সামহয়ারের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে যে, ব্লগার্স মিটের আয়োজন করা হয়েছিল তাতে আমরা কেক কেটেছিলাম এবং সামহয়ার কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। দুই বছরে সামহয়ারের সাফল্য ঈর্ষাজনক। বাংলাদেশে ও বাংলাদেশের বাইরে বিপুল সংখ্যক বাংলা ভাষাভাষী ইন্টারনেট ইউজারের মনোযোগ পেয়েছে এ সাইটটি। অনেকের মাথায় হয়তো সামহয়ারের কাছাকাছি আইডিয়া ছিল, কিন্তু ব্লগ সম্পর্কে অনভিজ্ঞতার কারণে তারা সামহয়ারের মতো সাফল্য পায়নি। ফলে, নানা ফোরাম, গ্রুপ, টকসভার চেয়ে এগিয়ে থেকেছে সামহয়ার। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই ব্লগ সাইটটি আরও আন্ডা-বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে, এখানকার প্রচারণা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একাধিক ব্লগ সাইটের জন্ম হয়েছে। এক্ষেত্রে কখনো মতাদর্শের ধূয়া কখনো স্বকীয়তার ধূয়া কাজ করেছে। কিন্তু আদতে কেউই সামহয়ারের মতো সাফল্য পায়নি। ফলে, ভেতরে বাইরে সমহয়ারের শত্রু আছে। না থাকাটাই অস্বাভাবিক। এমন শত্রুও থাকা সম্ভব যারা চায় এই সাইটটির মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগকে স্তব্ধ করে দিতে। কারণ, বাংলাদেশের মতো দেশে নাগরিকদের জন্য এরকম স্বাধীন প্লাটফর্ম থাকাটাই বিস্ময়কর। পরাধীন মতপ্রকাশের পয়গম্বররা এখানে তাই ভীষণ রকমের তৎপর থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। আমার মতে, ব্লগারদের গণতান্ত্রিক মানসিকতাই এ সাইটটির বিরুদ্ধে সবরকমের অপতৎপরতার মুখে চুন মেখে দিতে পারে।
এ কথা সত্য, সামহয়ারের মাদার অর্গানাইজেশনটি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেটি কোনো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নয়। কিন্তু গত দুই বছরের অভিজ্ঞতায় আমি এ ব্লগ সাইটটি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি খেয়াল করিনি। অথচ অনায়াসেই সেটি করা যেত। করলে তাকে গর্হিত কোনো অপরাধ বলা কোনো মুর্খের পক্ষেই সম্ভব হতো না। কিন্তু, সাইটটি কোনো বিজ্ঞাপন ছাড়াই রান করেছে। প্রচুর ইউজার ও ভিজিটর পেয়েছে। বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দেশে চলমান বিতর্ক, সুস্থতা, অসুস্থতার আয়না হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সামহয়ার আজ ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশের একটি প্রতিবিম্ব। আমি মনে করি, সমাজকে তার নিজের চেহারায় উপস্থাপন করতে পারাটাও এক ধরনের সফলতা।
এই সাফল্যের জন্য সামহয়ার ও এর কর্তাব্যক্তিদের আবারও অভিন্দন।
কিন্তু এত কিছুর পরও কিছু অসাফল্য রয়ে গেছে।
১. প্রথমত এই সাইটটিতে নারীদের অংশগ্রহণ ও তাদের নিজস্বর মত প্রকাশের পরিস্থিতি আমরা সৃষ্টি করতে পারিনি। ভার্চুয়াল বখাটেদের উৎপাত এখানে নারীদের স্বাধীন মত ও অভিব্যক্তি প্রকাশে বাধা হয়েছে।
২. ভার্চুয়াল বখাটেদের পাশাপাশি কোনো দল, মতাদর্শ ও গ্রুপের ভার্চুয়াল গুণ্ডারা এখানে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নানারকম গুণ্ডামী করে যাচ্ছেন। ফ্লাডিং, টপ রেটিং, মাল্টিপল নিক ইউজ করার মধ্য দিয়ে এরা সক্রিয় থেকেছেন। ব্লগের বাইরের ফোরাম থেকে তারা সমমনাদের সংগঠিত করে সামহয়ারের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছেন। এখানকার পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছেন। বিভিন্ন মতের ব্লগারদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। পাবলিক ফোরামে তাদের নাজেহাল করার চেষ্টা করেছেন।
এই গুণ্ডাদের সংখ্যা কত? পাড়ার গুণ্ডাদের মতোই এদের সংখ্যা নগন্য। আমি দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ থেকে অনুমান করি এদের সংখ্যা তিন থেকে পাঁচের বেশি নয়। কিন্তু এদের উদ্যম, সময় ও মনোযোগ প্রায় প্রবাদের পর্যায়ে পৌঁছেছে। নানা নামে নানা চেহারায় তাদের আবির্ভাব। কিন্তু এদের কাজের ক্ষেত্রে ভীষণ মিল।
১. প্রথম একটা বা দুইটা পোস্টে অতি সুবোধ আলোচনা।
২. অনুমতি পাওয়ার পর নিজেকে ব্লগের অমুক বলে ঘোষণা দিয়ে পূর্ণ উদ্যমে ব্লগারদের উত্যক্ত করতে থাকা।
৩. নিজের চিন্তা-ভাবনা পোস্ট করার বদলে সারাদিন কারো না কারো পেছনে লেগে থাকা।
৪. অযাচিতভাবে যে কাউকে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে কোনো তকমা এঁটে দেয়া। অথবা অমুক ব্লগার অমুক নিকে ব্লগাচ্ছেন, অমুক হলেন অমুক বলে একটা বিশৃংখলা তৈরি করা।
৫. কোনো মতে বিরোধিতা বা প্রচারণার চাইতে কোনো ব্যক্তির অবস্থানকে ক্ষুণ্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত করার দিকেই এদের বিশেষ মনোযোগ।
এরকম কাজ যারা করছেন তাদের শুরুতেই সনাক্ত করা খুব কঠিন কাজ বলে মনে হয় না। একটু মনোযোগ দিলেই সম্ভব। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো :
১. এরা পাবলিক ফোরামের জন্য ইরিটেটিং ভূমিকা পালন করছেন।
২.অন্যের প্রাইভেসিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন।
৩. নিজেদের মত প্রকাশের চাইতে অপরকে বিরক্ত করার দিকেই ঝোক।
৪. কোনো কোনো সময় এদের গুণ্ডামি সহ-ব্লগারদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে।
আমি মনে করি, ইরিটেটিং গুণ্ডাদের ব্যাপারে একটা কার্যকর নীতি থাকা উচিত। কোনো মতাদর্শের বিরুদ্ধে নয়। অন্য ব্লগারের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, প্রাইভেসি ও সিকিউরিটিকে ক্ষতিগ্রস্তকারী ব্লগারদের বিরুদ্ধে সঠিক নীতি প্রণয়ন করা উচিত। এক বা একাধিক ব্লগারের বিরুদ্ধে যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে যে কোনো ইনটেনশন থেকে প্রচার বা অপপ্রচার চালান তাদের অতিসত্ত্বর ব্যান করা উচিত। কারণ, সামহয়ারের অবস্থান যাই হোক না কেন, সেটি যাদের দ্বারাই পরিচালিত হোক না কেন। এবং সেটি যারাই ব্যবহার করুক না কেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা, প্রাইভেসি ও সিকিউরিটি প্রশ্নে আপোষ করার কোনো জায়গা নেই। কোনো বিশেষ ব্লগারকে শায়েস্তা করার মধ্য দিয়ে এটি আসবে না। সাধারণ নীতি হিসেবে একে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।