থেকে কৈশরে, যৌবনে পদার্পণ মাত্রই মানব যেনো ভালোবাসার লুকোচুরি খেলায় সিদ্ধহস্ত হতে শুরু করে। চলতে থাকে, চোখে-চোখে, মনে মনে স্বপ্ন নিয়ে লুকোচুরি খেলা-
মনে মনে কত কথা, সবই অযথা,
যদি না পারে সে কখনো জানতে
চোখে চোখে চাওয়া, অতৃপ্ত না পাওয়া
তবু কেনো অপেক্ষা পরিচিত সেই প্রান্তে?
(কবিতা- ভালোবাসার স্বপ্ন)
আমাদের লালিত এই স্বপ্নগুলো যখন একে একে রঙ হারিয়ে ফিকে হয়ে পড়ে, তখন থেকে যেনো জীবন এর প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে মন-মস্তিষ্ক একযোগে অনুসন্ধান শুরু করে। শুরু হয় সত্যের অনুসন্ধান, জীবনের উদ্দেশ্য অনুসন্ধান, এই সকল সৃষ্টির রহস্য অনুসন্ধান। অধিকাংশ মানুষ ই এই অনুসন্ধান এর যাত্রায় লুকোচুরির আশ্রয় নিয়ে প্রচলিত সমাজের অংশ হয়ে রয়ে যায় আমরণ। আর সাহস করে যারা এ পথে পা বাড়ায়, তাদের মাঝে কেউ না কেউ হয়তো কবিতার রাজ্যে আগমন করে, যার কাছে উন্মুক্ত হতে থাকে “সত্য নামের সত্যি দুয়ার”। মিথ্যের জাল থেকে সত্য কে আহরণ করতে গিয়ে তখন তার মন বলে উঠে-
মিথ্যে নামের সত্য ভিটায়, কাটাবে কত কাল?
কত ছিঁড়িবে, কত বুনিবে, নিত্য নতুন জাল...
-সত্য তবে কি?
অন্ধ অনুকরণ না করিয়া নিরপেক্ষ সন্ধান ই...
( কবিতা- মিথ্যে জ্ঞানের বড়াই)
এতোসব ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ অধ্যায় এর মাঝে মাঝে কিছু রম্য না হলে কি আর জীবন চলে? সেই ভাবনা থেকেই হয়তো কবি মন তার ভবিষ্যৎ সহধর্মিনীর সাথে কাল্পনিক কথোপকথনে ব্যস্ত হয়ে বাস্তবতা থেকে সাময়িক লুকোচুরির আশ্রয় গ্রহণ করে-
আমি অলস তাতে কি?
বাজার তো ঠিকঠাক করেছি
কচু করেছো, আনতে বলেছি শিম
এনেছো ঘোড়ার ডিম ...
আমি অলস তাতে কি?
তোমার খোঁপায় তো ফুল বেঁধেছি,
তোমার তরে লিখেছি কত কবিতার মালা...
( কবিতা- আমি এবং আমার বউ এর ভবিষ্যৎ কথোপকথন)
এভাবে বাস্তবতা আর কাল্পনিক জগতের মাঝে লুকোচুরির খেলা চলতেই থাকে, যেখানে দুটি ভিন্ন সত্বা একে অপরকে সময়ে, অসময়ে প্রতিস্থাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
কল্পজগতের আমি সেতো এই জগতের নই
এই জগতের আমিকে বলো খুঁজে পাবো কই?
দুই আমি তে কত দ্বিধা, কত রকম দ্বন্দ...
( কবিতা- দুই আমি)
ধীরে ধীরে মানব মনের পরিণতির সাথে সাথে, কবিমন সজাগ হয়ে উঠে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, পৃথিবীর সকল নীতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। তাইতো, বিদ্রূপাত্মক ভঙ্গিতে সেই নীতিবাচক দিকগুলির যথার্থতা তুলে ধরতে চায় সকলের তরে। সে বিশ্বাস করে, কল্পনার জগত নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকাই কবির কাজ নয়, কবিতার কাজ নয়। বরং বাস্তবতার সাথে কল্পনার সংমিশ্রণে, শব্দের বিন্যস্তকরণ খেলায় সাজিয়েই সকল অসঙ্গতি দূর করে, সত্যের পথে মানুষ কে আহ্বান করার এক গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করে সে স্বেচ্ছায়-
ওহে পথিক কেন যে তোমার দুই নৌকায় পা?
এপাড় থেকে যাত্রা করে ওপাড় পৌছবে না?
এপাড় ওপাড় সব পারাপার, রয়েছো তুমি মাঝপথে
স্ববিরোধী জীবন তোমার, পার পেতে চাও কোন রথে?
( কবিতা- দুই নাওয়ের যাত্রী)
দিন শেষে এতোসব লুকোচুরি খেলার মাঝে কবি মন নিজেও জানে, প্রকৃত কবি হওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে দুরূহ কাজগুলোর মাঝে একটি। আর তাইতো, সকলের চেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি দিয়ে, গভীরতা দিয়ে, সকল লুকোচুরির অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত মানুষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত যে কবি হওয়া যায়না তাই প্রকাশ পায় চরণে-
মানুষ ই আদৌ হতে পারিনি, কেমনে হবো কবি?
(কবিতা- কবি হবার সাধ)
তবে হ্যা, মাঝে মাঝে এই লুকোচুরি খেলার আড়ালে আনন্দ ও লুকিয়ে থাকে, যখন তা ফিরে আসার পূর্বাভাস দিয়ে যায় ছন্দে ছন্দে-
লুকোচুরির অন্তরালে
খুঁজে আমায় পাবে অবিচ্ছিন্ন মায়াজালে
( কবিতা- লুকোচুরির অন্তরালে)
লুকোচুরির সাথে পাঠকদের পরিচয় আসলে কেমন হবে, তা তারা এই বই এর প্রতিটি কবিতার মাঝেই খুঁজে পাবেন এবং বুঝেও নেবেন এর আড়ালের কাহিনি- সেই আশাই রইলো মন থেকে। এই ক্ষেত্রে কবি কোন লুকোচুরির আশ্রয় নিতে প্রস্তুত নন, বরং অবিচ্ছিন্ন এক মায়াজালে আবদ্ধ হতে ইচ্ছুক প্রতিটি পাঠকমনের হৃদয়ে।
(বই- লুকোচুরির অন্তরালে...
লেখক- মাহফুজ আলআমিন...
ধরণ- কবিতা...
প্রচ্ছদ- প্রান্ত ঘোষ দস্তিদার...
প্রকাশনী- প্রফেসর'স...
মেলায় পাওয়া যাবে- #প্রতিভা #প্রকাশ (৪৭১,৪৭২) নং স্টল থেকে
অর্ডার করতে যোগাযোগ করুন; মোবাইল- ০১৬৮২৫৫৩৪৮২
দাম- ১০০ টাকা )
পাওয়া যাচ্ছে ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বইমেলার প্রথম দিন থেকেই
কবিতার রাজ্যে আপনারা সকলেই নতুনভাবে আমন্ত্রিত
ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৬