হাওড়া স্টেশন থেকে তামিলনাড়ুর কাটপাডি স্টেশনের দূরত্ব ১৭০০+ কিঃমিঃ। প্রথম শ্রেণীর যাত্রী হিসেবে ৩০ ঘন্টার এই জার্নিটা বেশ উপভোগ্য। মাঝখানে উড়িষ্যা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে নেমে একটু হাঁটাহাটি করেছি, স্টেশন থেকে স্থানীয় কিছু খাবার কিনেছি।
বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে ইলেক্ট্রিক ট্রেন ছুটে চলেছে— কখনো বনভূমি, কখনো নদী আবার কখনো মরুভূমি পার হচ্ছি। এসি কামড়ায় শুয়ে গায়ে কম্বল জড়িয়ে জানালা দিয়ে এইসব মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে বেশ লাগছে। কখনো বই পড়ছি, আবার খানিকটা ঘুমোচ্ছি।
দেড় দিন পর যখন কাটপাডিতে পৌঁছলাম তখন দুপুর, ঘড়ির কাটা ২ অতিক্রম করেছে। জানালার কাচ দিয়ে রোদের তীব্রতা দেখছি, চোখ ঝলসে যাচ্ছে।
কিন্তু ধাক্কাটা খেলাম ট্রেন থেকে নামতেই। যেন গনগনে আগুনের একটা হাওয়া শরীরে ধাক্কা দিয়ে গেল। টানা ৩০ ঘন্টা কৃত্তিম শীতে গায়ে কম্বল জড়িয়ে রেখে শরীর এমনিতেই নাজুক হয়ে গেছে। তারপর হঠাৎ এই তীব্র তাপমাত্রায় অবস্থা খারাপ হয়ে গেল।
গুগল করে দেখি তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সব চেয়ে বড় সমস্যা পার্বত্য এই শহরে বাতাসের আর্দ্রতা একদম কম। অটোতে চেপে ভেলোর পৌঁছলাম। আধ ঘন্টাতেই ঠোঁট ফেটে কাঠ। কথা বলতে যেয়ে ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়ে গেল। মে মাসের তীব্র উত্তাপেও এভাবে ঠোঁট ফাটতে পারে সেবারই প্রথম দেখলাম।
হোটেলে পৌঁছেই ঠোঁটের জন্য অয়েনমেন্ট কিনলাম আগে। আমরা গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মানুষরা সাধারণত গরমে পাতলা হাফ হাতা কাপড় পরি। কিন্তু এখানে হিসেব ভিন্ন। একদিনেই শরীরের চামড়া ঝলসে গেছে। পরের দিন থেকে সানবার্ণ থেকে বাঁচতে ফুল হাতা মোটা শার্ট পরে আর রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে বের হতাম।
সমগ্র শহরটিই মূলত তিন দিক থেকে ঘেরা একটা পাথুরে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। দিনের বেলায় পাহাড়ের গায়ে সূর্যের তাপ প্রতিফলিত হয়ে শহরটা খা খা করে পুড়তে থাকে। স্থানীয় লোকদের মতে কালো এই শিলা পাহাড়টি আগে সাদা ছিলো। সূর্যের তাপে পুড়তে পুড়তে কালো হয়ে গিয়েছে।
সারাদিন সারা শহর টই টই করে ঘুরে বেড়াতাম। দিক নির্ণয়ের জন্য পাহাড়ের একটি চূড়াকে ধ্রুব তারার মতো ব্যাবহার করতাম। এই চূড়াটি অনেক দূর থেকে দেখা যায়। চূড়ার ওপর একটি গির্জা, তার একদম নিচেই আমাদের থাকার হোটেল।
পথ হারিয়ে ফেললেই পাহাড়ের চূড়া বরাবর হাঁটতে থাকতাম। ভেলোরকে প্রাচীণ দূর্গের শহর বলা হয়।
টিপু সুলতানের ভেলোর ফোর্ট, তার কন্যা ও বিবিদের মাজার, তার সেনাপতির মাজার, মসজিদ, শহরের ঐতিহ্য; এসব গল্প আরেকদিন বলবো।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০২১ রাত ১১:০৩