প্রথমবার কলকাতায় গিয়েছি। পার্কস্ট্রীট এলাকায় একটু সস্তা ধরনের হোটেল খুঁজতে খুঁজতে হাঁটছিলাম। রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের ট্রামলাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে 'Peace Haven' এর সামনে এসে দাঁড়ালাম। নামটা দেখে ভালো লাগলো। বাংলা করলে অর্থ হয় 'শান্তির আশ্রয়'!
মেইন গেট পার হয়ে সিকিউরিটি গার্ডকে বললাম— রুম ভাড়া হবে কিনা।
গার্ড রসিকতা করে উত্তর দিলো— এখানে জীবিত মানুষদের ভাড়া দেয়া হয় না। এখানে মৃত মানুষেরা থাকে।
প্রথমে রাগ হলেও পরে জানলাম এটা একটা মিশনারী মর্গ। লাশ ফ্রিজিং এবং সমাহিত করার কাজ করে এরা। ভেতরের হিমঘরে বাক্সবন্দী সারি সারি মৃতদেহ শুয়ে আছে।
Peace Haven এর পাশেই একটা হোটেলে উঠলাম। উল্টোদিকেই কোলিন লেন, জিয়া ভাইর দোকান— মামা ট্যুরস এ্যান্ড ট্র্যাভেলস। হোটেল থেকে বের হলেই পিস হেভেনের সামনে বিশাল কাচের বাক্সের একটা গাড়ি চোখে পড়তো। কাচের ঘরের ভেতরে কফিন। গাড়ির গায়ে লেখা 'হিম গাড়ি'!
তখন থেকেই একটা কথা মাথায় গেঁথে গেছে, মৃত্যু খুব হিম শীতল একটা ব্যাপার।
মৃত্যু কি সত্যিই শীতল? কতোটা শীতল? এসব আমরা জীবিত মানুষরা জানি না। মৃতেরা হয়তো জানে। কিন্তু তারা বলবে না।
Gods of Egypt এ মৃত্যু দেবতার একটা সংলাপ ছিলো এমন, The dead doesn't talk the livings— মৃতরা জীবিতদের সাথে কথা বলে না।
জীবন ও মৃত্যুর মাঝে ফাড়াক খুব বেশি না। তবু একটা জগত থেকে আরেকটা জগতের কোন খোঁজ নেয়া যায় না। কোনদিন কি যাবে? মৃতদেরও কখনো আমাদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে কিনা জানি না।
তবে হিম গাড়ি বা কাঠের চাঙারি যাই হোক— একদিন আমরাও ও'পারে চলে যাবো। পৃথিবীর সব এমনই রবে। সূর্য উঠবে, চাঁদ উঠবে। শ্রাবণের আকাশে মেঘ করবে, বৃষ্টি নামবে। খুব ভোরে ঘাসের ডগায় বিন্দু বিন্দু শিশির জমবে। আষাঢ়ের মাঝরাতে টিনের চালে রিমঝিম বৃষ্টি পড়বে।
সবই চলবে। শুধু আপনি বা আমি থাকবো না। কোন মানে হয়?
(ছবি ইন্টারনেট থেকে)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:১৬