somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ রাতে কোথায় ঘুমাবো?

০৬ ই আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আড্ডায় লোকজন কম। দুপুর থেকে ঘুমানি বৃষ্টি। ড্রিজলিং। মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা পলকা বাতাস। খালি চোখে বৃষ্টি প্রায় দেখা যায় না। কিন্তু একটু হাঁটলে মাথা ভিজে যায়। মার্কেট থেকে একবার বের হওয়ার চেষ্টা করেছি দুপুরের পর। এই দিন, কখন দুপুর আর কখন বিকাল ঘড়ি ছাড়া বোঝার উপায় নেই। বেরিয়ে যাবো কোথায়? ওষুধের দোকান থেকে আধভেজা হয়ে আবার মার্কেটেই ফিরেছি। তখন ওষুধের দোকানে চোরা চাহনি দিয়ে দেখে নিয়েছি, তখন বিকালের ক্ষয় ধরা দুপুর। এই মার্কেট, বইয়ের র‌্যাকে পরিচিত বইগুলোর প্রচ্ছদ, ইউনিভার্সিটি এলাকা, পিজির খোলা চত্বর, মেঘ, আকাশ, সূর্য এসবের মধ্যে আলাদা করে যাওয়ার মতো কোনো স্থান কি আমার পৃথিবীতে আছে। যেখানে আছি, সেখানে যাই কিভাবে? তন্ময়দের ওখানে একদিন যাবো বলেছিলাম। আমাদের তন্ময় বিয়ে করেছে। বউকে নিয়ে এসেছিল একদিন। এভাবেই আসে ওরা, বউকে পুরনো আড্ডা, বন্ধু-বান্ধব, জায়গা চিনিয়ে দিতে। মেয়েটা বেশ ভালো, দম না নিয়ে শুধু কথা বলে যায়। মার্কেটের সিঁড়িতে বসে অনেক আলাপ করলো। আমাদের পুরনো দিনের কথা জানে অনেক। খুঁটিনাটিগুলো বুঝে নিচ্ছিল জিজ্ঞাসা করে করে। তন্ময় গল্প করে থাকবে। কি যেন নাম মেয়েটার। এখন কিছুতে মনে পড়ছে না। পড়বে, হঠাৎ একবার মনে পড়ে যাবে। একটা এনজিওতে গবেষণার কাজ। তন্ময় নাকি আজকাল লেখার চেষ্টা করে। অনেক দিন চর্চা নেই, তাই নাকি বড় প্লট আসে না। কয়েকটা প্যারাবোল লিখেছে। হরিবোল, প্যারাবোল। তন্ময় তার কথার খেই ধরে বলেছিল, আসেন না একদিন, আপনাকে পড়াবো, মেলা দিন থেকে ভাবছি। ওদের বাড়ির পথে অনেকটা পথ হেঁটে গিয়ে আবার ফিরে এলাম। কাঁঠালবাগার ঢাল থেকে। এ রকম তো অনেকে আছে। আমাদের সময়ের। আমাদের? আমি বেঁচেছিলাম অন্যদের সময়ে। খটকা তবু থাকে, থেকে যায়। অনেক সময় গেলেও কি মানুষ একই রকম থাকে? হয়তো কথার কথা হিসাবে বলেছে। মিন করে নাই। বাড়ি গিয়ে ভুলে গেছে। আর থাকলেই বা কী। সেই চা-বিস্কুট, দুএকটা মিষ্টি কথাবার্তা, তারপর বিদায়। একদিন এসে খেয়ে যাবেন। কিন্তু একদিন খেয়ে গেলে তো হয় না, আজকের এখনকার এই দুপুরের খাবার দরকার। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আর পোষায় না। চাকরি, ক্যারিয়ার, ময়লা ফেলার ডাস্টবিন নিয়ে কথাবার্তা, একটু সময় গেলে গন্ধ হতে থাকে। কী করছেন আজকাল, চলে কীভাবে, শেষ পর্যন্ত বিয়েটা করলেনই না এইসব। মাথাটা একদম ভিজে গিয়েছিল। ভেজা মাথা শুকিয়েও গেছে আপনা হতেই। আড্ডায় আজ শুধু মঞ্জু এসেছিল, সন্ধ্যার অনেক পর, গুটানো ছাতা হাতে। এই পৃথিবীর এক আজব সংসারি মঞ্জু! দারুণ এক গুটানো ছাতা হাতে। তার ছাতাটির দিকে তাকিয়ে ভাবলাম অনেক সময়। চারটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কোনো দিন কেনা হলো না ছাতা, মানিব্যাগ, লাইটার ও রুমাল। এগুলো কারো হাতে দেখলে তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছা করে। আজকাল তো প্রায় আসেই না। এলেও সেই কাক সন্ধ্যায়, ঈর্ষা জাগানো গুটানো ছাতা হাতে। দুজনে হয়তো সিঁড়ির গোড়ায় বসে আলাপ হয়। আলাদা করে কথা বলার মতো কিছু কি অবশিষ্ট আছে, এতোদিন পর? তবু মঞ্জুর একটা কথায় চমকে উঠলাম। ওর মতো মারদাঙ্গা প্রতিষ্ঠান বিরোধী, যে নাকি ছাপানো অক্ষরকেও এক সময় প্রতিষ্ঠান মনে করতে শুরু করেছিল, সে-ই বললো, দেখ তোর বয়স কতো? থার্টি ফাইভ ওকে অ্যারাউন্ড থার্টি ফাইভ, আমার থার্টি এইট হবে সামনের মার্চে। তোর একটা বইও কিন্তু হলো না। আমার সেই চটিটাই লাস্ট। তোর আমার নামও আজকাল কেউ নেয় না। তুই লিখছিস কিনা জানি না, আমি টোটালি কিছুই লিখি না, ফর ফাইভ ইয়ারস। ভাব। আমাদের স্বপ্নের কথাগুলোর সঙ্গে একবার মিলিয়ে দেখ। কতো আশা-আকাঙ্ক্ষা, তখন মনে হতো উই আর সেন্ড টু উইন দি ওয়ার্ল্ড, বাট নাউ, আমার মনে হয়, নট সেন্ড উই আর সেন্টেন্সড টু দি ওয়ার্ল্ড। আমার একটা মেয়ে আছে, এইটে পড়ে। আমি প্রতিদিন ওকে বলি টেক দিস ওয়ার্ল্ড এজ ইট ইজ, ডোন্ট ট্রাই টু চেঞ্জ ইট। শুধু শুনে গেলাম। বলতে চাইলাম, মিডল ক্লাস ফ্যামিলি লাইফে গেলে এ কথাগুলোই বলে। ফাকিং ডগস। তোতলাতে তোতলাতে কথাটা মুখেই থেকে গেল। তাতেই ও আমাকে প্রায় থামিয়ে দিয়ে চিৎকার করে উঠেছিল, নো নো স্পিচ প্লিজ। আর কথা জমলো না। চায়ের দাম মিটিয়ে দ্রুত চলে গেল। আমি আমার থিসিসের দ্বিতীয় অংশটা সাজাতে থাকলাম, ফ্যামিলি লাইফে গেলে মানুষ অসহিষ্ণুও হয়ে ওঠে। এখন দশটা কুড়ি, সাড়ে সাতটাতেই প্রায় সব দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। মঞ্জু বা তন্ময় কারো কাছ থেকে কুড়ি-ত্রিশ টাকা নিয়ে রাখলে হতো, লোকাল বাসে সোনারগাঁও যাওয়া যেতো। এখনকার মতো খাওয়া-দাওয়ার চিন্তাটা অপ্রাসঙ্গিক। ক্ষুধাটা প্রায় মরে যেতে বসেছে। খাবারের নিশ্চিত সংস্থান ছাড়া ক্ষুধার কথা আসে না। শিশুকালে শুনেছি যে কতিপয় পতঙ্গ শিকারি ফুল আছে। বিনয় মজুমদার। কার স্মৃতিকথায় যেন পড়েছিলাম কফি হাউসে বিনয়ের সঙ্গে দেখা হলে তিনি বলেছিলেন, সিগারেট না খাইয়ে যাওয়ার সময় সিঙ্গাড়ার দামটা দিয়ে যেও। সোনারগাঁয়ে বন্দর পত্রিকার ছেলেগুলো আছে। ওদের কাছে পৌঁছতে পারলে দুদিনের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত। ঘর-সংসার বিহীন অ্যারাউন্ড থার্টিফাইভ একজন লোক ওদের কাছে খুবই কৌতূহলের বিষয়; দুই একজন পুরনো লিটল ম্যাগাজিনে দুই একটা কবিতাও হয়তো পড়ে থাকবে। সেখানে যেতেই হবে এমনও তো নয়। জীবনের এমন একটা প্রান্তে কি এসে দাঁড়িয়েছি যে নিরাপদ বিছানার স্বপ্ন এখন একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাড়ালো আর এর জন্য আমাকে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে? এমনও তো অনেক দিন ছিল রাস্তায় রাস্তায় সারাটা রাত চলে গেছে, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে, আড্ডায়, অবসরে, গুজবে, শিহরণে। আজ সে রকম দিন নয়। ঠা-া বাতাস, বৃষ্টি। জরুরি অবস্থা শহরে। প্রতিদিন একটা পাগলের সঙ্গে দেখা হয়, মোড় থেকে উত্তরে তের নাম্বার খুঁটির গোড়ায়। আমার চোখে চোখ রেখে একদিন অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল ১৩ নম্বর খুঁটির পাগল। কী যেন বুঝে ওঠার চেষ্টা করছিল। ভার্সিটিতে একবার নির্জন রাস্তায় এক পাগলি বুড়ি ডেকে বলেছিল, এই পাগলা আমাকে তোর সঙ্গে নিয়ে চল। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, পাগলা বললা কেন বুড়ি মা, চুল লম্বা দেইখা? বুড়ি বলেছিল, পাগল কি অতো সহজ বেটা, পাগলে পাগল চেনে। তোকে দেখেই আমি চিনেছি। তুই পাগল। আমাকে তোর সঙ্গে নিয়ে চল। এ পাগলটিও হয়তো তেমন একটা কিছু বুঝে উঠতে চাইছিল। সেদিন থেকে ওকে কায়মনে এড়ানোর চেষ্টা করছি। কার যেন তাকানোর সঙ্গে যেন খুব মিল আছে ওর। আহমদ ছফার মতো চোখ। ছফা ভাই থাকলেও হতো। হয়তো আমাকে কিছু বলতেও চেয়েছিল পাগলটা। বিকালে মোড় পর্যন্ত গিয়ে হঠাৎ তের নাম্বার খুঁটির গোড়ায় চোখ চলে গিয়েছিল। শরীরটা শিরশির করে উঠেছিল হঠাৎ। পাগলটা নেই। বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা বাতাস দেখে হয়তো জায়গা বদল করেছে। শহর কি প্রতিদিনের তুলনায় দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছে আজ। এগারোটাতেই নিশ্চুপ। নাকি ভয়ে মরদগুলো সন্ধ্যা সন্ধ্যাতেই খুপরিতে ঢুকে পড়েছে। এর চেয়ে চমৎকার সময় আর আসেনি। প্লিজ, বিট আস অল, ওই পাগলটাকে, আমাকে, আমাদের মতো সব লুম্পেন প্রলেতারিয়েতকে। সিম্পলি, ব্রুটালি। একটা আর্মি জিপ দ্রুত চলে গেল। কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার। কাঁঠালবাগানের দিকে যাওয়া যায়। বাজারের আগে মুশফিকের বাসা। একটা ঘর, একটা বাথরুম, একটা দরজা। ওই ঘরে সজল থাকতো, সজলের বউ থাকতো। এতোদিনেও মুশফিক বিয়ে করলো না। ওর মতো গোছানো ছেলে! সেল্ফ সাফিসিয়েন্ট। সিম্পল, স্মার্ট বাট লোনলি। কেন যে এতো গাজা খায়। কখনো ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলে না। নিজের মধ্যে নিজে গুমখুন হয়ে আছে। ওর ওখানে গেলে সাড়ে দশটার আগে যেতে হয়। নইলে মেইন গেট বন্ধ। বাসার সামনের দোকান থেকে মোবাইলে একটা কল দিলে নেমে এসে দরজা খুলে দেয়। তাই করবো কিনা ভেবেছি একবার। আজ কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা করছে না। নিশ্চিত এক রাতের ঘুমের আকাঙ্ক্ষাও কি মরে যাচ্ছে। কার প্রতি যেন একটা অভিমান, রাগ, ক্ষোভ প্রবলভাবে দানা বেঁধে উঠছে। অনেকদিন আগের ক্ষত যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে হঠাৎ। ওই পাগলাটাই কি। ওর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে প্রবলভাবে থমকে আছি। একটা পাগলের বক্র হাসি আর অচেনা অধীর দৃষ্টিপাত আমার সবকিছু ওলট-পালট করে দিচ্ছে। আমি কি অজান্তে ওর সঙ্গে নিজের তুলনা করে ফেলেছি। আমাকে কি এই ভীতি, এতো বয়সেও ঘুমানোর একটা স্থানের অনিশ্চয়তা, কিছুই না হওয়ার চিন্তা প্রবলভাবে আক্রমণ করেছে? নাকি এ হলো সেই পুরনো অসুখের নিয়মিত সংক্রমণ, অনেক দিন না লিখলে যা হয়, অচরিতার্থ প্রেম আর অনিশ্চিত কামের মতো কিছু অসংলগ্ন অবিন্যস্ত বিষয়। শুভব্রত। হ্যাঁ, এখন শুভব্রতর কথা মনে পড়তেই পারে। ওকে একদিন বলেছিলাম ধর এমনও তো হতে পারে, আমরা কিছুই হতে পারলাম না। পুরোটাই ব্যর্থ। মনে আছে, ব্যর্থ শব্দটা উচ্চারণ করতে গিয়ে কতোটা আত্মবিশ্বাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। সে বলেছিল, তোর কি মনে হয় জানি না, আমার কিন্তু ব্যর্থ, উইথড্রন, আগে ভালো লিখতো এখন লেখেই না, মাঝে মাঝে পুরনো বন্ধুদের খাতায় তার নাম দেখা যায় এমন লেখকের জীবনই ভালো লাগে। এ ধরনের কথা মানুষ বিশ্বাস করে বলে না। শুভব্রত এখন মালয়শিয়ায়, বছর পাঁচেক হলো, ওকে জিজ্ঞাসা করা দরকার ও কি সেদিন বিশ্বাস করে বলেছিল, নাকি এমনি এমনি। শুভব্রত হয়তো বুঝতে পেরেছিল, কারণ আমাদের মধ্যে ওই প্রথম সব ছেড়ে গ্রামে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে মালয়শিয়ায়। একবার শুভব্রতসহ চারুকলার সামনে গাঁজা টানছি, ওই অবস্থাতেই একটা পুলিশ ভ্যান এসে দাঁড়ালো। প্রথমে খেয়াল করিনি। শুভ বললো, শেষ টানটা দিয়ে চল গাড়িতে গিয়ে বসি; মামারা এসে পড়েছে। তাকিয়ে দেখি এক ভদ্রলোক পুলিশ ভ্যানের ভেতর থেকে ডাকছে।
রমনা থানার এসআই। কয়েকদিন আগে এলিফ্যান্ট রোডে একটা কাটা লাশ পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের ইচ্ছা ছিল সেই মামলায় ফাঁসিয়ে একটা বড় অঙ্কের মাল খসাবে। এসআইয়ের নামটা ভুলে গেছি। তার প্রথম ইন্টারোগেশনটা আমরা খুব উপভোগ করেছিলাম।
নাম?
আমরা নিরুত্তর।
নাম?
আমরা নিরুত্তর।
ওই চুদানির পুতেরা তগো নাম ক’।
মুখ সামলে কথা বলেন। আপনি জানেন আপনি কাদের অ্যারেস্ট করেছেন?
আপনারা কারা?
উই আর পোয়েটস।
বাসা কই?
এ পৃথিবীর সব বাসাই আমাদের বাসা। সব ঘরই আমাদের ঘর।
থাকস কই? খাস কই?
যখনই ঘুম অথবা ক্ষুধা লাগে সবচেয়ে কাছের বাসার দরজায় কড়া নাড়ি। টেবিলে ঢাকা ভাত খেয়ে শুয়ে পড়ি। আমরা এ পৃথিবীর সব মায়ের সন্তান। গো অ্যান্ড আস্ক ইয়োর মাদার।
সেদিনের মতো অল্প প্যাদানি দিয়ে লকআপ। লকআপে নেয়ার আগে জিজ্ঞাসা করেছিল কাউকে খবর দিতে হবে কিনা, ফোন বা চিঠি। ওরা নিশ্চিত হতে চেয়েছিল কোথাও থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা হবে কি না, অর্থাৎ টাকা-পয়সার সংস্থান আছে কিনা। শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের পর টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, সিম্পলি উই ওয়ান্ট সিএনএন কভারেজ। লকআপে তিনদিন যাওয়ার পর ওরা নিশ্চিত হয়েছিল, মাল খসানোর সম্ভাবনা নেই। আরেক দফা প্যাদানি দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল। যতোসব পাগলের দল। এসআইয়ের মন্তব্য শুনে হাসতে হাসতে আমরা বেরিয়ে পড়েছিলাম। আজ পুলিশ ধরলে সেই একই কথা বেরুবে না। নিশ্চিত। একটা বয়স থাকে। শুনেছি পুলিশ নাকি এখন আইডি কার্ড দেখতে চায়। কী ভাবে তারা? বাংলাদেশের সব মানুষের একেকটা আইডি দেখানোর মতো পরিচয় তৈরি হয়ে আছে। হু উইল গিভ মি দ্যাট আইডি। অবশ্য ওরা ধরলে একটা কাজ হবে, বেশ কয়েকদিনের একটা স্থায়ী ঠিকানা হবে। এমন কি ওই ঠিকানায় বন্ধু-বান্ধবদের চিঠি লিখতেও হয়তো বলা যাবে। কিন্তু আজ আমি কোথাও যাবো না। কোনো বন্ধু বা আত্মীয়ের বাসায় কড়া নেড়ে বলবো না, তোদের এখানে থাকতে এলাম। কারো কাছে গিয়ে মৃদু কণ্ঠে জানাবো না, আজ সারা দিন খাইনি কিছুই। পুলিশ ধরতে এলে বলবো, আমি পাগল। একটি পাগল যে শক্তিতে নগ্ন দেহে, নিঃসঙ্কোচে ভ্রূকুটি করে পৃথিবীকে, আমি তেমনই এক পাগল। পাগল। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। আর একটু পর আমি ছুটে যাবো সেই পাগলের কাছে। হয়তো আমি তার ভাষা বুঝতে পেরেছি। কার সঙ্গে যেন তার মিল। হয়তো আমি তাকে চিনেও ফেলতে পারি খানিকটা চেষ্টা করলে। আমাদের পরিচিতের দলে পুলিশ আছে, ডাক্তার আছে, মাগির দালাল, এনজিওর বড় কর্তা, বস্তাপচা গবেষক, এজমার রোগী, গমচোর, মাথা মোটা আমলা সবই আছে। একজন পাগল থাকবে না এ কি করে হয়। পিজির নিচের বারান্দাগুলোয়, লাইব্রেরির সিঁড়ির গোড়ায়, চারুকলার ভেতরে, আকাশে, বাতাসে, গভীর রাতে আমি খুঁজে বেড়াবো সেই পাগলকে। বলবো, ভাই আমাকে ফিরাস না, তোর সঙ্গে নে। তারপর, তের নাম্বার খুটির নিচে বসে দুজনে রাত-দিন একঠাঁয় কোনো কথা না বলে কাটিয়ে দেবো। আমাদের নগ্নতা দিয়ে তোমাদের ঘরের ঘেরাটোপের বাইরে বসে তোমাদের ঘুমের ভেতর দুঃস্বপ্নের মতো জেগে থাকবো, ক্রুর-বক্র হাসিতে ফেটে পড়বো, নগ্ন চোখ রাখবো তোমাদের চোখে।
৪২টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×