ছোটবেলার ঈদের আনন্দগুলোর স্মৃতিচারণ করে করেই এখন ঈদগুলো কাটে। গত দুই দশকে উৎসব বেড়েছে অনেক, কিন্তু কোথাও আনন্দের রেশটুকু পাই না।
২টাকা, ৫টাকা সালামী পেতাম। কখনো হঠাৎ কেউ ১০টাকা দিয়ে ফেললে আনন্দে ঘুম হতো না। ঘুমের মাঝেও বালিশের নিচে হাত দিয়ে দেখতাম দশ টাকার নোটটা ঠিক আছে কিনা।
আমার ছোটবেলার সেই রকি পিস্তল, দুই টাকার বেলুন-বাঁশি, টেমটেমি ঘোড়ার গাড়ি, পাঁচ টাকার চশমা, লাদেন বোমা— ছোটবেলার সাথেই হারিয়ে গ্যাছে। ওদের সাথে হারিয়ে গ্যাছে সেই আনন্দগুলোও।
চাঁদরাতের সন্ধ্যায় রেডিও আর বিটিভি-তে বাজতো "ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ..."। গানটার মাঝে কী-যে এক অদ্ভুত অনুভূতি ছিলো। সেই একই গান বার বার শোনার মাঝে কী-যে এক আনন্দ!
আজ রেডিও নেই, বিটিভি কোনরকমে টিকে আছে। ঈদের এই গানটাকেও নানারকম রিমেক করে বিকৃত করে ফেলেছে। আধুনিকতার নামে আমাদের সব আনন্দই কেমন বিকৃত হয়ে যাচ্ছে!
৯০ দশকে ঈদ মানেই ছিলো "ইত্যাদি"। বহু প্রতীক্ষার পর আমরা হানিফ সংকেতের সেই চিরপরিচিত সংলাপ শুনতাম "এই মিলনায়তন এবং মিলনায়তনের বাইরে যে যেখানে বসে আজকের এই অনুষ্ঠানটি দেখছেন, সবাইকে সাদর সম্ভাশন"।
ছিল "ছায়াছন্দ", "আনন্দ মেলা"। অনেক লুকিয়ে চুরিয়ে দেখতাম ঈদের বিশেষ "ব্যান্ড শ্যো"।
সেই ১৪", ১৭" ছোট ছোট সাদা-কালো টিভিগুলোর পর্দাজুড়ে আনন্দ ছিলো।
আজকে টিভি বড় হয়েছে, রঙিন হয়েছে। আমাদের টিভিগুলো স্মার্ট হয়ে গেছে। কিন্তু কোথাও সেই আনন্দ নেই।
গাছ থেকে মেহেদীর পাতা পাড়া, মেহেদী বাটা, ঝাড়ুর মাথা দিয়ে হাতে নকশা করে করে সেই বাটা মেহেদী লাগানোর উৎসব হারিয়ে গেছে সেই কবেই।
এখন হাতজুড়ে কেবলই কৃত্তিম রাসায়নিক মেহেদীর ক্যাটক্যাটে রং।
নামাজ শেষে আর কোলাকোলি হয় না ছোটবেলার বন্ধুদের সাথে। দলবেঁধে কারো বাড়িতে ঢুকে পায়েশের পাতিল ধরে হানা দেয়াকে এখনকার জেনারেশন হয়তো অসভ্যতা বলবে। কিন্তু ওতেই আমাদের নিখাঁদ আনন্দ ছিলো।
আজকে এতো আঁতশবাজি, আলোকসজ্জা, হাইব্রিড সাউন্ডসিস্টেমের ভীঁড়ে আমাদের আনন্দ হারিয়ে গ্যাছে।
চারিদিকে এতো উৎসব, আলোর ঝলকানি— আনন্দ নেই কোথাও।
পুনশ্চঃ বাংলা একাডেমির সংস্কারের কল্যাণে "ঈদ"টাও হারিয়ে গ্যাছে। এখন নাকি "ইদ" লিখতে হয়। কিন্তু আমি সারা জীবন এই ভুল "ঈদ"টাই লিখবো।