বছর শেষে বৃটেনের ইনডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা মুভি ডিরেক্টর, অভিনেতা ও মুভি ক্রিটিকদের কাছে জানতে চেয়েছিল তাদের চোখে ২০০৭ সালের সেরা মুভি কোনটি। সিনেমা জগতের ভেতরের মানুষেরা জানিয়েছেন তাদের মত।
অলিভার পার্কার, ডিরেক্টর
শেন মিডো পরিচালিত তিক্ত স্বাদের মুভি দিস ইজ ইংল্যান্ড আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তাড়িত করেছিল স্টিফান ব্রিজ পরিচালিত নট হেয়ার টু বি লাভড। কিন্তু যে মুভিটি আমাকে ভীষণভাবে ভাবিয়েছে ও আমাকে গ্রাস করেছে তা হলো দি লাইভস অফ আদারস। মুভিটির পরিচালক ফোরিয়ান হেনকেল ভন ডোনারসমার্ক। এতে আছে লৌহ যবনিকার অন্তরালের জীবনের এক বিস্ময়কর চিত্র। এমন এক গল্প যা প্রথমে মস্তিস্ক ও হৃদয়কে মুঠোয় ভরে নেয়, তারপর চাপ দিতে থাকে। পুরোটাই জমজমাট এক মুভি। সাহস ও বিশ্বাসঘাতকতা, শিল্প ও ব্যক্তির ক্ষমতার রূপান্তর এ মজ্জায়। কেন্দ্রীয় চরিত্রে উলরিখ মুহের অভিনয় শ্বাসরুদ্ধ করে দেয়। এটিই এ পরিচালকের প্রথম কাজ।
মাইকেল ক্যাটন জোনস, ডিরেক্টর
ডেনিশ মুভি আফটার দি ওয়েডিং। পরিচালক সুসান বিইয়ার। ইনডিয়ায় কর্মরত এক সাহায্য কর্মীকে নিয়ে তৈরি। সাহায্য কর্মীটি একটি এতিমখানায় কাজ করে। তাকে ডেনমার্কে এক বড়লোক ব্যবসায়ীর কাছে যেতে হবে ফান্ড তৈরির কাজে। ফান্ড বাড়াতে পারলে বন্ধ হওয়ার মুখে থাকা এ এতিমখানাটি রক্ষা করা যাবে। দাতা ব্যক্তিটি তার মেয়ের বিয়েতে তাকে আমন্ত্রণ জানায়। সেখানে উন্মোচিত হয় একের পর এক ঘটনা। দারুণ ও দক্ষ এক গল্প বলার পদ্ধতি এতে অনুসরণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় চরিত্রটিতে অভিনেতা দারুণ কাজ করেছেন। মনে হবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য, আসল ও সৎ একটা কাজ। দর্শক একটি কাহিনী অনুসরণ করতে গিয়ে দেখতে পাবেন সেটা অন্য এক কাহিনীতে পরিণত হয়েছে। দর্শকের কাছে হয়তো এ ব্যাপারটা অনভ্যস্ত লাগবে যে, তারা এমন একটি মুভি দেখছে যার শেষ কোথায় তারা জানে না। আজকালের মুভিগুলো সাধারণত সরল ও সোজাসাপ্টা হয়। কিন্তু এ মুভিটি একেবারে জীবনকেই অনুসরণ করেছে। এটা একটা উদাহরণ বটে। কোনো বিস্ফোরণ ও গাড়ি দুর্ঘটনা ছাড়াই একঝাক মানুষের জীবনকে তুলে আনা হয়েছে এতে এবং একে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের এক শিল্পকর্মে পরিণত করা হয়েছে।
আমান্ডা নেভিল
ডিরেক্টর, বৃটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট
সন অফ র্যাম্বো : এ হোম মুভি। গার্থ জেনিংসের দ্বিতীয় কাজ। এ পরিচালকেরই মুভি দি হিচহাইকারস গাইড টু দি গ্যালাক্সি (২০০৫)। লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভালে এটি দেখানো হয়েছিল। দারুণ উজ্জ্বল, চমৎকার ও আনন্দদায়ক এ মুভি। এ মুভিটি ভালো-মন্দের পুরো ব্যাপারটিই একটি শিশুর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উপস্থাপন করেছে। বৃটিশ সমাজের ভেতরকার নানা সংস্কৃতির সংঘর্ষ ও সম্পর্ক নিয়ে মুভিটি দারুণ কাজ করেছে। অনেক দিন হলো আমি এমন উজ্জ্বল মুভি দেখি না।
স্টিফেন ফ্রিয়ারস, ডিরেক্টর
রোমানিয়ার মুভি ফোর মান্থস, থ্রি উইকস, অ্যান্ড টু ডেইজ আমার পছন্দের মুভি। পরিচালক ক্রিশ্চিয়ান মুনগিউ। মুভির বিষয় গর্ভপাত। মুভির বর্ণনা আমি ভালো পারি না কিন্তু এটা অসাধারণ একটা কাজ। বুদ্ধিদীপ্ত, আসল, কৌতূহল উদ্দীপক ও ভয়ানক একটা কাজ। অ্যাং লির লাস্ট, কশন ও জুলিয়ান স্নাবেলের দি ডাইভিং বেল অ্যান্ড দি বাটারফাইও আমার পছন্দ হয়েছে।
ম্যাথিউ ভন, ডিরেক্টর
আমি বলতে চেয়েছিলাম, ট্রান্সফরমার ও হট ফাজ-এর মতো সুন্দর বিনোদনমূলক মুভির কথা। খুব কম মুভিই এ মান অর্জন করতে পারে। থ্রি হানড্রেডস দেখেও ভালো লেগেছে। কিন্তু রবার্ট জেমেকিসের থ্রি-ডি মুভি বেউলফই আমার ভোট পেল। এটা আমার মতে, সিনেমার নতুন যুগের একটা মাইলফলক। এটা দর্শককে নতুন ধরনের থিয়েটারের অভিজ্ঞতা দেবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ মুভির মাধ্যমে পাইরেসি বন্ধের উপায়ও বের করা গেল।
রবার্ট ডুভাল, অভিনেতা
সবাই জিজ্ঞাসা করে, অভিনেতারা কি পরিচালনা করতে পারে? অবশ্যই পারে। গত কয়েক বছরে আমার পছন্দের তিনটি মুভি হলো মেল গিবসন পরিচালিত অ্যাপোক্যালিপটো, কিন্ট ইস্টউড পরিচালিত লেটার্স ফ্রম আইয়ো জিমা এবং শন পেনের ইনটু দি ওয়াইল্ড। আমার মনে হয়, ইনটু দি ওয়াইল্ড অসাধারণ।
নিক জেমস, সম্পাদক সাইট অ্যান্ড সাউন্ড
ডি এইচ লরেন্সের উপন্যাস লেডি চ্যাটার্লি অবলম্বনে নির্মিত ফ্রেঞ্চ মুভি। পরিচালক পাসকেল ফেরান।
পল অ্যানড্রিউ উইলিয়ামস, ডিরেক্টর
আমি এমন একটা মুভির কথা বলতে চাই যা সত্যিই বুদ্ধিদীপ্ত এবং ২০০৭-এ আমার সবচেয়ে পছন্দের। নকড আপ। আমি যেহেতু লন্ডন ও ব্রিংটনে মুভি বানাই সেহেতু লোকে মনে করে, আমি বোধহয় শুধু কঙ্করময় ও প্রাকৃতিক মুভি দেখতেই পছন্দ করবো। কিন্তু আমি হাসির মুভি দেখতেও ভালোবাসি। মুভিটি দেখতে দেখতে আমি কেবলই হেসেছি।
সারাহ গ্যাভরন, ডিরেক্টর
আমি পছন্দ করেছি দুটি মুভি অ্যাটনমেন্ট ও দিস ইজ ইংল্যান্ড স্ট্যান্ড আউট।
কেন লোচ, ডিরেক্টর
আমি পছন্দ করেছি স্প্যানিশ নারী পরিচালক ইশিয়ার বোলাইনের মুভি মাতাহারিজ। তিনজন নারী গোয়েন্দাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে মুভিটি। ব্যক্তিগত সম্পর্ক, বিশ্বাসঘাতকতা, হারানো প্রেম, গোয়েন্দাবৃত্তি নিয়ে খুবই চিন্তামূলক একটি মুভি।
লিন্ডা প্যারিসার
ডিরেক্টর, কর্নার হাউস, ম্যানচেস্টার
আমার পছন্দের মুভি আই’ম নট দেয়ার। মুভিটি সিনেমার ওপর আমার আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। শুধু মুভিটি দেখেই আমি মুগ্ধ হইনি, এ মুভিটির ইচ্ছাশক্তি ও খেলোয়াড়িও আমাকে মুগ্ধ করেছে।
মাইন নিউয়েল, ডিরেক্টর
আমি সত্যিকার অর্থে পছন্দ করেছি ডেইজ অফ গ্লোরি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এলজেরিয়ার সৈন্যদের নিয়ে তৈরি এ মুভিটি। এলজেরিয়ানরা ফ্রান্সের পক্ষে লড়েছিল এ যুদ্ধে, বিনিময়ে অবজ্ঞার শিকার হয়েছিল।
গুরিন্দার চাধা, ডিরেক্টর
এ বছর আমার দেখা সেরা মুভি লাগে রাহো মুন্না ভাই। এটা ছিল মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস নেয়ার মতো একটা ব্যাপার, রাজনৈতিক ও আনন্দদায়ক এক মুভি। এটা আমাকে যতোটা হাসিয়েছে কাদিয়েছেও ততোটাই। দুর্নীতিগ্রস্ত ইনডিয়ান সমাজে গান্ধিয়ান মূল্যবোধের ফিরে আসা নিয়ে তৈরি এ মুভিটি।
এডগার রাইট, ডিরেক্টর
এমন একটা মুভি যা একটি মাস্টারপিস হওয়ার সব মানদ-কেই স্পর্শ করেছে। নো কান্ট্রি ফর দি ওল্ড মেন।
কেভিন ম্যাকডোনাল্ড, ডিরেক্টর
যে মুভিটি আমাকে সবচেয়ে তাড়িত করেছে সেটি হলো দি ডাইভিং বেল অ্যান্ড দি বাটারফাই। আর যার স্বভাবসুলভ প্রতিভার প্রতি আমি বিশেষভাবে আকৃষ্ট তিনি এর পরিচালক জুলিয়ান স্নাবেল। এটা খোলোয়াড়ি মনোবৃত্তির আবার সিরিয়াস, নিরীক্ষামূলক আবার মূল ধারার একটি মুভি।
স্টুয়ার্ট টিল
চেয়ারম্যান, ইউকে ফিল্ম কাউন্সিল
এ বছর আমার প্রিয় মুভি দি বোর্ন আলটিমেটাম। দারুণ বাণিজ্যিক এক গল্প বলার পদ্ধতির সঙ্গে খানিকটা বুদ্ধিমত্তা ও বুদ্ধি উদ্দীপক উপাদান মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এ মুভি।
গিলিস ম্যাককিনন, ডিরেক্টর
আমার পছন্দ শেন মিডোর দিস ইজ ইংল্যান্ড। এক সাদা তরুণের ফ্যাসিস্ট গ্রুপের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার কাহিনী।
অনুবাদ : মাহবুব মোর্শেদ