somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কে কেন কিভাবে বেনজির ভুট্টোকে খুন করলো?

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝে মাঝে সত্যি খুব ভুল হয়ে যায়। শাদাকে কালোর কালোকে শাদার বিপরীত পক্ষ মনে হয়। কিন্তু প্রকৃতপ্রস্তাবে, খুব ভাল ভেবে দেখলে, শাদা আসলে কালোরই পরিপূরক। কালো আছে বলেই শাদা উজ্জ্বল, আর শাদা আছে বলেই কালো আরও গভীর। এই দুয়ে মিলে, পরস্পরের বিরোধিতা করে অথবা বিরোধিতা করার ভান করে দুনিয়া শাসন করে। কিন্তু সবার আগে যা করে তা হলো, অন্যসব রঙকে তারা পদানত করে রাখে। সেই আদার কালার্স কারা কোথায় সে প্রশ্ন এতটাই দাবিয়ে রাখা যে, মাঝে মাঝে পৃথিবীতে অন্য কোনো রঙ নেই বলেই ভুল হয়ে যায়।
বেনজির ভুট্টো আহামরি কোনো নেতা ছিলেন না। এমন কি তার বাবাও ছিলেন না বড় কোনো নেতা। জুলফিকার আলী ভুট্টো জনগণের রাজনীতি শুরু করেছিলেন, সমাজতন্ত্রের ধূয়াও তুলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাকিস্তানের সামন্ততন্ত্র, সামরিকতন্ত্র, ইউএসতন্ত্র ও মোল্লাতন্ত্রের সঙ্গে আপোষ করেছিলেন। ৭১-এ তার ভুমিকা বাংলাদেশের মানুষকে মনে করিয়ে দেয়ার দরকার নেই। পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য জুলফিকার আলী ভুট্টোর দায় অনেক বেশী। বেনজির নেতার মেয়ে, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য, অক্সফোর্ডের গ্রাজুয়েট আরও কত কী? কিন্তু তার অবদানটা যে কী সেটা বলা সত্যি খুব কঠিন। সত্য কথা, বেনজির ভুট্টোর হাত ধরে প্রথম দফা গণতন্ত্র এসেছিল। দ্বিতীয় দফা প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছিল। তার স্বামী আসিফ জারদারি মি. টেন পার্সেন্ট হিসেবে নাম কামিয়েছিলেন। পারভেজ মোশাররফের উত্থানের সময় বেনজির ও নওয়াজ সামান্য প্রতিবাদটুকু করার সাহসও দেখাননি। চোরের মতো পালিয়ে গিয়ে তারা আট নয় বছরের ফেরারি জীবনযাপন করেছেন। এই সময়ে তারা হয় যুক্তরাষ্ট্র নয়তো সৌদি আরবের মন রক্ষার চেষ্টা করেছেন। নিজের নিজের মতো করে ইউরোপ আমেরিকায় পীর ধরে বসে থেকেছেন। মোশাররফের দুঃসময়ের জন্য অপেক্ষা করেছেন।
পাকিস্তানের মানুষ যখন মোশাররফের নিকাশ করার জন্য উদ্যত তখন বেনজির ছুটে এসেছেন তাকে বাঁচানোর জন্য। যেহেতু বেনজির ফিরেছেন সেহেতু নওয়াজও ফিরে এসেছেন। বেনজির গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আসেননি। পারভেজ মোশাররফ যখন বিপদে তখন মার্কিন এইড হিসেবে উর্দিহীন মোশাররফের রক্ষাকবচ হিসেবে এসেছেন তিনি। ফলে, এইবার মোশাররফ, বেনজির ও যুক্তরাষ্ট্র একই পক্ষ। (এবার দেখা যাক, নওয়াজ শরীফকে বেনজিরের জায়গায় নিয়োগ দেয়া হয় কি না।)
বেনজির নিহত হওয়ার পরপরই খুব সম্ভবত গর্ডন ব্রাউন প্রথমবারের মতো জঙ্গীদের কথা বলেন হত্যাকারী হিসেবে। তার আগে পরে বুশ ও তার সাগরেদরা ধূয়া তুলতে থাকেন। পাকিস্তান সরকার, তাদের গোয়েন্দা বাহিনীও একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। কিন্তু, পাকিস্তানের মানুষ বিশ্বাস করে না বেনজিরকে আল কায়দা হত্যা করেছে। তারা বিশ্বাস করে বেনজিরকে হত্যার জন্য মোশাররফই দায়ী। বেনজির নিজেও মোশাররফকে দায়ী করে গেছেন। তার ফেরার দিনে বোমা বিস্ফোরণের জন্য তিনি আইএসআইকে দায়ী করেছিলেন। তার মধ্যে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতারিত হওয়ার ভয় ছিল। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও পারভেজ মোশাররফের সঙ্গে ঐক্য করে ভুল করেছেন এই বোধও তার ছিল। ফলে, মাঝে তিনি কন্সপেরিসির রাজনীতির চেয়ে মাঠের রাজনীতির দিকেও ঝুঁকেছিলেন বেশি। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষ দূত পাঠিয়ে তাকে নতুন করে সাইজ করতে হয়েছে।
পাকিস্তানের মানুষ বিশ্বাস করেন, বেনজিরকে মোশাররফের লোকেরাই খুন করেছে। আর এই খুনের ফায়দা ওঠানো হবে জানুয়ারির নির্বাচন বাতিলের মাধ্যমে। নির্বাচন হলেও তার কোনো ভূমিকাই আর থাকবে না। ফলে, বিশ্বের সবাই আল কায়দা আল কাযদা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও পাকিস্তানের মানুষ মোশাররফের দিকেই আঙ্গুল তুলেছে।
বেনজিরের মৃত্যুর ঘটনাটা বিশ্বাস করা কঠিন। পারভেজ মোশাররফের রক্ষকবচ বেনজিরকে রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার। বলা হচ্ছে, কালাসনিকভসহ একটা বালক, একটা স্নাইপার আর এক বা একাধিক বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল তাকে হত্যা করতে। সরকার বলছে, গাড়ির আঘাতও লেগেছে। তাকে হত্যা করার জন্য কয়েকবার উদ্যোগ এসেছে। তারপরও এত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনে কিভাবে এত বড় আয়োজন করে তাকে হত্যা করা গেল?
হতে পারে, পারভেজ মোশাররফ তাকে খুন করেননি। কিন্তু সেক্ষেত্রে তার নিরাপত্তাহীনতার দায়ভার তার ওপরই পড়ে। অথবা পারভেজ মোশাররফ সরকারের মধ্যকার কোনো উপদলের কাজ এটা হতে পারে। সেক্ষেত্রেও খুনের দায় মোশাররফেরই।
যখন সবাই মোশাররফকে দোষারোপ করতে ব্যস্ত তখনই মোশাররফের সবচেয়ে বড় বন্ধু হিসেবে এগিয়ে এসেছে একটি শক্তি। তারা নিজেদের কাঁধে দায় নিয়ে, মোশাররফকে এ যাত্রা বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এই শক্তি হলো আল কায়দা। আল কায়দার শত্রু যদি মোশাররফ হয় তাহলে তারা বেনজিরকে হত্যা করুক বা না করুক, মোশাররফকে ক্ষতিগ্রস্ত করাই তাদের বিবেচ্য হওয়া উচিত।
আর যদি আল কায়দা খুন করে দায় স্বীকার না করে থাকে তবে দায় পড়ে আল কায়দার বিবৃতি আল কায়দার পক্ষ থেকে কারা দেয় তাদের ওপর।
ফলে, পারভেজ মোশাররফ ও আল কায়দা এখন এক পক্ষই। এই পক্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্রও। এবং এই পক্ষে যোগ দিতে গিয়েছিলেন বেনজির ভুট্টোও। এবং আল কায়দার হাতে যদি তিনি নিহত হন, তাহলে নিজের পক্ষের লোকেরাই তাকে খুন করেছে। তিনি যাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে পারভেজ মোশাররফকে সমর্থন দিতে এসেছিলেন সেই জনগণ তাকে খুন করেনি। বরং তারা অবুঝের মতো তাকে ভালোবাসা দিতে গেছে। আবার তাকে যদি পারভেজ মোশাররফ খুন করে থাকে তবে নিজের আঁতাতের লোকেরাই তাকে খুন করেছে।
বেনজির জননেতা ছিলেন বা জননেতার আভাস তার মধ্যে ছিল। ফলে, গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে তার ভূমিকা থাকুক এই প্রত্যাশাও ছিল। সে ভূমিকা তিনি কতটা পালন করতেন সেটা তার অতীতের ভূমিকা থেকেই বোঝা যায়। কিন্তু তার ফেরার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের আদার কালার্স মুভমেন্টকে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। কিন্তু, তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আবার সেই আদার কালার মুভমেন্টকেই শক্তিশালী করে গেলেন। বেনজির যাই করুক না কেন, মানুষ এখন বেনজিরের নামেই রাস্তায় নেমেছে আল কায়দার বিরুদ্ধে এবং পারভেজ মোশাররফের বিরুদ্ধেও।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও আল কায়দা এই দু্ই সশস্ত্র পক্ষের উদ্যত বন্দুকের মুখে। হয়, এখানে আবার সেনাতন্ত্রই আসবে নয়তো আফগানিস্তানের মতো ভাগ্য বরণ করতে হবে একে আল কায়দার হাতে গিয়ে। যদি পাকিস্তান আল কায়দার হাতে যায় তাহলে, আফগানিস্তানের পর পাকিস্তানেও আমেরিকান সৈন্য নামবে।
এর বিকল্প হলো জনগণের বিজয়। পাকিস্তানের রাজনীতিতে জনগণ কখনো বিজয় লাভ করেনি। এবার অন্তত একবারের জন্য হলেও করুক।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ দুপুর ২:৩৫
২৮টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×